ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১২+১৩

#ও আমায় ভালো বাসেনি
১২+১৩
.
.
১২.
ঢাকায় যাওয়ার পর সময়গুলো দ্রুত যাচ্ছিলো । দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা এসে গেলো ।
রাইদ ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করছিলেন আর বিসিএস এর প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন ।
আমাদের রিলেশনের কথা তখনো কেউই জানেনা শুধু আমার ভাইয়া জানতো ।
তখন স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা চলছিল, পড়াশোনার প্রেশার ছিলো অনেক বেশীই কারণ আমি সাইন্সে ছিলাম আর কম্পিটিশন ছিলো বেশী ।
রাতের পর রাত জেগে পড়তে হয়েছিল আর ঐ সময়টায় রাইদ টঢল দিয়ে দিয়ে যেতেন ।
একদিন উনি রুমে ছিলেন কিন্তু ওনাকে দেখলেই আমার গল্প পেয়ে যেত আর ওনার কোলে বসে গল্প করেই কাটিয়ে দিতাম ।
এই দেখে উনি বুঝতে পারলেন রুমে এসে থাকলে পড়াশোনা ভেসে যাবে ।
ঠিক করলেন উনিও পড়বেন আমিও পড়বো , ফিফটিন মিনিটস পরপর একবার করে দেখে যাবেন আমাকে । পড়ছি নাকি ঘুমিয়েছি?
পনেরো মিনিট পরপর আসতেন ঠিকই কিন্তু সাথে হয় এক গাদা খাবার নয়তো কফি নিয়ে আসতেন ।
আমি একটু ন্যাকামি করতেই দিতেন এক ধমক!
,
সময় বহমান টেস্ট পরীক্ষাও চলে গেলো , এক্সাম বেশ ভালো হলো ।
পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো উপলক্ষে একটা ট্রিট দেয়া হলো রামিম ভাইদের ।
পাশের একটা রেস্টুরেন্টে পুরো গ্রুপ আসলো সাথে সিমি আর চারুমতি আপু ।
ফর দ্য ফার্স্ট টাইম ফয়সাল ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডকে দেখলাম আমি ।
সবচাইতে এক্সাইটিং ছিলো চারু আপু আর রাইদও খুব ভালো ফ্রেন্ড ।
অনেক ঘনিষ্ঠতা ওদের মাঝে , কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার একদমই পছন্দ হলো না । কেনো জানি মানতে পারলাম না ।
অন্যদিকে শব্দ ভাইয়ার বিরাট আয়োজন , সে তো একদম বুকে টুকে এনে অবস্থা খারাপ ।
পুরো বুকেটা ছিলো গ্লাডিওলাস ফুলের , আর তার সাথে একটা কিটক্যাটের বক্স!
,
ওগুলো দেখে রামিম ভাই তো বলেই উঠলেন_ ব্যাটা তুই যা যা আনছস সব দেইখা তো মনে হইতাছে রাইদের না তর গার্লফ্রেন্ড টেস্টে ভালো করছে ।
তখন শব্দ ভাইয়া বলেছিলেন_ আরেহ্ ব্যাটা যে যা ডিজার্ভ করে তার জন্য তো তাই ই আনা লাগবো! আর রাইদের সবকিছুই তো ছোট থেইকা আমার তাইনা?
বলেই উনি রাইদকে একটা চোখ মেরে দিলেন । সাথেসাথেই হাসির রোল পড়ে গেলো তবুও আমি রাইদের দিকে তাকিয়েছিলাম একবার , আমার খুব ভালো করে মনে আছে ওর ঐ হাসিটা মন থেকে আসা হাসি ছিলো না ।
,
সেদিন অবশ্যি ডাবল ট্রিট হয় একটা তো ভালো রেজাল্ট এর আরেকটা দেন রামিম ভাই তার রিলেশন ঠিকঠাক হওয়ার ।
দিনটা ভালোই কেটেছিলো ।
,
সেদিনের পর থেকে কেনো যেন আমার ফোনটা নিয়ে রেখেছিলেন রাইদ , আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু ও কিছু রিপ্লাই করেনি ।
,
কেটে যায় আরো কিছুটা সময় , একটা কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম লাস্ট টাইমের প্রিপারেশনের জন্য
, কোচিং শেষ হতো সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টায় ।
রাইদই প্রতিদিন আনা নেয়া করতো আমাকে ।
কিন্তু একদিন খুব জরুরী মিটিং থাকায় সে আনতে যেতে পারলো না , খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন ।
একটা অটো করে বাসায় আসছিলাম । আমাদের বাসার গলির একটু পেছনে তিন মাথার মোড় নামক একটা জায়গা আছে সেটা দিয়ে উত্তরে আমাদের বাসার গলি , দক্ষিণে হাইওয়ে আর পশ্চিমে একটা জঙ্গল ।
বৃষ্টি থাকায় অটোটাতে পর্দা টাইপ দেয়া ছিলো আর বেশী অন্য কোনো যাত্রিও ছিলো না ।
আমি একটু ভয়ে ছিলাম কারণ অটো চালক টাকে আমার মোটেই সুবিধার লাগছিল না ।
আমার ভয়টা আরো প্রকট হলো যখন রাস্তা ফুরাচ্ছিলো না আর অটোটা খুব ঝাঁকি খাচ্ছিলো মনে হচ্ছিল কোনো ভাঙ্গা রাস্তায় যাচ্ছে ।
আমি ভয়ে অটো চালক কে জিজ্ঞেস করলাম_ মামা আর কতদূর?
প্রথমে সে জবাব দিলো না ।
কিন্তু দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করার পর সে ধমকে উঠলো_ চুপ বেডি ,চুপচাপ থাক । যেখানে যাওয়ার ঐখানেই যাইতাছস অতো তাল কিসের?
এবার আমি শিওর হলাম বিরাট বিপদের মুখে পড়তে চলেছি আমি ।
শুরু হয়ে গেলো আমার চিৎকার চেঁচামেচি , অটো চালকও খারাপ ভাষা বলে ধমকে চুপ করানোর ট্রাই করছিলো আর অটোটার স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছিলো ।
আমি ভয়ে কাঁদতে শুরু করেছিলাম , কিছুক্ষণ পর অটোটা থেমে গেলো ।
আমি পালানোর জন্য নামতে যাবো কিন্তু দেখলাম পর্দাগুলো চেইন সিস্টেমে আটকানো ।
অটো চালক নেমে সেটা খুলে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো ।
আমি চিৎকার করছিলাম সমানে আর ছোটার ট্রাই করছিলাম কিন্তু তখন লোকটা কোথা থেকে একটা চাকু বের করে আমার গলায় ধরে ।
চুলগুলো মুঠো করে ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে বলে_ আইজ তরে দিয়া খায়েশ মিটামু *** ।
,
আমি প্রচন্ড কাঁদছিলাম ।
ঐ মুহুর্তে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটা সুনসান হাইওয়ে দিয়ে , ভেবেছিলাম আজই আমার মরণ ।
যদি মরণই হয় তাহলে মোটেই আমি রেপ হয়ে মরতে চাইনা ।
আয়াতুল কুরসি পড়ে সুযোগ বুঝে লোকটার হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলাম ।
এতে লোকটা ব্যাথা পেয়ে আমার চুল আর ছুরিটা ফেলে দিয়েছিলো ।
কিন্তু আমি দৌড়ানোর পূর্বে আবার হাতটা ধরে ফেলেছিলো ।
এবার সে আমাকে মারতে শুরু করেছিলো।
বেশ কয়েকটা থাপ্পড় পড়েছিলো এলোপাথাড়ে আর সর্বশেষ পেটে খুব জোরে লাত্থি দিয়েছিলো ।
ঐ মুহুর্তে আমি একটা গাড়ি দেখতে পাচ্ছিলাম অদূরে ।
এতো যন্ত্রণার মাঝেও একটা শেষ সুযোগ পেয়ে আমি হাত ছাড়া করিনি তা ।
গায়ের অবশিষ্ট শক্তি কাজে লাগিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলেছিলাম_হেল্প মি ।
আমি জানিনা কতদূর গেছিলো গলার আওয়াজ ঐ মাঝারি বৃষ্টির মাঝে তবে তারপরই লোকটা আমায় জোরে ধাক্কা দেয় , একটা গাছের সাথে প্রচন্ড জোরে বাড়ি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি আমি ।
ঐ মুহুর্তে বলছিলাম_ আল্লাহ্ তুমিই আমার ভরসা , রক্ষা করো আমাকে নয়তো তুলে নিয়ো তবুও রেপ যাতে না হয়!
মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল আমার , মাথা ঘুরতে শুরু করেছিলো ।
আশেপাশে সব ঝাপসা লাগছিল তখন কেনো যেনো মনে হলো দূরে একটা গাড়ি থেমেছে এবং কেউ এগিয়ে আসছে আর তারপর…?
,
,
চেতনা ফিরে পাবার পর নিজেকে হাসপাতালের জীর্ণশীর্ণ বিছানায় আবিষ্কার করি ।
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অনেক নামিদামি মেশিন চোখে পড়ে ।
পরণে সেদিনের পোশাক টা নেই আর বা হাতে কেনুলা লাগানো , স্যালাইন চলছিলো ।
আমি মনে করতে চেষ্টা করছিলাম কি হয়েছিল আর এখানে কি করে!
একটা পরিচিত কন্ঠস্বর শুনি_ মিথি?
ডান দিকে চোখ যায় , আমার সামনে রাইদ দাঁড়ানো ।
শুকনো চোখমুখ , চোখের নিচে কালি ।
ইশশ এই বেহাল দশা হলো কি করে মানুষটার?
সে দৌড়ে এসে আমার পাশে বসলো ।
কপালে চুমু দিয়ে আলতো স্বরে বললো_ তোর জ্ঞান ফিরেছে বাচ্চাটা? ইশশ সব হয়েছিল আমার জন্যে সব , সব!
হঠাৎ কেঁদে ফেলে রাইদ ।
আমি আমার ডান হাতটা বাড়িয়ে ওর হাত চেপে ধরি আস্তে আস্তে বলি_ কি হয়েছে আমার?
ও অবাক হয়ে বলে_ তোর মনে নেই?
— মনে পড়ছে না! আমি এখানে কেনো??
,
— তোমায় আমি এনেছি এখানে ।
আরেকজনার গলার স্বর শুনে আমাদের দৃষ্টি চলে যায় কেবিনের দরজায় ।
হাতে গ্লাডিওলাসের তোড়া নিয়ে শব্দ ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি ।
সে ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে ভেতরে আসে ।
বলে_ দু’দিন পর জ্ঞান ফিরলো আপনার ম্যাম! কংগ্রাচুলেশনস । আল্লাহর কাছেও শুকরিয়া উনি তোমাকে আবার আমাদের মাঝে ব্যাক করিয়েছেন । আমরা তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম ।
ভাগ্যিস সেই রাতে আমি ছিলাম নইলে তো…
,
সেদিন রাত কথাটা শুনে আমার মাথায় একটা আঘাত লাগে যেন , সবটা মনে পড়ে যায় ।
কেঁদে উঠি আমি ভয়ে ।
রাইদ বুকে আগলে নিয়ে বলেন_ কি হয়েছে বাচ্চাটা? একদম ভয় পাবিনা । ঐ কুলাঙ্গারটা আর বেঁচে নেই , স্পটে ওর লাশ পাওয়া গেছে ছিন্নভিন্ন । মহান আল্লাহ পাক তোকে রক্ষা করেছেন , নিশ্চয়ই কোনো জন্তু জানোয়ার ওকে ছিঁড়ে খেয়েছে । ভালোই হয়েছে , উচিৎ শাস্তি!

আমি একটু অবাকই হলাম কথাটা শুনে জানতে চাইলাম আমাকে এখানে নিয়ে আসা হলো কি করে?
তখন শব্দ ভাইয়া বললেন_ আমি মিটিং করে ফিরছিলাম ঐপাশ দিয়ে । তো স্পট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে যায় । সুনসান জায়গা আর যা বৃষ্টি!
গ্যারাজ খুঁজতে খুঁজতে আমি হাঁটছিলাম তখন কিছু আর্তনাদ কানে আসে ।
আমি ঐ শব্দের উৎস ধরে এসে তোমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটা গাছের নিচে পাই আর অদূরে একটা ছিন্নভিন্ন লাশ!
তারপর আমার টিমকে ডাকি এন্ড তোমাকে হসপিটালাইজড করানো হয়!
আর আজ দু’দিন পর তোমার জ্ঞান ফিরলো ।
,
শব্দ ভাইয়া টুল টেনে নিয়ে বসলেন ।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম সে কথাগুলো বলছে এগুলো কতটা যৌক্তিক আসলে?
আমার জ্ঞান হারাবার আগে স্পষ্ট আমি একটা গাড়ির শব্দ শুনেছি ।
শেষ মুহুর্তে একজন মানুষের অবয়ব দেখেছি তাহলে জন্তু জানোয়ার লোকটাকে মারলো কি করে? জন্তু জানোয়ার মারলে আমাকে ছাড়লো কেনো?
আর উনি ওনার টিমের সাথে পরে যোগাযোগ করলেন কেনো?
গাড়ি নষ্ট হওয়া মাত্রই তো করা যেত তাইনা??
বেশ কিছু প্রশ্ন আমার মনে জমা পড়ে রইলো ।
,
চারদিন পর আমাকে রিলিজ দেয়া হলো । সবাই একবার করে দেখতে আসলেও আসলেন না দুটো মানুষ ১. আমার মা ২. চারু আপু ।
চারু আপু ওয়াজ আ আউটসাইডার বাট মা!
সে তো আমার জন্মদাত্রী , সে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার বাঁচা মরার সময়টাতেও দেখতে আসলো না?
ব্যাপারটা বড্ড আঘাত করলো আমাকে , মেয়েদের সব সেন্সিটিভ বিষয় তারা মায়ের সাথে শেয়ার করে । মা যদি হেল্পফুল না হয় তাহলে সেই মেয়ের চাইতে অসহায় পৃথিবীতে আর কেউ নেই ।
আমার সাথে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো মা একটাবার কি কলও করেননি?
,
হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পর আমার সারাদিন মন খারাপ থাকতো কারণ এই ঘটনাটা আমার মস্তিষ্কে খুব বড় একটা আঘাত দিয়েছিলো আর আমায় সম্পূর্ণ ভেঙ্গে রেখে দিয়েছিলো মায়ের আচরণ!
আর একটা বিষয় আমি লক্ষ করেছিলাম আমাদের বাসায় শব্দ ভাইয়ার আনাগোনা বেড়ে গেছিলো ।
সে এসে লং টাইম আমার সাথে গল্প করে যেত , ঐ সময়টায় অবশ্য রাইদও থাকতো আর ভাইয়াও থাকতো ।
বাবা আর ভাইয়া আমার এসএসসি অবধি এসে থেকেছিলো ।
ওরা সবাই আমাকে খুশি রাখতো সবসময় । আমারও ভালো লাগতো , কোনো একটা দিক দিয়ে পরিপূর্ণ লাগতো!
,
১৩.
.
এসএসসির সময়টায় ঐসব প্রেশার অনেকটা কমে গিয়েছিল আমার , শব্দ ভাইয়ার ব্যাপারেও ভাবতাম না কারণ আমার বোর্ড এক্সাম । ভাববার সময় অনেক!
আমার পরীক্ষার সময় রাইদের আরেক বাচ্চামি , পরীক্ষার্থী আমি অথচ প্রতিদিন ফজরে ওঠা তার ডিউটি , আলহামদুলিল্লাহ সে নামাজ শুরু করেছিল এবং আমাকেও প্রতিদিন নামাজে উদ্বুদ্ধ করতো ।
আমার পড়ায় যাতে একদম ব্যাঘাত না হয় তাই বোর্ড,কলম বক্স এটসেটরা এটসেটরা সে ই গুছিয়ে দিতো ।
আমার ডিম, ডাল আর আলু খাওয়া টোটালি অফ ছিলো ।
ডিম খেলে ডিম পাবো নাকি পরীক্ষায় , আলুও গোলগাল সাইজের আর ডাল খেলে ডাল স্টুডেন্ট হয়ে যাবো ।
ওর এসব কুসংস্কার ফলো করা দেখে আমি হাসতাম আর ফুপ্পি খুব বকতেন ওকে ।
,
বাবা বুঝে গেছিলেন আমাদের মাঝে কিছু একটা আছে!
বাবা ব্যাপারটা নেগেটিভভাবে নেননি বরং আমাদের ঠিকমতো পড়াশোনা করতে বলেছেন , আমাদের এক করার দায়িত্ব ওনার!
খুব খুশি হয়েছিলাম আমরা ।
সব পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছিল কিন্তু হায়ারম্যাথ পরীক্ষার আগে দেশে একটা হরতাল দেখা দিলো , পরীক্ষা পেছালো ।
সাতদিন বন্ধ পেয়েছিলাম পরীক্ষার আগে ।
একটা চিরন্তন সত্য হলো পরীক্ষার আগে বন্ধ পেলে স্টুডেন্ট পড়েনা এবং তাই হলো ।
পরীক্ষার আগের রাতে বই দেখে পরীক্ষা দিলাম এবং যথারীতি পরীক্ষা হলো খারাপ ।
রাইদ খুব মন খারাপ করলেন ব্যাপারটা নিয়ে ।
প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি তার অভিমান জারি থাকলো ।
পুরোটা সময় আমার তার মান ভাঙ্গাতেই গেলো ।
,
পরীক্ষা শেষের দিন ফাইনালি জনাবের মান ভাঙলো এবং সে আমার কলিজার টুকরো ফোনটাকে আমার হাতে দিলেন ।
সিমি সন্ধ্যায় বাসায় আসলো এবং আমরা দু’জনে যুক্তি করে ফেইসবুক আইডি ওপেন করে ফেললাম ।
রাইদ স্পেস দিলেন সিমির সাথে কিন্তু ফেইসবুক আইডির কথা উনি জানতেন না ।
লং বন্ধ তাই আমি আর সিমি প্ল্যান করলাম ঘোরাফেরা হবে ।
ফুপ্পিকে বললাম আমাদের ইচ্ছের কথা , ফুপ্পি বললেন রাইদকে জিজ্ঞেস কর?
রাইদকে বললাম কিন্তু সে না করে দিলো ।
বন্ধুদের সাথে ট্যুর করে ঘোরা হবেনা, যেখানে ঘুরতে চাই সে নিয়ে যাবে ।
কি আর করার!
তার সাথেই ঘোরাফেরা চললো , মাঝেমধ্যে ওর ফ্রেন্ডরা জয়েন করতো ।
মাঝেমধ্যে আমরা একা নয়তো সিমি-রামিম ভাই আসতেন ।
এভাবেই দেড় মাস কেটে গেলো ।
ফেইসবুক সম্পর্কেও দক্ষ হয়ে গেলাম আমি ।
একদিন সন্ধ্যায় নিউজফিড ঘাটছি তো হঠাৎ মেসেজ । গিয়ে দেখি লোকটা আর কেউ না শব্দ ভাইয়া ।
আমি জানিনা কীভাবে সে আমাকে চিনে ফেলেছিলো ।
ভদ্রতার খাতিরে রিপ্লাই করলাম আর বললাম রাইদ ভাইকে যেন না জানানো হয়!

সেদিনের পর থেকে শব্দ ভাইয়ার সাথে কথা চলতে থাকলো ।
অনেক মেসেজ দিতেন উনি আমাকে , প্রথমে খুব বিরক্ত লাগতো কিন্তু একসময় ওনার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো ।
আমি ওনাকে বড় ভাইয়ের আসনে বসিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু উনি আমায় কি ভাবতেন এটা আমি জানতাম না ।
সময় বহমান , দেখতে দেখতে রেজাল্ট হয়ে গেলো ।
সমাজে এ প্লাস মিস হলো আর হায়ারম্যাথে অধিক খারাপ ।
ফাইভ পয়েন্ট না এসে আসলো ৪.৮৯ ।
আমি এতেই সন্তুষ্ট ছিলাম কিন্তু রাইদের আবার মন খারাপ হলো ।
ওকে বোঝালাম নেক্সট বার ইনশাআল্লাহ ভালো করবো , বুঝে গেলো ও আমাকে আবার নিজেও বোঝাতো মন খারাপ যাতে না করি!
সিমির রেজাল্ট এসেছিলো ৫ পয়েন্ট ও চাইলেই সাইন্স নিয়ে পড়তে পারতো কিন্তু ও সেটা করলো না ।
ও আর আমি দু’জনে একই কলেজে মানবিকে ভর্তি হলাম ।
বাবা তানভীর ভাইয়াকে বললেন রাইদের সাথে আমার প্রণয়ের কথা ।
ভাইয়া একদিন আসলেন ফুপ্পির বাসা তারপর আমাকে আর রাইদকে আলাদা ভাবে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন সব ।
রাইদকে পরীক্ষা করে দেখলেন আসলেই সে আমায় ভালোবাসে কি না!
রাইদ ভাইকে ওয়াদা করেছিলো সে কখনো আমায় কষ্ট দিবে না ।
কিন্তু মানুষ বড়ই বিচিত্র , তারা অনেক সময় ওয়াদাও ভুলে যায় ।
যেখানে আমাদের বিয়ের কথা চলছিলো সেখানে এক নিমেষে যে কাঁচের মতো সম্পর্ক চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে তা কেউ আন্দাজ করেছিলো?
,
চলবে,
sinin tasnim sara

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here