এবোরশন পর্ব ৫

#এবরশন
পর্ব পাঁচ
লিখা –মিনহাজ মাহমুদ
.
রিভা সকালে বাথরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসবে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো । সঠিকভাবে হাঁটতে না পারলেও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে । ভাই ভাবি অনেক ব‍্যস্ত । কতই বা আর করবে ।
আরিফ ভাইয়ের কল । রিভা কলটা রিসিভ করে কানে তুললো ফোন।
আরিফের কথায় রিভার হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ না হলেও কয়েকটি খন্ডে পরিণত হলো ।
কি শুনলো রিভা এটা । রিভার ভাবি রিভার রুমে খাবার দিতে এসে দেখে রিভা দাঁড়িয়ে । রিভা পড়ে যেতে নিলেই রিভার ভাবি রিভাকে সামলে নিল ।
মিনহাজ রুমের দরজা না খোলায় মিনহাজের বাবা নিচ থেকে কয়েকজন মানুষ ডেকে নিয়ে আসলো । উদ্দেশ্য রুমের দরজা ভাঙা । মিনহাজের মা তো সেই তখন থেকেই কেঁদে চলেছে । মেয়ে মানুষ অল্পতেই অনেক নার্ভাস হয়ে যায় । আর ছেলের কোনো সমস্যার কথা শুনলে যেন পাগল হয়ে যায় । মিনহাজের মায়েরও ঠিক সেই অবস্থা ।
কয়েকজন মিলে বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পর দরজার আগের অবস্থান পরিবর্তন হ‍্লো । রুমের ভেতরে ঢুকে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । রক্তে সারা মেঝে মাখামাখি করছে । মিনহাজ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে । এই অবস্থা দেখার সাথেই মিনহাজের মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে । ওনাকে একজন ধরে পাশের ঘরে শুইয়ে দিলেন । মিনহাজের বাবার যেন পা উঠছে না । তিনি নিস্তব্ধ হয়ে বসে পড়লেন । বাইরের কয়েকজন মিলে ধরে মিনহাজকে হাসপাতালে নিয়ে গেল । মিনহাজের সেন্স নেই । বাম হাতের শীরা কাটা সেটা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে । মিনহাজের বাবা কাঁদতে ভুলে গেছেন ‌ । এক ছেলেদের অনেক ভালোবাসা থাকে পরিবারে ‌ । মিনহাজের বাবা কিছুতেই বুঝতে পারছে না মিনহাজ কেন এমনটা করলো ! কিসে কমতি ছিলো ! কোনো আবদার তো বাদ রাখেনি ! তিনি উঠে দাঁড়ালেন মিনহাজের মায়ের কাছে যাবার উদ্দেশ্যে । যেতে নিলেই ওনার চোখ পড়লো টেবিলের উপর কাচের গ্লাসের নিচে একটা কাগজের দিকে । তিনি কাগজটা হাতে নিয়ে একটা ভাজ খুললেন । কাগজের লেখা একটি চিঠির মতো লাগছে । তিনি পড়তে শুরু করলেন !
প্রিয় বাবা ও মা
জানি তোমাদের সাথে আর কখনও দেখা হবে না । আগামীকাল সকালটা হয়তো আমার চোখ আর ভ্রমণ করবে না । তোমাদের ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । জানি তোমরাও খুব কষ্ট পাবে । কিন্তু নিয়তির পথ দর্শন তো আর কেউ বদলাতে পারে না । আমিও হয়তো তেমনি নিয়তির খাচায় বন্দি । আমি হয়তো বেঁচে থাকতে পারতাম কিন্তু আমার বেঁচে থাকার মাঝে কোনো সফলতা থাকতো না । আমি রিক্ততায় , অনুসূচনা করে বেঁচে থাকতে চাই না । কারণ আমি অপরাধী ! আমি খুনি ! হ‍্যা আমি খুন করেছি একটা নবজাতক নিষ্পাপ জীবনের । আমি খুন করেছি একটা মা ডাকের । একটা নারীর স্বর্বস্ব নষ্ট করেছি আমি । আমার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই । আমি পাপি ! মাহা পাপি । আমার পাপের কোনো ক্ষমা নেই । এই সমাজে আমার মতো পশুর বেঁচে থাকা প্রচণ্ড
অপরাধ । না ! আমি পশু না তার চেয়েও নিকৃষ্টতম প্রাণী । কারণ পশুরা তো বিনাদোষে কাউকে আঘাত করে না । কিন্তু আমি করেছি বিনাদোষে আঘাত ।
আমি আমার রক্তকে খুন করেছি । আমি সত্যিই একটা পাষান ! আচ্ছা বাবা তুমি যদি আমাকে খুন কর তাহলে কি তুমি বেঁচে থাকতে পারবে পৃথিবীতে ! পারবে না , তার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় । ভালো থেকো তোমরা । আর আমাকে মাফ করে দিও । খুব ইচ্ছা করছে তোমাদের একবার জড়িয়ে ধরতে । কিন্তু আমার মতো পাষাণ হৃদয়ের শেষ ইচ্ছা হয়তো পূরণ হবে না । আর শেষে একটা কথা বলতে চাই ! যদি পারো রিভা নামের মেয়েটিকে সাহায্য করিও । আরিফ ওর সম্পর্কে তোমাকে জানতে সাহায্য করবে । আমার জীবনের ইতি হয়তো এখানেই লিখা ছিল তাই আর তোমাদের সাথে বেঁচে থাকা হলো না । সব চেয়ে কষ্ট লাগছে তোমাদের সাথে কাটানো সময় গুলো ভেবে । আর কখনও এক টেবিলে বসে নাস্তা করা হবে না । মায়ের হাতের রান্নাও আর খেতে পারবো না । কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে । তবুও আমি নিরুপায় ! আমার শাস্তির প্রয়োজন ! পাপের প্রাশ্চিত্ত‍্য করা প্রয়োজন । আর বেশি কথা বাড়াতে চাচ্ছি না । তোমরা ভালো থেকো !
মিনহাজের বাবা চিঠিটা বুকের সাথে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন ।
-কিভাবে ভালো থাকবো রে বাবা তোকে ছাড়া ! তুই তো আমাদের ভালো থাকার একমাত্র কারণ । সারাদিন অফিস শেষে একসাথে কিছুক্ষণ তোর সাথে আড্ডা দিলে আমার মনে হয় আমি যেন ভালোবাসার সাগরে ভাসছি । তুই কেন এমন করলি রে বাবা ?কেন এমন করলি ?
ওনি উঠে পাশের রুমে মিনহাজের মায়ের কাছে গেলেন । মিনহাজের মা এখনও অচেতন । তিনি গ্লাস থেকে পানি নিয়ে মুখে দিতেই একটু একটু করে চোখ নাড়তে লাগলো ।
কিছুক্ষণ পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলো
-ওরে বাবা তুই কেন আমাদের ছেড়ে গেলি ?
বলতে বলতে আবারও অচেতন হয়ে গেলেন । প্রিয়জনের বা নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু আসলেই অনেক কষ্টের ।
হসপিটালে আরিফই বর্তমানে মিনহাজের আপন বলতে আছে । আরিফই রিভাকে মিনহাজের এই খবর দিয়েছে কিন্তু পুরো কথা শোনার আগেই লাইনটা কেটে যায় । তাই আরিফ রিভার ভাইয়ের নাম্বারে কল দিয়ে সবটা জানায় । গতকাল হসপিটালে রিভাকে নিতে আসলে আরিফ তখন রিভার ভাইয়ের নাম্বারটি রেখে দিয়েছিল ।
দুপুরে সবাই প্রায় হসপিটালে উপস্থিত । মিনহাজের মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে । রিভার পরিবারও এসেছে ।
ডাক্তার জানালো
অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল । কয়েকদিনের মধ্যে যদি জ্ঞান না ফেরে তাহলে কোমায় রাখতে হবে । আর সেখান থেকেও হয়তো ফেরার সম্ভবনা থাকবে ২% । তারপরও চেষ্টা করতে হবে । আর সবই আল্লাহর ইচ্ছা । তিনি চাইলে হয়তো বাঁচিয়ে দিতেও পারেন ।
কয়েকদিন চলে গেল তবুও মিনহাজের জ্ঞান ফিরলো না । মিনহাজকে কোমায় রাখা হলো ।
ভালো ঘটনার প্রকাশ হতে দেরি হয় । কিন্তু খারাপ কিছু প্রকাশ হতে কয়েক মিনিট মাত্র । রিভার ঘটনাও আয়ানের বাসায় পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগেনি । ওদের বাসা থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে
-এমন অপয়া , নষ্ট , কু-চরিত্রের মেয়ে তাদের বাড়ির বউ করে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব না । আয়ানেরও একই মত । বিয়ের আগেই পেট বাধিয়ে বসা মেয়েদের কোনো ছেলে জেনে শুনে বিয়ে করবে বলে মনে হয় না । আর আয়ান একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলে ওর কি কম আছে ?? যে একটা প্রাষ্টিটিউটকে ও বিয়ে করবে !
হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে কোনো এক ভালো ছেলে যে কিনা দ্বিধা ছাড়াই রিভাকে বিয়ে করবে । কিন্তু কে সে ?? প্রশ্ন থেকে যায় !
কেটে গেল দুটি বছর । রিভার অবস্থা দিন দিন আরও বেশি খারাপ হচ্ছে । মিনহাজকে এখনও কোমাতেই রাখা হয়েছে । রিভার এত অধপতন দেখে রিভাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল রিভার ভাই ।
অনেক গুলো টেস্ট এর রিপোর্ট দেখে ডাক্তার অবাক হলেন । তিনি রিভার ভাইয়ের দিকে তাকালেন ।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো । এটা কি করে সম্ভব । সবাই অবাক হলেও রিভা মনে মনে অনেক খুশিই হলো ! একটু না অনেকখানি ।
চলবে…
.
.
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here