এবোরশন পর্ব ৪

#এবরশন
পর্ব চার
লিখা -মিনহাজ মাহমুদ
.
এত অসহ্য ব‍্যাথা জানলে হয়তো রিভা এবরশনটা করতো না ।
রিভার এমন অদ্ভুত আচরণে পাশে থাকা নার্স, সিনিয়রকে বলল
-মেয়েটা এমন করছে কেন ? ওর ব‍্যাথা কি খুব লাগছে ? তাহলে কি অবশের ইনজেকশনে কোনো কাজ করেনি !
সিনিয়র রাগন্বিত কণ্ঠে বলল
-তোর কাজ কর । এত ভাবা লাগবো না । কাজ প্রায় শেষের দিকে । এখন অন্য মেডিসিন আর দেওয়ার দরকার নাই ‌ । শুধু আদিক্ষেতা হুম !
অনেক্ষন অসহ্য যন্ত্রণার শেষে একটু স্বস্তি পায় রিভা । তবুও মনে হচ্ছে ব‍্যথাটা আছেই । তবে আগের থেকে কম । নার্সদের কাজ শেষ হয়েছে । তাদের কাছে এগুলো নিত্য দিনের খেলা । কেউবা আসে হাজবেন্ড সাথে , কেউবা একা ! বেশিরভাগই অবিবাহিত মেয়েরা এসব কান্ডের সাথে জড়িত ।
আস্তে আস্তে রিভা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল । তার খুব ঘুম পাচ্ছে ।
মিনহাজ অনেক ভেবে চিন্তে বের হলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে । আরিফের কাছ থেকে হাসপাতালের ঠিকানা নিল । মিনহাজের আসলেই খুব খারাপ লাগছে । এটা করা কি আদৌও ঠিক হলো ? অনুশোচনায় পড়ে গেছে মিনহাজ । রিভা এখন কি অবস্থায় আছে মিনহাজের খুব জানতে ইচ্ছা করছে । গাড়ির মধ্যে এসি থাকলেও খুব ঘামছে মিনহাজ । হাসপাতালের গেটে গাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে রিসিভশনে গেল । কিন্তু এটা তো আর প্রাইভেট হাসপাতাল না যে চাহিবা মাত্র যে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে ! তাই মিনহাজকে অপেক্ষা করতে বলা হলো ।
মিনহাজের মন যেন অস্থির হয়ে উঠেছে । অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করলেও রিভাকে সব চেয়ে বেশি পছন্দ করে মিনহাজ । ভালো যে বাসে না তা না । মিনহাজকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সে কখনও ভাবিনি । রিভার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাওয়ায় রিভাকে রিজেক্ট করেছে মিনহাজ । কি বলবে ও রিভাকে ? সে তো এখনও বাবার টাকায় চলে । বাবার কাছে বিয়ের কথা কিভাবে বলবে ? তাই রিভাকে রিজেক্ট করা ছাড়া ওর কোনো উপায় ছিল না । কিন্তু মিনহাজের এখন মনে হচ্ছে সে খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছে । খুব বড় ! যার প্রতিবাদে কি করা উচিৎ সে জানে না । তার এখন মাথায় ঘুরছে রিভার সাথে দেখা করবে কি করে ।
মিনহাজকে একজন অপরিচিত মানুষ ডেকে বলল
-কি ভাই কোনো সমস্যা ?
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মিনহাজের । লোকটা আবার বলল
-হাসপাতালে কোনো কাজ তাড়াতাড়ি করার জন্য আমাকে স্মরণ করবেন । করে দিমু ।
লোকটার মুখে পান । কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট ।
মিনহাজ তটস্থ হয়ে বলল
-ভাই একটা রুম নাম্বার খুঁজে দেন ! খুব জরুরি ভাই ।
-আরে ব‍্যস্ত হবেন না । আমি দেখতাছি । তয় , এখানে কিছু না দিলে কেমনে হয় ভাই ! বুঝতেই তো পারছেন নাকি ।
লোকটার শেষের দিকের কয়েকটি কথা পেচানো । তবুও মিনহাজ বুঝলো লোকটা কি বলতে চাইছে । মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে লোকটার হাতে দিয়ে মিনহাজ বলল
-ভাই রিভা নামের মেয়েটি কোন রুমে আছে শুধু এইটুকু বলে দেন !
-আরে ভাই উত্তেজিত হবেন না । দিতাছি কয়ে । কিন্তু ভাই আমার কাছে তো ভাঙতি নাই পাঁচশো টাকার । একশো টাকা থাকলে দেন ।
মিনহাজ অস্থির হয়ে বলল
-আপনি পুরোটাই রাখুন । প্লিজ তাড়াতাড়ি রুম নাম্বারটা আমাকে এনে দিন ।
লোকটা অবাক হলো খানিকটা । তার সম্ভব অনুযায়ী রুম নাম্বারটি মিনহাজের কাছে এসে বলল ।
হায়রে সমাজ ! টাকা ছাড়া কেউ কিছু বোঝে না । এক সেকেন্ডের যেখানে গ‍্যারেন্টি নেই সেখানে এত টাকা দিয়ে কি হবে ! তবুও আমি ছুটে চলেছি টাকার পিছে , ছূটে চলেছে এই সমাজ , এই দেশ , এই পৃথিবী !
মিনহাজ দরজা দিয়ে ঢুকে দেখলো রিভা অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে । শরীরের কাপড় গুলো ঠিকঠাক কিন্তু এলোমেলো । চুলগুলো কেমন উশখোখুশকো ।
মিনহাজের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো । তার ছোট্ট একটা ভুলে আজ একটা জীবন নিঃস্ব হয়ে গেল ।
-এই রোগীর সাথে কি আপনি এসেছেন ?
মিনহাজ পিছু ফিরে দেখলো একটা নার্স দাঁড়িয়ে আছে । মিনহাজের কোনো উত্তর না পাওয়ায় আবার বললো
-কথা বলছেন না কেন ?
মিনহাজ মাথা দুলিয়ে বোঝালো
-হ‍্যা !
-পেশেন্টের শরীর একটু দূর্বল তাই সন্ধ্যার আগে বাসায় নিতে পারবেন না । কারণ এইসব রোগীদের আমরা রাখি না । কিন্তু এর অবস্থা খারাপ তাই কিছুক্ষণ রেস্টে রাখতে হবে ।
মিনহাজ দূর্বল কণ্ঠে বলল
-আচ্ছা , ওই ময়লা কি ফেলে দেওয়া হয়েছে ?
-সঠিক জানিনা ।
-একটু দেখানো যাবে ?
-আচ্ছা দেখছি ।
মিনহাজ রিভার পাশে বসলো । রিভার হাতটা ধরে একটা কঠিন যন্ত্রণা অনুভব করলো ।
-এই যে ভাই ,
ওই নার্সটা আবার এসেছে । তার হাতে একটা গামলা মতো কি যেন । মিনহাজ আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল ।
-দেখূন ,
মিনহাজ গামলার দিকে তাকিয়ে নিস্তব্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো । কথা বলার শক্তি লোপ পেয়েছে । মাথার ভেতর প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে । গামলার মধ্যে কয়েক টুকরো মাংস রক্তে মাখামাখি করে আছে । কেমন বিশ্রী দেখতে । মিনহাজের কাছে মনে হচ্ছে মাংসের টুকরো গুলো নড়ছে । আর চারিদিক থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে । কান্নার আওয়াজটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে । মিনহাজ কান ধরে বসে পড়লো ।
কিন্তু কিছুতেই কান্নার আওয়াজ থামছে না । মিনহাজ জোরে একটা চিৎকার দিয়ে হাসপাতালের বারন্দার মধ্যে দৌড়ে চলেছে । মিনহাজ যতই দৌড়াচ্ছে ওর মনে হচ্ছে পিছু পিছু কান্নার আওয়াজও ছুটে আসছে । হাসপাতালের কিছু লোক অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মিনহাজের দিকে। কেউ কেউ হয়তো পাগল ভাবছে । আবার কেউ দৃষ্টি গোচরই করতে পারছে না । মিনহাজ দৌড়ে গাড়ির স্টেয়ারিং সিটে বসলো । উদ্দেশ্য নাই কোনো । মিনহাজ খুব জোরে গাড়ি চালাচ্ছে তবুও ওর মনে হচ্ছে কান্নার আওয়াজ পিছু পিছু আসছেই । মিনহাজের এখন একটাই লক্ষ্য ! কান্নার আওয়াজের বাইরে যাওয়া ।
আরিফ সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আসলো । রিভার পাশে কেউ নেই । নার্সরা তাড়াতাড়ি বেড ছেড়ে দিতে বলছে । কারণ এই ধরণের পেশেন্টের জন্য বেশি সময় বেড দেওয়া হয় না । অল্প রেস্টের পরেই রিলিজ করে দেওয়া হয় ।
আরিফ কি করবে বূঝতে পারছে না । কিন্তু আরিফকেই এখন কিছু করতে হবে । কিন্ত কি করবে !
সন্ধ্যা হয়ে গেছে তবুও রিভা বাসায় না ফেরায় রিভার ভাবি রিভার নাম্বারের কল দিল ।
রিভার ফোন বেজে ওঠায় আরিফের মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো । মোবাইল স্কিনে ভাবি নাম ।
আরিফ ফোনটা রিসিভ করে সব কিছু খুলে বলল ।
রিভার ভাবি যেন কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না । তবুও বাস্তবতা মানতেই হবে ।
রিভার ভাই ও ভাবি হাসপাতালে এসে রিভাকে বাসায় নিয়ে যায় । রিভা একা হাঁটতে পারছে না ।নার্সরাও অবাক ! এই রকম কাজে পেশেন্টের অবস্থা এত খারাপ হওয়ার কথা না । এর আগে কখনও এমন হয়নি । আরিফকে অনেক ধন্যবাদ জানায় রিভার ভাই ও ভাবি ।
আর আরিফের কাছ থেকে এই ঘটনার সকল তথ্য জেনে নেই রিভার ভাই । মিনহাজ সম্পর্কেও অনেক কিছু জেনে নিল ।
সকালে মিনহাজের মা এক গ্লাস দুধ হাতে মিনহাজের রুমের দরজায় নক করলো ।কোনো রেসপন্স নেই । অনেকবার ডাকার পরও মিনহাজের কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি চিল্লাচিল্লি করতে শুরু করলেন । কান্না করতে করতে মিনহাজের বাবাকে ডাকলেন ।
রিভা সকালে বাথরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসবে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো । সঠিকভাবে হাঁটতে না পারলেও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে । ভাই ভাবি অনেক ব‍্যস্ত । কতই বা আর করবে ।
আরিফ ভাইয়ের কল । রিভা কলটা রিসিভ করে কানে তুললো ফোন।
আরিফের কথায় রিভার হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ না হলেও কয়েকটি খন্ডে পরিণত হলো ।
কি শুনলো রিভা এটা । রিভার ভাবি রিভার রুমে খাবার দিতে এসে দেখে রিভা দাঁড়িয়ে । রিভা পড়ে যেতে নিলেই রিভার ভাবি রিভাকে সামলে নিল ।
চলবে…
.
(বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন । গল্পের চরিত্র বা কাহিনী কাল্পনিক । কিছুটা বাস্তব দিক নিয়ে কল্পনা মিশিয়ে লিখা । অবশ্যই জানাবেন গল্পটা কেমন লাগছে। )
.
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here