ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১১

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১১(রহস্য উন্মোচনের সূচনা🔥)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

মূহুর্তেই সারা ঘরে দাউ দাউ করে করে আগুন জ্বলে উঠলো।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।বাইরে বের হবার একটা মাত্র দরজা, সেটাও শ্রেষ্ঠা বন্ধ করে রেখেছে।আমার কোনো আকুতি মিনতিই কানে তুলছে না ও।

—মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার,কি করছো এগুলো।দরজা খোলো বলছি।

—না,দরজা আমি খুলবো না।আজকে এখানেই মরতে হবে তোমায়।আমার পেছনে লাগার খুব শখ তাই না!?

—তুমি এটা কিছুতেই করতে পারো না আমার সাথে!আমি ছাড়বো না তোমায়।

—চুপ থাকো,একদম চুপ।মরার সময়েও দেখছি তোমার তেজ কমে নি।আমাকে আর রাগিয়ে দিও না।

আমি বুঝতে পারি,শ্রেষ্ঠা আমার কথা শোনার মানুষ নয়।ও আমাকে এখানে মারার জন্যই ছেড়ে দিয়েছে।নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাকেই কিছু করতে হবে।একটু পরে শ্রেষ্ঠার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো।তার মানে ও চলে গিয়েছে।আমাকে মৃত্যুর হাতে একা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে ও!

অবশ্য ঘর থেকে বেরোনোর একটা রাস্তা আছে, আর সেটা হলো জানালা।কাচের জানালা ভেঙ্গে ঝাপ দিতে হবে আমায়।সোজা ছয় তলা বিল্ডিং এর ওপর থেকে ঝাঁপ দিতে হবে আমায়।আমি জানি না,এখান থেকে ঝাঁপ দেবার পরে বেঁচে থাকবো কিনা।কিন্তু এই সময়ে ঘরের ভেতরে পুড়ে মরার থেকে জীবনের ঝুঁকি নেয়াটা বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে।কারণ ঘরের ভেতরে থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু আমার,আর ঝাঁপ দিলে তাও একটা বাঁচার আশা থাকবে।

এই ভেবে জানলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ি, তারপর নিচের দিকে তাকাই।যতোই মনস্থির করি না কেন,এতো উপর থেকে ঝাঁপ দিতে বেশ ভয় করছে আমার।ভয়ে পা কাঁপতে লাগলো।একটা কথা ভালো করেই জানি আমি,আমাকে কোনোভাবেই হেরে গেলে চলবে না।নিজের মায়ের খুনির শাস্তি নিশ্চিত না করে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো না।আমাকে আর কোনো কারণে না হোক,মৃত মায়ের কথা ভেবে বাঁচতে হবে।যদি বাঁচতে নাই পারি!অন্তত বাঁচার আপ্রান চেষ্টাটা তো করতে পারি।আর কিছু না ভেবে চোখ জোড়া বন্ধ করলাম,তারপর নিচে ঝাঁপ দেই।






চোখ খুলে দেখতে পাই একটা রুমে শুয়ে আছি আমি।অপরিচিত একটা রুম।যেখানে আমি আগে কখনোই আসিনি।ধীরে ধীরে সবটা মনে পড়তে লাগলো আমার।নকল শ্রেষ্ঠার সাথে ঝামেলা হওয়া,আমাকে বন্দী করে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া,তারপর আমার বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেওয়া।এরপরে আর কিছুই মনে নেই আমার।এখন এখানেই বা কিকরে এলাম জানা নেই আমার।অনুভব করছি সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যথা।অনেকটা জায়গা কেটে গিয়েছে।আবার সেখানে মেডিসিনও লাগিয়ে রাখা হয়েছে।খুব জানতে ইচ্ছে করছে,কে আমাকে সেবা শুশ্রূষা করে সারিয়ে তুললো।কারণ এই পৃথিবীতে আমার মঙ্গল চাইবার মতো কেউ আছে বলে জানা নেই আমার।

আরো কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো।চারপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।ধীরে ধীরে উঠে বসলাম আমি।তারপর নিচে পা বাড়াবো ঠিক তখন ভেতরে কেউ ঢুকে পড়লো।তাকে দেখে যেন বিষ্ময়ে চোখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম আমার।মনে হচ্ছে চোখের সামনে স্বপ্ন দেখছি।আমার সামনেই শ্রেষ্ঠা দাঁড়িয়ে আছে!!!না,এ আমার স্ত্রী,সেই নকল শ্রেষ্ঠা নয়।আসল শ্রেষ্ঠা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।আমি তাজ্জব বনে গিয়েছি নিজেকে তার ঘরে দেখে।যে কিনা আমার মৃত্যু চায় সে বাঁচালো আমায়!!শ্রেষ্ঠাকে এই মুহূর্তে কি বলবো বুঝতে পারছি না।ও নিজেই আগে মুখ খুললো!

—এখন কেমন লাগছে??(অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলো)

—-তুমি আমাকে বাঁচিয়েছো তাই না?আমাকে সুস্থ করে তুলেছো তুমি?

—কি মনে হচ্ছে দেখে তোমার?

—না…আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।তুমি আমাকে বাঁচালে কেন,তুমি সেদিন নিজের মুখে স্বীকার করেছো আমার ক্ষতি চাও তুমি।আমায় শেষ করে দিতে চাও।তাহলে,,

—হ্যাঁ,চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন চাইলে এখনো যে চাইতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে?

—আমি সত্যি তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।কি চাইছো তুমি ক্লিয়ার করে বলো।আচ্ছা এটাও তোমার নতুন কোনো চাল তাই না?

—না,আমি কোনো চাল চালছি না।আমি জানি আমার পূর্বের রুপ দেখে আমার প্রতি এক প্রকার ঘৃনাবোধ কাজ করছে তোমার!আর সেটা অস্বাভাবিকও নয়।

—তুমি আমাকে বাঁচালে কিকরে,?আমার যতোদূর মনে পড়ে,আমি ঝাঁপ দিয়েছিলাম নিজের বিল্ডিং থেকে।তারপর…তারপর কি হলো,তুমি আমাকে পেলেই বা কিকরে?

—আমি অনেক আগে থেকেই ওখানে ছিলাম, তোমার বাড়িতে!!!

—হোয়াট,কি বলছো তুমি এসব??(আশ্চর্যজনক স্বরে আমার প্রশ্ন)

—হ্যাঁ,সত্যি।আমি নিজের মনের একটা সন্দেহ থেকেই তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম।

—সন্দেহ,কিসের সন্দেহ?

—মনে পড়ে তুমি জোর করে সেদিন আইডিনিটিফাই করেছিলে আমায়,আমি যদিও নিজের পরিচয় স্বীকার করি নি সেদিন তোমার কাছে।তোমার সেই ব্যবহারে কয়েকটা অদ্ভুত আর খটকা প্রশ্ন ঘিরে ধরে আমায়,আমি দেখতে চেয়েছিলাম কেমন সংসার করছো তুমি,তোমার বৌকে দেখতে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমি নিজেও জানতাম না ওখানে কতো বড়ো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

—বুঝলাম না।

—বুঝলে না,বুঝিয়ে বলছি।আমাকে জানানো হয়েছিলো তুমি আমাকে ছেড়ে বিয়ে করে সুখে সংসার করছো।আমাকে বোঝানো হয়েছিলো তুমি ধোকা দিয়েছো আমায়।

—জানানো হয়েছিলো,কে জানিয়েছিলো তোমায়।আর কেই বা বুঝিয়েছিলো আমি তোমায় বিয়ে না করে ধোঁকা দিয়েছে?

—সব বলছি,আগে আমার কথা শোনো।

আমি দেখতে গিয়েছিলাম ঐ বাড়িতে তুমি আমাকে ভুলে ঠিক কেমন সংসার করছো।কিন্তু তোমার বাড়িতে গিয়ে আমি দেখি ওখানে হুবহু আমার মতো দেখতে কেউ আছে।এটা দেখেই খটকা লাগে আমার।ভাবলাম হয়তো কোনো বড়ো ভুল করতে চলেছি আমি।তোমার সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলছি আমি।এরপর আমার চোখ আর মন থেকে অবিশ্বাসের পর্দা পুরোপুরি সরে গেলো,যখন আমি শুনতে পাই তুমি নিজের স্ত্রীকে শ্রেষ্ঠা বলে সম্বোধন করছো।আমি বুঝতে পারি,তুমি হয়তো তাকেই শ্রেষ্ঠা ভাবছো।কিন্তু সে তো প্রকৃতপক্ষে শ্রেষ্ঠা নয়।এরপর তুমি তাকে ব্ল্যাক কফিতে বিষ মেশানোর মিথ্যে ভয় দেখালে।আমি সবটাই লুকিয়ে দেখছিলাম,,

—-এক মিনিট,,,তুমি আমার বাড়িতে ঢুকলে কিকরে?সেটা তো বললে না।

—যেহেতু বাড়িতে তুমি আর সেই বহুরূপী ছাড়া কেউ ছিলো না,তাই বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে সমস্যা হয়নি আমার।আর যদি বলো তোমার বাড়িতে ঢোকার কথা,এসব কোনো ব্যপার নয় আমাদের মতো মানুষদের জন্য।আমি লক কেটে ঢুকেছিলাম তোমার বাড়িতে,

—আচ্ছা,বুঝলাম।তারপর?

—-তুমি তোমার স্ত্রীকে একটা ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলে,তারপর কথা বলছিলে তার সাথে।যদিও বাহির থেকে সব কথা শুনতে পাই না আমি। যতোটুকু শুনতে পেরেছি,আমি এইটুকু বুঝেছি তুমি আমার সাথে কোনো প্রতারণা করো নি।প্রতারণা করা হয়েছিলো তোমার সাথে।আর আমাকে একটা চরম ভুল আর মিথ্যার জালে জড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।একপর্যায়ে তোমার স্ত্রী ঘরের ভেতর দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেয়।যাতে সে সবার অগোচরে তোমাকে খুন করতে পারে,কিন্তু আমি সেটা কিকরে হতে দিতে পারি।তোমার স্ত্রী চলে যাবার পরে যখন ভাবলাম তোমায় বাঁচাবো আমি,কিন্তু তুমি আমাকে সেই সুযোগ না দিয়েই জানলা ভেঙে ঝাঁপ দিলে।আমি এটা দেখে দ্রুত নিচে চলে যাই।তারপর তোমাকে সেইভ করি।ভাগ্যিস তুমি একটা বড়ো ডাস্ট স্তুপের ওপর পড়েছিলে।তাই তেমন বড়ো কোনো ক্ষতি হয়নি তোমার।আমি সবাইকে বুঝিয়ে তোমায় অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাই।তারপর সেখান থেকে আমার বাড়িতে।

শ্রেষ্ঠার কথাগুলো শুনে সবটা পরিস্কার না হলেও এইটুকু বুঝতে পারলাম ও ইচ্ছে করে এমন খারাপ পথে আসে নি।আমার প্রতি ওর আক্রোশের অন্য কারো হাত নয়।আর শুধু হাত নয়,সে এমন কিছু করেছিলো যাতে শ্রেষ্ঠা আরো বেশী হিংস্র হয়ে ওঠে,হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে দেয়া হয়েছিলো শ্রেষ্ঠাকে।

—তুমি তো এতো কিছুই বললে, এখন পর্যন্ত এটা বললে না আমার প্রতি তোমার মনে বিষ কে ভরেছে?কে ভুল বুঝিয়েছে তোমায়?

—শুনতে চাও তার নাম, অবশ্য তুমি হয়তো আন্দাজ করতে পারছো,খুব একটা অবাক হবে না শুনলে।কারণ সে আর কেউ নয়,তোমার নিজের বাবা!!!!!তোমার বাবার জন্যই আজ আমার এই দূর্দশা।।তবে আমি নিজেও বুঝতে পারি না, সে তো তোমার নিজের বাবা,তাহলে তোমাকে শেষ করে কি লাভ তার??কোনো বাবা নিজের সন্তানের সাথে এটা দুঃস্বপ্নেও করতে পারে!

—-এই প্রশ্নের উত্তর আমার মাথাও ঘুরপাক খাচ্ছে সবসময়ের জন্য শ্রেষ্ঠা,আর আমি এটাও জানি এতোটা পথ পর্যন্ত যখন আসতে পেরছি বাকি পথটাও ঠিক পার করতে পারবো।কিন্তু তুমি আমায় এটা বলো,তোমার সাথে তো বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আমার।তাহলে তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে কিকরে?আর আমাদের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে এই নকল শ্রেষ্ঠা চলে আসলো কিকরে???

Running…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here