#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১৯
.
জীবনের সময়গুলো কিভাবে কিভাবে পার হয়ে যায়। কখনো রঙিন স্বপ্নে মোড়া কখনো ধূসর কালো, হাসি-কান্না, জয়-পরাজয় নিয়েই জীবন।
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
প্রত্যেকেই ভাবে জীবনটা যদি নিজের ইচ্ছে মতো সাজাতে পারত!
আজ সেই বাচ্চাটা হয়তো পৃথিবীতে আসবে তার কাঙ্ক্ষিত অধিকার নিয়ে।
রিদিমা এর মাঝেই বাচ্চাটা এবরশন করার কথা ভেবেছে, কিন্তু সায়ান আর পরিবারের জন্য পারেনি। বিশেষত রিদিমা নিজের বিজনেস এর কারণে আর এ নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি।
আজ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিদিমাকে।
বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে। সায়ান স্থির হতে পারছে না কোনোভাবেই।
বারবার অজানা শঙ্কা জাগছে মনে।
‘আমার বাচ্চার কিছু হবে না তো! রিদিমা ভালো থাকবে তো!”
আল্লাহর কাছে দোয়া করছে বারবার।
অবশেষে ঘন্টাখানেক পরে কোনোরকম জটিলতা ছাড়াই মেয়ের মা হয় রিদিমা।
কিছুক্ষণ পরে এসে নার্স একটা ফুটফুটে মেয়েকে এনে দিয়ে যায় সায়ানের কোলে।
ছুটে আসে সবাই।
এটাই সায়ানের সন্তান, সায়ানের প্রথম সন্তান। খুশিতে সায়ান নির্বাক হয়ে যায় যেন।
অপলক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে “মায়া!”
আস্তে আস্তে নিয়ে সাহরাফ রহমানের কোলে দেয় মেয়েকে।
তারপর সাহরাফ রহমানের কোল থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নেন জাহরা।
“আমার স্ত্রী কেমন আছেন ম্যাম?”
প্রশ্ন করে সায়ান।
“জ্বি ভালো আছেন, ২০ মিনিট পরে উনাকে কেবিনে দেওয়া হবে।”
সবাই কেবিনে যায় রিদিমাকে দেখতে।
রিদিমার খুব ভালো লাগছে মেয়েকে দেখে।
আগে রিদিমা ছেলের মা হয়েছিল, আর এখন মেয়ের মা, অনুভূতি গুলো মেলাতে থাকে রিদিমা। বেশ ভিন্ন অনুভূতি। আজ অনিকের কথা খুব মনে পড়ছে। বরাবরের মতো এবারও ওসব ভাবনাকে মাটিচাপা দেয় রিদিমা। অনিক জন্মের পর থেকেই নানি, দাদি আর বাবার কাছেই বেশি বড় হয়েছে। রিদিমা নিজের লেখাপড়া নিয়ে থাকত। সে তো অতীত, রিদিমার দূর্ভাগ্য আর অনিকের না পাওয়া।
আপাতত আমরা অনিককে ভুলে যাব যেভাবে সবাই ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চাদের ভুলে যায়।
ভুলে যায় তাদেরও কষ্ট পাওয়ার অধিকার আছে। তবে অনিক ভাল আছে। অনেক অনেক ভাল আছে তার বাবার কাছে।
কলুষিত সমাজের ভালো মানুষদের জন্য এটাই স্বান্তনা।
ফিরে আসি রিদিমার কাছে,
রিদিমার ডেলিভারীজনিত কোনো সমস্যা না হওয়ায় সাতদিনেই রিলিজ দিয়ে দেয় রিদিমাকে।
হসপিটালে প্রতিটি সময় রিদিমার পাশে ছিল সায়ান। চোখের আড়াল করেনি একটুও।
“মেয়ের নাম কি রাখবে?”
প্রশ্ন করে সায়ান।
“তুমি বলো?” মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় রিদিমা।
“মায়া”
সবার সাথে কথা বলে আকীকা করে নাম রাখা হলো ‘রাফসানা সায়ান মায়া’
সাহরাফ রহমানের বাড়িটা যেন আজ মায়ার জন্য মায়াময় হয়ে উঠেছে।
বাড়িতে যেন নতুন প্রাণ এসেছে।
মায়া যতক্ষণ জেগে থাকে সবাই আশেপাশেই থাকে।
সায়ান মূহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না মায়াকে। মায়া সায়ানের আরেকটা প্রাণ।
মায়ার জন্য একগাদা খেলনা আর ড্রেস কিনে এনেছে। তার এ কথা মনে ছিল না মায়া এখনো খেলতে পারেনা বা এইসব ড্রেস পরার মতো বড় মায়া হয়নি।
সবাই প্রচুর হাসে মায়ার জন্য সায়ানের পাগলামি দেখে।
মায়াকে সবসময়ই কোলে রাখে নওশি।
বাচ্চাদের কোলে নিতে খুব ভালবাসে সে। রোশনি মায়াকে ডাকে ‘মায়ামনি’
পুরো পরিবারের মধ্যে মায়া হচ্ছে এক সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ।
মায়ার জন্য সবার মাঝে যে আনন্দের জোয়ার বইছে তা হয়তো কোনো শব্দে বর্ণনা করা যাবে না।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এভাবেই সবার মাঝে মায়া ছড়িয়ে দিয়ে বড় হতে থাকে ছোট্ট মায়া।
.
আজ মায়ার ছয় মাস পূর্ণ হয়ে গেছে। অল্প অল্প বসতে শিখেছে মায়া।
ড্যাবড্যাব করে তাকায় চারিদিকে। খিলখিলিয়ে হাসে। ওকে হাসাতে পারলে রোশনির যেন জীবন সার্থক হয়ে যায়। সারাক্ষণ ওকে নিয়ে পড়ে থাকে নওশি আর রোশনি।
মায়াকে ঘিরে সবাই বসে আছে।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল।
“আমি দরজা খুলে দিচ্ছি ” বলে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই থ হয়ে গেল নওশি।
“সারপ্রাইজ!”
“তুইইইইই!”
“কি রে হা করে কি দেখছিস?”
“আ…আপু তুই!!!!!!!?”
“কেন চিনতে পারছিস না?”
” মা..মানে! ভাইয়া তোমরা মানে না বলে… হঠাৎ!”
ওর অবস্থা দেখে হেসে ফেলে জয় আর নিশিকা।
“আয় আপু, এস ভাইয়া, মা দেখ কে এসেছে!”
“মায়া জন্মের সময় তো আসতে চেয়েও পারলাম না, তোর ভাইয়ার সময় হলো না। তাই এখন আসলাম।” বলতে বলতে সায়ানের ঘরের দিকে গেল।
সবাই জয় নিশিকাকে দেখে অবাক। ওরা বলেছিল আসবে না সময় নেই।
সবার জন্য অনেক গিফট নিয়ে এসেছে নিশিকা। মায়ার জন্য একরাশ খেলনা।
সবাই আজ খুব খুশি।
পরিবারের আনন্দগুলো এমনই। ছোট ছোট খুশিগুলোই হাসির জোয়ার বইয়ে দেয়।
পরিপূর্ণ একটা পরিবার পাওয়াটা খুব ভাগ্যের ব্যাপার। যেটা সবাই পায় না। পরিবারের আনন্দগুলো সবাই একসাথে উপভোগ করতে পারে না। সবার কপালে থাকে না।
এভাবেই হাসি আর আনন্দের মাঝেই কেটে যাচ্ছে সাহরাফ রহমানের পরিবার।
একরাশ ভালবাসা নিয়ে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে মায়া।
এভাবেই তাদের জীবনের গল্প গুলো শেষ হতে পারত, এই আনন্দের মাঝেই। কিন্তু জীবন আপন নিয়মে চলে। চাইলেই জীবনে গন্ডিগুলোকে নিজের নিয়মে সাজানো যায় না।
.
জয় নিশিকা বেশি সময় নিয়ে আসেনি এবার। মাত্র পনেরো দিনের ছুটি।
আরো কিছুপরে জয়ের লম্বা ছুটি আছে। তখন আসবে বলে সবাইকে আবার চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নেয় নিশিকা। রোশনির মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়াতে রোশনিকে নিয়ে যায় নিশিকা।
অস্ট্রেলিয়া গিয়েই বাবাকে রোশনির পাসপোর্ট করতে বলেছিল নিশিকা। বাকি সবার আছে। আর রোশনিকে আনবে আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল তাই কাগজ পত্রও করে রেখেছিল।
নওশিকেও আনতে চেয়েছিল কিন্তু মায়ের পাশে থেকে এখন দূরে যেতে চাইনি নওশি।
তাই পড়ালেখার দোহাই দিয়ে পরে যাবে বলে কথা দিয়েছে সে।
রায়ানের ফাইনাল এক্সাম সামনে।
ভার্সিটিতে গেছে রায়ান,
“সানজু প্রিপারেশন কেমন হচ্ছে তোর?”
“এইতো ভাল…”
“গুড গার্ল, ভাল করে পড়। আমাদের ফিউচার নির্ভর করছে কিন্তু আমাদের নিজেদের উপর”
“হুম, রায়ান তুই এত কাটখোট্টা টাইপের হয়ে গেছিস কেন রে!”
“কি বললি? কাঠখোট্টা??? কি সেটা খায় নাকি মাথায় দেয়!” হাসতে হাসতে উত্তর দেয় রায়ান
“তোকে কাঠখোট্টা নয় কাঠঠোকরা বলা উচিত!”
“কেন রে, কি করলাম?”
“জানিনা”
“আরে পাগলি কোকিল হওয়ার সময় সামনে আছে, এখন কাঠঠোকরা সহ্য কর। পরে কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দেব, একটু ফাঁকি দিব না।”
“পরিমাপে কম হলে?”
“কমের কথা ভাবলি কি করে! বুঝে দেখ তোর পরিমাপের পাল্লায় জায়গা হবে কিনা”
“জায়গা তোর একার আছে বুঝি!”
“ও বাবা তাই নাকি!”
হাসতে থাকে রায়ান।
সব ভালবাসাতে বারবার ভালবাসি শব্দ বলতে হয় না।
কিছু অনুভূতি কিছু আনন্দ বলে যায় ভালবাসার পঙক্তিমালা।
.
“আপনার হেল্প পেলে আমি কৃতার্থ হয়ে যাব মিস্টার আরিফ”
“তোমাকে হেল্প করতে পারলেও আমি কৃতার্থ হয়ে যাব”
রেস্টুরেন্টে আর এস ইন্ডাস্ট্রির মালিকের সাথে কথা বলছে রিদিমা। বেশ মাসখানেক আগে পরিচয় হয়েছে আরিফের সাথে।
সায়ানের কোম্পানীর চেয়ে ভাল পজিশন আরিফের কোম্পানীর।
তাই এখন বিজনেস বাড়াতে গেলে আরিফকে বড্ড প্রয়োজন রিদিমার৷ রিদিমা এখন ‘চাই চাই আরো চাই’ নেশায় মত্ত হয়ে আছে। আরিফ কি চাইছে সেটা স্পষ্ট ভাবেই বুঝেছে সে।
কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রিদিমার।
আরিফ জানে কিভাবে কি পেতে হয়।
আবার প্রশ্ন করে,
“আজ বিকালে তোমার সময় হবে বিউটি কুইন?”
বিউটি কুইন ডাক শুনে খুব খুশি হয় রিদিমা।
“আপনি বলবেন আর আমার সময় হবে না সেটা কি হয়?”
“তবে বিকালে একটু দেখা করা যাবে? তোমার বাচ্চার অসুবিধা হবে না তো?”
“অবশ্যই সময় আছে” না ভেবেই উত্তর দেয় রিদিমা।
“ওকে বিকালে দেখা হবে”
আরিফের সাথে কথা বলা শেষে রিদিমা ফোন দেয় সায়ানকে,
“আই লাভ ইউ সায়ান”
“আই অল সো লাভ ইউ সো মাচ রিদিমা, কি করছ?”
“এইতো সায়ান এই কিছু ফাইল দেখছিলাম, আচ্ছা শোন আজ বিকালে মায়াকে একটু নিয়ে যাবে বাসায়?”
“কেন?”
“আমার একটা ইমপর্ট্যান্ট মিটিং আছে একটু দেরি হবে”
“মায়া তোমাকে ছাড়া… অসুবিধা হবে তো ওর”
” আরে ও তো এখন বাড়তি খাবার খায় আর আমি তো আসছি, ওর ফুপিদের কাছে থাকবে, আমি তো মিটিংয়ের মাঝে খেয়াল করতে পারব না। তাহলে আমার থেকে ওর ফুপিদের কাছে থাকায় বেটার হবে না?”
“তারচেয়ে আমি এসে তোমার অফিসে বসি? তারপর একসাথে বাসায় ফিরব? মা রাগ করবে হয়তো মায়াকে একা নিয়ে বাসায় ফিরলে”
রাগে গা জ্বলে গেল রিদিমার।
“দেখ এক বাচ্চার বাবা এখন তুমি, মা মা করে হ্যাংলামো করবে না। আমার সহ্য হয় না”
“এসব কি কথা রিদিমা! মায়ের কথা শোনা কোনো হ্যাংলামো না”
“তাই বলে এখনো মা মা করতে হবে!”
“মায়ের কথা শুনতে বয়স লাগে না”
“তোমার এই মা মা ডিকশনারিটা তোমার কাছে রাখো তো সায়ান, তুমি মায়াকে নিয়ে যাবে কিনা!”
“আমি থাকলে কি সমস্যা!”
“সায়ান মায়াকে নিয়ে তুমি বাসায় যাবে, এক বছরের বাচ্চা মা ছাড়া থাকতে পারবে!”
“আরে আজব আমি কখন বললাম থাকতে পারবে না! আমি বললাম আমি অপেক্ষা করব”
“দরকার হবে না সায়ান, আমি নিজের দেখাশোনা নিজে করার মতো যোগ্যতা রাখি” কড়া স্বরে বলল রিদিমা। রাগ হয়ে গেলে স্থান কাল পাত্র ভুলে যায় রিদিমা। আজ এই অবস্থান যে সায়ানের জন্য তা ভুলে গেছে রিদিমা। আর সে মনে রাখতে চাইও না। কে কতটা উপকার করল তার হিসেব করে প্রতিদান দিলে নিজের পথ চলা হবে না, এটা রিদিমার থিওরি।
“বেশ যা চাইছ তাই হবে” আহত স্বরে জবাব দেয় সায়ান।
মাঝে মাঝে রিদিমাকে বুঝেও বুঝতে পারে না সায়ান। রিদিমাকে মাঝে মাঝে খুব কাছের মনে হয়। আবার মাঝে মাঝে খুব দূরের কেউ।
বিকাল চারটার দিকে মায়াকে নিয়ে বাসায় ফেরে সায়ান। সাথে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে নেয়। রক্তগোলাপ পছন্দ করে রিদিমা।
“বউমা কোথায় সায়ান”
“মা ওর খুব জরুরি মিটিং আছে তাই আসতে পারল না”
“কি ধরনের কথা এটা! তুই অফিসে নিয়ে বসে থাকতিস, তারপর একসাথে দুইজনে আসলেই তো হতো” বেশ রাগ হয় জাহরার।
“থাক মা, ও দিতে চাইনি আমিই জোর করে নিয়ে এসেছি, আর মায়া তো ওর ফুপিদের পাগল, সমস্যা হবে না।” রিদিমাকে বরাবরই আগলে রেখেছে সায়ান। ওর দোষ ত্রুটিগুলোও নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়।
“না হলেই ভাল” বলে মায়াকে নিয়ে যান জাহরা।
সায়ান বুঝতে পারছে তাদের মাঝে হওয়া ঝামেলাগুলো মা বুঝতে পারছে। আর তাই হয়তো তার রাগ হচ্ছে।
সায়ান কি করবে! প্রতিটা সময় অকারণে রিদিমা রেগে যাচ্ছে।
যখন কোনো প্রয়োজন হয় তখনই কেবল ভালভাবে কথা বলে। তারপর আবার যা তাই।
অনেকভাবে রিদিমার মন ভাল করার চেষ্টা করেছে কোনো লাভ হয়নি।
সাময়িকভাবে ঠিক হলেও আবার যা তাই।
নিজের বাবা মায়ের মাঝে কখনো এমন ঝামেলা দেখেনি সে৷ তবে কি সে ভুল করল! নাহ এসব কি ভাবছি আমি!!
রিদিমা ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে, এত স্মার্ট মেয়ে ভুল করবে না আর অন্তত মায়ার জন্য হলেও।
ভালবাসা অন্ধ হয় কিনা জানিনা। তবে একটু চোখ মেলে তাকালেই সায়ান দেখতে পেত রিদিমার ভালবাসার গভীরতা আসলে কতটুকু। হয়তো জানতে পারত সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে যে রিদিমাকে সে বিশ্বাসের সর্বোচ্চ স্তরে বসিয়ে রেখেছে এই মূহুর্তে তার বিশ্বাসকে বিশ্বাসঘাতকতার মাটিতে কবর দিচ্ছে সেই রিদিমা।
“রিদিমা আমি তোমার প্রিয়তম হতে পারি?”
আরিফে প্রশ্নে চমকে ওঠে রিদিমা।
“আমি বিবাহিত, আর আমার বাচ্চাও আছে সে কি আপনি জানেন না?”
“তুমিই বলো সে কি আমার অজানা?”
“তবে?”
“রিদিমা আমি তোমাকে ভালবাসি, আমার রানি করে রাখব তোমাকে, তোমার দশটা ছেলেমেয়ে থাকুক যা হোক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, তোমার বিজনেস এ আমি সাহায্য করব, তুমি যা চাও তাই হবে, প্লিজ না করোনা” একটা হীরের আংটি এগিয়ে দেয় রিদিমার দিকে।
আরিফ সায়ানের মতো ভালবাসার কাঙাল না। সে জানে কাকে পেতে গেলে কি করতে৷ মেয়েদের সাথে চলাফেরা করতে করতে কোন মেয়েকে কাছে পেতে গেলে কতটুকু কি করতে হয় তা আরিফের মুখস্থ।
রিদিমাকে পেতে গেলে একটু কাঠখড় পোড়াতে হবে তা সে পরিচয়ের দুইতিন দিন পরেই বুঝে গেছে।
আরে বাচ্চা বিবাহিত কিনা এসব তার দরকার না। তার দরকার কিছুদিনের জন্য রিদিমাকে আর তার চেয়ে দরকার রিদিমার বিজনেসটাকে।
“কি ভাবছ, ফিরিয়ে দেবে আমার ভালবাসা? এতই কি অযোগ্য আমি?”
কান্না ভাব নিয়ে আহত কন্ঠে বলে আরিফ।
মূহুর্তের মাঝেই রিদিমার মাঝে সেই ‘চাই চাই’ এর সুপ্ত লোভটা আবার জেগে ওঠে।
হাত বাড়িয়ে দেয় রিদিমা।
রিদিমার আঙুলে আংটি পরিয়ে হাতে চুমু দেয় আরিফ। কিন্তু এটাও অসঙ্গত মনে হয়না রিদিমার কাছে।
এটাকেও সায়ান আর অনিকের বাবার ভালবাসার মতোই সত্যি মনে করে সে।
তবে আরিফকে মন থেকেই ভাল লাগে রিদিমার। যে ভাললাগা তার সায়ান আর অনিকের বাবার জন্য কখনোই তৈরি হয়নি। এক মূহুর্তে সে ভুলে যায় তার বাচ্চা আছে স্বামী আছে।
এভাবেই রিদিমা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে নেয়।
সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরে রিদিমা।
রিদিমা খুশি হবে ভেবে রিদিমাকে গোলাপের গুচ্ছটা এগিয়ে দেয় সায়ান।
আফসোস রিদিমা বারবার ভালবাসা পেয়েও তাকে মাথায় না তুলে পায়ে ঠেলছে।
“ওহ সায়ান বিরক্ত করো না তো!”
রীতিমতো অবাক হয় সায়ান। রিদিমার ব্যবহার দিনদিন সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
“সরি”
রিদিমা ক্লান্ত এটা ভেবে ফুলটা সরিয়ে নেয় সায়ান। সে ভাবে তারই হয়তো ভুল হয়েছে অফিসের পরে আসার পরই বিরক্ত করা।
কিন্তু সায়ান জানেনা হাতে লোভের হীরের আংটি পরে আর দুচোখে স্বার্থপরতার চশমা পরে গোলাপকেও কখনো নিষ্পাপ মনে হয় না, আর সেখানে সায়ান কে কি করে সহ্য হবে! সায়ান তো রক্তমাংসের মানু্ষ মাত্র!
.
“ভাই আপনার মেয়েটাকে আমার খুব ভাল লেগেছে, আমার ছেলের বউ করতে চাই, যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে” কোনো রকম ভূমিকা ছাড়াই বললেন ইরফান আহমেদ।
ইরফান আহমেদ সাহরাফ রহমানের বেশ পুরনো সহকর্মী। অনেক বছর ধরে একসাথে আছেন দুইজনে তাই সখ্যতাও গড়ে উঠেছে অনেক। এজন্যই হয়তো সরাসরি প্রশ্নটা করতে পেরেছেন ইরফান আহমেদ।
এমন হঠাৎ প্রশ্নে কি উত্তর দেবেন ভেবে পেলেন না সাহরাফ।
“আমি একটু বাসায় কথা বলে দেখি”
“ঠিক আছে, আমার ছেলেকে তো আপনি দেখেছেন?”
“হুম, যোগ্যতার নিরিখে তো ঈশান কোনোদিক থেকেই কম নয়। তবুও আমি বাসায় মা আর ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে দেখি।”
“ঠিক আছে ভাই”
ইরফান চলে যাওয়ার পর সাহরাফ সাহেব ভাবতে লাগলেন মেয়ের বিয়ে এখনই দেবেন কিনা।
ইরফান তার বেশ পুরানো সহকর্মী, আর ইরফানকে তিনি যথেষ্ট ভরসা করেন।
ছেলে হিসেবে ঈশান খুব ভালো আর ভদ্র।
কিছুদিন আগেই একটা নামকরা কলেজে চাকরি পেয়েছে। আর না করার মতো কোনো কারণ নেই। আর এটা জেনেই ইরফান প্রোপোজাল দিয়েছেন এটা বুঝেছেন সাহরাফ সাহেব।
বাসায় এসে জাহরার সাথে বলতে তিনি বললেন,
“ছেলে হিসেবে যা বলছ তুমি তাতে আমার ভালই লাগছে, কিন্তু নওশি কি এখনই বিয়েতে রাজি হবে?”
“আমি যতদূর জানি, নওশি না করবে না। তারপরেও দেখ কি বলে তোমার মেয়ে”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
সুযোগ পেয়ে জাহরা নওশির পাশে বসে বললেন,
“কি করছিস?”
“এইতো মা পড়ছিলাম”
“মা শোন..”
“তোর কোনো পছন্দ আছে নাকি?” মূহুর্তে বুঝে যায় নওশি মা কি বলতে চাইছে…
.
(চলবে)