এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৭

#এখানে_আকাশটা_ভালোবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ০৭
.
“রায়ান এসাইনমেন্ট করেছিস?”
“না রে…”
বলিস কি! তুই আজ এসাইনমেন্ট করিসনি? এই প্রথম………..!”
“আরে শুনবি তো! আমার কাজিন এসেছে অনেক দিন পর, মানে অনেক বছর পর, তো সবাই মিলে আড্ডা দিতে গিয়ে….!”
“ও আচ্ছা ক্লাসে চল। স্যার আসবে একটু পর।”

ক্লাসরুমে এসে সানজানা নিজের এসাইনমেন্ট বের করে “সানজানা সানহা” নাম লেখার বদলে লিখল “রায়ান রহমান”
সানজানা কোনোভাবেই চায়না সামান্য সমস্যার জন্যও রায়ান তার টপ পজিশন থেকে সরে আসুক, সানজানা এটাও জানে রায়ান এর পরই তার পজিশন। তবুও…
স্যার এসাইমেন্ট গুলো নেওয়ার পর সানজানা এসাইনমেন্ট না আনার কারণ হিসেবে বলল,
“সরি স্যার আমি আজ এসাইনমেন্ট করতে পারিনি, আসলে একটু প্রব্লেম ছিল”
“আজকের টপিকটা অনেক ইমপর্ট্যান্ট ছিল সানজানা, তবু ঠিক আছে, পরবর্তীতে আর এই ভুল সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যেও।”
টপ থ্রী স্টুডেন্টের মাঝে থাকাতে প্রথমদিন কিছু বললেন না স্যার।
“জ্বি স্যার”
এরপর রায়ান উঠে বলল “স্যার আমিও আজ…”
সানজানা তাড়াতাড়ি বলল, “রায়ান তোর এসাইনমেন্ট আমি স্যার কে দিয়েছি, তুই রুমে আসার সময় পড়ে গিয়েছিল, তুই খেয়াল করিসনি।”
রায়ান অবাক হয়ে গেল, কিছু বলার আগেই স্যার ক্লাস টপিকের উপর কথা বলতে শুরু করলেন।
“সানজু শোন”
“হ্যাঁ বল”
“তুই আজ এসাইনমেন্ট ….”
“উফ তুই এখনো ওটা নিয়ে পড়ে আছিস?
আচ্ছা চল অনেক দিন তোর সাথে কথা বলা হয়নি ভালোভাবে, মানে লেখাপড়ার বাইরে কথা তো কমই হয়েছে।
চল হাঁটতে হাঁটতে যাই…”
“মানে তোর গাড়ি থাকতে হেঁটে যাবি কেন?”
“গাড়ি থাকলে হাঁটতে বারণ নাকি?”
“আমি কি তাই বললাম? আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আগে নওশির কলেজের দিকে যেতে হবে, আজ ও একসাথে বাসায় যাবে বলল”
“তাই হোক, চল। তার আগে একটু ওয়েট কর আমি কাকুকে গাড়ি নিয়ে নওশির কলেজ পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করতে বলি।”
“ওকে।”
সানজানার জন্য অপেক্ষা করতে করতে রায়ান ভাবছে, আচ্ছা সানজানা কেন এমন করল আজ!… তবে কি… যাহ কি যা তা ভাবছি আমি!
“রায়ান চল…”
হাঁটতে থাকল রায়ান সানজানা…
সানজানা হঠাৎ বলল,
“আচ্ছা রায়ান তোর কোন রঙ পছন্দ
.
“আমার পছন্দের রঙ আকাশী। অবশ্য পছন্দের মানে ভাল লাগে। তোর?”
“নীল” ছোট্ট করে উত্তর দিল সানজানা।
রায়ান কে আজ বড্ড বেশি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “ভালোবাসি”
বলবে কিনা ভাবছে সানজানা।
এ কথা ভাবতেই হার্টবিট বেড়ে গেছে ওর। আগে তো এমন হয়নি কখনো। সত্যিকার ভালবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়… অজান্তেই মনের ভিতরের প্রত্যেকটি শিহরণ বলে যায় বারবার “ভালবাসি ভালবাসি”
“এই সানজুউউউউউউউ”
একমাত্র রায়ানই তাকে সানজু বলে ডাকে, রায়ান ছাড়া অন্যকারোর মুখে ডাকটা ভালো লাগে না ওর!
“হ্যাঁ বল রায়ান…”
“দেখ ওই পাখিটা কত্ত সুন্দর, পাখিদের মন খুব ভালো হয় তাই না রে? বড় আকাশে উড়তে উড়তে ওদের মন আকাশের মত বড় হয়ে যায়….!”
রায়ানের প্রত্যেকটা কথা ভালো লাগে সানজানার।
আচমকা রায়ানের হাত ধরে বলে
“ঠিক তোর মনের মতো সুন্দর ওদের মন”
অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে রায়ান……………………………………… রায়ানের ঘোর তখনো কাটেনি, দুইবছর বন্ধুত্ব জীবনে আজকের মতো এমন মূহুর্ত আসেনি! ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে…
“মানে?”
রায়ানের আঙুলগুলো আরো শক্ত করে ধরে সানজানা, খুব শক্ত করে…….
যেন ছেড়ে দিলেই চলে যাবে,
অদ্ভুত এক নির্ভরতা খুঁজে পায় ও, ওর মনে হয় এই হাতটা ধরে সারা জীবন কাটাতে পারবে… এই অনুভূতির পিছনে ভালবাসা ছাড়া অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাইনা সে।
সানজানা বলে,
“তুই খুব ভাল রায়ান, আমি তোকে খুব……”
এটুকু বলেই রায়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টো পথে দ্রুত হেঁটে চলে যায়।
পুরোটা বলতে পারে না সানজানা!
রায়ান দাঁড়িয়ে আছে অবাক হয়ে, সে এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা।
সানজু এমন কেন করল হঠাৎ, তবে তার ধারণাই কি ঠিক? সানজু কি তাকে….!!!
তা কি করে হয়! সানজু দের পরিবার কি মেনে নেবে!
কিন্তু সানজু কি করছে এসব, আরে নাহ, এটা হয়ইনা… বেকার ভাবছে সে!
ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে তখনি মোবাইল বেজে উঠল রায়ানের।
“কই রে তুই ছোট ভাইয়া?”
“আসছি নাশু, তুই দাঁড়া”
তাড়াতাড়ি নওশির কলেজের দিকে এগোতে লাগল রায়ান।
“ভাইয়া তোর না আমার ক্লাসের শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে আসার কথা? আর আমিই উল্টো ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি”
“সরি রে, সানজানার সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল, নে চল বাসায় যাই।
কিছু খাবি? চকলেট নাকি আইসক্রিম?
“আইসক্রিম খাওয়া যায়”
“ওকে চল।”
.
“নিশিকা, মা…”
“হ্যাঁ মা…”
“মা তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“এভাবে কেন বলছ আম্মু? বলো…”
“জয়কে তোর কেমন লাগে?”
বুকের ভিতরে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল নিশিকার, তাহলে….. এক মূহুর্তে বুঝতে পারল সে কি বলতে চাইছে মা।
মেয়ে চুপ থাকতে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন জাহরা। তবে কি মেয়ের নিজস্ব কোনো পছন্দ আছে?…
“হ্যাঁ রে মা, তুইকি কাউকে পছন্দ করিস?”
“আরে মা কি বলছ এসব, না আম্মু নেই, থাকলে তোমাদের বলতাম!”
আশ্বস্ত হয়ে জাহরা বললেন, “জয়কে পছন্দ হয় তোর? তোর খালার বাসার সবার তোকে খুব পছন্দ, আর জয়েরও”
“কিন্তু মা এখন বিয়ে…”
“আর না করিস না মা, দেখ এখনো নওশি আছে, সায়ানের বিয়ে দিব”
“আচ্ছা তোমরা যেটা ভালো বুঝ করো, তোমাদের উপর আমার আস্থা আছে”
মুচকি হেসে মেয়ের কপালে চুমু দিলেন জাহরা, কত বড় হয়ে গেছে তার মেয়ে!…
সেই সেদিনের হাত পা নেড়ে নেড়ে দোলনায় খেলা করা মেয়েটা আজ বাদে কাল কারোর বাড়ির বউ!
আচ্ছা আমার এভাবে ওই এসএমএস গুলোর কথা মনে পড়ছে কেন! এটা কি? স্রেফ ভালো লাগা!!?
মা চলে যাওয়ার পর ভাবতে লাগল নিশিকা…
উত্তর খুঁজে পায়না সে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here