এবোরশন পর্ব ২

#এবরশন
পর্ব দুই (2)
লিখা –মিনহাজ মাহমুদ
.
এই প্রথম রিভা কোনো ছেলে পক্ষের সামনে আসলো । কিন্তু তবুও তার কোনো ভয় বা অন্য রকম ফিলিংস কাজ করছে না । রিভার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা ঘুরছে ! পেটের বাচ্চা ! কিভাবে এর সমাধান খুঁজে পাবে ? তা এখনও রিভার অজানা ।
ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে সামনের লোকদের দেখার একটু চেষ্টা করলো রিভা । কিন্তু সামনে তাকাতেই রিভা অবাকের উচ্চ ধাপে পদার্পণ করলো । পরিচিত একটা মুখ ! চোখাচোখি হতেই রিভার দুইবার হার্ট মিস হওয়ার উপক্রম হলো !
আয়ান ভাই সামনে বসে মিটিমিটি হাসছে । আয়ানকে রিভার খুব ভালো করে চেনা । রিভাদের বাসায় আগে প্রায় আসতো আয়ান । সেই সুবাদে আয়ানের সাথে পরিচয় । অনেক বাইরেও ঘুরতে গেছে আয়ানের সাথে ।
-বাহ , মেয়েতো মাশআল্লাহ । আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে । আর বড় কথা আয়ানের আগে থেকেই পছন্দ ।
মুরব্বিদের কথায় ঘোর কাটে রিভার । রিভা বুঝতে পারে আয়ানের সাথে কয়েকদিন মেশায় আয়ান মনে মনে পছন্দ করে ফেলেছে ।
রিভার ভাই বলল
-তাহলে দেরি কেন , বিয়ের দিন ধার্য করা হোক !
বড়দের কথার মাঝখানে আয়ান বলে উঠলো
-না ! রিভার মত জানাটা জরুরি । আর আমরা কয়েকদিন পরে এই বিষয়ে কথা বলবো । বিয়ে মানে সারাজীবনের ব‍্যাপার । তাই ভাবাভাবির অবশ্যই দরকার আছে ।
রিভা মনে মনে খুব খুশি হলো । কিন্তু রিভার কাছে অবাক লাগছে যে রিভার মনের ব‍্যাপারটা আয়ান বুঝলো কেমন করে ! আর যার সাথে এতদিনের সম্পর্ক সেই ছুড়ে ফেলে দিল !
রিভা আর আয়ানকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলো । রিভা সরাসরি ওর রুমের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো । রিভাকে অনুসরণ করলো আয়ান ।
বেলকনিতে অল্প আলোর একটা বাল্প দেওয়া । আলোর স্বল্পতা থাকলেও আলোর কালারটা বেশ । হালকা সবুজ কালার ।
রিভা আনমনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । ল‍্যামপোস্টের নিয়ন আলোয় রাস্তাটা মুখরিত করে তুলেছে । আয়ান লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলল
-মন খারাপ ?
রিভার কেমন যেন লাগছে । কিন্তু এই মানুষটার সাথে তো অনেক চেনা জানা ! তারপরও কেন এমন হচ্ছে ? তাহলে কি মানুষটা আবার নতুন করে পরিচিত ? আনমনা কাটিয়ে রিভা বলল
-না ঠিক আছি ।
-চলো যায় !
রাতে কয়েকবার মিনহাজকে কল দিতে যেয়েও দিল না ।অবশ্য দিলেও লাভ হতো না । কারণ মিনহাজ বলেছে ওর ওই সিমটা হারিয়ে গেছে । টেনশন মানুষকে বুদ্ধি লোপ পেতে সাহায্য করে । রিভা আর একবার মিনহাজের সাথে আগামীকাল দেখা করবে বলে ঠিক করলো ।
মিনহাজ প্রতিদিনের মতো আজও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে । আরিফ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো
-এই মিনহাজ , রিভার সাথে তোর কি হয়েছে বলতো ? তুই অনেক মেয়ের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করেছিস প্লিজ রিভার সাথে এমন কিছু করিস না । মেয়েটা খুব ভালো । তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসে ।
মিনহাজ অন্য বন্ধুর পিঠ চাপড়ে হেসে হেসে বলল
-ওরে বাবা , এ তো দেখছি মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি ।
মিনহাজের কথায় সবার কাছে আরিফ হাসির বস্ত্র হিসেবে পরিণত হলো ।
পাশ থেকে এক বন্ধু বলল
-কি রে মিনহাজ , কি হয়েছে ?
-আর বলিস না । দুই -এক দিন ফূর্তি করেছি আর যা হওয়ার তাই হলো ।
মিনহাজ আর একটু ঠাট্টার ছলে বলল
-মাইয়া নাকি প্রেগনেন্ট ! আমারে এখন ওকে বিয়া করতে হইবো । এইটা কি মাইনা নেওয়া যায় ! কার না কার সাথে নষ্টামী কইরা এহন আমার উপর চাঁপাইতে চাই ।
মিনহাজের মুখ ভ‍্যাঙানো কথায় অন‍্যান‍্য বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি করছে । এতে আরিফের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে । যদি বন্ধু না হতো তাহলে এখানে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র পরিণত হতো ।
আরিফ রাগন্বিত কণ্ঠে বলল
-মিনহাজ তোর ভালো হবে না । শুধরে নে নিজেকে । এখনও সময় আছে ।
আরিফের কথায় ওদের হাসি একটু বেড়ে গেল ।
বড়লোক বাপের বেকে যাওয়া ছেলে-মেয়েরা কখনও কারো কষ্ট হয়তো বুঝতে পারে না । এখনেও তেমনি ।
রিভা সকালে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো । আজকে দুইটা কাজ । যদি প্রথমটা ভালো হয় তাহলে দ্বিতীয় কাজের কোনো প্রয়োজন নেই । প্রথমে মিনহাজের সাথে দেখা করবে । ও যদি সব মেনে নেয় তাহলে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না । প্রয়োজনে মিনহাজের পা জড়িয়ে ধরতেও রিভা প্রস্তুত । মিনহাজ না মানলে অবশ্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা লাগবে । দিনদিন তো শরীর পরিবর্তন হচ্ছে । এভাবে আর থাকা সম্ভব না । আবার সামনে বিয়ের কথাবার্তা চলছে । কি যে হবে !
-মিনহাজ প্লিজ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো ! বিয়ে প্রায় ঠিক । আমি এই অবস্থায় !
রিভা কেঁদে দিল ।
মিনহাজের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই ।
-মিনহাজ প্লিজ এভাবে ছুড়ে ফেলো না আমায় । তুমি কিছু একটা করো !।
-শোনো রিভা , কান্নাকাটি করে কোনো সমাধান হবে না । তার চেয়ে ভালো হয় তুমি এবরশনটা করে নাও । চিন্তা নেই , যা খরচ সব আমি দিব । এমনকি ওষুধের টাকাও দিয়ে দিব। তারপর বাড়ির পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নিও । আর এসব ভুলে যাও ।
-তোর টাকা লাগবে না । তুই থাক তোর টাকা নিয়ে ।
রাগে গজগজ করতে করতে মিনহাজের সামনে থেকে চলে যায় । উদ্দেশ্য ডাক্তারের চেম্বার ।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর একটা নার্স এসে ডেকে নিল রিভাকে । ডাক্তারের সামনে বসে কোনো কথা বলার সাহস পাচ্ছে না । লজ্জা কেমন জিনিস তা হারে হারে টেঁর পাচ্ছে রিভা । অবশ্য এসব মেয়েদের লজ্জা আছে বলে কেউ মনে করে না । তবে রিভা ভুলবশত আবেগের মায়ায় পড়ে গেছে ।
লজ্জিত কণ্ঠে বলল রিভা
-স‍্যার আমার একটা এবরশন করা লাগবে !
-ফার্স্ট কোয়ালিটি না সেকেন্ড কোয়ালিটি ?
এসব ব‍্যাপারে ডাক্তাররা অনেক অভিজ্ঞ । তাদের খুব খুলে বলা লাগে না ।
-খরচ কেমন হবে ?
-ফার্স্ট কোয়ালিটিতে পনেরো হাজার হলে কম্পিলিট হয়ে যাবে । আর সেকেন্ডে দশ মতো লাগবে !
-স‍্যার আমার কাছে তো এত টাকা নেই । সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা আছে ।
ডাক্তার সাহেব সাবলীল ভঙ্গিতে বলল
-দেখুন ,এটা পিরাইভেট হসপিটাল । এখানে আমার কিছু করার নেই । কাউন্টার থেকে সব করতে হবে আমরা শুধু এব‍রশনটা করতে পারি ।
আপনাকে একটা ভালো পরামর্শ দেই । আপনি কোনো সরকারি হাসপাতালে গিয়ে কাজটা সেরে ফেলুন । ওখানে ৫-৭ হাজার লাগবে । ওষুধের টাকাও ওখান থেকেই হয়ে যাবে ।
রাস্তায় প্রচণ্ড রোদ । রিভা হাঁটছে । এবার উদ্দেশ্য জুয়েলারীর দোকান ।
গলা থেকে হারটা খুলে দোকানিকে দেখালো । দশ হাজার টাকা দিয়ে ভাইয়া হারটা বানিয়ে দিয়েছিল ।
হারটা বিক্রি করে সাত হাজার টাকা হলো ‌। কয়েক মাসেই তিন হাজার টাকা নেই । জমানো দুই হাজার সহ মোট নয় হাজার টাকা নিয়ে সরকারি হাসপাতালে বসে আছে রিভা । এখনি এবরশন করা হবে বলে জানিয়েছে । আরিফকে রিভা ফোন করে সব বলেছে । এখন এবরশন করবে এটাও আরিফ জানে । আরিফ আসছে । আরিফ মিনহাজকে জানিয়েছে এবং অনেক খারাপ গালিও দিয়েছে । মিনহাজ কি আসবে ?? কিছুক্ষণ পর একটা নার্স রিভাকে ডেকে নিয়ে গেল ‌। রুমের মধ্যে তিনজন সাদা পোশাক পড়া মহিলা ।
একজন রিভাকে বললো
-চিৎ হয়ে বেডে শুয়ে পড় ।
রিভার খুব ভয় লাগছে । হাত পা কাপছে । আরিফ ভাইয়ের সাথে দেখা হলে হয়তো ভালো হতো ।
-কিরে শুইতে এতক্ষণ লাগে । তারাতারি পায়জামা খোল ! আরো মেলা কাজ আছে । নষ্টিফষ্টি করে এখন আসছে প‍্যাট ফেলাইতে । কত যে দেখলাম এমন কান্ড । খোল পায়জামা । ভয় লাগে ? কুকাম করার সময় মনে ছিল না ? পোলা ছাইড়া দিছে নাকি?
নার্স অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে আর প্রশ্ন করছে । রিভা কোনো উত্তর করছে না ।
চলবে …
(বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন )
.
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here