কখনো বা দেখা হবে পর্ব -০২+৩

#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সিনথিয়াকে তার বাড়িতে নিয়ে আসল রাজীব। সিনথিয়াকে সোজা পৌছে দিল তার রুমের দিকে। সিনথিয়ার খুব ভয় হতে লাগল। যদি আবার তারা সিনথিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এই নিয়েই সিনথিয়ার যত চিন্তা। রাজীব বুঝল সিনথিয়ার মনের কথা। তাই সিনথিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
‘তুমি একদম ভয় পাবা না৷ ওরা কেউ তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবে না। কেউ তোমাকে কিছু বললে তুমি সেটা আমাকে এসে বলবে। নিজে তো প্রতিবাদ করা শিখো নি। তাই আমাকে তোমার হয়ে কথা বলতে হবে।’

সিনথিয়ার এই মুহুর্তে কি বলা উচিৎ সেটা সে ভেবে পেল না। রাজীব তাকে খোটা দিয়ে বললেও খুব একটা ভুল কথা বলে নি। আসলেই সিনথিয়া একটুও প্রতিবাদ করে না। তাই তো তার সৎমা এবং বাবা এত বেশি সাহস পেয়েছে।

রাজীব বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে লাগল। সিনথিয়া ভাবল একবার যে ধন্যবাদ বলবে। কিন্তু বলল না। কেন জানি এই রাজীব ছেলেটাকে তার একদম ভালো লাগে না। যদিও ছেলেটি সিনথিয়ার মা সেলিনার অনেক প্রিয় ছিল। সিনথিয়া তার মায়ের কাছে শুনেছিল, ১৮ বছর পার হওয়ার পর অনাথ আশ্রম থেকে রাজীবকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তখন রাজীব কি করবে কি করবে না সেটাই বুঝতে পারছিল না। পেটের খাবার জোগাতে চুরি ডাকাতি শুরু করে। তবে একদিন মিসেস সেলিনা যখন রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তখন এই রাজীবই তাকে উদ্ধার করে এনেছিল। তখন থেকেই তাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক।

মিসেস সেলিনা বেচে থাকতে রাজীবকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তার সাহায্যেই রাজীব এই এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়েছে। তবে রাজীবের স্বভাব এখনো বদলায় নি। আগের মতোই বখাটে রয়ে গেছে। সবসময় মা’রামারিতে তাকে পাওয়া যায়। যদিও অহেতুক ঝামেলা করে না সে। কোন অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদ করে।

সিনথিয়া ছোট থেকেই শান্তিতে বিশ্বাসী। কারো সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায়না কখনো। সিনথিয়ার বিশ্বাস চুপ থাকলেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়। প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়না। বরং কথায় কথা বাড়ে। শান্তিপ্রিয় সিনথিয়া তাই বরাবরই নিজের এই স্বভাবের জন্য অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। তবুও নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করে নি।

নিজের শান্তিপ্রিয় স্বভাবের কারণেই নিজের বিপরীতমুখী স্বভাবের রাজীবকে তার সহ্য হয়না। তার উপর যখন থেকে জানতে পেরেছে রাজীব তাকে পছন্দ করে তখন থেকে আরো বেশি দূরে দূরে থাকে। যদিও রাজীব কখনো সিনথিয়ার থেকে জোর করে ভালোবাসা আদায় করে নিতে চায়নি। শুধু সিনথিয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি নাক গলায়। যা সিনথিয়ার পছন্দ নয়।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসে সিনথিয়া।

৩.
লুবনা আক্তার সোফায় বসে বসে রাগে ফুসছেন। সিরাজুল হক তার পাশেই বসে আছে। লুবনা আক্তার বেশ রাগী গলায় বললেন,
‘তোমার সামনে একটা বাইরের ছেলে আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করার সাহস কই পায়?’

‘আমি তো তোমার হয়ে কথা বললাম।’

‘থাক। এসব বলে লাভ নেই। আমি তোমার ঐ মেয়েকে আর সহ্য করতে পারছি না। ওকে তাড়াতাড়ি বের করে দেও তো।’

‘আমি তো এটাই বুঝতে পারি না তুমি ওকে সহ্য করতে পারো না কেন। আমাদের তো কোন সন্তান নেই।’

‘তোমাকে আমি আগেও বলেছিলাম আমি কখনো মা হতে পারব না। এটা জেনেও তো তুমি আমাকে ভালোবেসেছ।’

সিরাজুল ইসলাম মনে মনে বলেন,
‘তখন কি আর জানতাম আমাদের সম্পর্কের কথা সেলিনা এভাবে জেনে যাবে, আর তোমাকে বিয়ে করতে হবে। ‘

লুবনা আক্তার বলল,
‘ঐ মেয়েকে দেখলেই আমার তোমার প্রথম স্ত্রীর কথা মনে পড়ে। তাই ওকে আমি সহ্য করতে পারি না৷ তুমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিয়ে দিয়ে দাও। যা বুঝলাম ঐ রাজীব ছেলেটা থাকতে এমনি এমনি ওকে বিদায় করা যাবে না। বিয়ে দিলে তো আর কিছু করতে পারবে না।’

‘আচ্ছা দেখছি। কিভাবে কি করা যায়।’


রাজীব নিজের বাসায় আছে। সিনথিয়াদের মহল্লাতেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে রাজীব। খুব ছোট একটা ঘর। এই ঘরের নিজের জীবন সাজিয়ে নিয়েছে রাজীব। বাসায় এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিনথিয়ার ছবি দেখছিল রাজীব। আর ভাবছিল,
‘তোমাকে কিভাবে বোঝাবো কতো ভালোবাসি তোমায়। আমার ভালোবাসা কি তুমি কখনো বুঝবে না?’

রাজীবের মনে পড়ে যায়, এক ঝড়বৃষ্টির দিনে প্রথম যেদিন সে সিনথিয়াকে দেখছিল। সিনথিয়া তখন স্কুলে পড়ত। প্রথম দেখাতেই রাজীবের মনে দাগ কে’টে যায় সে। রাজীব আজও ভুলতে পারেনি বৃষ্টিভেজা সিনথিয়াকে। সেই থেকেই সিনথিয়া রাজত্ব করছে তার মনে। রাজীব কখনো চায়না জোরপূর্বক সিনথিয়াকে আদায় করে নিতে। বরং চায় সিনথিয়া যেন নিজে থেকে এসে তার কাছে ধরা দেয়। সিনথিয়ার জন্য তার যে অনুভূতি, সেই একইরকম অনুভূতির জন্ম হোক রাজীবের মনে। রাজীব জানে না কখনো তার এই চাওয়া পূর্ণ হবে কিনা। তবে সে খুব করে আল্লাহর কাছে চায়, আল্লাহ যেন তার এই ইচ্ছাটা পূরণ করে।

৪.
সিনথিয়া ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। গতকালের ঘটনার পর সিনথিয়া আজ আর কোন ঝুকি নিতে চায়না। তাই নামাজ আদায় করে বাড়ির সব কাজ করা শুরু করে দিল। বাড়ি ঝাড়ু দেওয়া শেষ করে রান্নাঘরে চলে এলো।

লুবনা আক্তার সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। রান্নাঘরে এসে সিনথিয়াকে দেখে মুখ বাকিয়ে বলেন,
‘আর ঢং করতে হবে না মহারাণী। তুই কেমন কাল বুঝে গেছি। খুব তো না’গর জুটিয়েছিস। বাড়ি এসে আমাকে অপমান করে যায়।’

কথাগুলো শুনে সিনথিয়ার গা গুলিয়ে আসে। কারো চিন্তাভাবনা এত নিচ কিভাবে হতে পারে সেটা ভেবে পায়না সিনথিয়া। আজ তার খুব করে ইচ্ছা করছে প্রতিবাদ করার। কিন্তু তখনই তার মনে পড়ে যায় গতকালের ঘটনা। এখন কিছু বললে যদি লুবনা আক্তার আবার তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবে সিনথিয়া? তার তিনকুলে যে কেউ নেই। সিনথিয়ার মা তার পরিবারের অমতে সিরাজুল হককে বিয়ে করেছিল৷ তখনই পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছিল সেলিনার। তাই নিজের মামার বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ নেই সিনথিয়ার।

বাকি রইল বাবার পরিবার। সিরাজুল হকের দুই বোন বিদেশে থাকে৷ সেখানে যাওয়াও সম্ভব না সিনথিয়ার কাছে। তাই নিজের এই অসহায়ত্বের জন্য চুপ থাকাই ঠিক মনে করে সিনথিয়া।

রান্নাবান্না শেষ করতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। সিরাজুল হক ও লুবনা আক্তার ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে আছে।

সিনথিয়া তাড়াহুড়ো করে খাবার আনতে গিয়ে হাত থেকে সেগুলো পড়ে যায়। লুবনা আক্তার রেগে গিয়ে বলেন,
‘দেখলে তো নিজের মেয়ের কান্ড। এমনি তো একে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইনা।’

সিনথিয়া ভয় পেয়ে গেল। সিরাজুল হক উঠে বললেন,
‘আমার চেনাজানা একটা ছেলে আছে। ছেলেটা নতুন নতুন উকিল হয়েছে। ভাবছি ওর সাথে সিনথিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব।’

লুবনা আক্তার ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,
‘উকিল হোক আর মুচি হোক। যাকে পাও ধরে বিয়ে করিয়ে দাও। এই মেয়ে বিদায় হলেই আমার হয়।’

সিনথিয়ার মনে আঘাত লাগল কথাগুলো শুনে। তাকে যে লুবনা আক্তার কতোটা বোঝা মনে করছে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে সিনথিয়া। শুধু লুবনা আক্তার কেন সিনথিয়ার বাবাও তাকে বোঝাই যাবে। অথচ সিনথিয়ার মা বেচে থাকতে সবকিছু কতটা ভিন্ন ছিল। মা-বাবার রাজকন্যা ছিল সিনথিয়া। এই কয়েক বছরে চোখের নিমেষেই সব বদলে গেছে।

সিনথিয়ার চোখের সামনেই তার বাবা কতোটা বদলে গেল। আর নিজেকে সামলাতে পারছিল না সিনথিয়া। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ভার্সিটির সময় প্রায় হয়ে এসেছে তাই দ্রুত পা চালাতে লাগল। টাকা না থাকায় ৩০ মিনিটের পথ হেটেই যেতে হয় তাকে।

আচমকা রাজীব নিজের বাইক নিয়ে এসে থামালো সিনথিয়ার সামনে। বলল,
‘উঠে পড়ো আমি তোমাকে দ্রুত ভার্সিটি পৌছে দেব।’

‘আমি একাই,,,’

‘যা বলছি চুপচাপ মেনে নাও।’

সিনথিয়া আর কথা না বাড়িয়ে রাজীবের বাইকের পেছনে উঠে বসল। রাজীব বলল,
‘আমাকে শক্ত করে ধরো। আমি কিন্তু খুব দ্রুত চালাই।’

সিনথিয়া রাজীবকে বেশ শক্ত করে ধরল। রাজীব ভীষণ খুশি হলো। খুশি মনে বাইক চালানো শুরু করল। তার মনে এখন এই গানটি বাজছে, ❝এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো।❞

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

রাজীব নিজের বাইকে করে সিনথিয়াকে তার ভার্সিটির সামনে এসে নামিয়ে দিল। তারপর চলে গেলো নিজের মতো৷ সিনথিয়া সামান্য ধন্যবাদটুকু দেওয়ার সময় পেলো না। সিনথিয়া ভাবল, আজ অব্দি রাজীব তাকে কতবার সাহায্য করেছে কিন্তু সে কখনো তাকে ধন্যবাদ বলতে পারে নি। কখনো বলতে চায়নি, কখনো বলার আগেই রাজীব চলে গেছে। এসব ভেবেই সামান্য হাসে সিনথিয়া।

রাজীব এমন একজন মানুষ যাকে সে ঘৃণায় করতে পারে না আবার ভালোও বাসতে পারে না।

এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে করতেই ভার্সিটিতে ঢুকল সিনথিয়া। সাথে সাথে কয়েকজন মেয়ে এসে তাকে ঘিরে ধরল। সিনথিয়া ব্যাপারটা বুঝতে পারল না কিছুই। একজন মেয়ে সিনথিয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘তুমি সেই মেয়ে না যে গতকাল আহিয়ান চৌধুরী অভিকে থা’প্পর দিয়েছিলে?’

আরেকজন বলল,
‘হ্যা এই মেয়েটাই তো। ভিডিওতে তো এই সেলোয়ার-কামিজ দেখা গেছে। তার মানে এই সেই মেয়ে যে অভিকে থা’প্পর দিয়েছিল। একে তো আজ আমি,, ‘

মেয়েগুলোর কথার বিন্দুমাত্র কিছু বুঝতে পারল না সিনথিয়া। যতটুকু বুঝল এখানে কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কারণ সে তো কাউকে থা’প্পর মা’রেনি। থা’প্পর তো দূর আজ অব্দি কারো সাথে উচু গলায় কথা বলেছে কিনা সন্দেহ। সেই মেয়ের উপর কিনা এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে!

সিনথিয়া মেয়েগুলোকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘আপনারা আমায় ভুল বুঝছেন। আমি কাউকে থা’প্পর দেই নি।’

‘ধরা পড়ে গেলে এমন মিথ্যা সবাই বলে। এখন এসব নাটক করে কোন লাভ হবে না। চলো সবাই এই মেয়েটাকে নিয়ে অভির কাছে নিয়ে যাই। অভি বিচার করুক এই মেয়েটার।’

সিনথিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে তাকে নিয়ে যাচ্ছিল সবাই। সিনথিয়া এতগুলো মেয়ের সাথে গায়ের জোরে পারল না। তাই কিছু করতে পারছিল না। মেয়েগুলো সিনথিয়াকে ভার্সিটির পেছনের দিকে নিয়ে গেল৷ সেখানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে। তার পরণে কালো শার্ট ও প্যান্ট। তবে তার গায়ের রং অনেক ফর্সা।

মেয়েগুলো সিনথিয়াকে যখন ছেলেটির সামনে নিয়ে গেল তখন সেই ছেলেটি নিজের চোখের কালো সানগ্লাস খুলল। মেয়েগুলোর মধ্যে একজন বলল,
‘এই সেই মেয়ে যে গতকাল আপনাকে থা’প্পর মে’রেছিল।’

সিনথিয়া বুঝল এই ছেলেটিই হয়তো সেই অভি। যাকে থা’প্পর মা’রার অভিযোগে সিনথিয়াকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

অভি সিনথিয়াকে ভালো করে পরখ করে নিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল,
‘কালো জিনিস বরাবরই আমার পছন্দ। কিন্তু এই কালো মেয়েটিকে আমার ভালো লাগল না। আমাকে থা’প্পর মা’রে এত দুঃসাহস।’

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কোন কিছু বিবেচনা না করেই সজোরে থা’প্পর বসিয়ে দিল সিনথিয়ার গালে।

৫.
সিনথিয়া সবার সামনে এমন অপমানিত হয়েও প্রতিবাদ করার সাহস পেল না৷ মেয়েটা যে বরাবরই এমন। তবে ন্যাকাকান্নাও করল না। সে শুধু নির্বাক চাহনিতে তাকিয়ে রইল অভি নামের অতিব সুদর্শন ছেলেটির দিকে। মনে মনে ভাবল,
‘লোকটা দেখতে যত সুন্দর এর মন ঠিক ততোটাই কুৎসিত।’

ভীড়ের মাঝে আচমকা একটি ছেলে আরেকটি মেয়েকে টেনে নিয়ে আসলো। ছেলেটিকে দেখে অভি বলল,
‘মিরাজ তুই এসে গেছিস। দেখ এই সেই মেয়ে যে গতকাল আমাকে থা’প্পর দিয়েছিল। আজ আমি রিভেঞ্জ নিয়ে নিলাম।’

মিরাজ নামের ছেলেটা ভড়কালো। তার জোড়া ভ্রুযুগল কুচকে গেল। সে হতবাক নয়নে তাকিয়ে বলল,
‘এসব কি বলছিস তুই? কোন মেয়ের উপর রিভেঞ্জ নিলি? এই দেখ আমি যেই মেয়েটাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি সে তোকে থা’প্পর মে’রেছিল। মনে নেই কয়েকদিন আগে এই মেয়েটা তোকে প্রপোজ করেছিল। তুই রিজেক্ট করে দিয়েছিলি। তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুখে মাস্ক পড়ে তোকে থা’প্পর মে’রে পালিয়েছিল। কিন্তু ও জানে না মিরাজের চোখকে ফাকি দেওয়া এত ইজি নয়।’

মিরাজের কথা শুনে সবার মুখ থমথমে হয়ে গেল। সিনথিয়া সাহস করে এবার বলল,
‘আমাকে যদি যথেষ্ট অপমান করা হয়ে থাকে তাহলে আমি আসি।’

বরাবরই ঝামেলার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পছন্দ করে সিনথিয়া। তাই নিজের প্র‍তি হওয়া এই অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ করতে তার মন চাইল না। কি হবে প্রতিবাদ করে? সেই তো দিনশেষে এসব নিয়ে ঝামেলা বাড়বে। বাড়িতে সৎমা আর বাবার অত্যাচারের থেকে ভার্সিটিতে এসেই যা একটু শান্তি পায়। এখন যদি সেই শান্তিটাও না থাকে তাহলে তার জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠবে।

মিরাজ নামের ছেলেটা এবার বলল,
‘আমি যদি কোন ভুল না করে থাকি তাহলে অভি, তুই বোধহয় এই মেয়েটাকে সন্দেহ করে তাকে শাস্তি দিয়েছিস। বাট এটা তো ঠিক হয়নি। মেয়েটা তো ইনোসেন্ট ছিল। তোর ওকে সরি বলা উচিৎ।’

অভি অহংকারী ভাব নিয়ে বলল,
‘আমি কাউকে সরি বলি না। ভুল তো হতেই পারে। প্রয়োজনে সেই ভুলের জন্য আমি ক্ষতিপূরণও দেব।’

কথাটা বলে নিজের পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে সিনথিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘এই নিন আপনার ক্ষতিপূরণ। আশা করি একটা থা’প্পরের বদলে এটা যথেষ্টই আছে।’

সিনথিয়া টাকাটা নিল না। প্রতিবাদ না করলেও তার আত্মসম্মান বোধ তো আর শুণ্য নয়৷ তাই টাকা না নিয়েই চলে গেল নিজের ক্লাসের দিকে।

অভি সকলের উদ্দ্যেশ্যে,
‘আমাকে কি মেয়েটা এটিটিউড দেখিয়ে গেল? হোয়াট এভার, ওকে নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে এই মেয়েটার ব্যবস্থা করি। আমাকে আহিয়ান চৌধুরী অভিকে থা’প্পর মা’রা। আর তোমাদের(যেই মেয়েগুলো সিনথিয়াকে ধরে এনেছিল তাদের দিকে ইশারা করে) কেও শাস্তি পেতে হবে ভুল মানুষকে নিয়ে আসার জন্য। জাস্ট ওয়েট।’

৬.
সিনথিয়া ক্লাসে এসে নিজের মতো একটি সিটে বসে পড়েছে। এই ভার্সিটিতে তার তেমন কোন বন্ধু নেই। কারো সাথে সহজে মিশতেও পারে না সিনথিয়া। ছোটবেলা থেকেই সে এমন। নিজেকে নিয়েই ভাবে সবসময়। কারো সাথে বেশি কথাও বলে না। তাই সিনথিয়ার ছোট থেকেই তেমন কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব ছিল না।

আজ ক্লাসে সিনথিয়া একেবারে শেষের দিকের ডেস্কে বসেছে। এমনিতে সে সামনেই বসে। তবে আজ যা কাণ্ড হলো তাই তার আসতে দেরি হয়ে গেছে। যার ফলে সামনের ডেস্কগুলো সব ভর্তি হয়ে গেছে। অগত্যা সিনথিয়াকে বাধ্য হয়ে পেছনের দিকেই বসতে হলো।

ক্লাসে লেকচারার প্রবেশ করল। সিনথিয়া ক্লাসে মনযোগ দিল। ক্লাস শুরুর ঠিক পাচ মিনিট পর একটি মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লাসরুমের সামনে এসে বলল,
‘মে আই কাম ইন স্যার।’

লেকচারার বিরক্ত হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালেন। খানিকটা রাগী গলায় বললেন,
‘ক্লাস শুরু হয়েছে পাচ মিনিট আগে। এত লেইট হলে চলবে? তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবে। নেক্সট টাইম থেকে যেন দেরি না হয়।’

মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। লেকচারারের অনুমতি পেয়ে ভেতরে আসল। কোন সিট ফাকা না পেয়ে সিনথিয়ার পাশেই বসে পড়ল মেয়েটি। সিনথিয়া একপলক তাকালো মেয়েটির দিকে। তাকে কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে। সিনথিয়া ভ্রু কুচকালো। এক্ষুনি লেকচারারের বকা খেলো আর এখন এত খুশি দেখাচ্ছে। সিনথিয়া এ বিষয়ে বেশি কিছু না ভেবে পড়ায় মন দিল।

একটু পর লেকচারার জন্য নোট করতে বলল তখন মেয়েটি সিনথিয়াকে বলল,
‘আমি আজ পেন আনতে ভুলে গেছি। তোমার কাছে কি এক্সট্রা পেন হবে?’

অজানা একটি মেয়ে তুমি বলে ডাকায় বেশ অস্বস্তি বোধ করল সিনথিয়া। তবে তার কাছে অতিরিক্ত কলম ছিল৷ তাই দিয়ে দিলো। মেয়েটার দিকে কলম বাড়িয়ে দিতেই সে মৃদু হেসে কলমটা নিয়ে কৃতজ্ঞতার সাথে সিনথিয়াকে বলল,
‘থ্যাংকস। আমি ঝর্ণা। তোমার নাম কি?’

সিনথিয়া জোরপূর্বক হেসে বলল,
‘আমার নাম সিনথিয়া আক্তার।’

‘নাইস নেইম। আচ্ছা তুমি কি এই ভার্সিটিতে নতুন। আগে তো তোমায় খেয়াল করিনি।’

সিনথিয়া অবাক হলো না। কারণ ধুলোবালিতে এলার্জি থাকার জন্যে সে রোজ মাস্ক পড়ে ভার্সিটিতে আসে। কেউ সেভাবে তার চেহারা দেখেনি। আজ তাড়াহুড়ায় মাস্ক না পড়েই এসেছে। তবে ক্লাস চলাকালীন কথা বাড়াতে চায়না জন্য বলল,
‘ক্লাস শেষের পর কথা বলি।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

নোটঃ-অনেকেই বলছেন সিনথিয়া নামটা বদলে দিতে। কিন্তু এই নাম আমি বদলে দিতে চাইনা। এই নামের অর্থ জানলে হয়তো কেউ এই কথাটা বলতেন না। সিনথিয়া অর্থ মহান আল্লাহর দান। নামটা আমার অনেক প্রিয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here