ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১০

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—আচ্ছা শ্রেষ্ঠা শোনো,

—বলুন,

–কফিটা খেতে ভালো লাগছে তো?

—হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে।

—অস্বাভাবিক কিছু কি লক্ষ্য করেছো,

—নাতো,কি !?

—কফিটা কি একটু অন্যরকম লাগছে না খেতে?

—উফফফফ, কি যে বলেন না আপনি। কেমন লাগবে আর খেতে!?

—বিষের গন্ধ পাচ্ছো কোথাও?

—বিষ, কিসের বিষ!?কি বলছেন আপনি?

আমি ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলি!

—কেন কফির ভেতরে বিষের গন্ধ পাচ্ছো না তুমি, আমি যে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি এই কফিতে!

আমার কথা শুনে ও হাত থেকে কফির কাপটা ফেলে দিলো…ভয়ে যেন চোখজোড়া বড়ো হয়ে যেতে লাগলো তার।

—কি হলো,ভয় পেয়ে গেলে নাকি?

—আপনি সত্যি বিষ মিশিয়েছেন কফিতে?

—সেটা তো তুমিই ভালো বুঝতে পারবে।তুমি কফি টেস্ট করেছো,আমি করি নি।

—আপনি মজা করছেন আমার সাথে তাই না?

—কি জানি হয়তো মজা করছি,হয়তোবা না?

আমি লক্ষ্য করলাম ভয়ে শ্রেষ্ঠার প্রান ওষ্ঠাগত।ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওর এই দূরাবস্থা দেখে।

—আহ!আমার গলাটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে…,শ্বাস নিতে পারছি না কেন আমি?(শ্রেষ্ঠা ধরেই নিয়েছে কফিতে বিষ মিশিয়েছি আমি,তাই ওর অন্তরের ভয় ওকে সত্যিকারের বিষের উপলব্ধি করাচ্ছে।যেমনটা আমরা কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভয় পেলে করি।)

আমার সামনে ছটফট শুরু করে দিলো শ্রেষ্ঠা।

—নাহ!আপনি আমার সাথে এটা করতে পারেন না।কিছুতেই পারেন না।

—ওহহ,,তার মানে বিষ তার কাজ শুরু করে দিয়েছে।তাহলে আমি এবার নিশ্চিন্ত।(বেশ ঠান্ডা মাথায় শ্রেষ্ঠাকে উদ্দেশ্য করে বলি)

—কেন করলেন আপনি এটা আমার সাথে,স্ত্রী হই আপনার আমি।কি এমন ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার!

—ক্ষতি,নাতো তুমি আমার কোনো ক্ষতি করো নি।ক্ষতি তো আমি নিজেই নিজেকে করেছি। আর সেটা হলো তোমায় না চিনতে পেরে।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো তুমি একটা ফেইক।

—কি বলছেন আপনি এগুলো,আমি ফেইক কেন হতে যাবো।আমি আপনার স্ত্রী শ্রেষ্ঠা।
যাকে আপনি নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসেন।আর আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি…আমি কোনো ফেইক নই।

আমি নকল শ্রেষ্ঠার করা অনবরত নাটকগুলো সহ্য করতে পারছিলাম না।তাই রাগের বশে ঠাস করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দেই।

—একদম চুপ করো ড্রামা কুইন,আর একবার নাটক করার চেষ্টা করলে তোমার জ্বীভ উপড়ে নেবো আমি।

এই বলে আমি নকল শ্রেষ্ঠাকে ধরে একটা রুমের
ভেতরে নিয়ে যাই।ওকে একটা ধাক্কা মেরে সোফার ওপরে ফেলে দিলাম।তারপর ওকে উদ্দেশ্য করে বলি।

—আমার সাথে আর নাটক করে কোনো লাভ নেই,আমি জেনে গেছি তুমি আসলে শ্রেষ্ঠা নও
তুমি শ্রেষ্ঠার একটা কপি।আর তুমি যে এই অবুঝ শিশুর মতো আচরণ করে বেড়াও,সেটাও তোমার একটা মুখোশ।তাই বলছি,আমার সামনে একদম নাটক করো না।অবশ্য সেটা করার সুযোগ পাবে কিনা,তাও বলতে পারছি না আমি এই মূহুর্তে।

—তুমি মেরে ফেলবে আমায় তাই তো?

–নাহ!এখন তো আর কিছুই করবো না আমি। যা করার তোমার শরীরে আমার দেয়া বিষ করবে।এতোক্ষনে সে তোমার রক্তের প্রতিটি ফোঁটায় মিশতে শুরু করেছে।তারপর ধীরে ধীরে তোমার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়বে….. তারপর কি ঘটবে আশা করি আর বুঝিয়ে বলতে হবে না।

—আমি মরতে চাই না,প্লিজ বাঁচিয়ে নাও আমায়।

—বাঁচিয়ে নেবো,কিন্তু কেন?

—আমি এতো কিছু জানি না,তুমি বাঁচাও আমায়।প্লিজ সেইভ মি।

—তোমায় বাঁচিয়ে আমার কি লাভ,আমার তো বিশেষ কোনো লাভ নেই?

—কি চাও তুমি,আমায় শুধু একবার বলো,

(আমি গিয়ে শ্রেষ্ঠার বিপরীতে রাখা সোফাটায় আরাম করে বসলাম)

—চলো একটা ডিল করা যাক।

—ডিল, কিসের ডিল।

—তুমি নিজের আসল পরিচয় আমার কাছে প্রকাশ করো।কে তুমি,কোথা থেকে এসেছো।কি চাও…..ইত্যাদি ইত্যাদি।এই সমস্ত কিছু খুলে বলো আমায়।তবেই এই বাড়িতে একটা এম্বুলেন্স আসবে।আর সেই এম্বুলেন্সে চেপে তুমি হাসপাতাল যাবার সুযোগ পাবে।আর যদি আমার শর্ত না মানো নিজেকে এই ঘরে মরতে দেখার জন্য প্রস্তুত হও।

—-তুমি আমার সাথে এতো বড়ো চালাকি করলে?

—কেন চালাকি কি তুমি একাই করতে পারো ভেবেছো,ধোঁকা তুমি একাই দিতে পারো।

—আমি সব বলবো তোমায়, তার আগে বাঁচাও আমায়।নয়তো তোমার প্রশ্নের উত্তরে দেবার জন্য বেঁচে থাকবো না আমি।

—ভেবো না,এই বিষ এতো সহজে মারবে না তোমায়।এখনো যথেষ্ট সময় আছে। আমায় সবটা খুলে বলো,তোমার জীবন রক্ষা করার দ্বায়িত্ব আমার।আর যদি না বলো, তোমাকে মারার দ্বায়িত্বটাও কিন্তু আমার।

—আমি রাজি… বলো কি জানতে চাও……

—এইতো পথে এসেছো,সবার আগে নিজের মুখে স্বীকার করো তুমি শ্রেষ্ঠা নও।যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আমার সে তুমি নও।

—হ্যাঁ,আমি শ্রেষ্ঠা নই।আমি শ্রেষ্ঠা সেজে তোমার বাড়িতে ছিলাম এতোদিন ধরে।তুমি যাকে ভালোবাসতে সে অন্য কেউ।আমি নই।

এইমাত্র আমার স্ত্রীর মুখ থেকে যে কথাগুলো বের হলো,এই উত্তর যদিও আমার অনেক আগে থেকেই জানা। তারপরো ওর মুখে শুনে কেমন জানি একটা ধাক্কার খেলাম।বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।জানিনা কেন হচ্ছে এমনটা।

—বলো,এরপর আর কি জানতে চাও তুমি….এতো সময় কেন নিচ্ছো….আমায় না মেরে শান্তি পাচ্ছো না তুমি… তাই না?

নকল শ্রেষ্ঠা আবারো ছটফট করতে লাগলো।এক প্রকার চিৎকার শুরু করে দিলো সে।আমি নিজেও অবাক হয়ে যাচ্ছি,কারণ ঐ কফিতে কোনো বিষ মেশানো ছিলো আমার।আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য বিষের কথাটা বলেছিলাম।কিন্তু এতে তো ওর এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা নয়।কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না কিছুই।আমি ছুটে গেলাম ওর দিকে।

—কি হলো তোমার,?শরীর কি খুব বেশী খারাপ করছে।

—জানিনা শ্বাস নিতে পারছি না আমি।আমার কথা ছাড়া,আগে তোমার প্রশ্ন করো।তারপর হাসপাতালে নিয়ে চলো আমায়।তোমার পায়ে পড়ি।বাঁচিয়ে নাও আমায়।

শ্রেষ্ঠার(বার বার নকল শ্রেষ্ঠা বলতে বা শুনতে ভালো লাগে না,পাঠকরা সবাই নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন আশা করি)অবস্থা আরো বেগতিক হতে লাগলো।মনে হচ্ছে বিষের ভয় খুব বাজে ইফেক্ট পড়ছে ওর ওপর। কিন্তু এই মুহুর্তে ওর কোনো ক্ষতি হোক আমি চাই না।কারণ ওর ক্ষতি হয়ে গেলে আমি আমার প্রশ্নের উত্তরগুলোর এতো কাছে এসেও সবটা হাতছাড়া করে ফেলবো।এখন যেকরেই হোক শ্রেষ্ঠাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে।

—কি হলো,তুমি কথা দিয়েছিলে আমি তোমার শর্ত মানলে বাঁচিয়ে নেবে আমায়।এখন কেন এভাবে সময় নষ্ট করছো।

—আচ্ছা,তোমার কী বেশি কষ্ট হচ্ছে?

—একটু জল দাও প্লিজ,বুকটা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।

এই রুমে কোথাও জল নেই।এখন জল আনার জন্য বাইরে যেতে হবে।শ্রেষ্ঠাকে বিশ্বাস নেই আমার।ওর পক্ষে সব সম্ভব।তাই দরজাটা বাহির থেকে বন্ধ করে জল আনতে গেলাম। একটু পরেই এক গ্লাস জল নিয়ে ফিরে আসি।তারপর আবারো দরজাটা খুলি।দরজা খুলে দেখি ভেতরে শ্রেষ্ঠা নেই।একটা সোফার ওপরে বসা ছিলো ও,সেখানে নেই ও।ভালো করে দেখার জন্য একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।

ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।বিষয়টার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য ঘুরে তাকালাম আমি।ঠিক তখন আমাকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই একটা প্রচন্ড ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিলো শ্রেষ্ঠা।ওকে সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক লাগছে।তারমানে এতোক্ষণের অসুস্থতাও নাটক ছিলো ওর।শিট!মেয়েটা আর কতো বোকা বানাবে আমাকে। একের পর এক ছলনা করে যাচ্ছে আমার সাথে।

আমায় রুমের ভেতরে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো,তারপর জানলার পাশে এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে :

—কি ভেবেছিলে,আমায় বিষের ভয় দেখিয়ে মুখ থেকে আসল সত্যিটা বের করবে।কিন্তু জানো কি,তোমার থেকে আমার মাথার বুদ্ধির পরিমানটা সামান্য হলেও বেশি।তাই তো তোমাকেই তোমার জালে তোমাকেই ফাঁসালাম!

—-দরজা বন্ধ কেন করেছিস,সাহস থাকলে একবার দরজাটা খুলে দেখা বহুরূপী।

—তোমার আমার আসল পরিচয় জানবার খুব ইচ্ছা তাই না,কিন্তু আমি যে মরে গেলেও বলতে পারবো না সেটা ।

—কেন বলতে পারবে না,তুমি কি ভাবছো সবকিছু জানার পরেও আমি সংসার করবো তোমার সাথে?

—তুমি কি সংসার করবে আমার সাথে,আমি তো তোমাকে আর সেই সুযোগটাই দেবো না।জানো, আমি কিন্তু তোমার কোনো ক্ষতি করি নি।আমি সত্যিই চেয়েছিলাম শ্রেষ্ঠা হয়ে তোমার সাথে সংসার করতে।কিন্তু তোমার দুর্ভাগ্য….?মৃত্যু যে বার বার আহ্বান করছে তোমায়।তাই আমার পেছনে লেগে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলে।

—তুমি কি বলছো এসব,এতো বড়ো একটা অন্যায় করে আবার সেটা বড়ো গলায় স্বীকার করছো!?

—দেখো,আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমাকে মারার।এখন যখন তুমি আমার আসল পরিচয় জেনেই গেছো।আমি জানি তুমি সব জানার পরে আর সংসার করবে না আমার সাথে।এখন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা মানেই নিজের সর্বনাশ করা।আমি তোমার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পারবো না,তাই একটু কষ্ট করে তোমাকেই সরে যেতে হবে আমার রাস্তা থেকে।

—মানে,কি করতে চাইছো তুমি?

—কি আর করবো,আমার হাতে যে দিয়াশলাইয়ের বক্সটা দেখতে পাচ্ছো।আর এই কেরোসিন বটলটা।একটু পরেই এই ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠবে।আর সেই আগুনে পুড়ে ….. (হাহাহাহা)

শ্রেষ্ঠার কথা শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো আমার,ও নিশ্চয়ই আমাকে এগুলো ভয় দেখানোর জন্য বলছে না।কারণ মানুষ যখন হিংস্র হয়ে ওঠে, তখন তার পক্ষে সবকিছু সম্ভব।

দেখতে পাচ্ছি,শ্রেষ্ঠা বাহির থেকে ঘরের ভেতরে আর দরজার সামনে কেরোসিন ছিটিয়ে দিচ্ছে।আমার কোনো নিষেধই কানে তুলছে না ও!!এক পর্যায়ে বটলটা খালি হতেই একটা দিয়াশলাই জ্বালিয়ে নেয়।তারপর সেটা জানালা দিয়ে আমার রুমের ভেতরে ছুড়ে মারলো…..!!!!!

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here