কখনো বা দেখা হবে পর্ব -০৬+৭

#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সিনথিয়া আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল৷ কারণ আজ তাকে দেখতে আসার কথা। বাড়িতে ফিরেই সিনথিয়া দেখল লুবনা আক্তার রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। সিনথিয়া বুঝল তাকে দেখতে আসা পাত্রপক্ষের জন্যই এই রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে। সিনথিয়া এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করল না। নিজের রুমে গিয়ে তার মায়ের শাড়ি গহনা বের করলো। আজ একটু সাজার ইচ্ছা হলো তার। এমনিতে তো এসব সাজগোজ তার ভালো লাগে না কখনো। তবে আজ কেন জানি তার খুব ইচ্ছা হলো একটু সাজার। তাই নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে সাজছে। আজ মনমতো সাজল সিনথিয়া।

সাজগোজ শেষ করল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল৷ অতঃপর লামিয়া বেগম তাকে ডাকতে এলো। দরজায় নক করে বলল,
‘নবাবজাদী তোর কি এখনো সাজ গোজ হয়নি? ঐ তো রূপের ঢক। এত সেজে কি হবে। নিচে আয় তাড়াতাড়ি। এসে আমাকে উদ্ধার কর। কাজে একটু হাত লাগা। আমি কি একা সবার যত্ন করব? আমাকে দেখতে আসছে ওনারা নাকি তোকে?’

নিজের সৎমায়ের এই ধরণের খোটা শুনতে ভালো লাগছিল না সিনথিয়ার৷ তাই নিচে চলে গেলো। খাবার দাবার তৈরি করা হয়ে গেছে সব। পাত্রপক্ষও চলে এসেছে। লামিয়া বেগম সবার সামনে আর খারাপ ব্যবহার করলেন না। সিনথিয়ার হাতে চায়ের ট্রে তুলে দিয়ে বললেন,
‘যা মা সবাইকে চা দে।’

লামিয়া বেগমের এমন মিষ্টি ব্যবহারের সাথে পরিচিত নয় সিনথিয়া। তাই বেশ অবাকই হলো। তবে তাকে আরো বেশি অবাক করে দিলেন সিরাজুল হক। তিনি লামিয়া বেগমকে বললেন,
‘তুমি ওকে সাহায্য করো। ও একা হাতে কি এত কিছু করতে পারবে নাকি।’

লামিয়া বেগম ক্ষেপে গেলেও সেটা প্রকাশ করলেন না। এখন যেহেতু মেয়েটাকে বিদায় করাই তার মূল উদ্দ্যেশ্য তাই দাতে দাত চেপে সব সহ্য করলেন। সিনথিয়াকে সাহায্যও করলেন।

সিনথিয়া পাত্রপক্ষর সবাইকে চা-নাস্তা দিল। যেই ছেলে সিনথিয়াকে দেখতে এসেছে তার নাম রায়হান। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে৷ এখন সদ্য উকিল হয়েছে। রায়হানের মা-বাবা, চাচা-চাচী তার সাথে এসেছে সিনথিয়াকে দেখতে। সিনথিয়ার কাছে সবার ব্যবহার বেশ বাড়াবাড়ি রকমের লোক দেখানো লাগে। মনে হয় তারা যেন একটু বেশিই ভাব জমাতে চাইছে।

যেমন রায়হানের মা সিনথিয়াকে বলে,
‘শুনেছি তোমার আসল মা নাকি মারা গেছে। কোন চিন্তা করো না বিয়ের পর আমি তোমার আরেক মা হবো।’

রায়হানের চাচি তো আরেকধাপ উপরে গিয়ে বলেন,
‘তোমার মতো মেয়েই তো আমাদের চাই। তোমার মতো মেয়ে লাখে একটা খুজে পাওয়া যায়।’

রায়হান নামের ছেলেটাকেও সিনথিয়ার বেশ অস্বাভাবিক লাগে। এসেছে থেকে কিরকম ভাবে দেখছে সিনথিয়াকে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।

১১.
দুই পরিবার মিলে বিয়ে ঠিক করে নিল। দুই সপ্তাহ পরই নাকি বিয়ে। রায়হানের পরিবার থেকে বিয়ের জন্য একটু বেশিই তাড়াহুড়ো হচ্ছে। এর কারণ সিনথিয়া বুঝল না। অথচ কেউ একবার সিনথিয়ার মত জানতে চাইল না যে সে বিয়েতে রাজি কিনা। তার জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তার অমতেই সবাই নিয়ে নিচ্ছে। সিনথিয়া চাইলেও কিছু করতে পারছে না। কারণ লামিয়া বেগম ও সিরাজুল হক তার বিয়ে না দিয়ে যে শান্তি পাবে না সেটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে গেছে তার সামনে। তাই নিজের নিয়তিকে মেনে নেওয়াই শ্রেয় মনে করল সিনথিয়া।

বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করে ফিরে গেল রায়হানের পুরো পরিবার। যাওয়ার আগে রায়হানের মা নিজের গলার সোনার হার খুলে সিনথিয়াকে পড়িয়ে দিল। এসবে সিনথিয়া বেশ অবাকই হলো। রায়হানও সিনথিয়ার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি প্রয়োগ করে চলে গেল।

সবাই চলে যাওয়ার পর লামিয়া বেগম নিজের খোলস ছেড়ে আসল রূপে বেরিয়ে আসলেন। সিনথিয়াকে বললেন,
‘এই নবাবের বেটি, দাড়িয়ে আছিস কেন? এই সব থালা বাসন কে পরিস্কার করবে? আমাকে কি কাজের লোক পেয়েছিস? চুপচাপ সব পরিস্কার করে নে। নাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।’

সিনথিয়া চুপচাপ সব কাজ করে নিল। ভাবল আর তো মাত্র ক’টা দিন। তারপরেই এসব থেকে মুক্তি পাবে। আসলেই কি তেমনটা হবে? নাকি তার জন্য অপেক্ষা করছে আরো নতুন বড় কোন বিপদ?


সিনথিয়া বাড়ির সব কাজ শেষ করে বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত পেল না। টিউশনির সময় ঘনিয়ে আসায় বেরিয়ে পড়ল। বাড়ি থেকে কিছু দূর হেটে এসে প্রধান সড়কে দাড়িয়ে রইল কোন রিক্সার অপেক্ষায়। এমন সময় রাজীব এসে তার পাশে দাড়ালো। সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
‘এসব আমি কি শুনছি সিনথিয়া? তোমায় নাকি আজ দেখতে এসেছিল?’

সিনথিয়া বেশ স্বাভাবিক চিত্তে বলে,
‘হ্যা এসেছিল। আমাকে পছন্দও করেছে।’

‘আমাকে এসব জানাও নি কেন?’

সিনথিয়া কোন উত্তর দিল না। শুধু রাজীবের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো। তার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল সে বোঝাতে চাইছে, রাজীব এমন কে যাকে সবকিছু বলতে হবে।

রাজীব বুঝল সিনথিয়ার সেই অব্যক্ত কথা। তাই আর দাড়ালো না সেখানে। মনে মনে সিনথিয়াকে বলল,
‘আমার ভালোবাসা যখন তুমি বুঝলে না তখন আমি আর বৃথা চেষ্টা করব না। এতদিনে যখন তোমার মনে স্থান পাইনি তাহলে এখনো পাবো না। আমার ভালো বাসা একতরফাই থেকে যাবে। তবুও আশা করব তুমি যেন সুখী হও। তোমার সুখের মাঝেই রয়েছে আমার সুখ।’

১২.
নতুন দিন, নতুনভাবে সবকিছুর শুরু। আজও সিনথিয়া নিত্তনৈমিত্তিক দিনের মতো ভার্সিটিতে এসেছে। যদিও লামিয়া বেগম বলেছিলেন, বিয়ের আগে আর ভার্সিটিতে আসতে হবে না কিন্তু সিনথিয়া তার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করে নি।

ভার্সিটিতে ক্লাস শেষের পর ঝর্ণা সিনথিয়াকে প্রাকটিসের জন্য নিয়ে গেল। নাচের বিভিন্ন স্টেপ শেখাতে লাগল সিনথিয়াকে। কিন্তু সিনথিয়া ভালো করে নাচতে পারছিল না। আচমকা কেউ একজন এসে তার পাশে দাড়ালো। সুন্দর ভাবে তাকে স্টেপগুলো শেখাতে লাগল। সে আর কেউ নয় অভি। অভি নিজে থেকেই সিনথিয়াকে নাচতে শেখাচ্ছে। সিনথিয়াও সুন্দর ভাবে নাচতে পারছিল।

নাচের প্রাকটিস শেষ হলে অভি সিনথিয়াকে বলে,
‘এভাবে নাচবেন তাহলে আপনাকে ভালো লাগবে।’

সিনথিয়া অভির দিকে তাকায়। অভির দিকে তাকাতেই তার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। অভির বন্ধু মিরাজও ছিল তার সাথে। সিনথিয়া আজ জানতে পারল এই মিরাজই ঝর্ণার বয়ফ্রেন্ড। ঝর্ণা আচমকা বলল,
‘নাচের প্রাকটিস তো হলোই। এখন চলো আমরা ঘুরতে যাই সবাই মিলে।’

সিনথিয়া আপত্তি জানিয়ে বলল,
‘আমি যেতে পারব না। আমার বাড়িতে অনেক কাজ আছে। তোমরা সবাই যাও।’

ঝর্ণা সিনথিয়াকে মানানোর চেষ্টা করল কিন্তু সিনথিয়া সেটা মানতেই চাইল না। এমন সময় অভি বলল,
‘আমি বুঝতে পেরেছি আমার জন্যই আপনি যেতে চাইছেন না। প্রথমদিন একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে এখনো আপনি রেগে আছেন।’

সিনথিয়া কিছু বলল না। কিন্তু অভির কথায় হতাশা ছিল। যেটা সিনথিয়ার বেশ খারাপ লাগল। তাই সে রাজি হয়ে গেল ঘুরতে যেতে। অতঃপর সবাই মিলে অভির গাড়িতে করে একটি পার্কে ঘুরতে গেল।

পার্কে এসে ঝর্ণা ও মিরাজ নিজেদের মতো সময় উপভোগ করতে লাগল। সিনথিয়া বারবার ঘড়ির দিকে দেখছিল। টিউশনির সময় হলেই সে বেরিয়ে যাবে। আচমকা মাথায় কারো হাতের স্পর্শ টের পেয়ে পিছনে তাকায় সিনথিয়া। দেখে অভি সযত্নে তার মাথায় একটি বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছে। সিনথিয়া অপ্রস্তুত হয়ে সরে এলো। অভি বলল,
‘ফুলটায় আপনাকে সুন্দর লাগবে ভেবেছিলাম। কিছু মনে করবেন না।’

অভির মনটা খারাপ হয়ে যায়। এই মেয়েটাকে সে কিভাবে বোঝাবে যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। প্রথমবার যখন তার সাথে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয় তখন থেকেই মেয়েটার জন্য অভির খারাপ লাগে। তাছাড়া অভি যেমন চায় সিনথিয়া ঠিক তেমনই মেয়ে। শান্ত শিষ্ট এবং কৃষ্ণবর্ণা।

সিনথিয়ার মনেও কিরকম অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছিল অভির জন্য। আগে কোন ছেলের জন্যে এমন অনুভূতি জন্ম নেয়নি। সিনথিয়া বুঝতে পারে না এই অনুভূতির নাম কি দেবে।

টিউশনির সময় হয়ে যাওয়ায় সিনথিয়া রওনা নিতে যাবে তখন অভি বলে,
‘কোথায় যাবেন বলুন আমি পৌছে দিচ্ছি।’

‘পাশের বাজারের কাছেই টিউশনি করাতে যাব।’

‘আচ্ছা আমার সাথে চলুন।’

সিনথিয়া কেন জানি মানা করতে পারে না। অভির গাড়িতে উঠে পড়ে। অতঃপর অভি তাকে তার গন্তব্যে পৌছে দিয়ে আসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আজ ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম হতে চলেছে। সিনথিয়া ও ঝর্ণা আজ অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করবে৷ তাই এখন চলছে তাদের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। সিনথিয়াকে অনেক বেশি নার্ভাস লাগছে। কারণ এরকম অনুষ্ঠানে আগে কখনো অংশ নেয়নি সে। জানে না কত ভালো পারফর্ম করতে পারবে। তাই তার মনে যথেষ্ট ভয় কাজ করছে। ঝর্ণাকে উদ্দ্যেশ্য করে ভয়ার্ত গলায় বলে,
‘আমি পারব তো?’

‘পারতে আপনাকে হবেই সিনথিয়া। অল দ্যা বেস্ট।’

কথাটি অভির কন্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়েছে। অভির কন্ঠ শুনে সিনথিয়া তাকালো তার দিকে। সিনথিয়ার কেন জানি অন্যরকম অনুভূতি হয় অভির দিকে তাকালে। তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর মাত্র ৪ দিন পরেই সিনথিয়ার বিয়ে। সিরাজুল হক বলে দিয়েছেন আজকেই সিনথিয়া শেষবারের মতো ভার্সিটিতে আসতে পারবে। সিনথিয়ার মনে এমন সময় অভির জন্য জন্ম নেওয়া এই অনুভূতি তাকে পীড়া দিচ্ছে। সিনথিয়া জানে না এই অনুভূতির নাম কি। শুধু জানে অভি তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। সবসময় তার মন অভিকে দেখার জন্যই ছটফট করে।

নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে অভির থেকে চোখ সরিয়ে নেয় সিনথিয়া। অভি সিনথিয়ার দিকেই নিজের দৃষ্টি স্থির রেখেছে। সিনথিয়ার দিকে তাকানো অবস্থাতেই মৃদু হেসে বলল,
‘আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে সিনথিয়া। অল দ্যা বেস্ট।’

সিনথিয়া সৌজন্যমূলক হাসি দেয়।

ভার্সিটির প্রোগ্রাম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সবাই একে একে নৃত্য, সঙ্গীত এসব কিছু পরিবেশন করছে। যার দরুন খুব মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসে। আজ রাজীবও এসেছে এখানে। উদ্দ্যেশ্য সিনথিয়ার নৃত্য দেখা। রাজীবের এক বন্ধুর বোনও এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। তার থেকেই জানতে পেরেছে এই ব্যাপারে। অতঃপর নিজের বন্ধুর সাথে চলে এসেছে।

স্টেজের পাশে দাড়িয়ে ছিল সিনথিয়া ও ঝর্ণা। আর কয়েকজনের পরেই তাদের পালা। ভয়ে রীতিমতো কাপছিল সিনথিয়া। তার মনে একটাই চিন্তা যদি পারফরম্যান্স ভালো না হয় তাহলে কি হবে? তার বুকে ক্রমশ ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে।

সিনথিয়াকে অবলোকন করছিল অভি। সিনথিয়ার ভয়টা বুঝতে পেরে একটি বোতলভর্তি পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘এই নিন। এই পানিটা খেয়ে নিন। মনে জোর পাবেন।’

সিনথিয়া কিছুটা পানি খেয়ে নিল। এখনও ভয় কমেনি তবে একটু স্বস্তি লাগছে।

অবশেষে সিনথিয়া ও ঝর্ণার পালা এসেই গেল। ❝ফাগুন হাওয়ায়❞ গানে নৃত্য পরিবেশন করল তারা দুজনে। স্টেজে ওঠার আগে ভয় পেলেও স্টেজে উঠে ভয় অনেকটাই কমে গেল সিনথিয়ার। সবাই যখন করতালি দিল তখন যেন মনে সাহস পেলো। বেশ ভালোভাবেই নৃত্য পরিবেশন করল। অভি, রাজীব দুজনেই মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করতে লাগল সিনথিয়ার মনোমুগ্ধকর সেই নৃত্য।

১৩.
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে। সিনথিয়ার ব্যাচ মেটেরা অনেকেই এসে এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সিনথিয়া কারো সাথে না মেশায় সেরকম ভাবে কারো সাথে পরিচিত নয়। তবে সবাই যখন তার প্রশংসা করছে তখন তার অনেক ভালো লাগছে।

ঝর্ণা সিনথিয়াকে আচমকা বলে,
‘চলো তো আমরা একটু ভার্সিটির পেছন দিকে যাই।’

সিনথিয়া অবাক হয়ে জানতে চায়,
‘কেন? ওখানে কি দরকার।’

‘আরে চলোই না তাহলে এমনিই জানবা।’

ঝর্ণা একপ্রকার জোর করেই নিয়ে যেতে থাকে সিনথিয়াকে। রাজীব সিনথিয়ার খোজে এদিকেই আসছিল। ঝর্ণাকে এভাবে সিনথিয়াকে নিয়ে যেতে দেখে তার ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে যার দরুন সে তাদের পিছু নেয়।

ভার্সিটির পেছন দিকে আসতেই চমকে গেলো সিনথিয়া। অভি হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সিনথিয়াকে দেখামাত্রই তার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল,
‘আমি অনেকদিন থেকে তোমায় এটা বলতে চাইছিলাম সিনথিয়া। তোমার প্রতি আমার অন্যরকম মুগ্ধতা কাজ করে। এন্ড আই ক্যান ফিল আই লাভ ইউ আ লট। আমি তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি।’

সিনথিয়া অনুভূতি গুলো ভাষা হারিয়ে ফেলছিল। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করণীয় সেটা বুঝতে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল তার। সিনথিয়ার মনেও যে অভির জন্য অনুভূতির জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি করতে পারে সে? সিনথিয়া বেশ কঠোরভাবে বলল,
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি না অভি। আপনি হয়তো জানেন না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর মাত্র চারদিন পরই আমার বিয়ে। তাই আমি খুশি হবী যদি আপনি এই বিষয় নিয়ে আর কথা না বাড়ান। আজ এই ভার্সিটিতে আমার শে’ষ দিন ছিল। আমি আসছি।’

কথাগুলো বলে আর দাড়ালো না সিনথিয়া। তার চোখে যে বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। আর কিছুক্ষণ পরেই বিনা বাধায় বর্ষণ নামল তার চোখে।

রাজীব সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করল। সিনথিয়ার পেছন পেছন সেও চলে এলো। অন্যদিকে সিনথিয়ার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অভি প্রচণ্ড ভেঙে পড়ল। তার মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর। মিরাজ ও ঝর্ণা তাকে শান্তনা দিলো। অভি মুখে বলল সে ঠিক আছে। কিন্তু তার মন একদমই ঠিক নেই।


সিনথিয়া ভার্সিটির বাইরে এসে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। নিজের কাধে কারো স্পর্শ অনুভব করে পিছনে ফিরলো সিনথিয়া। রাজীবকে দেখে অবাক হলো প্রচুর। চোখের জলগুলো মোছার বৃথা চেষ্টা করল। রাজীব মলিন হেসে বলল,
‘আমি তোমার চোখের জল দেখে ফেলেছি। তাই আর লুকাতে হবে না।’

সিনথিয়া নির্বিকার। রাজীব আচমকা তার হাত ধরে বলল,
‘তুমি ঐ ছেলেটাকে ভালোবাসো তাই না?’

সিনথিয়া চমকালো। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলল,
‘না এমনটা নয়।’

‘তোমার চোখ অন্য কথা বলছে। তোমার এই কান্না অন্য কথা বলছে। ছেলেটা ভাগ্যবান তোমার ভালোবাসা পেলো। যেটা আমি পাইনি। কিন্তু তুমি কেন ওকে অস্বীকার করলে? আমাকে নাহয় পছন্দ করো না কিন্তু ওকে তো পছন্দ করো।’

‘পরিস্থিতি অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।’

সিনথিয়া এই সামান্য বাক্যেই যেন অনেক কিছু বুঝিয়ে দিল। অতঃপর আর কালক্ষেপণ না করে বাড়ির দিকে রওনা দিল সিনথিয়া। রাজীব সেদিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলল,
‘তোমার সুখের জন্য আমি সব করতে পারি সিনথিয়া। চিন্তা করো না আমি তোমাকে পাই বা না পাই তুমি যাতে সুখের দেখা পাও সেই ব্যবস্থা আমি করে দিবো।’

১৪.
রাজীব আজ পাইকারি বাজার থেকে ফেরার সময় দেখতে পায় রায়হান নামের ছেলেটাকে। সেদিন যখন রায়হান সিনথিয়াকে দেখতে গিয়েছিল তখন তাকে দেখেছিল রাজীব। তাই চিনতে বেশি অসুবিধা হলো না। রাজীব যেন কি মনে করে রায়হানের পিছু নিল।

আর পিছু নিয়ে এমন কিছু জানতে পারল যা জানার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রায়হান দূরে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে দেখা করল। সেই মেয়েটি বলছিল,
‘আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম জন্য তোমার পরিবার তোমার আবার বিয়ে দিতে চাইছে। আর তুমিও নাচতে নাচতে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ?’

রায়হান সেই কথা শুনে বলে,
‘কোন চিন্তা করিও না। আমি মেয়েটাকে শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যেই বিয়ে করছি। ওর বাচ্চা হওয়ার পর ওকে ছেড়ে দেবো।’

‘ছেড়ে দেওয়া কি এতই সহজ?’

‘সেইজন্যই তো একটা অসহায় মেয়েকে বিয়ে করছি। মেয়েটার মা নেই। বাবা আর সৎ মা তাকে দেখতেই পায় না৷ এমন মেয়েকে ছেড়ে দিতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।’

কথাগুলো শুনে রাজীব নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে। রায়হানকে এলোপাতাড়ি মা’রতে লাগল। বলছিল,
‘আমার সিনথিয়ার দিকে হাত বাড়াস। তোকে আমি ছাড়ব না। সিনথিয়ার কোন ক্ষতিই আমি হতে দিবো না।’

কিছু মানুষ এসে ঝামেলা থামায়। রায়হান দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে।


রাজীব সিনথিয়াদের বাড়ির সামনে এসে চিৎকার করতে থাকে। সিরাজুল হক ও লুবনা বেগম বেরিয়ে আসেন। রাজীব বলে,
‘আপনারা সিনথিয়ার সাথে কেমন ছেলের বিয়ে ঠিক করেছেন। যার আগের একটা বউ আছে।’

সিরাজুল হক বলেন,
‘আমার মেয়ের আমি যেখানে ইচ্ছা বিয়ে দেব। তোমার তাতে কি?’

রাজীবকে কিছু বলার সুযোগ দিয়ে তার মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দেয়। রাজীব শপথ করে এই বিয়ে সে হতে দেবে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here