#এবরশন
পর্ব ছয়
লিখা –মিনহাজ মাহমুদ
.
কেটে গেল দুটি বছর । রিভার অবস্থা দিন দিন আরও বেশি খারাপ হচ্ছে । মিনহাজকে এখনও কোমাতেই রাখা হয়েছে । রিভার এত অধপতন দেখে রিভাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল রিভার ভাই ।
অনেক গুলো টেস্ট এর রিপোর্ট দেখে ডাক্তার অবাক হলেন । তিনি রিভার ভাইয়ের দিকে তাকালেন ।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো । এটা কি করে সম্ভব । সবাই অবাক হলেও রিভা মনে মনে অনেক খুশিই হলো ! একটু না অনেকখানি ।
ডাক্তার সাহেব একটু অনাকাঙ্খিত সুরে বলল
-দেখুন , যদিও এটা একটি মারাত্মক ব্যাধি তবুও ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । এমন অনেক রুগীদের ভালো হওয়ার তথ্য আমার কাছে আছে । আপনারা ভেঙে পড়বেন না । উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্ৰহণ করলে অবশ্যই উনি সেরে উঠবেন ।
রিভার ভাবি উত্তেজিত কণ্ঠে বলল
-রিভার কি অসুখ হয়েছে ।
ডাক্তার সাহেব চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখলেন । তারপর বিনয়ী ভঙ্গিতে বললেন
-ওনার যে এবরশন টা করানো হয়েছিল সেইটা থেকে মূলত এইটার উৎপত্তি । রিভার জড়োয়া নারীতে একটা ইনফেকশন দেখা দিয়েছে । সেখান থেকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা । তবে যথাযথ চিকিৎসার ফলে এই রোগ নির্মূল হচ্ছে । আর রিভার এখনও তেমন বড় সমস্যা হয়নি । তবে চিকিৎসার উপর না থাকলে হয়তো বড় কিছু হতে পারে ।
রিভার ভাই বলল
-উন্নতমানের চিকিৎসা বলতে ?
-ওনার একটা অপারেশন করা লাগবে । যেটা বাইরে করলে ভালো হয় । কোনো রিস্ক থাকে না । দেশের জন্য একটু ঝুঁকি থাকে ।
রিভার ভাই একটু নিচু কণ্ঠে বলল
-বাইরে করতে কত খরচ হতে পারে ?
-ওই মনে করেন বিশ -পচিশ লাখ লাগতে পারে ।
রিভা ছাড়া সবাই চমকে উঠলো । কারণ রিভা জানে এত টাকা তার ভাইয়ের পক্ষে সামাল দেওয়া অসম্ভব । আর রিভার অপারেশনও হবে না । রিভা মারা যাবে ! রিভা বেঁচে থাকতে চায়ও না । এই সমাজের প্রতিটি নিয়ম রিভার অসহ্য লাগে । বাতাসের সাথে ভেসে আসা অক্সিজেন বিষাক্ত লাগে । কি হবে আর বেঁচে থেকে । জীবন তো আর কম উপভোগ হলো না । জীবনের অনেক কিছুই দেখা শেষ । সেদিনও বাবার হাত ধরে ছাড়া হাঁটতে পারতাম না । আর এরই মধ্যে এতটা বছর কেটে গেল । আবার কিছুদিন পরে হয়তো কবর বাসী হয়ে যাবো । এই কয়েকদিনের জন্যই কি পৃথিবীতে আসা ? রিভার দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । ভাবতে ভালো লাগে ! কিন্তু ভাবনা গুলো যে শুধুই মিছে । জীবনের মোড় যেন কবির লেখা গল্পের মতোই পরিবর্তন হচ্ছে । কবির যখন ইচ্ছা কলমের মাথা ঘুরিয়ে গল্পে কাউকে মেরে দেয় আবার কাউকে বাঁচিয়ে দেয় । অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষকেও কবি তার মতো করে বাঁচিয়ে দিতে পারে । তেমনি জীবনের কখন কি ঘটছে বলা মুশকিল ।
রিভাদের বাসায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে । রিভার ভাইয়া কিছুতেই বোনের মৃত্যুর খবর শুনতে প্রস্তুত নন । কিন্তু নিয়তির কাছে তো সবাই বন্দি । নিয়তির বাইরে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই । রিভাদের সব কিছু বিক্রি করলেও বিশ লাখ টাকা হবে না । আর ছোট চাকরি করে এত টাকা জমানো অসম্ভব । তাহলে এখন! রিভার ভাই আর ভাবতে পারছে না ।
আয়ানের বিয়ে আজ । রিভার থেকে ভালো ফ্যামিলি এবং সুন্দরী মেয়ে । ফ্যামিলির পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করছে আয়ান । আয়ানদের সারা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে । সাথে অনেক রঙের ঝিকমিক আলো । বাড়ির সবাই অনেক খুশি । সাথে আয়ানও অনেক খুশি । খুশি হবেই বা না কেন ? মেয়ে দেখতে যেয়ে যখন মেয়েকে সামনে আনা হলো তখন আয়ান একবার তাকিয়ে যেন চোখই সরাতে পারছিলো না । এইটা মেয়ে নাকি পরী ? আয়ান খুব কনফিউশনে ছিল । এত সুন্দরী আবার কোনো মেয়ে হয় নাকি ! এটা কোনো পরী হবে হয়তো । কয়েক বার চোখ ডলে আবার তাকিয়েও যখন একই রকম দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছিল তখনও আয়ানের বিশ্বাস হচ্ছিল না । আয়ানের মনে বিশ্বাস হলো , যখন আয়ান মেয়েটির হাতে আংটি পড়িয়ে দিল । হাতটা কি সুন্দর । আয়ান যেন এক অচেনা দেশে আছে । যেখানে ইচ্ছা মতো সব কিছু হয় ।
বন্ধুদের পাল্লা চুকিয়ে বাসর ঘরের দিকে রওনা হলো আয়ান । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দীর্ঘশ্বাস প্রবাহিত করলো । নিজের রুম নিজের বাড়ি ! যেখানে সেই ছোট্ট থেকে বেড়ে উঠা , যেই রুমে রাত অতিবাহিত করে দুই যুগ সময় কাটিয়ে দিয়েছি সেখানে ঢুকতে এত নার্ভাস হচ্ছি কেন ? প্রশ্ন গুলো সত্যিই অহেতুক ।
আয়ান রুমে ঢুকে দেখলো তার চির চেনা বিছানায় একটি মেয়ে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে ।
আয়ান হাতের ঘড়িটা টেবিলের উপর খুলে রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো
-খুব টায়ার্ড নাকি ?
অনেক্ষণ হলো কিন্তু কোনো উত্তর নেই । আয়ান চোখটা উঠিয়ে বিছানায় তাকিয়ে অবাক হলো ! মেয়েটা বসা অবস্থায় শুয়ে পড়েছে । আয়ান আস্তে আস্তে বিছানায় গেল । তারপর অস্বস্তি কাটিয়ে বলল
-এই যে , আপনি কি ঘুমিয়েছেন ?
কোনো সাড়া শব্দ নেই । আয়ান এবার হাত ধরে ঝাকুনি দিল তবুও কোনো পরিবর্তন নেই । আয়ান এবার একটু ভয় পেয়ে গেল । তাহলে কি অজ্ঞান হয়ে গেল মেয়েটা ! আয়ান গ্লাস থেকে পানি নিয়ে মুখে পানি দিলো তবুও কোনো পরিবর্তন নেই । আয়ান এবার তটস্থ হয়ে ওর দুলাভাইকে ফোন দিল । বিয়ে উপলক্ষে আপু দুলাভাই আয়ানের বাসায়ই আছে ।
আয়ানের দুলাভাই ফোন রিসিভ করে ঠাট্টা করে বলল
-কি শালাবাবু , বউ রেখে আমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হচ্ছে নাকি ?
পাশ থেকে আয়ানোর আপু আয়ানোর দুলাভাই কে বলল
-ফাইজলামি রাখো । ছেলেটা এত রাতে ফোন দিল কেন সেটা দেখো । কোনো সমস্যা কি না ?
আয়ান তটস্থ হয়ে বলল
-দুলাভাই , বিশাল ঘটনা ঘটে গেছে ! মেয়ে তো অজ্ঞান। হয়ে গেছে !
আয়ানের দুলাভাই আবারও ঠাট্টা করে বলল
-তোমাকে আগেই বলেছিলাম সব কাজেই ভাবনা চিন্তার দরকার আছে । একেবারে অজ্ঞান !
-দুলাভাই ফাইজলামি রাখেন । আমি রুমে ঢুকেই দেখি সে অজ্ঞান । এখন কি করবো তাই বলেন ?
-অপেক্ষা করো আসছি ।
আয়ানের আপু আর দুলাভাই আয়ানের রুমে ঢুকলো ।
আয়ানের আপু একটু পানি মুখে ছিটিয়ে দিল আয়ানের বউয়ের । আয়ানের বউ একটু নড়ে উঠলো ।
একটু পর উঠে বসলো । আয়ানের দুলাভাই ও আপুকে দেখে অনেকটা অবাক হলো তাহা । তাহা আয়ানের বউ । আয়ানের আপু জিজ্ঞাসা করলো এখন ঠিক আছো তো ?
তাহা ভয়ে ভয়ে বলল
-হ্যা ঠিক আছি । সারাদিন অনেক প্রেসার যাওয়ার কারণে একটু শরীর দূর্বল ।
-আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা এখন রেস্ট করো । আর আয়ান তুই আগামীকাল সকালেই তাহাকে ডাক্তারের কাছে যেয়ে চেকআপ করে আসবি ওকে । আমি যেন আর কথা না শুনি ।
সকাল ১০ টা । আয়ান আর তাহা ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে । ডাক্তার খুব ভালো করে রিপোর্ট গুলো দেখছেন ।
ডাক্তারের কথায় দুজনেই চমকে উঠলো । আর আয়ান যেন আকাশ থেকে পড়লো । ডাক্তারের মুখে হাসি থাকলেও ওদের দুজনের মুখে চিন্তার কালো ছায়া ।
রিভা সহ ওর ভাই ভাবি সকালের খাবার খাচ্ছে টেবিলে । কারো মুখে কোনো কথা নেই । হঠাৎই কলিংবেলের আওয়াজ । রিভার ভাবি উঠে গিয়ে দরজা খুললেন । দরজা খুলে রিভার ভাবি বড় ধরণের শক খেলেন । তিনি কিছুতেই এটা আশা করেননি । সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে তিনি এখনে কখনোই আশা করেননি । রিভার ভাবি একটু ঘোরের মধ্যেই চলে গেলেন ।
চলবে …
(বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন । ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)
.
.
.