এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -০৪

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো।
পর্ব—-০৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—–হে খোদা!এটা কি দেখছি আমি।এতো আমার মেয়ে রাত্রি,যাকে বাড়িতে রেখে এসেছি আমি..!!!😱কিন্তু রাত্রি ওর পুরাতন বাবাকে, তার ঠিকানা জানলো কিকরে,আর ও এইসময়ে এখানেই বা কি করছে?দেখে তো এদের বহুদিনের পরিচিত মনে হচ্ছে।যদি তাই হয় এই বৃদ্ধ সকালে সব অস্বীকার করলো কেন?

(নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো রাত্রির বাবা)আতংক আর বিষ্ময়ে গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো তার।

মেয়েটা এক পর্যায়ে জানলার একেবারে কাছে চলে আসলো।এরপর কাউকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়েই হঠাৎ জানলাটা খুলে ফেললো।রাত্রির বাবা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার সামনে তার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটাও হতবাক।দুজনে দুপ্রান্ত থেকে স্থির হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।এরপর ঘোর কাটতেই রাত্রির বাবা ঘরের ভেতরে ছুটে যায়।উল্লেখ্য দরজাটা ভেতর থেকে খোলা ছিলো।উনি বুঝতে পারেন নি আগে সেটা।ঘরের ভেতরে ঢুকে ভদ্রলোক নিজের মেয়েকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এইটুকু সময়ের ভেতরে একটা মানুষ কোথায় উধাও হয়ে যেতে পারে মাথায় ঢুকছে না তার।

একপর্যায়ে বৃদ্ধ লোকটা ভেতরের রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।তিনি রাত্রির বাবাকে এই সময়ে নিজের ঘরে থেকে অবাক বনে গেলেন।

—একি,ভাইসাব।আপনি এখানে এই সময়ে?

—হ্যাঁ,এসেছিলাম।তার আগে বলুন আমার মেয়ে রাত্রি কোথায়।

—রাত্রি কোথায় মানে,রাত্রি এখানে কিকরে আসবে?আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন!

—আমি একটু আগে শুনেছি আপনাকে আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে।শুধু তাই নয় আমি আমার মেয়েকে নিজের চোখে দেখেছি।

—মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার,কি বলছেন এগুলো।আমি আমার নাতনীর সাথে কথা বলেছি।আর এখানে রাত্রি কিকরে আসবে আপনিই বলুন।

—আপনার নাতনী মানে?

—এই মহল্লায় আছে একজন।ও প্রায়ই আসে আমার খোঁজখবর নিয়ে।এইতো একটু আগেও এসেছিলো।চলে গেছে মনে হয়।

—আমি এতো কিছু জানি না,শুধু এইটুকু জানি আমি আমার মেয়েকে দেখেছি এখানে।আর আপনি মিথ্যাচার করছেন আমার সাথে।

—নাহ,আমি কোনো মিথ্যাচার করছি না।একটা কাজ করো তুমি বরং বাড়িতে ফিরে যাও।সেখানে গিয়ে দেখো তোমার মেয়ে ঘরেই আছে।আমি নিজে আজ সকালে ওর সাথে দেখা করার কতো চেষ্টা করলাম।কিন্তু তোমরা আমায় সেটা করতেই দিলে না।এখন কিনা এই দাবি করছো রাত্রি আমার কাছে আছে?আরে তোমার মেয়ে আমার কাছে কিকরে থাকবে।ভেবে দেখো।

রাত্রির বাবার এখনো মনে আছে।সে রাত্রিকে স্পষ্ট দেখেছে।তার নিজের চোখের সামনে রাত্রি দাঁড়িয়ে ছিলো।এতো বড়ো দেখার ভুল সে কিছুতেই করতে পারে না,এইটুকু নিশ্চিত।অগ্যতা বৃদ্ধের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে।তার কাছে যে সাহায্যের জন্য এসেছিলো সেটা আর উল্লেখ করাই হলো না।একবার ভাবলো বাসায় ফোন দিয়ে স্ত্রীর সাথে কথা বলবে।রাত্রি সত্যিই নিজের ঘরে আছে কিনা।কিন্তু দূর্ভাগ্য সেই সময়ে কলটাও লাগছিলো না।হিতাহিতজ্ঞানশুন্য ভদ্রলোক আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।




বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত প্রায় রাত আটটা বেজে গেলো।হন্তদন্ত হয়ে সে বাসার ভেতরে ঢুকলো।রাত্রির মা রীতিমত ভরকে গেলো স্বামীর কর্মকাণ্ড দেখে।

—-কি হলো তোমার,এরকম করছো কেন!কোনো কথা হলো লোকটার সাথে?

—না,কোনো কথা হয় নি,

—কথা হয়নি মানে,কথায় হয়নি তো তোমায় কেন পাঠালাম আমি।

—এই বিষয়ে পড়ে কথা বলছি।আগে বলো তোমার মেয়ে কোথায়,?

—কোথায় আবার,ঘরেতেই আছে।আর কোথায় থাকবে,

—সন্ধ্যার পরে কি ও কোথাও গিয়েছিলো আজকে?

—কি আবোলতাবল বলছো,রাত্রিকে চিনো না তুমি,ও রাত্রিবেলা বাইরে যাবার মেয়ে।

—তোমার থেকে এতো ব্যাখা শুনতে চাচ্ছি না, আগে বলো ও যে সন্ধ্যার পরে বাইরে যায়নি এই বিষয়ে তুমি পুরোপুরি নিশ্চিত কিনা!

—তুমি কি তোমার মেয়েকে পাহারা দেবার জন্য বলে যাওনি আমায়।তাহলে এসব কেন বলছো!

—তার মানে তুমি নিশ্চিত নও।

—না,আমি আমি কাজ করছিলাম।তবে ও কোথায় গেলে আমাকে তো বলতো।তাছাড়া আমি এইটুকু বলতে পারি,ও কোথাও বেরোই নি।নিজের ঘরেই ছিলো।তুমি একটা কাজ করো,রাত্রিকেই জিজ্ঞেস করে নাও।আমার সাথে শুধুই তর্ক করে যাচ্ছো তখন থেকে।

দম্পতি রাত্রির ঘরের দিকে গেলো।দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা।কলিং বেল প্রেস করতেই ভেতর থেকে একটু পরে রাত্রি বেরিয়ে এলো।

—নাও,এবার তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো?
(রাত্রির মা টিপ্পনী কেটে তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললো)

—কি হয়েছে মা,তোমরা এইভাবে ছুটে আসলে কেন?

—আজ সন্ধ্যার পরে কোথাও কি বেরিয়েছিলি তুই?তোর বাবাকে বল।

—নাতো,আমি কোথাও যাবো।তাছাড়া আমি কোথাও গেলে তো মাকে সাথে নিয়েই যাই।আমি কোথাও যাই নি।

—নাও,এবার নিজের কানেই শুনে নাও।কি বলছে তোমার মেয়ে!

—তুই সত্যি বলছিস তো,দেখ আমি তোকে সন্ধ্যার পরে একটা জায়গায় দেখেছি।আর আমি নিশ্চিত সেটা মনের বা চোখের ভুল নয় আমার।

—মা,বাবা কি বলছে এগুলো।তুমি বোঝাও তাকে,

—তুই ঘরে যা তো মা।আমি বোঝাচ্ছি তোর বাবাকে।মাথা খারাপ হয়ে গেছে আজ ওনার।

এরপর রাত্রি নিজের মায়ের কথামতো ওর বাবার মুখের ওপর ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।ভদ্রলোক হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেইদিকে।রাত্রির মা তাকে বুঝিয়ে নিচে নিয়ে এলো।

একটু পরে তাদের বাড়িতে একটা অচেনা নম্বর ফোনকল আসলো।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে।

—-আমি কি,আমান সাহেবের সাথে কথা বলছি।

রাত্রির বাবার নাম আমান খান।উনি হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলেন।

—হ্যাঁ,আমিই আব্দুর আমান।

—আপনার জন্য একটা ভালো খবর আছে।

—ভালো খবর,কিসের ভালো খবর?(আশ্চর্যবোধক প্রশ্ন)

—প্রায় পনেরো বছর আগে আপনার মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো না।

—হ্যাঁ,তো….

—-আমরা আপনার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি।খুঁজে পেয়েছি বলা ঠিক হবে না,একটা লোক আপনাদের মেয়েকে চুরি করেছিলো।সেই চোর নিজেই এসে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আমাদের কাছে।সাথে আপনার মেয়েকেও নিয়েছে এসেছে সে।

লোকটার কথা শুনে হাত থেকে মোবাইলটা মেঝের ওপরে পড়ে গেলো আমান সাহেবের।স্ত্রী এই দৃশ্য দেখে ছুটে আসলো তার দিকে…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here