“এখনো_ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-৯|
একটা সাদা ধবধবে বিছানার পাশে একটি টেবিলের উপর রাখা এলার্ম ঘড়িটি সেই কখন ধরে বেঝেই চলছে।বাহিরে এতোক্ষনে সকালের সূর্যের তেজও ফুটে উঠেছে।অথচ এই এলার্ম ঘাড়িটির মালিকের উঠার কোনও নামই নেই।অবশেষে বিরক্ত হয়ে এলার্মটি বন্ধ করেই পাশে হাতড়িয়ে প্রিয়ুকে খুঁজতে লাগলো আয়ন।কিন্তু প্রিয়ু থাকলে না আয়ন পাবে।
“চোখ দুটো খুলে খালি বিছানা দেখেই আয়নের মেঝাজটাই গরম হয়ে গেলো,কারণ আয়ন প্রিয়ুকে বলেছিলো সকালে যেনো ঘুম থেকে উঠেই প্রিয়ুকে সামনে দেখতে পায়।
কিন্তু এতো বলা সত্যেও মেয়েটি আয়নের আগেই রুম থেকে আজও বের হয়ে গিয়েছে।মেয়েটি এতো ঠেঠা কেনো আয়ন আজও বুঝতে পারলো না।আয়ন যা নিশেধ করবে তাই বেশি বেশি করে আয়নকে রাগিয়ে দেবে এই মেয়েটি।আয়নও সব চিন্তা বাদ দিয়ে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।”
–ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করতে বসেছে।পাশেই প্রিয়ু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ প্রিয়ুকে বসতে বলছে না একটি বারও।কারণ একটাই মোহেনী।আয়নের ফুফু আর তিয়াশের মা।
“আয়নের বিয়ের খবর পেয়েই এই মহিলা নিজের মেয়ে সারাকে নিয়ে আজ সকাল সকাল হামলা করলো নূর ভিলায়।আর এসেই প্রিয়ুওর উপর চওড়া হয়েছে।কারণ একটাই প্রিয়ু আসমা বেগমের আত্মীয় হয়।মোহিনী কোনো কালেই আসমা বেগমকে তেমন পছন্দ করতো না আর এই পরিবারের বড় ছেলেও সেই একই বংশের মেয়ে নিয়ে আসলো অবশেষে।তাই প্রিয়ুর ফুপু আসমার উপরও ভীষন রেগে আছে।”
–মহিনী মনে করে সম্পূর্ণ দোষ তার ভাইয়ের বউয়েরই।আগেই লাগাম ধরা উচিত ছিলো ছেলের।আয়নের প্রিয়ুর প্রতি অতিরিক্ত দরদ মোহিনীর একদম পছন্দ হতো না।তাই আসমাকেও এই বিষয় কয়েকবার সাবধান করেছিলাম কিন্তু শুনেনি।তাইতো আজ এই দিন দেখতে হচ্ছে।
“তাহলে আসমা তুমি তোমার ইচ্ছে পূরণ করেই ছাড়লে।অবশেষে এই মেয়েকে বাড়ীর বউ করেই আনলে।”
–কি বলছেন আপা,আমি আবার কি করলাম।আমিতো নিলীমার সাথে আয়নের বিয়ে ঠিকও করে ফেলেছিলাম।ভেবেছিলাম এতে আয়নের বিজনেসের জন্যও ভালো হবে।কিন্তু ছেলে না বলে নিজেই এতোবড় একটা ডিশিসন নিয়ে নিলো।এখন বলুন আমার আর কি করার থাকে।
“কি করার থাকে মানে।কি সব বলছো আসমা।আরে ছেলে না হয় অবুঝ বুঝলাম,কিন্তু তুমি আসমা।কিভাবে মেনে নিলে এসব।এই মেয়ে কোন দিক দিয়ে আয়নের যোগ্য না।না আছে বংশ পরিচয়,না আছে প্রাচুর্য আরে শিক্ষাগতো যোগ্যতাও নেই।যা আছে রুপটা আর ওটা দিয়েইতো আমাদের ছেলেটাকে হাত করেছে।”
–আর আমাদের আয়ন দেশের একজন নামকরা ডিজাইনার।ফ্যাশন হাউজের মালিক।দেশের বাহিরেও ওর কতো নামধাম।ওর প্রত্যেকটি গতিবিধির দিকে সবার নযর থাকে সব সময়।আর এখন এই বিয়ের কথা কোনও ভাবে মিডিয়ায় পাবলিস হলে কি হবে জানো!এই মেয়েকে সবার সামনে পরিচয় করাতে নিলে আমাদের লজ্জায় মাথাটা কাটা যাবে।
“আচ্ছা বলতো তোমাদের বংশের সব মেয়েরাই কি এমন। বড় লোক ছেলে দেখলেই পটানোর ট্রেনিং মনে হয় বংশগতো পেয়েই আসে এরা।যেমন গাছ তেমনি এর ফল।তুমি যেমন মাথা খারাপ করেছিলে আমার ভাইয়ের তেমনি তোমার ভাইঝিও আয়নের মাথাটা পুরো বিগড়ে ছেড়েছে।”
–নিজের ছেলেমেয়েদের সামনে এতো কথা শুনে আসমা বেগমের রাগটা প্রিয়ুর উপর এখন আরো বেড়ে গেলো।উনিও মনে করছেন আজ এই মেয়েটির কারনেই এতো কথা শুনতে হচ্ছে এই বয়সেও উনাকে।
“মা এসব কি বলছো।প্লিজ একটু থামো।প্রিয়ু এখন দাদা ভাইয়ের বউ, কমপক্ষে দাদা ভাইয়ের কথা চিন্তা করেই ওকে একটু সম্মান দেও।”(তিয়াশ)
–একদিন না বলেছি বড়দের মাঝে কথা বলতে নেই তিয়াশ।আর আমি এখন কি করবো না করবো তোমার থেকে কি পারমিশন নিতে হবে।চুপ করে নাস্তা করো।এতো বড় হওনি তুমি যে মায়ের উপর কথা বলবে।
“প্রিয়ু জানতো এমনি হবে,এই বাড়ীর অনেক সদস্যই যে প্রিয়ুকে পছন্দ করেনা এটা প্রিয়ু খুব ভালো করেই জানে।তাইতো আয়নের সাথে এতো ভালো সম্পর্ক থাকা সত্তেও প্রিয়ু তার ফুফুর বাড়ী আসতো না।আর কোনও কারণে আসলেও এভাবে অপমান হতে হতো প্রতিবার।প্রিয়ুর দুগাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আয়নের উপর প্রচণ্ড রাগ উঠছে প্রিয়ুর কেনো সে বিয়ে করেছে ওকে।এভাবে অপমানিত হওয়ার জন্য।”
_____________
–ঠিক তখনি আয়ন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো।আড় চোখে একবার প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা সবার দিকে তাকালো।নিজের ফুফুকে সকাল সকাল এখানে দেখেই যা বুঝার আয়ন বুঝে নিয়েছে।প্রিয়ুর এমন অবস্থা কেনো?
“আয়নকে আসতে দেখেই সারা বলে উঠলো,আরে আয়নদা এতোক্ষনে তোমার আসার সময় হলো।আমরাতো তোমার জন্যই কখন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।আসো বসো,সারা তার পাশের চেয়ারটা ঠিক করে দিলো।সারা হলো আয়নের কাজিন আর তিয়াশের বোন।”
–কিন্তু আয়ন কোনও উত্তর না দিয়েই সারাকে এভোয়েড করে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে প্রিয়ুর হাতটা ধরে বসিয়ে দিলো।
আয়নের এমন আচরনে প্রিয়ু যেমন শোকড হলো,তেমনি ফুফু রাগান্বিত।
তবে অনিক আর তিয়াশ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।ওরা জানতো আয়ন সামনে এলেই মোহিনী বেগমের মুখে কুলুপ লেগে যাবে।আর তাই হলো।
আর এসব দাঁতেদাঁত চেপে আয়নের কান্ড দেখছে মোহিনী।
“আয়ন প্লেটে খাবার নিয়ে প্রিয়ুর সামনে দিলো,খেতে”।
–কিন্তু সকাল সকাল এতো কথা শুনে প্রিয়ুর এমনেই পেট ভরে গিয়েছে তাই খাবার খেতে একদম মন চাইছে না।আয়নকে কিছু বলতে আয়নের দিকে তাকাতেই প্রিয়ু ভয়ে আতকে উঠলো।কারণ আয়নের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে,রাগে মাথার রগগুলো ফুলে আছে।
‘প্রিয়ুর বুঝতে বাকি নেই আয়ন রেগে আছে ভীষন রেগে আছে।যা আয়নের শান্ত চাওনি বলে দিচ্ছে।’
‘-প্রিয়ু আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো।কিন্তু এখনো চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তখনকার কথা গুলো ভেবে।যা আয়ন দেখার আগেই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেলছে বার বার প্রিয়ু আড়ালে।’
“-কিন্তু প্রিয়ুর চোখের জল আয়নের থেকে লুকানো কোনো কালেই সম্ভব ছিলো না তাই আজও হয়নি।আয়ন কারো কোনও তোয়াক্কা না করেই পরম যত্নে প্রিয়ুর চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
-আয়ন মাহবুভের ওয়াইফ তুই।তাই তোর চোখের জলগুলোও এখন অনেক দামী।দুচার আনা লোকের কথায় এই দামী জিনিসটি অপচয় করা মোটেও পছন্দ না আমার।তাই আর কোনও জল দেখতে চাই না আমি তোর চোখে।দেখলে কি হবে জানিস তো?”
–প্রিয়ু একটা শুকনো ঢোক গিলে মোহিনী ফুফুর দিকে তাকালো।কারণ আয়নের এই শান্ত মাথায় ওয়ার্নিং টি প্রিয়ুর জন্য ছিলো না, ছিলো মোহিনী ফুপুর জন্য,যা অন্য কেউ বুঝতে না পারলেও প্রিয়ু ঠিকই বুঝতে পারছে।কারণ আয়নকে তার খুব ভালো করেই চেনা।
“আর এদিক দিয়ে মোহিনী রেগে ফুলে যাচ্ছে।কারণ দুচার আনার লোক বলতে আয়ন যে কাকে বুঝিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই মোহিনীর।”
–ডাইনিং টেবিলে সবাই চুপচাপ বসে খেতে লাগলো,কারো মুখে কোনও কথা নেই।কিন্তু এর মধ্যে একজনের মন প্রচণ্ড ভাবে পুড়ছে।সে আর অন্য কেউ না আয়নের কাজিন সারা।
সারাও ছোটবেলা থেকেই আয়নের উপর পুরো ফিদা।আর ফিদা হবেই না কেনো।আয়নের পুরুষালি ব্যক্তিত্ব,জিম করা সুগঠম বডি দেখে যে কোনও নারী প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাবে।তার উপর আয়নের প্রফেশন, একজন নামকরা ফ্যাসেন ডিজাইনার,যার একটি ড্রেস কিনতে লাখখানিক টাকা গুনতে হয়।এমন একজন পার্ফেক্ট মানুষকে কেনা পেতে চায়।
“তবে সারা আয়নের এই পুরুষালি ব্যক্তিত্বের উপরই বেশি এট্রাকটিভ হয় বারবার।আর অন্য কিছু দেখার মনে হয় ওর কোনো সময়ই নেই।
তাইতো প্রোপজ করার চেষ্টাও করেছিলো কয়েকবার। কিন্তু আয়ন নিজের চারপাশে এমনি একটা শক্ত ব্যক্তিত্ব বিরাজ করে রেখেছে যে সারা সাহসই পেলো না এগোতে আর।এছাড়া আয়ন প্রিয়ুকে যেমন ট্রিট করে,এমন করে বাকি কাজিনদের সাথে কখনো করেনি।তাই প্রিয়ুকে দেখলেই সারার গা জ্বলে যায়।শেষ করে দিতে মন চায় প্রিয়ু নামের এই আপদটাকে।ওর ভেতরে এক বিশাল হিংসের লাভা জন্ম হয়েছে,যা প্রিয়ুকে নিমিষেই পুড়ে দিতে পারবে যেকোনও সময়।”
“নাস্তা করা হলে আয়ন প্রিয়ুকে রুমে গিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে বলে।প্রিয়ুও বাধ্য মেয়ের মতো রুমে চলো যায়।
-প্রিয়ু চলে যাওয়ার পরই আয়ন মোহিনী ফুফুর দিকে তাকায়।তো ফুফু কেমন আছেন।
‘ভালো আর থাকতে দিলে কই।’
-তাই নাকি,তাহলে বলে ফেলুন এমন কি করেছি যার জন্য আপনার ভালো না থাকার কারণ আমরা হয়ে পড়েছি।
‘এতো ন্যাকামি করো না আয়ন।যেভাবে বলছো মনে হয় কিছুই জানো না।’
-না জানি না,তাইতো আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।আয়ন রেগে কথাটা বললো।
“ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারলো ছেলে কতোটা রেগে যাচ্ছে।তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে আয়নের পিতা ইরফাত বলে উঠলো,বাবা তুমি শান্ত হও,আর এখন কথা না বাড়িয়ে অফিসে যাও।আমরা পরে এই বিষয় কথা বলবো।”
–না পারিনা,কেউ আমারই বাড়ীতে এসে আমারি বউকে কথা শুনাবার সাহস করবে,আর আমি বসে বসে তা হজম করবো।এতোটা কাপুরুষ আমি না।বাবার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে।
“ছেলে যে ইরফাত সাহেবকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে,তা আর বুঝতে বাকি নেই।”
–ফুফু ভাইয়ের বাসায় মেহমান হয়ে এসেছেন,তো মেহমান হয়েই থাকুন।আমার ব্যক্তিগত লাইফে এতো ইন্টেফেয়ার করা মোটেও পছন্দ না। তাই এসব বিষয় বিশেষ করে খেয়াল রাখবেন।আর একটা কথা ভালো করে কান খুলে শুনে নিন,প্রিয়ু আমার ওয়াইফ,আর আমার ওয়াইফকে অপমান করা মানে আমাকে করা।আমি কিন্তু সহযে আমার অপমান ভুলিনা।
আর আমি ইরফাত মাহম্মুদও নই,তাই আমার সাথে একটু বুঝে শুনে বাজতে আসবেন।তানা হলে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কি হন।
আয়ন এসব বলেই নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আয়ন শুধু এটাই ভাবছে কেনো তার পিতা তার এই বোনের সামনে এমন বিলাই হয়ে যায়।
“আর মেহিনী দাঁতেদাঁত চেপে বসে বসে আয়নের কথাগুলো শুনছিলো এতোক্ষন। আর এখন আয়নের সম্পূর্ণ ঝাল যে উঠাবে ইরফাতের উপর।তা ইরফাত খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।”
___________
প্রিয়ু রুমে বসে আয়নের অপেক্ষাই করছিলো।প্রিয়ুর এখানে আর এক মুহুর্তেও থাকতে মন চাইছে না।দূরে কোথাও চলে যেতে মন চাইছে।অতিতের কিছু কথা না চাইতেও মনে পড়ছে বারবার এখন।প্রিয়ুর সহ্য হচ্ছে না এসব আর, তাই মুখে হাত দিয়ে ডুকরিয়ে কেঁদে উঠলো আবার।
–পৃথিবীতে একটা মেয়ে কতোটা অসহায় হয়ে পড়ে,যখন তার মাথার ছায়া তার বাবা মা না থাকে।এই কষ্টটা একটা মেয়েই অনুভোব করতে পারে।বাবা মা না থাকলে শ্বাসুর বাড়ীর হাজার অপমান কস্ট সহ্য করেও পরে থাকতে হয়।কারণ মাথার উপর ছাদ নামের বস্তুটি যে নেই।একটু আশ্রয়ের জন্য কতোটা লাঞ্চনা দিনের পর দিন সহ্য করে যেতে হয়।কেনো এতোটা অসহায় মেয়েরা।
“আয়ন রুমে ডুকে প্রিয়ুকে এই অবস্থায় দেখে বুকের ভেতরে ভীষন কষ্ট হতে লাগলো।গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝতে চেষ্টা করছে প্রিয়ুর মনে কি চলছে এখন।”
–আর প্রিয়ুও মুখে হাত রেখেই উপলদ্ধি করতে পারে আয়নের সেই গভীর দৃষ্টি।হঠাৎ প্রিয়ু মাথা নিচু করা অবস্থায়ই আয়নকে বলে উঠে,
কেনো আয়নদা!কেনো এমন হয় আমার সাথে বলতে পারো।কেনো সবকিছুর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় আমার উপর।কেনো বিনা কারণে প্রতিবার আমাকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।কেনো?
যাকেই আমি বিশ্বাস করি সেই আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে চূরমার করে আমাকে এমন অবস্থায় এনে দেয় যে আমি বুঝতেও পারিনা আমি বেঁচে আছি নাকি মরে। কেনো?
প্রিয়ু এবারও কাঁদছে তবে এবার নিঃশব্দে জলগুলো গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
“আয়নের মন থেকেও একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়।অজান্তেই প্রিয়ুকে বারবার আয়ন কষ্ট দিয়ে ফেলে।আজ খুব করে প্রিয়ুর কষ্টগুলো অনুভোব করছে আয়ন।সেই দিনের ঘটনার জন্য নিজেকে ধীক্কার দিতে লাগে।
কি করে করতে পারলাম আমি এসব আমার প্রিয়ুর সাথে।রাগের বশে করা আমার ওই জগন্য কাজ প্রিয়ুর ছোট মনে প্রচণ্ড আঘাত এনেছে।এখন চাইলেও হয়তো এসব ঠিক হবে না।তবুও আমি চেষ্টা করবো।আমার আগের প্রিয়ুকে আমার চাই।খুব করে চাই।”
–তাই আয়ন মনে সাহস সঞ্চয় করে প্রিয়ুর দিকে এগিয়ে গেলো।প্রিয়ুর কাছে বসে প্রিয়ুর একটা হাত নিজের দুহাতের মাঝে নিলো।আয়নের এমন আচরণে প্রিয়ু কিছুটা অবাক হলেও কিছু বললো না।চেয়ে আছে আয়নের দিকে নিষ্ফলক ভাবে।
তোকে একটা গল্প বলি শুনবি—
প্রিয়ু বুঝতে পারছে না আয়ন এখন আবার নতুন করে কি বলবে।তাই শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
____________
জানিস! আজব হলেও সত্যি আমি জানতামই না এই শহরে আমার আশিষ নামের কোনও মামা আছে।মা কখনো বলেই নিই তোদের কথা।কেনো জানি না।
কিন্তু মামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর মাকে একটু বিচলিত হতে দেখেছি।তাই সেদিন না চাওয়া সত্যেও মা আমাকে নিয়ে তোদের বাড়ীতে যায়।
সত্যি করে বলতে কোনও কষ্টই অনুভোব হয়নি মামীর লাশটি দেখে,হয়তো চিনতাম না বলে।কিন্তু তবুও মনটা কেনো জানি ছটফট করতে লাগলো হঠাৎ ,কারো কান্না শুনে।
তাকিয়ে দেখি লাশ থেকে একটু দূরে বসে একটা মেয়ে কান্না করছে।আর তার কোলে ছিলো তারই এক বছরের ছোট ভাই।কান্নার মাঝেও ভাইটিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে মেয়েটি।
কেনো জানি একটা মায়া চলে আসলো মেয়েটিকে দেখে।আর আশারি কথা।মেয়েটি দেখতে খুব মিষ্টিও ছিলো।সেদিন ওই মায়ার টানেই মেয়েটির মাথায় হাত দিয়ে তাকে সান্তনা করার চেষ্টা করেছিলাম।বিশ্বাস,কর সেদিন আর কিছুই ছিলোনা মনে।
–আস্তে আস্তে দিন গেলো,বছর এলো।মেয়েটিও আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো।আর নিজের অজান্তেই সেই ছেলেটি মেয়েটির প্রতি দূর্বল হতে লাগলো।ও তো শুধু মেয়েটির শাহারা হতে চেয়েছিলো।যাকে অবলম্বন করে মেয়েটি যাতে বাঁচতে পারে সুন্দর ভাবে।কিন্তু ছেলেটি জানতোই না আসলে ও নিজের বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন পেয়ে গেছে।
“ছেলেটি একটু গম্ভীর টাইপের ছিলো ছোটবেলা থেকেই।কারো সাথে তেমন মিশা হয়নি কখনো ওর।কিন্তু সেই ছেলেটি তার ছোট বড় সব কথা শেয়ার করতে লাগলো সেই বাচ্চা মেয়েটির সাথে।জানে না কি শান্তি পেতো।তবুও করতো।”
–মেয়েটিও তার হাসি,কান্না সব কিছুর মধ্যে ছেলেটিকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ফেলতে লাগলো।সারাদিনের সব কথা ছেলেটির সাথে শেয়ার না করলে হয়তো ওর ঘুমই হতো না।ছেলেটিও মেয়েটির এই বাচ্চামো স্বভাব,আর ওর সব পাগলামি গুলোকে ভালোবাসতে লাগলো।না চাওয়া সত্যেও একটা গভীর মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেলো দুজনে।
“একদিন ছেলেটি অনুভোব করলো,এটা শুধু মায়া না,অন্য কিছু।এটা চিন্তা করতে গিয়েই একটা অসহ্য যন্ত্রনা কুড়েকুড়ে মনটাকে যেনো খেয়ে ফেলতে লাগলো।কেনো ছেলেটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না।অস্থিরতা এতোটাই ভর করেছিলো যে মাথার চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে মন চাইছিলো।
‘-ঠিক তখনি মেয়েটি সামনে এসে যখন বললো,আয়নদা তুমি ঠিক আছো তো।এমন কেনো লাগছে তোমায়।আমি কি ডাক্তার ডাকবো।’
-হঠাৎ করে মেয়েটির হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় বিশ্বাস কর আমি যেনো মুহুর্তে চাঙ্গা হয়ে গেলাম।বুঝতে পাড়লাম বুকের সেই ব্যথাটাও এখন আর করছে না।আমি নিষ্ফলক মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।জীবনে প্রথম কাউকে একটু কাছে পেতে মন চাইলো,তীব্রভাবে!কিন্তু এই অপরিণত মেয়েটাকে কিভাবে বুঝাতাম আমার কি চাই ওর কাছ থেকে।”
–ছেলেটি অপেক্ষা করতে লাগলো মেয়েটির পরিণত হওয়ার।যাতে করে ছেলেটি তার মনের কথাগুলো মেয়েটিকে বুঝাতে পারে।মেয়েটিও আস্তে আস্তে যৌবনে পদার্পণ হতে লাগলো আর আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দরও। আর মেয়েটির এই সোন্দর্য ছেলেটিকে আরো বেশি পাগল করতে যথেস্ট ছিলো।
মেয়েটি এতো কাছে থেকেও কখনো বুঝতেই পারেনি ছেলেটি কি গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে মেয়েটির সব কিছু চোখ দিয়েই শুষে নিতো।মেয়েটির ধীরেধীরে যৌবনে পদার্পণ ছেলেটির মনে কি পরিমাণ ঝড় তুলতো মেয়েটি কখনো বুঝে নিই।
“মেয়েটির প্রতিটি বিষয় খেয়াল রাখতে রাখতে ছেলেটি মেয়েটির প্রতি এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছিলো যে মেয়েটি একদিন ছেড়ে ওকে, অন্যের কাছে চলে যাবে।এটা অনুভোব করতেই মাথাটা বিগড়ে যেতো।বারবার মনে শুধু একটা প্রশ্নই আসতো কেনো ও অন্যের কাছে যাবে।ও শুধু আমার,ওর সব কিছুই আমার।কাউকে টাচ করাতো দূরে তাক সামনেও আসতে দেবো না কখনো।”
—ক ককিন্তু আ আমি তোমাকে সব সময় দাদার চোখেই দেখেছি আয়নদা।অন্য ক কিছু না।
“আয়ন হেসে,জানি!আর এটাইতো আমার কষ্টটাকে আরো বাড়ীয়ে দিতো।আমিও নিজের মনকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে মেয়েটি ছোট তার উপর তোর কাজিন বোন।ওকে বোনের চোখেই দেখ।
কিন্তু বিশ্বাস কর প্রিয়ু,প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আমি কখনো তোকে বোনের নযরে দেখতেই পারি নিই।আর দেখতে চাইও না।”
–এমন না আমি চেষ্টা করিনি তোকে ভুলতে।অবশ্যই করেছি।অন্য মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টাও করেছি।কিন্তু কেনো জানি তাদের স্পর্শ আমাকে শান্তি দিতো না।আমাকে উন্মদ করার জন্য তোর একটু ছোয়া যেখানে যথেষ্ট। সেখানে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েও পেতাম না।অবশেষে নিজের সাথে অনেক লড়ে বুঝতে পারলাম এই মেয়েটিকে ছাড়া আমার চলবে না।আমার বাঁচার জন্য হলেও মেয়েটিকে চাই আমার।কে কি বলে তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
শুধু এতোটুকু জানি আমার প্রেরণা তুই,
আমার অস্থিত্ব তুই,
আমার আবেগ তুই,
আমার ভালোবাসা তুই।
চলবে…।
❌