কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
আধভিক গাড়ি থেকে নেমে গেলে সোহম একবার গাড়ির ভিতর থেকে আওয়াজ দেয় জোরে,
“স্যার ভিজে যাবেন তো? ছাতা টা নিয়ে যান?”
আধভিকের তরফ থেকে কোনো উত্তর আসে না। সে একমনে দাঁড়িয়ে আছে। সোহম নেমে গিয়ে আধভিকের মাথায় ছাতা ধরে।
“হঠাৎ করে এভাবে নেমে গেলাম কেন বলুন তো বৃষ্টির মধ্যে? আর এভাবে ওদিকে কি…
সোহম কথা বলতে বলতে আধভিকের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই দেখতে পেলো সেই মেয়েটি যে কি না শুটিং স্পটে ঢুকে পরেছিলো। মেয়েটি নিজের মতো করে বৃষ্টিতে ভিজছে, নাচছে। ওর সাথে কয়েকটা বাচ্চাও আছে। বৃষ্টির গতি জোর হতেই বাচ্চাগুলো বাস স্ট্যান্ডের ভিতর গিয়ে দাঁড়ায়। এটুকু দেখে সোহম আধভিকের দিকে তাকাতেই আধভিক ছাতাটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
“গাড়িতে গিয়ে বসো।”
আধভিক উত্তরের অপেক্ষা না করে এগোতে শুরু করে। মেয়েটির অনেকটা কাছে এগিয়ে গেলে একটি বাচ্চার কথা শুনতে পায়।
“সিয়ারা দিদি, আর বেশি ভিজো না ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”
“সিয়ারা!”
আধভিক মনে মনে আওরায় নামটা একবার। মুচকি হেসে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে, ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ও আপন মনে মাথা চিৎ করে, চোখ বন্ধ রেখে, দু পাশে দু হাত ছড়িয়ে রেখেছে। ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা।
“আরে আপনি কে? আপনিও কি দিদির মতো বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসেন নাকি?”
“দিদি দেখো, তোমার মত ওই দাদাটাও ভিজছে।”
বাচ্চাদের কথা শুনে সিয়ারা চোখ মেলে তাকায়। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় দেখতে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারে এটা কিছুদিন আগে শুটিং সেটে থাকা ছেলেটি।
“আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?”
“আপনাকে দেখছি।”
“কি? আমাকে দেখছেন মানে?”
“হম, অনেক কষ্ট পাওয়ার পর আপনাকে খুঁজে পেয়েছি। কোথায় হারিয়ে গেছিলেন বলুন তো? কেউ খুঁজেই পাচ্ছিলো না আপনাকে। অবশ্য, হয়তো ভাগ্য ঠিক করে রেখেছিলো আমিই আপনাকে খুঁজে পাবো।”
সিয়ারা বিষয়টা বুঝতে না পারলেও হয়তো কিছুটা আন্দাজ করে মনে মনে হাসলো।
“এইভাবে ভিজবেন না, ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ফিরে যান।”
কথা শেষ করে সিয়ারা পিছন ফিরে দু পা এগিয়ে গেলেই পিছন থেকে নিজের নাম শুনতে পায়।
“সিয়ারা! …. যাবেন না প্লিজ।”
সিয়ারা উপেক্ষা করতে পারলো না আধভিকের ডাক। আধভিকের দিকে ফিরে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই! তোরা দৌঁড় দে এবার। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। আমি যাচ্ছি আরেকটু পরে।”
সিয়ারার কথা শুনে বাচ্চাগুলো দৌঁড় দিলো। আধভিক বাচ্চাগুলোর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো সে সময় সিয়ারা বললো,
“বৃষ্টিটা কিছুক্ষণের জন্য থেমেছে। আবার জোরে আসবে। কি বলবেন বলুন জলদি?”
প্রশ্ন করতে করতেই সিয়ারা বাস স্ট্যান্ডের ভিতরে গিয়ে বসলো। আধভিক হেসে সিয়ারার পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো হাসি মুখে।
“আপনি কি শুধু তাকিয়েই থাকবেন?”
“কি বলার ছিল সেটাই তো ভুলে গেছি তোমাকে দেখে।”
“নিজের নামটা নিশ্চয় মনে আছে?”
“হ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ। আধভিক, আধভিক রায় চৌধুরী।”
“বাপ রে, কত বড় নাম। আসলে আপনি বড়লোক মানুষ তাই বড়ো নাম, ঠিকই আছে।”
“তুমি না হয় নামটা ছোটো করে দাও। তুমি যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে মিস সিয়া….
“মিসেস! মিসেস সিয়ারা।”
আধভিকের ঠোঁটের হাসির রেখাটা নিমিষে মিলিয়ে গেলো। নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসলো সে। স্থির দৃষ্টি ও থমথমে মুখ নিয়ে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তা হঠাৎ আমায় কেন খুঁজছিলেন মিস্টার রায় চৌধুরী? জরিমানা আদায় করবেন নাকি শুটিং স্পটে ঢুকে পরায়?”
আধভিক চোখ নীচের দিকে নামিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো শুধু। সিয়ারা মুখ টিপে হাসছে যা আধভিকের চোখে পরছে না। সিয়ারা অপেক্ষা করছে কখন আধভিক তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করবে। অবশেষে বেশ কিছুক্ষণ পর অপেক্ষার অবসান ঘটলো তার।
“আপ..আপনার বিয়ে হয়ে গেছে?”
“কেন? বিয়ে না হলে প্রেম করতেন বুঝি?”
আধভিক চুপ করে রইলো যা দেখে সিয়ারা উঠতে নিলেই তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
“নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম। হয়তো এখনও ভালোবাসবো, তবে এক তরফা।”
“আমার মত সাধারণ ঘরের মেয়ের সাথে আপনাকে মানায় না মিস্টার রায় চৌধুরী। আমি অতি সামান্য আর আপনি অসামান্য।”
সিয়ারার কথা শুনে আধভিক চটজলদি উত্তর দিলো,
“আমাদের সম্পর্কে কখনও স্ট্যাটাসের আঁচ আসতো না।”
সিয়ারা সামনে তাকিয়েই হাসলো। তারপর বললো,
“আমি মনে করি সবাই মানুষ। স্ট্যাটাস আমার কাছে বিষয় নয়। টাকা-পয়সা তো জোয়ার ভাটা। আজ আছে তো কাল নেই। আর স্ট্যাটাস চাইলেই মেইনটেইন করা সম্ভব। বিষয়টা কালচারের, পরিবেশের। আপনার কালচার আর আমার কালচারের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। আমি চাইলেই আপনার মতো চাল চলন করতে পারি যেটা আমি করবো না। আমরা মধ্যবিত্তরা যেকোনো পরিবেশে খাঁপ খাওয়াতে জানি। আপনি আমার মতো হতে না পারলেও আমি কিন্তু হতে পারবো। কিন্তু আমি আমার মতো, সাধারণ হয়েই থাকতে চাই। সুতরাং উঠি?”
“মানুষ চাইলেই সব পারে। আমি খাঁপ খাওয়াতে পারি কি না একবার যাচাই করেই দেখো।”
“আপনার আমার প্রতি যে আকর্ষণ আজ আছে, তা আগামী দিনে আর থাকবে না। তাই এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাটাই ভালো।”
সিয়ারা উঠে চলে যেতে নিলে আধভিক সিয়ারার হাত ধরতেই সিয়ারা আধভিকের চোখে চোখ রাখে।
“আমি এইসব আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা, আকর্ষণ এসবের অর্থ বুঝতাম না। আজও বুঝি না। শুধু বলতে পারি, তুমি আমার এমন অনুভূতি যা আমি আমার জীবনে প্রথমবার অনুভব করেছি। তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর প্রত্যেকটা মুহুর্তে এই অনুভূতি মনে করে আমি আনন্দ পেয়েছি। আবার এই অনুভূতি অনুভব করে কষ্টও পেয়েছি, কারণ তোমাকে আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলার ভয়ে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এই অনুভূতি কখনও মুছে যাবে না। তুমি না থাকলে এই অনুভূতি নিয়েই নিজের জীবনটা পার করে দিতে পারি আমি, ইটস স্পেশাল! ইটস ভেরি ভেরি স্পেশাল টু মি সিয়ারা। অ্যাকচুয়ালি ইউ আর স্পেশাল, দ্যা স্পেশাল ওয়ান অফ মাই লাইফ।
সিয়ারা আর আধভিক দুজনে এক পলকে একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। আধভিকের কথায় মগ্ন হয়ে কখন যে ও বসে পরেছে নিজের জায়গায় তার খেয়াল নেই। আধভিক এখনও সিয়ারার হাত ধরে আছে। সিয়ারা চোখ সরায় বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ পেয়ে। সামনে তাকাতেই দেখে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে।
“মিথ্যে কেন বললে, যে তুমি বিবাহিত?”
“বুঝতে পেরেছিলাম।”
“কি?”
“আপনার মনের কথাগুলো আপনার ব্যবহারে প্রকাশ পাচ্ছিলো। প্রথমে আপনি তে ছিলো বিষয়টা তারপর সেটা তুমি তে এলো। প্রথম দেখাতেই তো সোজা সাপ্টা কথা বলে দিলেন। এছাড়া মেয়েদের এই ক্ষমতাটা ভালোই আছে, কখন কোন ছেলে তাঁকে ঠিক কোন দৃষ্টিতে দেখছে সেটা তারা বুঝতে পারে।”
“আচ্ছা।”
সিয়ারা সামনের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে অনুভব করলো কেউ তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ পাশ ফিরাতেই দেখলো আধভিক হাত মুঠ করে কপালের পাশে ঠেকিয়ে রেখেছে, কুনই চেয়ারে ভর করে। নজর সিয়ারার দিকে স্থির এবং ঠোঁটে হাসির রেখা। সিয়ারা বেশ লজ্জা পেলো চোখে চোখ পরে যাওয়ায়।
“আব, আপনি একা এসেছেন?”
“কেন? তুমি কি আশা করেছিলে আমি পরিবার নিয়ে আসবো?…বিয়ের কথা বলতে?”
সিয়ারা চমকে উঠে আধভিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিয়ে? মাথা খারাপ হলো নাকি আপনার? প্রথম দেখার পর দ্বিতীয় দেখাতেই বিয়েতে চলে গেলেন? আমি কথাটা জিজ্ঞেস করলাম কারণ এই বৃষ্টিতে বাড়ি ফিরবেন কীভাবে একা তাই। আর আপনি বিয়ে অবধি চলে গেলেন?”
“হ্যাঁ, না যাওয়ার কি আছে? আমি কোনরকম সময় নষ্ট করতে চাই না। তোমার আমার সম্পর্কে যে ভুল ধারণা আছে সেটা মিটে গেলেই তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো।”
“বদ্ধ পাগল আপনি! আপনি চাইলেই আমি বিয়ে করবো? এতো সোজা?”
“তাহলে? তাহলে কি করতে হবে আমায়?”
“আপনি আমাকে কি দোকানের পুতুল ভাবছেন মিস্টার রায় চৌধুরী? যে, দেখলেন, দেখার পর পছন্দ হলো আর কিনে নিয়ে বাড়িতে সাজিয়ে রাখলেন? আমি কোনো পুতুল নই, আমি…
“আমার মনের রাণী! তুমি, আমার মনের রাণী। যে কি না প্রথম দেখাতেই আমাকে ঘায়েল করে দিয়েছে। আমি তাঁকে নিজের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মাথার মুকুট করে রাখতে চাই। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমার রাণীর উপর অন্যের নজর পড়ুক তা আমি চাইনা। কারণ নিজের সম্পদ নিয়ে লড়াই করতে ইচ্ছুক নই আমি। যেটা আমার, সেটা আমারই!”
“উফ! আপনি বাড়ি যান, বৃষ্টি ধরে এসেছে।”
“আর তুমি? তুমি যাবে না বাড়ি?”
“আমি ঠিক চলে যাবো। আপনি যান। বৃষ্টি জোরে আসলে ভিজে ভিজে যেতে হবে।”
আধভিকের মুখটা ছোটো হয়ে গেলো চলে যাওয়ার কথা শুনে। দুই থেকে তিন সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর হঠাৎই বলে উঠলো,
“কিন্তু আমি তো এখানকার রাস্তা চিনি না। তোমাকে দেখতে পেয়েই চলে এসেছি। কোনদিক থেকে এসেছি, কীভাবে এসেছি খেয়াল পরছে না এখন।”
“কি? আপনি আমাকে দেখলেন আর উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলে এলেন? হে ভগবান!”
আধভিক ক্যাবলা হেসে মাথা চুলকে বললো,
“কি করবো বলো? তোমাকে অনেক খোঁজার পর যে পেয়েছি।”
সিয়ারার বেশ হাসি পেলো আধভিকের কথা শুনে ও অবস্থা দেখে। হাসি চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
“বাড়ির ঠিকানা নিশ্চয় মনে আছে?”
“হ্যাঁ।”
“গুগল করে নিন। চললাম।”
“কিন্তু…
সিয়ারার উত্তর শুনে আবারও হতাশ হয়ে পরলো আধভিক। সে ভেবেছিলো সিয়ারা তাঁকে হেল্প করবে কিন্তু নাহ, সে তো চলেই গেলো। মনটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওভাবেই ওখানে বসে রইলো আধভিক। হঠাৎ সামনে হর্ণের আওয়াজে সামনে তাকাতেই দেখলো সিয়ারা স্কুটি নিয়ে বসে আছে।
“এভাবে তাকিয়েই থাকবেন নাকি বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেবেন কোনটা? বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা নেই নাকি? আপনার না থাকলেও আমার কিন্তু প্রবল ইচ্ছা আছে নিজের বাড়ি যাওয়ার তাই জলদি উঠে বসুন নাহলে আমি…
আধভিক সিয়ারা কথা শুরু করতেই উঠে দাঁড়ায় এবং কথা শেষ করার আগেই এসে বসে পড়ে সিয়ারার স্কুটিতে। সিয়ারা হেলমেট দিলে সেটা পরে নেয় এবং সিয়ারা বলে,
“অ্যাড্রেস বলুন। আশেপাশেই থাকেন নাকি?”
“হ্যাঁ।”
আধভিক সিয়ারাকে নিজের বাড়ির ঠিকানা বলে না। বাড়ির কাছের একটা পরিচিত শপিং মলের নাম বলে। তাই সিয়ারার অসুবিধাও হয় না চিনতে। শপিং মলের কাছে পৌঁছতেই আধভিক কায়দা করে নিজের বাড়ি অবধি নিয়ে আসে সিয়ারাকে। বাড়ির সামনে আসতেই সিয়ারা একটু অবাক হয়, কারণ একটা কমপ্লেক্স এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। পর মুহূর্তে মনে পরে আধভিক একজন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড মানুষ, একজন প্রোডিউসারের ছেলে। আসার সময় সবটাই বলেছে সে নিজের ব্যাপারে তাই এসব তো স্বাভাবিক।
“চলো।”
“হ্যাঁ?”
“ভিতরে চলো।”
“না, না আজ নয়। অন্য কোনো দিন। আজকে আমাকে যেতে হবে, বাড়িতে মা আর বোন অপেক্ষা করছে। অনেকটা দেরী হয়ে গেছে এমনিতেই। পরবর্তী সময়ে দেখা হলে নিশ্চয়ই আসবো। আপনি গিয়ে স্নান সেরে ফেলুন নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।আসলাম।”
সিয়ারা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে গেলো তাড়াতাড়ি করে স্কুটি নিয়ে। সিয়ারার যাওয়ার দিকে আধভিক এক মনে তাকিয়ে থাকলে কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি গার্ড ওকে জিজ্ঞেস করে,
“স্যার বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে আবার। ভিতরে যাবেন না?”
“হম, কত তাড়াতাড়ি সময়টা চলে গেলো।”
“সে না হয় দেখা করার সময় গেছে কিন্তু কথা বলার সময় তো যায়নি। আপনি না হয় ফোনে কথা বলে নেবেন।”
সিকিউরিটি গার্ড আধভিকের অবস্থা বুঝে মুচকি হেসে পরামর্শ দিলে আধভিকের ভালো লাগলেও মনে পরে যায় সে সিয়ারার নাম্বার নেয়নি। নিজের সব কিচ জানালেও সিয়ারা সম্পর্কে কিছুই জানা হয়নি তাঁর।
“ওহ শিট! এটলিস্ট ফোন নাম্বার টা তো চাওয়া উচিত ছিল আমার? ওকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে সব কিছুই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। শিট! আবারও হয়তো হারিয়ে ফেললাম ওকে আমি।”
আধভিকের কথা শেষ হতেই বৃষ্টি শুরু হয়। ধীরে ধীরে গতি বাড়তে থাকে বৃষ্টির, তাই ভিতরে চলে যায় আধভিক। কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দেন আভাস বাবু। আধভিক কিছু না বলে মনমরা হয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে আভাস বাবু জিজ্ঞেস করেন,
“কি হয়েছে ভিকি? তোমাকে এত মনমরা লাগছে কেন? সোহম যে জানালো তুমি সেই মেয়েকে খুঁজে পেয়েছো। তাহলে?”
“আবার হারিয়ে ফেলেছি ড্যাড।”
“সে কি? আবার হারিয়ে ফেলেছো? কিন্তু কি করে?”
“আমি এতক্ষন ওর সাথে ছিলাম। ও আমাকে আমার বাড়িতে ড্রপ অবধি করে দিয়ে গেলো কিন্তু আমি ওর থেকে না ফোন নাম্বার চেয়েছি না ঠিকানা।”
আধভিকের কথা শুনে আভাস বাবু বিড়বিড় করে বললেন,
“এতোটাই মগ্ন ছিলে মেয়েটির ভাবনায় যে আসল কাজই ভুলে গেছো। হায় হায়, এ কী দশা হলো আমার ছেলের, তাও আবার একটা মেয়ের জন্য? সব চোখের সামনে ঘটছে তাও বিশ্বাস করতে পারছি না।”
“একা একা যখন কথা বলবে ঠিক করেছ তখন আমাকে দাঁড়াতে বললে কেন? আমি ঘরে যাচ্ছি। ভালো লাগছে না কিছু।”
“এই রে, রাগ করছো কেন? শোনো, তুমি ওর সাথে যেখানে দেখা করেছো সেই জায়গাটা মনে আছে তো?”
“হ্যাঁ।”
“পরেরদিন ওই জায়গায় গিয়ে ওর ছবি নিয়ে একটু খোঁজ করে দেখো। আশা করছি পেয়ে যাবে।”
“ইয়াহ! রাইট! একদম ঠিক বলেছো ড্যাড। এটাই করতে হবে। লাভ ইয় ড্যাড, লাভ ইউ সো মাচ!”
আধভিক আভাস বাবুকে জড়িয়ে ধরে ওনার গালে একটা চুমু দিয়ে দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আভাস বাবু নিজের জায়গায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আধভিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ বাদে নিজের হাত নিয়ে গাকের সেই জায়গায় রাখলেন যেখানে আধভিক চুমু দিয়েছে।
“আমার ছেলে তো দেখছি প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। এইজন্যেই বলে, কোনো কিছু এইভাবে অতিরিক্ত আত্ম বিশ্বাস নিয়ে বলতে নেই। খুব বলত, এসব প্রেম ভালোবাসা তে বিশ্বাস করি না। ওসব আমার দ্বারা হবে না। এখন? এখন কি হলো? হঠাৎ করেই প্রেমে লাট্টু হয়ে গেলে তো? কিন্তু এখন এটা বলতে গেলেই বলবে, “ড্যাড, প্লিজ? এইসব প্রেম ভালোবাসা আমি বুঝি না। আমার মেয়েটাকে চাই মানে চাই! আমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওকে আমি আমার পাশে চাই।” উফ! জেদ বলি হারি।”
আভাস বাবু নিজের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে আরেক দফা ভাবলেন,
“যখন জড়িয়ে ধরলো মনে হলো ওর পুরো শরীর ভিজে। তাহলে নির্ঘাত বৃষ্টি তে ভিজেছে। ওহ হ্যাঁ, সোহম তো বললো মেয়েটাকে বৃষ্টি তে ভিজতেই দেখেছে আর ছুটেছে। যে কি না বৃষ্টির কথা উঠলেই নাক সিঁটকাত। কি অবস্থা বাবা, যেগুলো পছন্দ করত না এখন সেগুলোই করছে আমার ছেলে। কি জানি আরও কত কি দেখতে হবে।”
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
“দি, দি, দি, দি!”
“আরে, আরে পরে যাবো তো? কি করছিস টা কি বোন? ছাড় আমায়।”
“দিয়ারা! কি করছিস টা কি? দিদি পরে যাবে তো নাকি? মাথায় বুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি খুশিতে?”
মায়ের ধমক খেয়ে দিয়ারা ছেড়ে দেয় সিয়ারাকে। তারপর জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে দি। ফাইনালি, ফাইনালি আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার রাস্তা খুঁজে পেয়েছি।”
“মানে, কি বলছিস? তোর স্বপ্ন তো মডেল হওয়া বা অভিনয় করা।”
“হ্যাঁ। আর সেটাই হতে চলেছে এবার।”
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না সিয়া। তোর বোনকে বোঝার ক্ষমতা তোরই আছে। কিসব অডিশন-ফডিশনের কথা বলছে বুঝছি না আমি।”
মায়ের এমন বিরক্তি মাখা গলার স্বর শুনে সিয়ারা বুঝলো মায়ের বিষয়টা পছন্দ হয়নি। বোনের দিকে তাকালে ও দেখে মায়ের এমন মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোন মুখ কালো করে ফেলেছে।
“আচ্ছা তুই আমাকে খুলে বল তো বিষয়টা কি? কিসের অডিশন?”
“সিরিয়ালের নতুন মুখের খোঁজ চলছে দি। তুই বলেছিলি না একটা ইন্সটিটিউটে ভর্তি করিয়ে দিবি যেখানে অভিনয় শেখানো হয় এবং তারপর ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ দেওয়া হয়?”
“হ্যাঁ, বলেছিলাম তো।”
“ওসবের কোনো দরকারই পরবে না যদি আমি আগামীকাল অডিশন দেওয়ার পর সিলেক্ট হয়ে যাই। আগামীকাল আমাদের এদিকেই অডিশন নেওয়া হবে কিছু নতুন ছেলে মেয়েদের। সিরিয়ালে সাইড ক্যারেকটার মানে ওই পার্শ্ব চরিত্রের জন্য। এখন তো বেশির ভাগ কনটেন্টে দুটো, তিনটে করে জুটি থাকে। সেসব চরিত্রেও চান্স পেয়ে যেতে পারি।”
“বাহ, এটা তো বেশ ভালো খবর। মা, তুমি আর আপত্তি করো না। এই সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলে কিন্তু পস্তাতে হবে?”
“তুই যা ভালো বুঝিস।”
“ইয়েস! মা রাজী। দি তুই যাবি তো আমার সাথে? প্লিজ দি!”
“আব, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।”
“থ্যাংক ইউ দি!”
দিয়ারা মনের আনন্দে নাচতে নাচতে নিজের ঘরে চলে গেল। ওদের মা এসে সিয়ারাকে বললো,
“তা মা? তুই কবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করবি?”
মায়ের প্রশ্ন শুনে সিয়ারা মলিন হাসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার স্বপ্ন চিরকাল স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে মা। সেটা পূরণ হওয়ার আশা আর আমি করি না আমি। তুমি তো জানো সেটা ভালো ভাবে, এই নিয়ে কথা না বলাই বেকার। এখন আমি চাই আমার বোন জানো নিজের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।”
“আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুই দিয়ার সৎ দিদি। এমন ত্যাগ হয়তো নিজের দিদিও করতে দুবার ভাববে কিন্তু তুই একবারও ভাবিসনি। বোনের পড়াশোনার জন্য নিজের পড়াশোনাটা ছেড়ে দিলি আর স্বপ্নটাও…”
“ওফ মা! তুমি আবার শুরু করলে তো? আচ্ছা তুমি কি কখনও আমাকে বুঝতে দিয়েছো তুমি আমার সৎ মা? বুঝতে দাওনি তো? দুজনকে সমান চোখে দেখেছো। এমন কি বোনের থেকেও আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করো। তাহলে আমি কেন পারবো না? আমাদের সম্পর্কের নামটাই শুধু সৎ আর কিছুই না। এসব কথা ছাড়ো, আমার এবার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।”
“পরে খাবি, আগে যা স্নান করে আয়। বৃষ্টিতে ভিজে এতক্ষন বৃষ্টির জলগুলো শুকোলি। এইবার না ঠাণ্ডা লাগে।”
“ও কিছু হবে না। জানোই তো আমার অভ্যেস আছে। আসছি আমি স্নান সেরে।”
সিয়ারা স্নান করতে চলে যায়। স্নান সেরে, খাওয়া দাওয়া করে নিয়ে নিজের ঘরে জানলার কাছে গিয়ে বসে। বিছানা ঘেঁষেই জানলা সিয়ারার ঘরে। আবারও আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সাথে ঠাণ্ডা ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই সিয়ারার আধভিকের কথা মনে পরে গেলো।
“এই যাহ, ওনার ফোন নাম্বার তো আনা হলো না?”
“কার ফোন নাম্বার আনা হলো না দি?”
“আর বলিস না। আজকে একজনের সাথে দেখা হয়েছিল। ছেলেটা পুরোই পাগল…
সিয়ারা এক এক করে সব কিছু খুলে বললো দিয়ারা কে। সবটা শোনার পর দিয়ারা নেচে উঠে বললো,
“দি ছেলেটা সত্যি পাগল, তোর জন্য পাগল।”
“তুইও শুরু করলি? দ্বিতীয় দেখাতেই একবারে প্রেমে পাগল হয়ে গেলো বল? সব কিছুদিনের ভালোলাগা। কদিন পরেই এভাবে অন্য কাওকে পটাবে। একদমই বিশ্বাস করি না আমি এসব।”
“ঠিক আছে। আমার মন বলছে ছেলেটা ঠিক কোনো না কোনো ভাবে তোর সাথে যোগাযোগ করবে। আর যদি কপালে লেখা থাকে তাহলে দেখবি না চাইতেই যোগাযোগ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় না ছেলেটা অমন হবে বলে।”
“ওরে আমার পাকুনি, যা ঘরে গিয়ে অডিশনের জন্য প্র্যাক্টিস কর।”
সিয়ারা একপ্রকার জোর করে বার করে দেয় বোনকে ঘর থেকে। তারপর নিজে নিজেই প্রথমে আধভিক এবং পরে বোনের কথাগুলো মনে করে লজ্জা পায়। সে ভাবতে না চাইলেও বার বার বেশি করে তাঁর মনে পরে যায় আধভিকের কথাগুলো। বিছানায় গিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ওই কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে সিয়ারা। আর একসময় সেভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
পরেরদিন,
“ড্যাড প্লিজ? আমাকে যেতে দাও।”
“আহ ভিকি! এতো উতলা হচ্ছিস কেন বল তো? এই তো হয়ে যাবে। নেক্সট!”
আভাস বাবু আজ স্বয়ং এসেছেন অডিশনের জন্য। কারণ ওনার সিরিয়ালের জন্যেই পার্শ্ব চরিত্র খোঁজা হচ্ছে বিশেষ করে। উনি চাইছেন নতুন মুখদের সুযোগ দিতে যাঁদের মধ্যে প্রতিভা আছে। তাই সাথে করে নিজের ছেলেকেও নিয়ে এসেছেন। যাকে ডেকেছিলেন তাঁর পারফরম্যান্স হয়ে যাওয়ার পর আধভিক আবার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
“এরমভাবে একজন একজন করে যদি অডিশন চলতে থাকে তাহলে আজকে সারাদিন কেটে যাবে আর আমি বেরোতে পারবো না। তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো যে আজকে আমার বেড়ানোটা কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।”
“আরে, তুই শুধু শুধু বিরক্ত হচ্ছিস। বেশি বাকি নেই আর।”
“রিয়েলি? দ্যান শো মি!”
আধভিক জোর করেই আভাস বাবুর সামনে থেকে ল্যাপটপ টা ঘুরিয়ে নেয়। এতক্ষন আভাস বাবু ল্যাপটপটা নিজের সামনে করে রেখেছিলেন। আধভিক যতবার জানতে চেয়েছে ততবার উনি বলেছেন “বেশি বাকি নেই।” সিসি টিভি ক্যামেরা তে বাইরে ওয়েটিং রুমের ফুটেজ দেখতেই আধভিক কটমট করে তাকালো আভাস বাবুর দিকে। আভাস বাবু আমতা আমতা করতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে।
“আচ্ছা? তো তুমি কি জানো বেশ বলেছিলে এতক্ষণ ধরে? বেশি বাকি নেই?”
“ই..ইয়ে.. এরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।”
“ওহ রিয়েলি? তো এদের মধ্যে কে কে এসেছে কিছুক্ষণ আগ… সিয়ারা?”
আভাস বাবুকে প্রশ্ন করতে করতে আধভিক ল্যাপটপের দিকে চোখ ফেরাতেই ওর চোখ স্থির হয়ে গেলো একজনের উপর। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
“আরে? সত্যি তো? এটা তো ওই মেয়েটা? বাপ রে! ঝড়ের গতি তে চলে গেলো। কি যে পেয়েছে মেয়েটার মধ্যে কে জানে।”
আভাস বাবু বেশ বিরক্ত হয়ে কথাটা বললেন। পরমুহুর্তে আবারও সিসিটিভি ফুটেজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটি নিজের পাশের মেয়েটিকে কিছু বোঝাচ্ছে। একটু ভালো ভেবে পর্যবেক্ষণ করলেন মেয়েটিকে।
“অস্বীকার করতে পারছি না, আমার ছেলের পছন্দ আছে। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দর। বলা যায় অপরূপ সুন্দরী। যেমন গায়ের দুধে আলতা রং তেমন ঘন কালো একছেয়ে লম্বা চুল। চোখগুলো বেশ টানা টানা, নাকটা খুব টিখালো না আবার চ্যাপ্টাও না। মুখের সাথে মানান সই। উচ্চতাও খুব একটা খারাপ না, ৫.৬ তো হবেই।”
আভাস বাবু কিছু একটা ক্যালকুলেট করলেন মনে মনে তারপর মৃদু হেসে বললেন,
“আজ ভিকি বাড়ি আসলে বলবো খোঁজ নিতে। মেয়েটি অভিনয় জানে না কি? জানলে আমার ছেলের জীবনের নায়িকার সাথে সাথে ওর সিনেমার নায়িকাও করে নেবো। আমার ছেলেও তো হিরোর থেকে কম নয়। উঁচু লম্বায় ছয় ফুট, বাদামি গায়ের রং। যাকে বলে, চকলেট স্কিন টোন, আজকাল কার মেয়েরা যা পছন্দ করে। এতদিন হিরোইন পছন্দ হয় না বলে অজুহাত দিয়েছে। এইবার আর পারবে না বরং নিজেই করতে চাইবে। ব্যাপারটা ভালো হবে, রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফে একটাই নায়িকা। হা হা হা!”
[আমি এইভাবে নায়ক নায়িকার চেহারার বর্ণনা দেইনা। প্রথম গল্প দুটোয় দিয়েছিলাম তারপর অতটা দিইনি। এইবার বিষয়টা রঞ্জিত করলাম কারণ এটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। নায়ক, নায়িকা সুন্দর না হলে পরবর্তী প্লটের সাথে গল্প মিলবে না। তাই বলে এটা ভাববেন না যে অসুন্দর হলে কেউ চান্স পায় না ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি আমার গল্পের সুবিধার্থে সৌন্দর্যটা বেছে নিয়েছি, আগামী পর্বগুলি প্রকাশ পেলেই তা বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ।]
“এই দি? আমার না খুব নার্ভাস লাগছে বুঝলি তো?”
“এটা তো স্বাভাবিক বোন। এতো লোক এসেছে অডিশনের জন্য। কিন্তু তুই একদম স্ট্রং থাক, দেখবি ঠিক পারবি।”
দিয়ারা একবার ঝুঁকে সব লোকগুলো দেখে সোজা হয়ে বসলো আর বড়ো নিশ্বাস নিল এবং ছাড়লো। সিয়ারা সেটা দেখে সামান্য হাসলো আর নিজের ঘড়ির দিকে তাকালো। তাকাতেই মনে মনে ভাবলো,
“ইশ, আজকে মনে হয় আর যাওয়া হবে না। অনেকটা দেরী হয়ে যাবে। আচ্ছা আধভিক তো ওখানেই আমাকে দেখেছিলো, ও কি একটু মনে করে ওই জায়গায় আসতে পারবে না? ধুর, এসেই বা কি হবে? আমি তো টাইমে পৌঁছতেই পারবো না। ধুৎ, ভালো লাগছে না।”
সিয়ারার মুখে বিরক্তি প্রকাশ পেতে দেখে দিয়ারা ভ্রু কুঁচকে নিলো।
“দি? তোর কি এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে না? প্রবলেম হচ্ছে কোনো?”
“আরে না না। তেমন কিছু না। আসলে আজকে তো আর এনজিও তে যাওয়া হবে না, বাচ্চাগুলো অপেক্ষায় থাকবে তাই ভাবছিলাম।”
“ওহ হো, তুই জানিয়ে দে ফোন করে।”
সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ফোন বার করলো। মেসেজ করার কথা ভুলে গিয়ে সে আবার আধভিকের চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। সে মনে মনে ভাবছে, “কিছু তো আছে ছেলেটার মধ্যে, যার জন্য প্রথম দেখাতেই, কথা বলাতেই অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমার উপর।” আধভিকের কাছে দ্বিতীয় দেখা হলেও সিয়ারার কাছে সেটা প্রথম দেখা কারণ সেদিন সে ঠিকভাবে দেখেনি আধভিককে। কোনরকম কাটিয়ে এসেছে বিষয়টা।
“সিয়ারা!”
সিয়ারা নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে বসেছিলো। চেনা পরিচিত কণ্ঠ, বলা যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বর কানে আসতেই সিয়ারা চোখ সোজা করে তৎক্ষণাৎ পাশ ফিরে তাকালো। অবাক হয়ে গেলো আধভিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। নিজের অজান্তেই উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।
“আধভিক আপনি? এখানে?”
“হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ! আমি ভাবতেও পারিনি তোমাকে এখানে খুঁজে পাবো। সিরিয়াসলি? আমাকে আর খুঁজতেই হলো না। আমি ভেবেছিলাম গতকাল যেখানে দেখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে খোঁজ করবো তোমার।”
“আমিও…
“দি?”
দিয়ারার ডাকে সিয়ারার হুঁশ ফেরে। নাহলে সে বলেই দিতে যাচ্ছিলো সেও ওখানে আগে আগে গিয়ে অপেক্ষা করতো আধভিকের। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
“আব, দিয়া উনি আধভিক…
“আধভিক রায় চৌধুরী, সন অফ আভাস রায় চৌধুরী।”
“হেই! আমাকে চেনো তুমি? হোয়াট’স ইউর নেম?”
“দিয়ারা সান্যাল। আপনি এখনকার বিখ্যাত প্রোডিউসারের ছেলে হন, আমার যেহেতু অভিনয় নিয়ে ইন্টারেস্ট আছে তাই খবর রেখেছি।”
“গ্রেট! তুমি অডিশন দিতে এসেছো?”
“ইয়াহ!”
“আসো আমার সাথে। সিয়ারা, কাম!”
আধভিক সিয়ারা ও দিয়ারাকে নিয়ে আভাস বাবুর ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। ওনাকে গিয়ে বলে,
“তুমি তোমার সিরিয়ালের জন্য সাইড অ্যাকট্রেস খুঁজছিলে না? নাও খুঁজে দিলাম।”
আভাস বাবু প্রথমে খুশি হলেন এই ভেবে হয়তো আধভিক সিয়ারার কথা বলছে। কিন্তু উনি যে ভুল ভাবছিলেন তা বুঝতে পারলেন যখন আধভিক বললো,
“সিয়ারা, চলো আমার সাথে।”
“এক মিনিট আধভিক। আমি এইভাবে আমার বোনকে সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে দিতে পারিনা। আমার সাথে আপনার পরিচয় আছে বলে ওকে সুযোগ দেওয়া হবে এটা আমি হতে দেবো না।”
“কিন্তু দি…
“না দিয়া। তুই এখানে অডিশন দিতে এসেছিস তো? অডিশন দিয়েই সুযোগ পাওয়ার হলে পাবি নাহলে নয়। নিজের যোগ্যতা দ্বারা সুযোগ অর্জন করার সাফল্যই আসল সাফল্য। স্যার? আপনি যেমন অডিশন নিচ্ছিলেন তেমন নিন। ক্ষমা করবেন আপনার কাজে ডিস্টার্ব করার জন্য।”
এতক্ষণ আভাস বাবু আর আধভিক সিয়ারার কথা শুনছিলেন। ওনারা দুজনেই বুঝলেন সিয়ারা যেমন নিজে লোভী বা স্বার্থপর নয় তেমন নিজের বোনকেও সেই শিক্ষাই দিতে চায়।
“ফাইন। তুমি যেটা চাইছো সেটাই হবে সিয়ারা। কিন্তু অডিশন তো তোমার বোন, আই মিন দিয়ারা দেবে। সো তুমি এখানে থেকে কি করবে? এখনও অনেক দেরী আছে ওর টার্ন আসতে। তুমি আমার সাথে চলো, দরকার আছে আমার।”
“মানে টা কি? আমি এভাবে বোনকে একা ফেলে… বোন আমি একটু আসছি…
সিয়ারাকে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো আধভিক। ঘটনাচক্রে উপস্থিত দুজনেই অবাক। আভাস বাবু সিয়ারার কথা মতো দিয়ারাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললে ওর বেশ রাগ হয় সিয়ারার উপর।
“আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে নিজে চলে গেলো। কি সুন্দর চান্স টা পেয়ে যাচ্ছিলাম তা না, সব জায়গায় মহানগিরি। ধুর, থাকো এখানে এবার ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে।”
অন্যদিকে,
“কি করছেন টা কি? ছাড়ুন আমার হাত.. আধভিক!”
বেশ অনেক্ষণ ধরে সিয়ারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো, ছাড়তে বলছিল হাত তবুও আধভিক কথা শুনছিল না। বাধ্য হয়ে সিয়ারা জোরে আধভিকের নাম ধরে ডাকতেই আধভিকের পা জমে যায়। হাতটা ছেড়ে সিয়ারার দিকে ফেরে সে। চোখ বন্ধ করে নেয়। আস্তে করে বাম হাত পকেটে গুঁজে ডান হাত বুকের বাম পাশে, হৃদয়ের উপর রাখে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই সিয়ারা জোরে একটা শ্বাস নেয়। মনে মনে বলে,
“বাপ রে, এভাবে কে তাকায়? কি মারাত্মক চাহুনি।”
আধভিক ওভাবেই মুচকি হেসে বলে,
“উফ, বুকে এসে লাগলো ডাকটা। এই প্রথম নিজের নামটা শুনে একটা অন্যরকম অনুভূতি হলো।
“আপনার মাথায় সমস্যা আছে জানেন তো?”
“আগে ছিলো না। এখন হয়ে গেছে।”
“ধুর! এইভাবে টেনে কেন নিয়ে আসলেন ওখান থেকে? লোকে দেখলে কি ভাববে?”
“কি আবার ভাববে? কে কি ভাবলো না ভাবলো তার ধার আধভিক রায় চৌধুরী ধারে না। চলো।”
“কোথায় যাবো?”
আধভিক সিয়ারার কাছে চলে এলো। ওর দিকে ঝুঁকে পরে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বললো,
“যেখান থেকে আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে।”
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে