ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১২

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—–১২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

——এই প্রশ্নের উত্তর আমার মাথাও ঘুরপাক খাচ্ছে সবসময়ের জন্য শ্রেষ্ঠা,আর আমি এটাও জানি এতোটা পথ পর্যন্ত যখন আসতে পেরছি বাকি পথটাও ঠিক পার করতে পারবো।কিন্তু তুমি আমায় এটা বলো,তোমার সাথে তো বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আমার।তাহলে তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে কিকরে?আর আমাদের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে এই নকল শ্রেষ্ঠা চলে আসলো কিকরে???

—তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর তো আমি নিজেও জানি না।তবে আমি যতোটুকু জানি তাই বলছি। আমাদের যেদিন বিয়ের হবার কথা ছিলো….

দিনটা ছিলো শুক্রবার।তখন বিকেল।আমাদের বিয়ে সন্ধ্যাবেলা।আমি পার্লারে যাই সাজগোজ করার জন্য।ওখানে সাজগোজ করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো আমার!তুমি বারবার ফোন করছিলে আমায়,আমি যাতে যতোদ্রুত সম্ভব চলে আসি।এর কিছুক্ষণ পর তোমার আরোআএকটা ফোনকল আসে….

—কিগো,হয়েছে তোমার??

—নাহ,আরেকটু লেট হবে!

—হ্যাঁ,একটা কাজ করো।তুমি বরং আরাম করে সাজতে থাকো।তারপর সকালের দিকে আসলেও চলবে।

—এতোটা তাড়াহুড়ো কেন করছেন,এইতো হয়ে যাবে একটু পরে।তাছাড়া এখন হাতেও অনেকটা সময় আছে।

–আচ্ছা,তুমি তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নিচে এসে দাঁড়াও।আমি আমার একজন পরিচিত লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি।উনিই ড্রাইভ করে নিয়ে আসবে তোমায়।

—ঠিক আছে….

আমিও তোমার কথাঅনুসারে তাড়াতাড়ি নিজের কাজ সেরে গাউন্ড ফ্লোরে নামি।গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমেই একটা গাড়ি দেখতে পাই।গাড়ির সামনেই ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ছিলো।আমাকে দেখেই সে একটা মুচকি হাসি দিলো।আমি খানিকটা অবাক সাথে বিব্রত হই।

—–আপনি মিস শ্রেষ্ঠা তাই তো?

—হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আমায় চিনলেন কিকরে?

—সৌহার্দ্য স্যারের ফোনে আপনার ফটো দেখেছি।উনিই পাঠিয়েছেন আমায়, আপনাকে নিয়ে যেতে।

—ও আচ্ছা, আপনি সেই ড্রাইভার।তাই তো?

—জ্বী ম্যাডাম।

—কিন্তু ভাইয়া,আপনি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন কিকরে?উনি তো এইমাত্র ফোন করেই জানালেন আমায় লোক পাঠিয়ে দিচ্ছেন।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেকক্ষণ ধরে আছেন এখানে।

—actually ম্যাম,রাস্তায় জ্যাম নেই খুব একটা।তাই দ্রুত ড্রাইভ করে আসতে পেরেছি।আপনি চাইলে আমি স্যারের কাছে ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি আপনাকে।

—না না,তার আর কোনো দরকার নেই!ঠিক আছে চলুন।আমি গাড়িতে উঠছি।

এরপর লোকটার গাড়িতে উঠি আমি।আমি এমনিতেই শহরের সব জায়গা খুব একটা চিনতাম না।উনি আমাকে শর্টকার্টের কথা বলে অন্য একটা রাস্তা ধরেন,তারপর এগোতে থাকেন।এরপর চলতে চলতে লোকটা হঠাৎ তার গাড়িটা থামিয়ে ফেললো।

—কি হলো ভাইয়া,গাড়ি থামালেন কেন??

—ম্যাম,এখানে স্যারের এক রিলেটিভ অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য।স্যার নিজেই আসার সময় ওনাকে আমাদের সাথে তুলে নিতে বলেছেন।আপনি চাইলে স্যারকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।

—ঠিক আছে, আমি কথা বলছি।আপনি যা করার তাড়াতাড়ি করুন।

একটা অপরিচিত লোক এসে গাড়িতে উঠলো।আমার পাশের সিটেই বসলো সে।আমি খানিকটা ইতস্ত বোধ করি।লোকটা গাড়িতে ওঠার সময় বেশ ভালো ব্যবহার করে আমার সাথে,কিন্তু গাড়ির ভেতরে আসার পরে তার স্বভাব প্রকৃতি যেন পাল্টে গেছে একেবারে।তার মতিগতি একদম ভালো লাগছিলো না আমার।একবার ভাবলাম,ফোন করে তোমায় জিজ্ঞেস করবো।এমনিতে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।এমনিতেই অনেকটা লেট করে ফেলছিলাম।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বর ডায়াল করতে যাবো ঠিক তখন লোকটা আমার থেকে ফোনটা টান মেরে কেড়ে নিলো।

—-একি,কি হলো,আপনি আমার ফোনটা নিয়ে নিলেন কেন!?আমায় আমার হবু হাসবেন্ডের সাথে কথা বলতে হবে।

—হবু হাসবেন্ড,কিসের হবু হাসবেন্ড!!একদম চুপ থাকো।

এই বলে লোকটা নিমেষে জোরপূর্বক আমার মুখ আর হাত বেঁধে ফেললো।তারপর সিটের ওপর শুইয়ে দিলো আমায়।আমি না পারছিলাম নড়াচড়া করতে,না কথা বলতে।বুঝতে পারি গাড়ির ড্রাইভার আমাকে তোমার বাড়িতে নয়,অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।আর সেটা কোনো জঙ্গলের রাস্তা।তখন পুরোপুরি অন্ধকার নেমে এসেছে।

এক পর্যায়ে তারা একটা বাংলোর সামনে গাড়িটা থামে।আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হলো,তারপর বাংলোর ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।পুরো বাংলোটা একদম খালি পড়ে আছে।ভেতরে কোনো লোকজন নেই।একটা রুমের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয় আমায়।তারপর লোকটা আমার মুখের বাঁধনটা খুলে দিলো।তারপর সে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

—সরি ম্যাডাম,আপনাকে এতোক্ষণ কষ্ট দিতে হয়েছে!

—আমার জীবনটা বরবাদ করে দুঃখ প্রকাশ করছো তোমরা।লজ্জা হয় না তোমাদের।তোমার মানুষ না জানোয়ার!?(চেঁচিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলাম আমি)

—যা হয়েছে আমাদের কোনো দোষ নেই,আমরা শুধু অর্ডার ফলো করছি।আপনাকে আপাতত এখানেই থাকতে হবে।

—কি বলছো কি তোমরা,এখানে থাকতে হবে মানে?জানো আজ আমার বিয়ে।আমার জীবনটা শেষ হতে চলেছে তোমাদের জন্য।আর ঐদিকে আমার হবু বর।না জানি সে কতোটা টেনশন করছে।

—কেউ কোনো টেনশন করছে না, আপনি এই ব্যপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

—এই তোমরা কারা বলো তো,,আমার এতোবড়ো একটা সর্বনাশ করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছো কিকরে,আবার আমাকে কিনা বলছো নিশ্চিত থাকতে। তোমরা কেউ আমার হবু বরকে চেনো না, ও জানতে পারলে কিন্তু তোমাদের পালানোর কোনো রাস্তা থাকবে না। ভালোয় ভালোয় আমায় ছেড়ে দাও বলছি। আমার কথা ভাবতে হবে না,নিজেদের ভালোর কথা ভেবে অন্তত ছেড়ে দাও।

—সেটা সম্ভব নয় কিছুতেই,,

—প্লিজ এমনটা করো না আমার সাথে,ওদিকে আমার হবু বর ওয়েট করছে আমার জন্য।

—না, কেউ ওয়েট করছে না??

—মানে, কি বলতে চাইছো তোমরা??ফাজলামো করছো আমার সাথে তোমরা?

—না, আমরা একেবারে সত্যি বলছি।আপনার জন্য কেউ না চিন্তা করছে,না কেউ ওয়েট করছে।কারণ এই কিডন্যাপটা আপনার হবু বর মিস্টার সৌহার্দ্যই করিয়েছেন আমাদের দ্বারা!!!

লোকটার কথা শুনে তখনো নিশ্চিত ছিলাম যে ওরা মিথ্যে বলছে আমায়।

—আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করি না এটা, সৌহার্দ্য আমাকে কিডন্যাপ কেন করাতে যাবে।আর কোনো অজুহাত খুঁজে পেলে না তোমরা, নিজেরা অন্যায় করে শেষে কিনা সেটা আমার হবু বরের ওপর চাপাচ্ছো?

—আমরা জানি,আপনি এতো সহজে আমাদের কথা বিশ্বাস করতে পারবেন না।তবে নিজের চোখে দেখলে কি বিশ্বাস করবেন।

এই বলে লোকটা নিজের মোবাইলটা বের করে আমার চোখের সামনে ধরলো।আমি দেখতে পাই তুমি বেশ হাসিমুখে বিয়ের আসরে বসে আছো!পাশেই তোমার স্ত্রী,যদিও ঘোমটার কারণে তার চেহারা ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না।তোমরা দুজন দুজনের সাথে হাসিমুখে কথা বলছো….!!!

এই দৃশ্য দেখে মনে হলো আমার চোখ যেন ধোঁকা দিচ্ছে আমায়,,নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।অনুভব করছি ধীরে ধীরে মাটি সরে যাচ্ছে আমার পায়ের নিচ থেকে।

—দেখলেন তো ম্যাডাম,আমরা কি বলছিলাম তখন?আপনাকে স্যার বিয়ে করতে চান কি কখনো।উনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চলেছেন!তাই আপনাকে এভাবে নিজের পথ থেকে সরিয়ে দিলেন।এখানেই শুধু শেষ নয়। আরো অনেকধরনের অর্ডার আছে আমাদের ওপর।যা আপনার সাথে করতে হবে আমাদের!!

—আরো অর্ডার,আর কি অর্ডার দিয়েছেন স্যার তোমাদের?(যদিও মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না,অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম)

—আপনাকে রেপ করার হুকুম আছে আমাদের ওপর,আর উনি আপনার অবস্থায় করতে বলেছেন যাতে আপনি নিজেই নিজের চেহারা দেখে ভয় পান।

শ্রেষ্ঠার মুখে সেদিন রাতের বর্ননা শুনে বিষ্ময় হতবাক হয়ে যাচ্ছি আমি….

—তারমানে ওরা দুজনে মিলে তারপর রেপ করে তোমায়,,,??

—না,সেদিন ওরা আমার কিছুই করতে পারে নি!স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারে নি আমায়।

—পারে নি,কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলো সেটা!???(অবাক হয়ে)

—সেটা শুনলে তুমি আরো বেশী অবাক হবে সৌহার্দ্য….

Running…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here