“এখনো ভালোবাসি”
|৩২|
সুখ নামের একটি পাখি আছে।যা সবার কপালে ধরা দেয় না।আবার কেউ পেয়ে খাঁচায় বন্দি করেও তাকে পোষ মানাতে পারে না।কতো আদর,যত্ন তবুও যেনো সুখ পাখিটি নিতে নারায।কি চায়?আল্লাহই ভালো জানে।যখন কেউ মন থেকে একটু শান্তি পেতে চায়,সুখের তাল্লাশে ঘুড়ে বেড়ায় তখনই এই সুখ পাখিটি সব থেকে বেশি অচেনা হয়ে দাঁড়ায়।অথচ আপনি যখন সব আশা ছেড়ে দিবেন। কষ্টটাকে নিজের নিয়তি মনে করে আপন করে নিবেন,তখনই সুখ পাখিটি তার পাখনা মেলে ঝাপটে ধরবে।কিছু সুখ তো আবার অকল্পনীয়।এমনই এক অকল্পনীয় সুখের আবাশ বয়ে যাচ্ছে আয়নের মন মস্তিষ্কে।হাতে থাকা প্রিয়ুর রিপোর্টটির উপর বারবার চোখ পড়ছে।ঝাপসা চোখ তবুও লিখাটি স্পষ্ট ভেসে আসছে,প্রেগনেন্সির রেজাল্ট পজিটিভ।’প জি টি ভ ‘ চারটি অক্ষরের শব্দ।অথচ এটা কতো ভারি একটা শব্দ কেউ কি কখনো চিন্তা করেছে।
–“না করেনি,বরং খুশিতে অনেকে মেতে উঠে আগে।বাবা মায়ের সন্তানের জন্য স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ শুরু হয় এই চারটি শব্দের পরে।অনাগতো সন্তান হয়তো জানতেই পারে না কখনো, ওর আসার আগেই ওর ভবিষ্যৎ এর চিন্তাও বাবা মা করে ফেলেছে।এটা শুধু তৃপ্তিসাধক সুখ না,এর মধ্যে জড়িয়ে থাকে,সুখ,দায়িত্ব আর অসীম ধৈর্যের।আয়ন প্রস্তুত এসব দায়িত্ব নিতে,কিন্তু আয়নকে ভাবাচ্ছে প্রিয়ু নিতে পাড়বে তো।আমাদের মান অভিমানের পাল্লা এখনো ভারী,এই অবস্থায় এই খবরটি প্রিয়ু কিভাবে নিবে তাই এখন আয়নকে ভাবাচ্ছে।কিন্তু আয়ন খুশি,ভীষন খুশি।দুনিয়ার সব কিছু যদি এখন প্রিয়ুর পায়ে রেখে দিতে পাড়তো তাহলেও হয়তো প্রিয়ুর দেওয়া এই খুশির তুলনায় কম।আয়নের সত্যি আজ প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে মন চাইছে।আয়ন বুঝতে পাড়ছে না ওর এমন আজব চিন্তার কারণ কি।এটা তো মেয়েদের কাজ।হয়তো মাঝে মাঝে মনও অবুঝ হয়ে যায়।খুব করে ইচ্ছে জাগছে মনে, নিজের অস্তিত্বকে একটু ছুঁয়ে দেখতে।একেই হয়তো বলে,প্রথম বাবা হবার অনুভূতি।”
প্রিয়ুর আজকাল ভার্সিটিতে তেমন যাওয়া হয়না।বেশির ভাগ সময়ই ওর বাড়ীতেই কাটে।তার থেকে বড় কথা নিজের শরীরের কন্ডিশন নিজেই বুঝে উঠতে পাড়ছে না।কখনো খুব খারাপ লাগে,আবার কখনো খুব ভালো।হঠাৎ হঠাৎ আজগুবি চিন্তাভাবনা মাথায় এসে ভর করে।খাওয়াদাওয়ার রুচিও আগের থেকে কমে গেছে।অদ্ভুত অদ্ভুত গন্ধ নাকে এসে বাজে।কখনো কিছু পছন্দ হয় কখনো বা অপছন্দ।এই যেমন এখন নিজের রুমের সাথে এডজাস্ট বালকানিতে দাঁড়িয়ে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন প্রিয়ু।কেউ দেখলে হয়তো বলবে”,ইস রে.. এই পিচ্ছি মেয়েটার মনে না জানি কতো কষ্ট,তাই তো উদাসীন হয়ে ঘুড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ।নিজের এই উদাসীনতার কারণ হয়তো প্রিয়ু নিজেও জানে না।”
–“হঠাৎ কারো বাজখাঁই কন্ঠে প্রিয়ু ঘাবড়ে চিন্তার চেতনা থেকে ফিরে আসে।ভয় পেয়ে চকিতে পিছনে তাকাতেই আয়নকে দেখতে পায়।আয়নকে এই সময় বাসায় দেখে কিঞ্চিত আবাক হওয়ার কথা থাকলেও,প্রিয়ু অবাক হবার পরিবর্তে মনটা কেমন খুশি খুশি লাগতে লাগলো।আজ অনেক দিন পর আয়নের কন্ঠ শুনতে পেলো।প্রিয়ু কিছুটা হিসেব করে দেখলো পুরো এক সপ্তাহ একদিন মানে ১৯২ঘন্টা ১১৫২০মিনিট ৬৯১২০০ সেকেন্ড পরে আয়ন প্রিয়ুর সাথে কথা বলছে।অথচ এই সময় টুকু প্রিয়ু কতোটা ছটফট করেছে এই লোকটির একটু কন্ঠ শুনতে তা কি জানে।আমি না হয় অভিমান করে কথা বলিনি।কিন্তু আয়ন কেনো তাকে মানালো না,এতেও প্রিয়ুর অভিমান জমেছে।প্রত্যেক বারতো ধমকিয়ে ঠ্রেড দিয়ে নিজের সব কিছু মানিয়ে নিতো অথচ এবার!এবার যখন প্রিয়ু নিজেই চাইছে আয়ন ওকে মানাক কিন্তু এই লোকটি নিজের ইগোর ঠেলায় আমাকে পোড়াচ্ছে।”
প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে পায়,আয়নের আবারও ঝাজালো কন্ঠে।”এই বেলায় এখানে কি করছিস।আর এখনো তোর লাঞ্চ হয়নি কেনো।কি হলো কথা বলছিস না কেনো।বোবার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে জবাব দে।আয়ন কিছুটা তেজে কথাগুলো বলছে।”
–প্রিয়ু মুখটা নিচু করে নিজেই বিরবির করে বলতে লাগলো,”লে শুরু হয়ে গেলো।এই হিটলারের হিটলার গিরি।এতোদিন পর কথা বলছে,একটু ভালো করে মধুমাখা কথা বলবে।না!তা কেনো করবে।অভাবে স্বভাব নষ্ট বলে না।এই লোকের কাছে মধুর অভাব।তাই এতোদিন পর কথার শুরুতেই আবার ঝারি।আমি তো ভুলেই গেছি এই ব্যক্তি তো আবার তিতা করলার রস খেয়ে বড় হয়েছে।মধুমাখা কথা আসবে কিভাবে।”
‘কি হলো কি বিরবির করছিস।আমার কথা কি কানে যায় না।নাকি আমার কথার কোনও মূল্যই নেই তোর কাছে এখন।আসলে আয়ন কিছুটা বিরক্ত প্রিয়ুর উপর।একতো দুপুর টাইমে এই রোদে প্রিয়ু বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা,তার উপর দুপুরের খাবারটাও আজকাল ঠিকমতো নাকি করেনা প্রিয়ু।রুমে আসার সময় নাদিয়া খালার থেকে জানতে পেরে খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো প্রিয়ুর উপর আয়নের।’
প্রিয়ুর মুখটা শুকনো করে জবাব দিলো,”আমার ভালো লাগছে না,কিছু খেতে মন চায় না।তাই,খাওয়া হয়নি।আর সারাক্ষণ রুমে থাকতে থাকতে হাফিয়ে যাচ্ছিলাম,তাই একটু বারান্দায় এসে বসেছিলাম।এতে হাইপার হবার কি আছে।”
–আয়ন জোড়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে,ধম নিলো।ভাবছে,হয়তো!এভাবে আসলেই রিয়েক্ট করার কিছুই ছিলো না।এই সময় এমন একটু আকটু হবেই।প্রিয়ুতো জানেই না এখনো কিছু।তাহলে শুধু শুধু ওকে কিছু বলা একদমই বৃথা।আয়ন আগের পিছের সব রাগ ধমিয়ে প্রিয়ুর হাতটি টেনে রুমের সোফাতে বসালো।সার্ভেন্টকে আসার সময় খাবার রুমে নিয়ে আসতে আগেই বলে দিয়েছিলো।সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে যাওয়ার পর আয়ন নিজের হাতের শার্টিটি ফোল্ডার করে খাবার মেখে প্রিয়ুর মুখে ধরলো।
“আয়নের এমন কান্ডে প্রিয়ু কেমন আশ্চর্যান্বিত হয়ে আয়নের দিকে তাকালো,কিছু যেনো বলতে গিয়েও বলতে পাড়লো না প্রিয়ু।মুখ দিয়ে কোনও কথাই বের হলো না।বরং চুপচাপ খেয়ে নিলো আয়নের হাতে।প্রিয়ু ভেবেছিলো প্রিয়ু খেতে পাড়বে না,আজকাল ও ঠিকমতো খেতে পারেনা তাই।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো,প্রিয়ু সত্যি আয়নের হাতে এক প্লেট ভাত খেয়ে ফেললো।কি হলো এটা,বুঝতে পাড়লো না।এটা কি আয়নের হাতের যাদু ছিলো নাকি অন্য কিছু ছিলো।”
তার অবশ্য একটি কারণ ছিলো,আয়ন বুদ্ধি করে প্রিয়ুর জন্য ভাতে লেবু চিপে নিয়ে ছিলো।আয়নের কিছুটা ধারণা ছিলো,হয়তো টক টক লাগলে প্রিয়ু শান্তি মতো খেতে পাড়বে।আর তাই হলো।কিন্তু আয়ন লেবু খেতে পারেনা,তবে আজ প্রিয়ুর জন্য লেবু দিয়ে মাখানো ভাতও তৃপ্তিসহি গিলছে।প্রিয়ুর বিশ্বাস হচ্ছিলো না,আয়নকে খেতে দেখে।কারণ আয়ন লেবু জিনিসটা খুবই অপছন্দ করে।লেবুর শরবতও আয়নের গলা দিয়ে কখনো নামে না।সেই লোক আজ লেবু ভাত খাচ্ছে।কিন্তু কেনো!আজ এতো মায়া কেনো এই ব্যাচারী লেবুর উপর!হাউ!
–“খাবারের মাঝেই আয়ন প্রিয়ুকে কাল সকালে একবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বলে জানালো।প্রিয়ু অবশ্য প্রশ্ন করেছিলো কেনো?কারণ ওতো ঠিক আছে।তাহলে!
কিন্তু আয়ন কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো”,কাল গেলেই জানতে পাড়বি।এখন এতো কথার মানে কি।আয়ন মূলত্ব প্রিয়ুর রিয়েকশন নিয়ে চিন্তায় আছে।ব্যাপারটা প্রিয়ু সহয চোখে নিবে নাকি সব বারের মতো এবারও আয়নের উপর দোষ চাপিয়ে দিবে তাই ভাবাচ্ছে।হয়তো প্রিয়ু শোকড হয়ে বলবে,সব তোমার দোষ।তুমি করেছো আমার এ হাল।আমি তোমাকে এই জনমে আর ক্ষমাই করবো না।”
আয়নের এমন ভাবলাহিন উত্তরে প্রিয়ু সন্তুষ্ট না,তবুও আপাততো চুপ থাকলো।কেনো জানি আজ আর আয়নের সাথে তর্ক করতে মন সায় দিলো না।তবে চুপ থাকাটা অবশ্যই ওর জন্য অনেক কষ্টকর ছিলো।
………………………………………
দিশা ও তিয়াশের নতুন সংসার।সব সাজানোই ছিলো তবে সাজানো ঘরটি সংসার বানাতে একটি রমনীর হাত লাগে।রুমগুলোতো যে কেউ সাজাতে পারে তার জন্য শুধু সৌখিনতা হলেই চলে।কিন্তু সেই রুমগুলোর সব কিছু মিলে সংসার বানাতে সবাই পারে না।দিশা মধ্যবিত্তের ঘরের মেয়ে।গায়ের র একটু চাপা বলে,মা খুব ছোট থেকেই মেয়েকে রান্নাবান্নায় নিপুন বানিয়েছে।যাতে পরের ঘরে গেলে,দিশার গুণে যাতে ওর গায়ের রং চাপা পড়ে যায়।আজ মায়ের শিখানো গুণগুলোই দিশার সংসারে কাজে লাগছে।নিজের ছোট সংসার কে নিজের মতো সাজিয়ে দিশা, তিয়াশ আর অনিকের জন্য রান্না করতাছে।
–“দুজন টুনাটুনির সংসার দেখতে অনিকও এসেছে আজ।সারাকেও আসতে বলেছিলো অনিক,কিন্তু সারাতো মা ভক্ত।তাই ভাইয়ের বউয়ের মুখ দেখতেও রাজিনা।অনিকের মাঝে মাঝে টেনশন হয় অতি মা ভক্ত সারাকে দেখলে।কারণ বেশি চালাকে গলায় দড়ি বলতে একটা কথা আছে না, অনিকের ক্ষেত্রে না আবার তাই ঘটে।তাই অনিকের ভয় হয়।শ্বাসুরীর অতি চালাকের কারণে অবশেষ ওর সংসারটা না ভেঙ্গে যায়।”
তিয়াশ দিশাকে রান্নার কাজে হেল্প করছে,কিন্তু দিশার মনে হচ্ছে তিয়াশের হেল্প নেওয়ার চেয়ে কলা গাছে দড়ি বেধে ঝুলিয়ে পড়া ভালো।কারণ,তিয়াশ উল্টা একটা কাজের জায়গায়,দিশার দুটো কাজ বাড়াচ্ছে।এতে দিশারও রান্না করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।অথচ তিয়াশের কোনও রিয়েকশন নেই।বরং হাতে একটা খাতা নিয়ে দিশাকে বাতাস করতে লাগলো দিশা যাতে আগুনের এই শিখায় না ঘামে।প্রিয়তমার জন্য যতো অদ্ভুট চিন্তা ওর।কিন্তু এতে দিশার চুলা বারবার নিভে যাচ্ছে।দিশা মেঝাজ খিটমিট করে তিয়াশের দিকে তাকালো।”সমস্যা কি?”
–আরে!আমার কি সমস্যা।আমি তো তোমাকে সাহায্য করছি।দেখোনা তুমি গরমে গেমে একাকার।রান্নায়তে তো হাত লাগাতে দেওনা,তাই ভাবলাম বউয়ের একটু সেবা করি এভাবেই।
‘আমি কি বলেছি তোমাকে সাহায্য করতে,দেখতে পাওনা তোমার কারণে বারবার আমার চুলা নিভে যাচ্ছে।পাগল তুমি?বুঝো না।দিশা কিছুটা চিল্লিয়েই কথাগুলো বলেছিলো।’
–“দিশার চেঁচানো শব্দ শুনে অনিকও দৌড়ে এলো রান্না ঘরের দিকে।কি হয়েছে তোদের বিয়ে হতেনা হতে ঝগড়া শুরু করে দিলি তোরা।কি আশ্চর্য!লোকে শুনলে বলবে কি?বলতো.. ”
“দিশা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে,না ভাইয়া আমরা ঝগড়া করছি না।এমননেই আর কি….।”
–“হুম,আমাকে আর বোঝাতে হবে না।আমি তোমাদের পর না বুঝলে।এখন বল সমস্যা কি।তিয়াশ তুই বল।আর মুখটা এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন রে।বউ মেরেছে।ওই দিশা তুমি আমার ভাইকে মেরেছো।”
কি বলছেন ভাইয়া।আমি কেনো তিয়াশকে মারবো।ওকেই জিঙ্গেস করেন ওর গুনের কথা,তারপর আপনিই বিচার করুন।
–“আর বলিস না ভাই,আজকাল তো উপকারের কোনও কদরই নাই বুঝলি।কি ভাবলাম বউয়ের সেবা করে বাহ বা পাবো।পাইতাছি কি জানিস, ধমক!”
“আরে বাহ!এতো তারাতারি এতো কিছু।তো কি সেবা করছিলি। একটু শুনি।”
–গরমে কতোক্ষণ ধরে রান্না করছে ম্যাডাম,ভাবছিলাম একটু বাতাস করি ওর আড়াম লাগবে।তাই এই খাতাটা দিয়ে বাতাস করছিলাম।আর এতেই ম্যাডাম রেগে ফায়ার।
বলে কিনা….তিয়াশকে শেষ করতে না দিয়েই অনিক বললো।
“আরে হাদারাম,তুই তো দেখি আচ্ছা একটা গবেট।”
‘দিশা মনে মনে ভাবলো,যাক এক ভাইয়ের তো জ্ঞান আছে।বলার আগেই সমস্যা বুঝে গেলো।কিন্তু ওর এই ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল বলে প্রমাণিত হলো।দিশা আর ভাবতে পাড়লো না অনিকের কান্ড দেখে।’
–“অনিক ডায়নিং রুমে রাখা চার্য ধারা চলিত ছোট একটা টেবিল ফ্যান এনে দিশার সামনে ছাড়তে ছাড়তে বললো।এখনতো ডিজিটেল যুগ।সব কিছু আধুনিকের ছোঁয়াছুঁয়ি আর তুই কিনা এখনো হাত দিয়ে বাতাস করছিস।শালা পাগলনি।দেখ আমার বুদ্ধি….।”
–ফ্যান ছাড়ার সাথেসাথে দিশার পাশের প্লেটে রাখা গুড়া মশলা সব বাতাসে উড়তে লাগলো।এখানে অল্প কিছু লঙ্কার গুড়াও ছিলো।দিশা নাকমুখ খিঁচে একটা চিৎকার দিলো।দিশার এমন ভুবন কাঁপানো চিৎকারে তিয়াশ ও অনিক বুঝতে পাড়লো ব্যাপারটা।আসলে ওরা কতো বড় গাধামি করে ফেললো।দিশার অবস্থা দেখে,অনিক উল্টাপায়ে আবার দৌড় দিলো বাড়ীর দিকে।হয়তো এই জনমে তিয়াশের বাড়ীর ত্রিসীমানায়ও আর পা বাড়াবে না।এমন দৌড় মনে হয় চোর ধরতেও কেউ দেয়নি।আর তিয়াশতো ব্যাচারা অসহায় বিড়ালের মতো চুপসে গেলো।আজ যে ওর গৃহিণী ওকে তেল লাবণ ছাড়াই কড়াইতে ভাজবে সেটা ভাবতে বৈকি।দিশা তিয়াশের চৌদ্দগোষ্ঠিরে গালি দিতে দিতে বাথরুমের দিকে ছুটলো।পাড়ছে না তিয়াশ আর অনিককে এখনই খুন করে ফেলতে।
…………………………………
তিতির আর দিনেশের কালকের প্রেজেন্টেশন ভালোই হয়েছে।সবাই ওদের প্রেজেন্টেশন এর অনেক তারিফও করেছে।বাকি এখন সুজেত বোসের হাতে।দেখা যাক কি হয়।তবে আজ সারাদিন দিনেশ আর তিতির কোনও কাজ নেই।তবে রাতে সুজেত বোস একটা পার্টির ইনভাইটেশন দিয়েছে।দিনেশ আর তিতিরকে সেখানেই উপস্থিত থাকতে হবে।যেহেতু আজ দিনের সময়টায় ওরা ফ্রি তাই দিনেশ তিতিরকে লন্ডন শহর ঘুরাতে নিয়ে গেলো।
–“প্রছন্ড শীত বর্তমানে লন্ডন শহরে।কাল রাত বৃষ্টি হয়েছিলো,এরপর আবার সকাল থেকেই তুষার বৃষ্টির সম্ভাবনাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।কিন্তু তিতির মনে হলো বাঙ্গালিদের এই তুষারবৃষ্টিপাত দেখারও সৌভাগ্য লাগে।তিতির তাই রিস্ক নিয়েই দিনেশের সাথে বের হলো,হয়তো ভাগ্যে থাকলে তুষারবৃষ্টিপাত দেখা মিলবে।”
‘প্রথমেই তিতির ও দিনেশ গেলো হাইড পার্ক।লন্ডনে এলে এখানে একবার আসতেই হবে।কারণ এটি লন্ডনের বিশাল রয়্যাল পার্ক।পার্কটি বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।যেখানে চোখ যাবে গাছ আর গাছে ভরা প্রকৃতি চোখে পড়বে।চোখ ধাঁধানো সেই সৌন্দর্য।প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবে যে কেউ।চারদিকে সারি সারি বিশাল আকারের গাছ,বড় মাঠ,পার্কে বসার স্থান সব মিলিয়ে একটি ধারুন জায়গা।এখানকার স্থানীয়,মানুষরা সকালে এই পরিবেশে জগিং করতে আসে।কেউ দৌড়িয়ে কেউ বা সাইকেল করে।কারো কারো আড্ডার আসর জমেছে পার্কের বেঞ্চগুলোতে।পার্কের ভেতর একটা বিশাল বড় লেক আছে।লেকের পাড়ে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে কতো নাম না জানা প্রজাপতি।মজার বিষয় হলো এই লেকগুলোতে হাস আর কবুতরও দেখা গিয়েছিলো।তবে এদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়।’
–তিতির ও দিনেশ লেকের পাড়ে পাতানো একটা বেঞ্চে বসে,নয়ন ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।চারদিকে এখনো অনেক ঠান্ডা।শীতের পোষাকে আব্রত তিতির মুখটি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।হঠাৎ দিনেশের কথায় তিতিরের উৎফুল্ল মনটা নিমিষেই ধোঁয়াশায় ছেয়ে গেলো।
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মর” কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
কবি-কাজী নজরুল ইসলাম।
দিনেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তিতির।কিন্তু তবুও দিনেশের মুখের অভিব্যপ্তি বুঝতে পাড়লো না।কারণ দিনেশ একটি বারও তিতির দিকে তাকালো না।তা দেখে তিতির নিজেও মুখ ঘুড়িয়ে সামনে নিক্ষেপ করলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ তিতির কাপা কন্ঠে নিজেই বললো,”লোরিন দেখতে খুব সুন্দর স্যার।আপনার সাথে ভালো মানাবে।আর লোরিন ম্যামও আপনাকে খুব পছন্দ করে,আমার মনে হয় আপনি হয়তো কিছুটা… তিতির কথা শেষ করার আগেই দিনেশ ওকে একদম কাছে টেনে নিলো।এতোটা কাছে যে এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় দিনেশের গভীর নিশ্বাসগুলোর গরম বাতাস আচড়ে পড়ছে তিতির সারা মুখে।দিনেশ ফেডআপ এখন তিতির উপর।তাই কিছুটা রাগ দেখিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বললো..
“ভালোবাসবে না? না বাসো।বারবার এতো বাহানা কেনো করো।আমাকে তোমার কি মনে হয়।রাস্তার লোফার,নাকি আরো জগন্য।যার কারণে যাকে পাও তাকেই আমার গলায় ঝুলিয়ে ফেলতে চাও।আমার ভালো কিসে আমি বুঝি,তোমাকে এই নিয়ে টেনশন করে ঘুম হারাম করতে বলেনি।আমার ভালোবাসাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দেওয়া,এটা তোমার ইচ্ছা।তাই বলে নিজের মাথা ব্যাথার জন্য,আমাকেও মেডিসিন খেতে বলবে,মানবো না।
ভালোবাসা কোনও উপন্যাসের বই না,যে ইচ্ছে হলেই মাঝ পথে পড়া ছেড়ে দিবো।বা অন্য আরেকটা লেখকের বই নিয়ে বসে পড়বো।ভালোবাসা তো এমন একটা জিনিস যার সান্নিধ্যে এসে একজন অপদার্থও উপন্যাস লিখে ফেলে।আমি ভালোবাসি তোমাকে।আর এটা সত্য।এই সত্যকে না তুমি পাল্টাতে পাড়বে না আমি পাল্টাতে দিবো কখনো।দরকার পড়লে সারা জীবন সন্নাসীদের মতো সংসার ছাড়াই ঘুড়ে বেড়াবো।তবুও তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসতে দিবো না।মাইন্ড ইট।আর তুমিও চেষ্টা করবে না।
“এখনো ভালোবাসি”
|৩৩|
লন্ডনে এখন ক্রিসমেস মাস।ক্রিসমেস মাস মানেই উৎসব,মজা আনন্দো হুল্লড়।আর ক্রিসমেস রাত মানেই কেক কাটা,শ্যাম্পেইন আর লেট নাইটপার্টিতে মুখরিত থাকে সবাই।আরো অনেক কিছু হয় এই রাতে।তবে এটা কোনও ধর্মীয় রুলস না।মানুষ নিজের চাহিদার স্বার্থে এই লেট নাইট পার্টিগুলোতে অনেক অনৈতিক কাজও করে থাকে।দিনেশ অনেক বছর বিদেশে ছিলো তাই এদের কালচার সম্পর্কে অনেকটাই জানা।কিন্তু আজ ব্যাপারটা মাথা থেকে উঠে গিয়েছিলো।ও ভেবেছিলো কোনও নরমাল বা ফ্যামিলি পার্টি হবে।কিন্তু এখানে এসে দেখে পুরোই উল্টো।একবার তিতির দিকে তাকায়,ওর আর বুঝতে বাকি থাকে না,তিতির যে কতোটা অস্বস্তি ফিল করছে পার্টিতে এসে।আর করবেই না কেনো,তিতির এমন পরিবেশে অভ্যস্ত না।চারদিকে মেয়েদের অতিমাত্রায় খোলামেলা পোষাক আর যে যেমনে খুশি নিজের সাথীদের সাথে প্রকাশ্যে চুম্বনে ব্যস্ত।এসব দেখে তিতির নিজেই লজ্জায় কুকিয়ে যাচ্ছে।
–“ক্রিসমেসে রাতে লেট নাাইট পার্টিগুলো এমনই হয়।দিনেশ খুব ভালো করেই অবগতো এই সম্পর্কে।কিন্তু এখন নিজেকে নিজেরই গালি দিতে মন চাইছে,ও কি করে তিতিরকে এমন পার্টিতে আনতে পাড়লো।আর এই সুজেত বোস টাও কোন আক্কেলে আমাদেরকে এখানে ইনভাইট করছে।দিনেশ সুজেতকে খুঁজতে লাগলো,দেখা করেই ওরা চলে যাবে।তার আগে তিতিরকে এসব ভীড় থেকে সরিয়ে পার্টি হলের পিছনে একটা সুইমিংপুল আছে সেখানে বসতে বললো।যতো সম্ভব এটি prohibited area।তাই কেউ এ পাশে আসছে না।শুধু মাত্র বিশেষ মেম্বারদের আসার অনুমতি আছে,তাও আবার যাদের মেম্বারসীপ কার্ড আছে।দিনেশের বিদেশে আসা যাওয়ার কারণে অনেক দেশেই বিভিন্ন জায়গার মেম্বারসীপ কার্ড আছে, তাই দিনেশ তিতিরকে নিয়ে ইজিলি ওখানে চলে যেতে পাড়লো।”
–নীল আকাশের নীচে অবস্থিত সুইমিংপুলটিও নীল পানিতে ভরা।মনে হয় উপর থেকে আসমান যেনো নীচে নেমে এসেছে।সুইমিংপুলের পাশেই একটা ছোট ঝর্না আছে,যেখান থেকে অনবরত পানি পড়ছে।আর ঝর্ণার নিচে কিছু ছোটবড় কচি পাথর বিছিয়ে রাখা আছে।ভীষণ মন চাইছে পানিটি একটু ছুঁয়ে দেখতে কিন্তু এতো ঠান্ডায় পানি ছোঁয়া গাধামি ছাড়া কিছুই না।এমনই ঠান্ডায় দাঁতেদাঁত লেগে যাওয়ার পালা,তাই নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে ফেললো তিতির মুহুর্তে।আশপাশটা দেখতে যখন ব্যস্ত তখন হঠাৎ একজন ওয়েটার এসে তিতিরের হাতে কফি দিয়ে বললো,”স্যার পাঠিয়েছে”।তিতির ভাবলো হয়তো দিনেশ ওর জন্য পাঠিয়েছে,তাই ও খুশি হয়ে কফির মগে চুমুক দিলো কিছু না ভেবেই।
দূর থেকে সুজেত বোস গাঢ় নজরে তিতিরকে দেখছে।মুখে তার ডেবিল হাসি।মনে হয় কোনও বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।তার কারণ ছিলো,সেই কফি।কফিটি সুজেত বোসই পাঠিয়েছিলো।কিন্তু শুধু কফি পাঠায়নি,কফিতে খুব চালাকের সাথে stimulant drugs মিশিয়ে দিয়েছে সুজেত।যা খুব সহযে তিতিরকে নেশায় উত্তেজন করে তুলবে।তিতির নিজের প্রতি কোনও হুস থাকবে না।নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারবে না।লেট নাইট পার্টিতে চলা এই আদিম খেলায় নিজেও মেতে উঠবে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে।আজকাল এসব stimulant drugs এর কারণে অনেক মেয়ে নিজের সতীত্ব হারিয়ে ফেলছে।কেউ কেউ তো জানতেও পারে না তার সাথে কি হয়েছে,বা কে করেছে।কেউ ব্যাপারটা সহ্য করে চুপ হয়ে যায়,কেউ বা নিজের জীবন শেষ করে দেয়।আজ তিতির জীবনেও কি ঝড় ধেয়ে আসছে তা আল্লাহই হয়তো ভালো জানে।
“সুজেত বোস নিজের হাতে রাখা শ্যাম্পেইন গ্লাশে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে আনন্দের সাথে।নিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে তিতিরকে দেখিয়ে ইশারা করলো,ওকে আমার রুমে নিয়ে আসো।তবে সাবধান দিনেশ রায় যাতে দেখতে না পারে।আজ রাত মিস তিতি হবে আমার বেড সঙ্গী।”
–“এদিক দিয়ে ক্লাবের কোথাও দিনেশ সুজেতকে খুঁজে পেলো না।ফোনও ট্রাই করছে,কিন্তু নো রিসপোন্স।তাই কিছুটা বিরক্ত হয়েই দিনেশ সুইমিংপুল এর দিকে চলে গেলো।কিন্তু এখানে এসে তিতিরকে দেখতে পেলো না।মনের মধ্যে হঠাৎ অচেনা একটা ভয় এসে জমা হলো।সব জায়গায় তিতিরকে খুঁজতে লাগলো।ফোনও দিলো,কিন্তু বারবার বন্ধ বলছে।দিনেশ কেমন দিশেহারা হয়ে পড়ছে।কি করবে,কোথায় খুঁজবে।কেনো যে ওকে একা ছেড়ে গেলাম।নিজের উপরই প্রচণ্ড রাগ উঠছে দিনেশের এখন।মাথার চুলগুলো টেনে ধরে, একটা চেয়ারে বসে পড়লো দিনেশ।চিন্তা করতে লাগলো কি করবে।তিতির নিজের ইচ্ছায় কোথাও যাবে না।কারণ ও এখানকার কিছুই চিনে না,আর অপরিচিত কারো সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।তাহলে গেলো কোথায়,আর কার সঙ্গে।হঠাৎ কিছু একটা মনে করে উঠে দাঁড়ালো দিনেশ।হয়তো ও ক্লু পেয়ে গেছে।”
………………………………
প্রিয়ুকে লাঞ্চ করিয়েই আয়ন অফিসে চলে এলো।নতুন একটা প্রজেক্ট শুরু করেছে আয়ন।তাই না চাওয়া সত্যেও প্রিয়ুকে ছেড়ে আসতে হয়েছে।ওর খুব মন চাইছিলো প্রিয়ুর কাছে থেকে নিজের অস্থিত্বটা কে অনুভব করতে।কিন্তু কাজের কাছেও আয়ন দায় বদ্ধ।পুরো ব্যবসা ওর উপর ডিপেন্ড।আর তাই ওই যদি গায়ে ফু দিয়ে হাটে তাহলে পুরো ব্যবসা লাটে যাবে।
তাই ও ইচ্ছা করলেও নিজেকে এসব দায়িত্ব থেকে মুক্ত করতে পারবে না।নিজের কাজে যখন মগ্ন আয়ন তখনই কেবিনে নক করে রবিন আসলো।রবিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আয়ন আবার নিজের কাজে মনোাযোগ দিলো।আর কন্ঠ স্বাভাবিক রেখেই রবিনের কাছে জানতে চাইলো,”কি সমস্যা রবিন।কোনও সমস্যা থাকলে গৌরচন্দ্রিকা ছাড়াই বলে ফেলো।এমনেই মাথাটা হং হয়ে আছে।এভাবে নিরবতা পালন করে আমার বি পি হাই করো না আর।”
–রবিনও কোনও হেয়ালাপনা না করে বলা শুরু করলো,”আপনার ধারণাই ঠিক ছিলো স্যার।এই রোহান লোকটা সুবিধার না।একদম বিড়াল তাপস্বী প্রকৃতির লোক।আর অতিতে অনেক মেয়েলি ঝামেলায়ও জড়িয়ে ছিলো।”
‘মেয়েলি ঝামেলা মানে।আয়ন নিজের কাজ রেখে প্রশ্ন করলো রবিনকে।’
–মানে!যেখানে আগে ও থাকতো।তার জন্মস্থান গিয়ে জানতে পাড়লাম,অতিতে নাকি ওর অনেক মেয়েদের সাথেই সম্পর্ক ছিলো।এদের বিয়ের লোভ দেখিয়ে মেয়েদের প্রেমের নামে একপ্রকার ভোগই করতো।তাই অনেকে অনেকবার পুলিশ কেসও করেছিলো রোহানের বিরুদ্ধে কিন্তু এই রোহান গভীর পানির মাছ স্যার।কিভাবে যেনো চালাকির সাথে বের হয়ে যেতো প্রতিবার।রিসেন্টলিও একটা মেয়ের সাথে ব্রেকআপ হয়েছে শুনেছি।মেয়েটির নাম নোরিন ছিলো।মেয়েটির সাথে শুনেছি এনগেজমেন্টও হয়েছিলো।কিন্তু এরপরও সম্পর্ক টিকলো না।কারণটা জানা যায়নি।
–“বাড়ীতে কে কে আছে ওর।”
‘বর্তমানে কেউ নেই,বাবা দুবছর আগে পটল তুলেছে।’
–“আয়ন হেসে দিলো,তুমি দেখি আজকাল শব্দভাণ্ডার নিয়ে বসেছো।এমন অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ বলার রহস্য কি রবিন।”
‘রবিন চোর ধরা পড়ার মতো মাথাটা নিচু করে ফেললো।কেমন হিস্ ফি্স করতে লাগলো।’
–“আয়ন এবার জোড়েই হেসে দিলো।প্রেমে পড়েছো মনে হয়।তাইতো!”
‘রবিন এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আয়নের দিকে,ভাবছে স্যার কিভাবে জানলো।’
–“কি ভাবছো আমি কিভাবে বুঝলাম।আয়ন হেসেই বললো রবিনকে”।
‘রবিন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।নিরবতা পালন করে জানাচ্ছে হুম, ও জানতে চায়।এটা তো অনেকটা টোপ সিক্রেট ব্যাপার, যা ও কাউকে জানতে দেয়নি।তাহলে আয়ন স্যার কিভাবে জানলো।’
–“রবিনকে এভাবে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,আয়ন নিজেই বলতে লাগলো।তোমার আচরণ দিনদিন বাচ্চাদের মতো হয়ে যাচ্ছে।অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করো।যা তোমার মতো একজন এডাল্ট ছেলের কাছে আশা করা যায় না।কিন্তু মানুষ কেবল নতুন নতুন প্রেমে পড়লেই এমন করতে পারে।আমার এসবের অভিগ্যতা আছে ভাই তাই আমি জানি।আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।”
‘রবিন আয়নের কথায় কিছুটা লজ্জা পেতে লাগলো।রবিনের এমন অবস্থা দেখে আয়ন রবিনকে আর বিব্রত করলো না, তৎক্ষনিক কথা ঘুড়িয়ে ফেললো।আর কিছু জানতে পাড়ছো রোহান সম্পর্কে।’
–হুম স্যার।একটা ইন্টেরেস্টিং কথা জানতে পেরেছি।রোহানের মায়ের সম্পর্কে কোনও ক্লু পাওয়া যায়নি।
–“আয়ন ভ্রুটা কুচকিয়ে জিঙ্গেস করলো,মানে!আই মিন কেনো”।
–জানি না স্যার।ওখানকার কেউ নাকি রোহানের মাকে কখনো দেখেনি।শুধু ওর বাবাকেই চিনে সবাই।আর প্রতিবেশি কেউ ওর মা সম্পর্কে কিছু বলতেও পারেনি।এই ব্যাপারে নাকি বাপ ছেলে কখনো কাউকে কিছু বলতো না।জিঙ্গেস করলেই এড়িয়ে যেতো।ব্যাপারটা কিন্তু অদ্ভুত।
–“হুম!ভেরি ইন্টেরেস্টিং।আর সেদিনের ব্যাপারটা।প্রিয়ুর সাথে ভার্সিটির বাহিরে হঠাৎ দেখা।ওটা কি কো-ইন্সিডেন্ট ছিলো।নাকি অন্য কিছু।”
‘সেটা সিউর বলতে পারছি না স্যার।তবে আমি লোক লাগিয়ে রেখেছি রোহানের উপর নজর রাখতে।আর সেদিন প্রিয়ু ম্যামকে পাঠানো ছবি আর ভিডিওটি কোনও লেপটপ থেকে সেন্ড করা হয়েছে।আমরা ট্রেস করার চেষ্টা করছি,কার লেপটপ থেকে এসেছে এসব।’
–“তুমি এক কাজ করো রবিন,আমার একটা কার্ড নিয়ে সোজা থানায় চলে যাও।ওখানে ওসি পলাশের সাথে দেখা করো।আমি ওকে সব বলে দিচ্ছি ফোনে,ও তোমাকে লেপটপ টা বের করতে সাহায্য করবে।আই হোপ এতে আমরা তারাতারি কোনও ক্লু পেয়ে যাবো।”
‘ওকে স্যার বলেই রবিন চলে গেলো।আয়ন আবারও নিজের কাজে মনোাযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো,কিন্তু এই রোহান লোকটিকে নিয়ে ভাবাচ্ছে আয়নকে।দুবছর আগে উড়ে এসে হঠাৎ জুড়ে বসলো প্রিয়ুর জীবনে তাও আবার আমার অবর্তমানে।আমি আসার সাথে সাথে গায়ব হয়েও গেলো।এর পর আমি আর প্রিয়ু আলাদা হয়ে গেলাম।এখন যখন আবার এক হলাম,এই রোহান নামক প্যারা আবার ঘাড়ে চেপে বসছে।কিন্তু কেনো?
কে এই রোহান,কি চায় ও।’
………………….
হোটেল রুলের বিছানায় কেমন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে তিতির।নিজের মধ্যে নিষিদ্ধ ফিলিংগুলো যে ওকে সম্পূর্ণ রুপে ঘিরে ফেলছে তা কিছুটা হলেও বুঝতে পাড়ছে।কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তি বা মনোবল কোনোটাই জোগার করতে পারছে না।শরীরটাকে কেমন ক্ষু্ধার্ত লাগছে।আজ আর অন্য কিছু না শুধু কামবাসনা জেগে উঠেছে পুরো শরীরে।কিছুটা শক্তি যোগার করে আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো তিতির।রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালো।রুমটাতে তেমন আলো নেই।ড্রিম লাইটের হালকা আলোয় ঘরটি অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে।হঠাৎ মনে হচ্ছে রুমের টেম্পেরেজার খুব বেশি,তা না হলে তিতির এই শীতেও ঘামছে কেনো।কেমন অস্বস্তিকর সব কিছু।এক এক করে শীতের পোশাকগুলো নিজেই খুলে ফেললো তিতির।পড়নে এখন ওর একটা সিল্ক শাড়ী।কিছুটা এলোমেলো হয়েই আবার বিছানায় বসে পড়লো।মন আর মস্তিষ্কের সাথে এখনো ওর লড়াই চলছে।সাথে বাড়ছে শরীরের কিছু অনাঙ্কাকিত চাহিদা।স্থির রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেকে।
–“ঠিক সেই সময় সুজেত বোস রুমে প্রবেশ করলো।”
“তিতির তখনো চুপ করে বসে ছিলো।কোনও রিয়েক্ট করলো না।তাকিয়ে দেখলোও না কে এসেছে রুমে।”
–“নিজের কোটটা খুলে তিতির এর দিকে তাকালো সুজেত।ওর দৃষ্টি ছিলো কোনও বিষাক্ত সাপের মতো,যে তিতিরকে দংশন করার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছে।তাছাড়া তিতির মনে এখন কি চলছে ও খুব ভালো করে বুঝতে পাড়ছে।কারণ এর অভিগ্যতা আছে ওর।এর আগেও এই ড্রাগ অনেক মেয়েকে ও দিয়েছিলো।ও জানে কিছুক্ষন পর তিতির নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না,যতই চেষ্টা করুক, নিজেই আসবে।এরপর এই সাপুড়ের কাছে নিজের সবচেয়ে মুল্যবান জিনিসটি স্বইচ্ছায় সপে দিবে।”
-সুজেত তিতির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে, এবার মুখ তুলে তাকালো তিতির।তিতিরের নেশাগ্রস্ত দৃষ্টি,ওকে আরো বেশি সুন্দর আর লোভনীয় লাগছিলো।তিতিরের দুবাহু ধরে ওকে একদম কাছে টেনে নিলো সুজেত।তিতিরও যেনো সারা দিলো তাতে।তিতির নিজের মধ্যে ছিলো না,তাই সুজেতের বিষাক্ত ছোয়াগুলো কোনও বাধা ছাড়াই অনুভোব করছে।হয়তো বুঝতে পাড়লে এতোক্ষণে নিজের জান দিয়ে দিতো।কিন্তু এখন সব উল্টো হচ্ছে,বরং তিতিরও সুজেত এর সাথে যেনো ডুবে যাবে।
–“হঠাৎ রুমের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করেছে কেউ।রুমটি বেশ অন্ধকার থাকলেও দিনেশ বিছানায় দুজন জনমানব কে আদিমসুখে লিপ্ত হতে দেখতে পারছে।রাগে দিনেশের চেয়ারার রং পাল্টে গেছে।তিতিরকে অন্য কারো সাথে দেখা দিনেশের সহ্যের সব বাধ যেনো আজ পাড় করেছে।দাঁতগুলো চেপেও নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলো না,বরং কপালের শিরাগুলোও ফুলে গিয়েছে।
দিনেশের একটা লাথিতে সুজেত গিয়ে ছিটকে পড়লো বহুদূরে,এতে দেয়ালে মাথা লেগে রক্ত পড়া শুরু হয়।তিতির উঠে বসতে নিলে দিনেশ তিতির এর গালেও একটা চড় বসিয়ে দেয়।এরপর তিতির পেছনের চুলগুলো শক্ত করে নিজের মুঠিতে ধরে,মুখের সামনে মুখ এনে দাঁতেদাঁত চেপে বলে,”এতোই যদি জ্বালা ছিলো তোর তাহলে আমার কাছেই আসতি।ওর কাছে কি এমন আছে যা একদিনেই তোকে বিমোহিত করে ফেলেছে।সরাসারি বিছানায় এসে পড়েছিস।”
তিতির নিরব,মুখে কোনও কথা নেই,বরং দিনেশের দিকেও কেমন কাতর চোখে তাকিয়ে আছে।দিনেশ আরো কিছু বলবে তার আগেই,”তুমিও এসো,আই ডোন্ট মাইন্ড।লেটস এন্জয় টুগেদার।তিতির হঠাৎ দিনেশের কলার চেপে বিছানায় ফেলে দিলো।এলোপাথাড়ি দিনেশকে কিস করতে লাগলো।তিতির অনেক বেশি উন্মাদ হয়ে পড়েছে।আর দিনেশ ব্যাচারা শোকড এর মধ্যে আছে।কি চলছে এসব।কিন্তু তিতির যে স্বাভাবিক আচরণ করছে না,দিনেশ বুঝতে পাড়লো।হঠাৎ দিনেশ তিতিরকে এক ঝটকা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে।
বিছানা থেকে উঠে দিনেশ,সুজেত বোসের কাছে গেলো,সুজেত দিনেশকে দেখেই একটু ভয়ে পিছনে চলে গেলো।দিনেশ সুজেত এর কলার চেপে ধরে,”কি করেছিস ওর সাথে।”
–ক কোথায় করতে পারলাম।তার আগেই তো তুমি এসে পড়েছো।
“তাহলে ও এমন বিহেভ করছে কেনো।কি খাইয়েছিস।”
–stimulant drugs দিয়েছিলাম।কথাটা শুনার সাথে সাথে দিনেশ সুজেত এর নাক বরাবর এক ঘুষি মারে।মুহুর্তে সুজেত চোখে সব ঝাপসা দেখতে লাগলো,বেলেন্স হারিয়ে নিচে পড়ে যায়।যথাসম্ভব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
“তখনই তিতির আবার এসে দিনেশকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে।কি করছো তুমি ওর সাথে,ওকে ছাড়ো আমাকে ধরো।আমি ওর থেকে বেশি সুন্দর।দেখো আমাকে একবার।
Now I need you very much.please accept me.I am very thirsty. pls quench my thirst…
“সিরিয়াসলি তিতির,আর ইউ মেড।তুমি কি জানো তুমি কি বলছো।”
–হুম!দিনেশ স্যার।আমি সব জানি।এন্ড আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ নাউ।
দিনেশ তিতির আজকের কর্মকাণ্ডে খুবই বিরাক্ত।কি করে বুঝাবে এই মেয়েকে।কি বলছে নিজেও তো জানে না।শেষ পর্যন্ত মনে হয় এই মেয়ের থেকে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে পারবো না।আজ তো আমার কাছে আসার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।উফ!
“এখনো ভালোবাসি”
|৩৪|
জানালার সামনে মুখ গোমারা করে বসে আছে প্রিয়ু।জানালার কাচ বেধ করে রাতের আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে ,কি আশ্চর্য! আকাশটারও কি আজ মন ভালো নেই।তাইতো কেমন মনমরা হয়ে আর উদাসীন হয়ে বসে আছে ঠিক আমার মতো।আচ্ছা আকাশেরও কি মন খারাপ হয়।হয়তো! তা না হলে আকাশ জুড়ে বৃষ্টি কেনো নামে।কারণ আকাশের যখনই মন খারাপ থাকে আকাশও তখন কাঁধে,আর তার মন খারাপের আভাশ জানিয়ে দেয় আমাদের।আজ আমার মতো আকাশের মনের অবস্থাও ভালো না,তাইতো সেই কখন ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।
–“প্রিয়ু জানালার পাশে বসে বৃষ্টির সেই রিমঝিম শব্দে নিজেকে আচ্ছন্ন করছে।মাঝে মাঝে মেঘের গুরুগুরু গর্জন,গাছের ডালে বাতাসের ঝাপটা কানে বাজছে।হঠাৎ জোরে শব্দ করে কোথাও বাজ পড়লো,আর এই বাজ পড়া শব্দে প্রিয়ু কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।জানালা দিয়ে আবারও বাহিরে তাকালো।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বাহিরে এখনো।তবে এসবের মাঝে জানালার কাচের উপর আছড়ে পড়া বৃষ্টির ফোটাগুলো নিবিড় ভাবে একবার দেখলে কতোনা অপূর্ব লাগছে।তা হয়তো কোনও উপমা করেও প্রকাশ করা যাবেনা।বাহিরে বৃষ্টি তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে।বৃষ্টির মাত্রা যতো বাড়ছে,
ভেতরের অনুভূতির মাত্রাগুলো যেনো খুব গাঢ় হতে শুরু করছে প্রিয়ুর।হঠাৎ করে আয়নের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।আয়নের জন্য জমে থাকা রাগ অভিমান গুলো যেনো বৃষ্টির সাথে সব ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আর সুখের কিছু মুহুর্তের কথা মনে করে,প্রিয়ুর মনে শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।”
‘দেয়ালে টাঙ্গানো বিশাল ঘড়িটার দিকে বারবার তাকালো প্রিয়ু।রাত নয়টা বাজতে চলছে।আয়ন এখনো আসে নিই বাড়ীতে।কিন্তু কেনো?এতো লেট তো কখনো করেনা।প্রিয়ুর মনের অস্থিরতা একটু একটু করে বাড়ছে।এ থেকে রেহাই পেতে পড়ার টেবিলে বসে পড়লো প্রিয়ু।মনটাকে পুরো ধরে পড়াতে মনোবেশ করার চেষ্টা করছে।প্রায় ঘন্টা খানিক বইয়ের সাথে যুদ্ধ করেও প্রিয়ু এক অক্ষর আয়ত্তে আনতে পাড়লো না।এ কেমন জ্বালা।আগে তো কখনো এমন হয় নি।বরং বর্ষণ দেখলে মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে যেতো।শরীরে বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে ছাদে ছুটে যেতে মন চাইতো।কিন্তু আজ!’
–আবার সময় দেখলো প্রিয়ু,এগোরা টা বাজে।বাহিরে এখনো তুমল বৃষ্টি।কিন্তু আয়ন এখনো আসেনি।
সব দ্বিধাকে পিছনে পেলে,ফোনটা নিয়ে আয়নকে কল করেই দিলো।কিন্তু আশ্চর্য আয়ন ফোন রিসিভ করলো না।প্রিয়ু ভাবলো হয়তো আয়ন গাড়ীতে,বা বৃষ্টির কারণে রিংটোন শুনতে পায়নি বা গাড়ী চালাচ্ছে বলে ফোন পিক করেনি।নিজেকে নিজেই যেনো বুঝ দিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ু।ফোনটা রেখে আবারও জানালায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকালো।রাস্তায় কোনও জনমানব নেই।কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে চারদিকে।এমনেই অনেক রাত,তার উপর এতো বর্ষণ, মানুষ কেনো কুকুড়গুলো হয়তো কোথাও কোনও আশ্রয় চলে গেছে।রাস্তার লেম্পসাইডের আলোতে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টির ফোটাগুলো দেখতে এতোটা সুন্দর্য আগে অনুধাবন করিনি কখনো প্রিয়ু।আসলে সবাই ঠিকই বলে,বৃষ্টিতে প্রকৃতি নতুন রুপে সাঝে।বর্ষার প্রতিটি রুপ আসলে মন থেকে ফিল করতে হয়,কিন্তু আজ প্রিয়ু কেনো জানি করতে পাড়ছে না।মনটা কেমন উতলা হয়ে পড়ছে।বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।মনের ভেতর নানা রকম চিন্তা ভাবনার ঠেউ খেলে যাচ্ছে।কিন্তু কেনো?কেনো আজ এমন হচ্ছে।প্রিয়ু বিচলিত হয়ে আবার ঘড়ির দিকে তাকালো।এতোক্ষণ হয়ে গেলো আয়নের কোনও ফোন আসেনি এখনো।প্রিয়ু এবার সত্যিই ঘাবড়ে গেলো।তাই বাকি কিছু না ভেবে অফিসেই কল করলো।কিন্তু এতোরাতে অফিসে কেউ নেই বলে কেউ ফোন পিক করলো না।আয়নকে আবার কল করলো।কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে।প্রিয়ু টেনশনে পড়ে গেলো।কি করবে এখন।আয়নের আবার কোনও বিপদ হয়নি তো এটা ভাবতেই মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো প্রিয়ুর’।
“প্রিয়ু ছুটলো অনিকের রুমের দিকে।দু বার নক করার সাথে সাথে সারা এসে দরজা খুললো।
প্রিয়ুকে এতোরাতে এখানে দেখেই সারার মেঝাঝ চওরা হয়ে গেলো।তুমি এতো রাতে এখানে।কমনসেন্স কি নেই তোমার।এতোরাতে কাউকে ডিস্টার্ব করতে হয়না জানো না।”
–প্রিয়ু জানে সারা ওকে পছন্দ করে না।কেনো করেনা তাও ভালো ভাবে অনুধাবন করতে পারে।অন্য সময় হলে প্রিয়ুও দুচারটে কথা শুনিয়ে দিতো সারাকে কিন্তু এখন প্রিয়ু কিছু বলার অবস্থায় নেই।তাই চুপচাপ সারার কথাগুলো গিলে ফেললো,”আম সরি সারা।কিন্তু অনিক ভাইয়াকে একটু ঢেকে দেয়না প্লিজ।”
–কেনো?কি দরকার। আগে আমাকে বলো।তারপর ভাববো।
–‘রুমের বাহিরে প্রিয়ুর কন্ঠ শুনে অনিকও এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে।এই সময় প্রিয়ুকে এখানে দেখে অনিক অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো,”কি হয়েছে প্রিয়ু।তুই এখানে,সব ঠিক আছে তো।”
–ভাই,আ..আ য়ন বাড়ীতে এখনো আসে নি।কথাটা বলতেও প্রিয়ুর গলা কাঁপছিলো।তুমি কিছু জানো।কোথায় ও।ওর ফোনটাও বন্ধ বলছে।আমার ভীষণ ভয় লাগছে ভাই।”
“অনিক রুমের দেয়াল ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে একবার সময়টা দেখে নিলো।প্রায় একটার কাছাকাছি।এতো রাত হয়ে গেলো ভাই এখনো বাসায় আসেনি।বাহিরে তো প্রচণ্ড বৃষ্টিও হচ্ছে কখন ধরে।আমিতো ভাবলাম ভাই হয়তো এসে পড়েছে।আসলে আমার আজ বাহিরে একটা মিটিং ছিলো তাই আমি মিটিং করে সোজা বাসায় এসে পড়েছি।ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়নি আজ সারাদিন।”
–এদের কথার মাঝে সারা ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলো,”দেখো আবার, তোমার জ্বালায় কোথাও চলে যায়নি তো।সব সময় তুমি পালাও আজ আয়নদা পালিয়ে গেছে,বলেই হাসতে লাগলো।”
সারার এই সময় এমন চাইল্ডনেস বিহেভিয়ার অনিক একদম আসা করেনি।তাই হতাশ কন্ঠে সারাকে একটা ধমক দিলো,”সেট আপ সারা,আর ইউ মেড।কখন কি বলতে হয় যদি না জানো,তাহলে মুখটা খোলার কোনও দরকারই নেই।চুপ করে বসে থাকো।”
–অনিকের ধমকে সারা রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।আর অনিক নিজে একবার আয়নের ফোনে ট্রাই করতে লাগলো।প্রিয়ু ঠিক বলছে ফোন সুইচঅফ।অনিক দেরি না করে অফিসের দারোয়ানকে কল করলো।
–হ্যালো,কাওসার
‘জে স্যার।’
–আয়নদা কি অফিসে আছে।
‘নাতো স্যার।আয়ন স্যার তো সেই কবেই বের হয়ে গেছে।’
–কখন বের হয়েছে।এক্সাক্ট টাইম বলো।
‘রাত আটটার দিকে নিজের গাড়ীতে কইরা বের হইতে দেখছি।তবে আজ স্যারের বডিগার্ড যায়নি।একা যাইতে দেখছি স্যারকে।’
–ওকে ঠিক আছে।অনিক ফোন কেটে,রবিন সহ সবাইকে কল করে খোঁজ শুরু করে দিলো।মুহুর্তের মধ্যেই বাড়ীর সবার ঘুম হারাম হয়ে গেলো।ড্রয়িংরুমে বসে সবাই আয়নের অপেক্ষা করতে লাগলো।এতোরাতে খবর পেয়ে তিয়াশও চলে আসছে নূর ভিলায়।অনিক তিয়াশ বের হয়েছে আয়নকে খু্ঁজতে।রবিনও তার লোকজন নিয়ে বের হয়ে গিয়েছে আয়নকে খুঁজতে।প্রিয়ু ঘামটি মেরে বসে আছে,মনে এক অজানা ভয় নিয়ে।
………………………………
তাকে চেয়েও, যাবে না চাওয়া
এ যেন আমার নিষিদ্ধ পাপ,
তাকে পেয়েও, হবে না পাওয়া
এ আমায় দেয়া নিয়তির অভিশাপ।
__অগ্নিলা অনন্যা।
ভালোবাসার সাথে প্রিয় মানুষটিকে একটু কাছে চাওয়ার অনুভূতি সবারই জাগে।মনের মধ্যে হাজারো নিষিদ্ধ চাওয়া গুলো বাসা বাধে তখন।কাছে আসার অকুলতা দিনদিন যেনো বেড়ে যায়,তার সাথে বাড়ে কিছু নিষিদ্ধ চাওয়া।চুম্বকের মতো একজন আরেকজনকে আকর্ষণ করে ফেলে তখন।কখনো কখনো মানুষ নিজের এই চাওয়ার কাছে এতোটাই অসহায় হয়ে পড়ে যে,না চাওয়া সত্যও ডুবে যায় অতুল গব্বরে।
“–দিনেশের মনে বারংবারই তিতিরকে পাওয়ার ব্যাকুলতা বেশি ছিলো।তাইতো ও তিতি না বলার পরও বারবার ছুটে যেতো তিতির কাছে একটু ভালোবাসার উষ্ণতা পেতে।আজ সেই তিতির নিজ ইচ্ছায় দিনেশের কাছে এসেছে।নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করছে এক অনবদ্য উপায়,যা হয়তো দিনেশ কল্পনাও করেনি।তিতির এর এই রুপ দিনেশকে পাগল করে তুলছে,তিতিরকে আজ কাছে পাওয়ার ইচ্ছায় হিতাহিত জ্ঞান যেনো লোপ পাচ্ছে।ঠিক বেঠিকের এই খেলায় আজ আবেগ,অনুভূতির জয় হয়ে যাবে মনে হয়।”
-‘প্রথম ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ।শরীর মনে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়।দিনেশ ডুব দেয় আজ তিতির মাঝে।তিতিরও আজ নিজেই আদিমতার ডাকে সারা দিয়ে দিনেশকে একদম কাছে টেনে নেয়।দিনেশ তিতির এমন রুপে একদম অবাক হয়নি।দিনেশ বুঝেও যেনো কিছু বুঝতে চাইলো না।তিতির কে পাওয়ার এই লোভটা আজ নিজেও সামলাতে পাড়লো না।দিনেশ জানে,আজ রাত যতো মধুরিমা হবে,কাল ভোরে এর তিক্ততা আরো বেশি প্রকাশ পাবে।কিন্তু তবুও দিনেশ তিতির থেকে নিজেকে সরালো না।যা হবার হবে,কিন্তু আজ যেনো তিতির কে ওর চাই চাই।এতোদিন পর তিতির অনুমতি পেয়ে একপ্রকার বাঁধনহারা মনের মতো তিতিরকে জড়িয়ে ধরে তার বলিষ্ঠ বাহুর মধ্যে দিনেশ।নিজের ঠোঁট দিয়ে ক্রমশ চেপে ধরে তিতিরের ঠোঁটদুটো।অমৃতের স্বাধ জেনো আজ খুঁজে পেয়েছিলো তিতির ঠোঁটদুটোতে।ও পাগল হয়ে ক্রমশ তিতিরকে নিজের আরো কাছে টানতে থাকে।দিনেশের বলিষ্ঠ দেহের শক্ত হাতের খামচিতে তিতির কোন শব্দও করলো না,এমনকি বাঁধাও দিলো না।
“দুজন এতোটাই আবেশিত উন্মাদ হয়ে পড়েছে যে কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক সব চিন্তা ভাবনার কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই।দুজন দুজনাতে মত্ত হয়ে গিয়েছে।কালকের সকাল ওদের জীবনে কি ঝড় বয়ে আনবে তা হয়তো ওরা কল্পনাও করেনি।
………………….
দূরের মসজিদে আযানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে প্রিয়ু ড্রয়িংরুমের সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।সবাই অনেক আগেই নিজ নিজ রুমে চলে গেছে।কিছুক্ষণ আগে অনিকও চলে এসেছে।অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও আয়নের হদিস পায় নিই।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফিরতে হলো।সকাল পর্যন্ত দেখে পুলিশকে ইনফোরম করার চিন্তা করলো সবাই।
–“কিন্তু প্রিয়ুর মন মানলো না।তাই ও ড্রয়িংরুমেই বসে থাকলো আয়নের অপেক্ষায়।কিন্তু শরীরটা মনের সাথে আর পাড়ছে না।এমনেই অসুস্থ অসুস্থ লাগছে প্রিয়ুর।আয়নের চিন্তায় সারারাত চোখের পাতা এক করেনি একটুও।ক্লান্ত হয়ে সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে নয়ন জোড়া ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে ছিলো দরজার দিকে সারারাত।কিন্তু এখন আর পাড়ছে না।তাই দাঁড়িয়ে পড়লো নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য।”
রুমে এসে প্রিয়ু কিছুক্ষণ পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো।কতো না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রুমটিতে আয়ন আর ওর।রুমে প্রবেশ করার পরই একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসলো প্রিয়ুর নাকে।এটা যেকোনও ঘ্রাণ নয়।আয়নের পারফিউম এর ঘ্রাণ।আয়ন খুব পারফিউম শৌখিন লোক।দেশ বিদেশের নামীদামি ব্রান্ডের পারফিউম আছে তার কালেকশনে।কিন্তু এর মধ্যে একটা পারফিউম আয়ন রেগুলার ইউস করে।যেটার ঘ্রাণে প্রিয়ু আয়নের নেশায় বারবার ডুবে যেতো।আর এখন পুরো রুমে আয়নের সেই পারফিউম এর ঘ্রাণে মো মো করছে।প্রিয়ু প্রাণ ভরে ঘ্রাণটা নেওয়ার চেষ্টা করছে।মনে হয় আয়নকেই ও নিশ্বাসের সাথে নিজের মাঝে নিয়ে নিবে।
–“রুমের প্রতিটি জিনিসে আয়নের স্পর্শ অনুভোব করছে প্রিয়ু।হঠাৎ বুকের মধ্যে একটা শূন্যতার অনুভূতি হচ্ছে।আর সামলাতে পাড়লো না,অনেকক্ষণ ধরে নিজের কান্নাটা দলা পাকিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু এখন আর পারছে না প্রিয়ু।কেনো হচ্ছে এমন,আমিতো তো চেয়েছি তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও।তাহলে কেনো এখন আমি চাই তুমি ফিরে আসো।কান্নায় একদম ভেঙ্গে পড়লো প্রিয়ু।মুখে যাই বলুক,কিন্তু ওর অনুভূতিতো অন্যকথা বলছে এখন।তবে কি প্রিয়ুও আয়নকের আসক্তিতে নিজেও আসক্তি হয়ে পড়েছে।”
–প্রিয়ুর মনে পড়ে গেলো আয়নের বলা সেই কথা,”আল্লাহ যাতে তোকে খুব শীঘ্রই বিধবা করে দেয়।আর আমার থেকে তোকে মুক্ত করে দেয় একবারের মতো।”
তাহলে কি আয়নের দোয়া কবুল হয়ে গেলো।আমি কি আর কখনো আয়নকে দেখতে পারবো না।নিজের মনের কথা কি আর বলা হবে না।এটা ভেবেই প্রিয়ু মাটিতে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো আবার,”প্লিজ আয়ন ফিরে আসো।আমি আর কখনো তোমাকে এসব বলবো না।কখনো তোমার থেকে দূরে যেতে চাইবো না।প্লিজ ফিরে আসো।খুব মনে পড়ছে তোমাকে।আমি দূরে চলে যেতে চেয়েছিলাম,কিন্তু আজ তুমিই আমার থেকে দূরে চলে গেলে,এতোটাই দূরে যে হাত দিলোও তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি না।আজ আমি বুঝতে পাড়ছি,তোমাকে ছাড়া আমার কোনও মানে নেই।কোনও অস্থিত্ব নেই।তুমিহীন আমি শুন্য।আমার পূর্নতা শুধু তোমার মাঝে।আমি বড্ড পাগল, তাই তো কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি তোমাকে।বারবার তোমাকে,তোমার ভালোবাসাকে অবহেলা করছি।আম সরি,প্লিজ একবার ফিরে আসো।আমি প্রমিজ করছি তোমাকে আর নিজ থেকে আলাদা করবো না।প্লিজ।
–“হঠাৎ প্রিয়ু কিছু একটা মনে করে উঠে দাঁড়ালো।চোখের পানি মুছে ওয়াসরুমে গিয়ে ওজু করে নামাযে দাঁড়ালো। প্রিয়ু বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ওকে সাহায্য করতে পারবে না।সৃষ্টি কর্তার কাছে জায়নামাজে বসে আয়নের জান ভিক্ষা যাচ্ছে প্রিয়ু।আয়নের বলা কথাটা যাতে মিথ্যা হয়,তার জন্য স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে সিজদায় বসেই কান্না করছে।”
–যে প্রিয়ু আয়নের চেহারাও দেখতে চায়নি,আশ্চর্য! আজ সেই প্রিয়ু আয়নকে একবার দেখার জন্য এতোটা ছটফট করছে।আয়নের জন্য দোয়া যাইছে।ভালোবাসায় হয়তো সবই সম্ভব।তাইতো আয়নের ভালোবাসা প্রিয়ুর মনেও ভালোবাসার সুবাশ ছড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কি হবে আয়নের।আয়নের সে দোয়ার।উপরওয়ালা প্রতিদিন মানুষের একটি ইচ্ছা নাকি পূরণ করে।তবে কি সত্যিই আল্লাহ কবুল করেছে আয়নের দোয়া।
চলবে…।