#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ০৫
.
“দেখ মা জীবনটা অনেক, কোন মূহুর্তে কি হয়ে যাবে বলার কিচ্ছু নেই”
মেয়ের মাথায় হাত রেখে সস্নেহে বললেন সাহরাফ সাহেব।
“হ্যাঁ বাবা”
“তুই এখন লেখাপড়াতে মনোযোগ দে, অন্যদিকে নয়। আর বিয়ে তোর মতামতের বিরুদ্ধে আমরা দিব না, যার সাথেই তোর বিয়ে হবে সেটার তোর মতামতের ভিত্তিতেই হবে।”
“জানি বাবা”
“হ্যাঁ রে মা, তোর উপর ভরসা আছে আমার, আচ্ছা আমি যাই মা” বললেন সাহরাফ সাহেব।
“মা ঘুমিয়ে পড়” মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন জাহরা।
.
অফিসে এসেই আজ রাজ্যের ব্যস্ততা সায়ানকে ঘিরে ধরেছে…
বেশ কয়েকটা মিটিং সেরে
ইন্টারভিউ বোর্ডে এসে বসল সে…
কয়েকটি ইন্টারভিউ নেওয়ার পর কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না সায়ানের।
একে একে সবার ইন্টারভিউ নেওয়া শেষে কাশফি, রাফিয়াল আর রিদিমা, প্রাইমারি ভাবে এদের পছন্দ হলো সায়ানের।
খুব ভেবে ভেবে শেষে আপাতদৃষ্টিতে মনে হলো, তাদের পোস্ট টার জন্য রিদিমা বেশি পার্ফেক্ট।
ইন্টারভিউ নেওয়া শেষে বাকিদের নিয়ে প্রোজেক্টের বিষয়ে আবার মিটিংয়ে বসল সায়ান।
তারপর রিদিমা কে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠিয়ে দিতে বলে সেদিনের মতো বাসায় ফিরল….। নওশি বলেছে আজ দুপুরের খাবারটা বাসায় খেতে, ভুল হলে রেগে যাবে পাগলীটা…!
“রাতপরী? রেগে আছ? আচ্ছা আমি সোনালু ফুল তোমার খোঁপায় গুজে দেই তবে কি তোমার রাগ ভাঙবে?”
হেসে ফেলল নিশিকা, পাগল নাকি ছেলেটা!
“নিশিকা দেখ তো কে এল….”
কলিংবেল এর শব্দ শুনে মেয়েকে দেখতে বললেন জাহরা। সন্ধ্যার সময় আবার কে আসতে পারে সবাই তো বাসায়, সায়ানের বাবা তো সন্ধ্যার পর ফিরবে….
নিশিকা চুলটা হাত খোঁপা করতে করতে গিয়ে দরজা খুলে দিল, সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার খালাতো ভাই জয়।
“আরে ভাইয়া কেমন আছ!!!” একরাশ বিস্ময় নিশিকার চোখে।
“আলহামদুলিল্লাহ ভাল রা… মানে আল্লাহ ভালো রেখেছেন। তুই?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাল। কবে ফিরলে?”
“কে এসেছে নিশিকা? আরে জয় তুই!!!!! কেমন আছিস? কবে ফিরলি???? একেবারে না জানিয়ে… মা দেখ কে এসেছে…!!!”
অবাক হয়ে একটানা প্রশ্ন করলো সায়ান। প্রায় ৮ বছর পরে সরাসরি দেখা খালাতো ভাই জয়ের সাথে।
“এই তো সায়ান কালই ফিরেছি, ভিতরে আসবো???”
“ইশ! ভাইয়া আসো আমিও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি” লজ্জা পেয়ে সরে আসে নিশিকা।
নিশিকার লজ্জা পাওয়া মুখটা এক পলক দেখেই ভিতরে ঢুকে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
“জয়!!!”
অবাক হয়ে দেখছেন জাহরা, ছোট্ট জয় কত বড় হয়েছে!
“খালামনি সারপ্রাইজ!!”
“আমি আসলেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি রে!” হাসতে হাসতে বললেন জাহরা।
নওশি আর রোশনি ঘুমাচ্ছিল উঠে তারাও অবাক হয়ে গেল।
সব্বাইকে একটা একটা করে গিফট দিলো জয়।
গল্পে মেতে উঠল সবাই
কলিংবেল বাজতে জয় এগিয়ে গেল।
দরজা খুলেই জয় বলল “খালু কেমন আছেন?”
“আরে জয়! বাবা কখন এলে!” সবার মতো তিনিও অবাক হয়ে গেলেন।
“এইতো খালু কাল ফিরেছি দেশে।”
রাতে খাবার টেবিলে সবার সাথে ভালো ভাবে কথা হলো জয়ের।
নিশিকা একটু লজ্জা পাচ্ছে, ভাইয়ার সাথে ছোট বেলায় অনেকবার বরবউ খেলেছে যে! ইশ!
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে নিশিকার লজ্জা মাখা মুখটার দিকে মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে জয়। নওশি খেয়াল করে একটু হাসলো…
সায়ান, নিশিকা, রায়ান, নওশি, রোশনি সবাই খুব পছন্দ করে জয়কে।
খাওয়া প্রায় শেষ, টেবিলে বসে আছে রোশনী, জয়, নওশি আর নিশিকা।
“আপু তোমার লিস্টটা একটু এডিট করতে হবে মানে আরেকজন জায়গা চাইছে”.. হাসতে হাসতে বলল নওশি।
নিশিকা: “মানে?”
“কিছু না আপু” বলে জয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল নওশি।
ব্যাপার টা নিশিকা না বুঝলেও জয় বুঝতে পেরেছে আর বুঝতে পেরে হাসি চাপতে চলে গেল রুমে।
যেহেতু সবাইই আজ ক্লান্ত ছিল, তাই আর আড্ডা দেওয়া হলো না।
নিশিকার আজ বেশ মন খারাপ হয়ে গেল, আজবটা মেসেজ করেনি আজ।
রোশনি ঘুমিয়ে গেলে নওশি বলল,
“কি রে আপু তোর স্বপ্নকুমারের মেসেজ দেখালিনা যে আজ!”
“আরে আজ মেসেজ করেনি, ভাবছি কোনো প্রব্লেম বা অসুস্থ হলো কিনা”
“এএএএএএএ আপু! আমি সিউর, স্বপ্নকুমারকে তোর ভাল লেগে গেছে”
“কি যা তা বলছিস? যা ঘুমা”
“ওকে ওকে”
আসলেই কি ভাল লাগতে শুরু করেছে সেই অদেখা তাকে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ঘুমিয়ে গেল নিশিকা…!
“ঘুমিয়ে গেছ নাকি?”
জাহরা ডাকলেন সাহরাফ সাহেবকে।
“না, বলো”
“জয় এর ব্যাপারে কি ভাবলে? অমত আছে নাকি তোমার?”
“অমত করার মতো ছেলে তো জয় না, ফ্যামিলি ভালো, অস্ট্রেলিয়াতে ভালো জব করছে। ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত, আর কি চাই?”
“সেটাই, বড় আপাও বলছিল জয় এই জন্যই পাঠিয়েছে এখানে, আপার তো তোমার মেয়েকে খুব পছন্দ, জয় জানে, এখন জানেনা কেবল তোমার মেয়ে”
“হুম, ওকে জানাতে হবে এবারে, আচ্ছা ওর নিজস্ব কোনো পছন্দ নেই তো?”
“না, থাকলে নওশির থেকে শুনতে পেতাম আমি”
“তাহলে আর কি, তুমি মেয়ের সাথে কথা বলো আর আমি বিয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি!”
“সেটাই”
.
(চলবে)।