ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১৩

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

—আরো অর্ডার,আর কি অর্ডার দিয়েছেন স্যার তোমাদের?(যদিও মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না,অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম)

—আপনাকে রেপ করার হুকুম আছে আমাদের ওপর,আর উনি আপনার অবস্থায় করতে বলেছেন যাতে আপনি নিজেই নিজের চেহারা দেখে ভয় পেয়ে যান।

—তোমাদের কি মাথা ঠিক আছে,কি বলছো এগুলো…???

—আমরা দুঃখিত ম্যাম,আমাদের ওপরে অর্ডার আছে।আমাদের অর্ডার ফলো করতেই হবে।

—না, তোমরা আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছো এখানে…আমি প্রয়োজন পড়লে ক্ষমা করে দেবো তোমাদের,কিন্তু আমার সাথে এতোবড়ো অন্যায় করো না।

—আমাদের কিছুই করার নেই ম্যাম।

—আচ্ছা,তোমাদের স্যার আর কি কি অর্ডার দিয়েছেন তোমাদের বলো।আমাকে ধর্ষন করে মেরে ফেলা হবে তাইতো।

—না,উনি এখনো সেই অর্ডার দেন নি।তবে যদি দিয়ে থাকেন আমাদের সেটাও ফলো করতে হবে।

—তোমরা আসলে মানুষ নও,,টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছো তোমরা।টাকার লোভ হিতাহিত জ্ঞানশুন্য করে দিয়েছে তোমাদের।

—আপনি যা খুশি ভাবতে পারেন।

—আচ্ছা, তোমাদের অনেক টাকা চাই তাই তো, আমি টাকা দেবো তোমাদের??তার পরিবর্তে এখান থেকে যেতে দাও আমাকে।

—না,সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়।আপনাকে আপাতত এখানেই থাকতে হবে কয়েকদিন।

লোকদুটো আমার কোনো কথাই কানে নিলো না….সারা রাত একটা ঘরের ভেতরে আটকে রাখে আমাকে।একটা মেয়ের কাছে নিজের সম্ভ্রমের থেকে বড়ো কিছুই হয় না।প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে সেই সম্ভ্রম হারানোর ভয় নিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে।এটা যে কতোটা যন্ত্রণাদায়ক আমার থেকে কেউ ভালো বুঝতে পারবে না।আর এসবের পেছনে একজনকেই দায়ী ভাবতাম আমি,আর সে হলে তুমি!!!তোমার প্রতি আমার সমস্ত ভালোবাসা,বিশ্বাস, ভরসা ঘৃনায় পরিবর্তিত হতে লাগলো।এতোটা ঘৃনা আমি কখনো কাউকে করিনি,যতোটা সেই মুহূর্তে তোমাকে করেছিলাম।

—-তারপর কি হলো??

—তারপরের দিন,লোকদুটো আবার ঐ বাংলোয় ফিরে আসে।আমি ওদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারি।ওরা নিশ্চয়ই নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে এসেছে আমার কাছে।আমার কোনো আকুতি মিনতি ওদের কানে পৌঁছলো না।খাটের সাথে আমার হাতদুটো বেঁধে ফেলে ওরা।যাতে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে না পারি তাই আমার মুখও বন্ধ করে রাখে।নিজেকে একটা অসহায় মৃগশিশুর মতো মনে হচ্ছিলো,যার ওপরে দুটো হিংস্র পশু এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে।আর তার সর্বস্ব লুটে নেবে।যদিও লোকদুটো তখনো যথেষ্ট শান্ত ছিলো।কোনো মানুষ এতো ঠান্ডা মাথায় ধর্ষণ করতে পারে এটা কল্পনাতীত ছিলো আমার কাছে।ওরা আমার কাছাকাছি চলে আসে।নিজের সর্বনাশকে সাক্ষাৎ থেকে দেখছিলাম আমি।

এরপর সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ ঘরের ভেতরে কেউ ঢুকে পড়লো।তার সাথে আরো দু তিনজন লোক।লোকগুলো তাদের দুজনকে ধরে ফেললো।তারপর পুলিশের দেবার নাম করে বাইরে নিয়ে যায়।

আমি আমার উদ্ধারকারীর নিকট ছুটে যাই,সে আমাকে তার বুকে জড়িয়ে নেয়।আমায় নানাপ্রকারে স্বান্তনা দিতে থাকে সে।আর সেই লোকটা আর কেউ ছিলো না….সে ছিলো তোমার নিজের বাবা…!!!আমি তাকে সেই সময়ে সেই জায়গায় দেখে অবাক হই।

—-বাবা,আপনি এখানে….???

—-হ্যাঁ,মা।আমি জেনে গিয়েছিলাম তোমাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে।সেই কারণেই তো বাঁচাতে আসলাম তোমায়।

—-কিন্তু আপনি জানলেন কিকরে??

—-আমি সৌহার্দ্যের মুখে সবটা শুনেছি।যখন ও লুকিয়ে লুকিয়ে এই গুন্ডাগুলোদের সাথে কথা বলছিলো ওর সব কথা শুনে নিই।

—-বাবা….উনি এটা কিকরে করলেন আমার সাথে?এতো বড়ো প্রতারণা কেন করলেন আমার সাথে।উনি কিনা আমাকে এই অবস্থায় রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলেন (কেঁদে কেঁদে বলি আমি)

—-তোমার কথাগুলো শুনে আমি দুঃখ পাচ্ছি না মা,বা অবাকও হচ্ছি না।কারণ যে ছেলে নিজের বাবাকে খুন করার হুমকি দিতে পারে, তার পক্ষে পৃথিবীর সকল জঘন্য কাজ করা সম্ভব।

—খুন করার হুমকি,কেন কি হয়েছে বাবা….????

—-যখন দেখলাম বিয়ের আসরে তুমি ছাড়া অন্য কেউ আছে, আমি ওর কাছে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলাম।ও সোজাসাপ্টা উত্তর তোমার মতো বোকা মেয়েকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।এটা শুনে আমি ভীষণ রেগে যাই।এক পর্যায়ে বিয়েটা বন্ধ করার চেষ্টা করি।ঠিক সেখানেই ও বাঁধ সাধলো।প্রথমে আমাকে খুন করার হুমকি দিলো,আমি ওর কোনো কথা না শোনাতে ও নিজেই খুন করতে চায় আমার। কোনোমতে পালিয়ে এসেছি আমি এখানে। ভাগ্যিস তার আগেই তোমার বিষয়ে জানতে পেরেছিলাম,নয়তো না জানি আজ আর কি কি হতো তোমার সাথে।

—-বাবা……আপনি এগুলো কি বলছেন??

—-হ্যাঁ,মা।এখন তুমিই বলো।যে ছেলে নিজের বাবার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে তার পক্ষে তোমাকে শেষ করে দেয়া বা তোমার কোনো ক্ষতি করা কি এমন কাজ।

—-কিন্তু আমি এখন কি করবো বাবা…..উনি তো আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছেন।আমার সকল স্বপ্ন, আশা,প্রত্যাশার কবর রচনা করে অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী করে নিলেন।এখন কি করবো আমি, কোথায় যাবো?

—কি করবে মানে….তোমার সাথে ঐ কুলাঙ্গার যে অন্যায় করছে তার প্রতিশোধ নেবে তুমি??

—-প্রতিশোধ।কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব।না,না আমি ওনার কোনো ক্ষতি হোক চাই না।

—-এতোটা বোকা কেন তুমি…যে তোমার জীবনটা বরবাদ করে দিলো,তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে।না সেটা কখনোই হতে পারে না।

—-আপনি এই কথা বলছেন??

—-হ্যাঁ,বলছি।আমিও এই কথা বলছি।ওর বাবা হয়েই বলছি।দেখো ও আমাদের দুজনের সাথে যা করেছে তার একটাই শাস্তি হতে পারে।আর সেটা হলো ওর মৃত্যু!!!

—-কি…..!!মৃত্যু….!!আপনি মেরে ফেলবেন ওনাকে…. না না…. দেখুন আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।কিন্তু দয়া করে এসব বলবেন না আমার সামনে।আমি তো আগেই বলে দিয়েছি ওনার কোনো ক্ষতি হোক চাই না।

—-মূর্খ মেয়ে,যে তোমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো।তুমি তো ভালোবাসতে তাকে….তাই না,সে কিনা কতোগুলো গুন্ডাদের দিয়ে তোমার….ছি! ছি! ছি!বলতে লজ্জা হচ্ছে আমার।এমন একটা জানোয়ারকে ক্ষমা করে দেবার কথা ভাবছো কিকরে।দেখো শ্রেষ্ঠা,আমি সৌহার্দ্যের বাবা,যদি বাবা হয়ে আমি ওর বিরুদ্ধে এতো বড়ো একটা স্টেপ নিতে পারি।তাহলে তুমি কেন পারবে না…

এভাবে তোমার বাবা,আমার ব্রেইনওয়াশ করতে থাকেন।তার সাথে উনি আমাকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য গ্রহন করতে বাধ্য করতেন।যার ফলে দ্রুত আমি ওনার কথাতে প্রভাবিত হতে থাকি।একপর্যায়ে আমি পুরোপুরি ওনার বশে চলে আসলাম,ওনার সমস্ত অর্ডার ফলো করতাম আমি।উনি বহুবার আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন তোমাকে শেষ করার,কিন্তু তোমাকে মারতে গিয়েও মারতে পারি নি আমি।তুমি সামনে চলে আসতেই হাত পা কাঁপত আমার। জানিনা কোন অদৃশ্য শক্তি আটকে দিতো আমায়।এভাবে নিজেই নিজের কাছে পরাজিত হয়েছি বার বার।কিন্তু তবুও আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি,কখন তোমাকে শেষ করা দেয়া যায়।অবশেষে তোমার মাধ্যমে তোমার বাবার আসল রুপটা চলেই আসলো আমার সামনে, নয়তো কতো বড়ো অনর্থ হয়ে যেতো আমি জানি না।

শ্রেষ্ঠার কথাগুলো শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেছি আমি,শিউরে উঠছিলাম বার বার।ওর মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি বর্ননার লাইন নির্বাক করে দিয়েছে আমায়!!লক্ষ্য করলাম শ্রেষ্ঠার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে….

শ্রেষ্ঠা—-তোমাকে আমি এখনকার সকল কথা খুলে বললেও,এর এক বছর আগের ঘটে যাওয়া একটা তিক্ত ঘটনার কথা যে লুকিয়েছি,না তাতে তোমার বাবার কোনো হাত ছিলো না!কিন্তু জানি না সেই কথা কোনোদিন বলার সাহস হবে কিনা আমার।আর সেটা হলো,তোমার মায়ের খুন আর কারোর হাতে হয়,,সেদিন রাতে আমার হাতেই হয়েছিলো…..!!!!!এই নির্মম সত্য বয়ে বেড়াতে বেড়াতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি আমি.. এর শেষ কোথায় আমি জানি না…..
(কথাগুলো মনে মনে বলে শ্রেষ্ঠা,ভাগ্যিস ওর কথাগুলো সৌহার্দ্য শুনতে পায় নি)

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here