কথা দিলাম পর্ব -১২+১৩

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারা: গাড়ি চালানোর সময় ড্রিংক করতে নেই জানেন না?

সিয়ারা গাড়িতে উঠে বসার পর আধভিক গাড়িতে এসে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর পরই একটা হিপ ফ্ল্যাস্ক একহাতে নিয়ে নেয় আধভিক। গাড়ি চালানোর সাথে সাথে সে ড্রিংকও করছে আবার সিয়ারার সাথে কথাও বলছে। অবশ্য সিয়ারা কোনো কথা বলছে না, সে শুধু সামনে দেখছে আর আধভিককে দেখছে। রাগ হচ্ছে তাঁর। একটা সময় এসে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না সিয়ারা। বাধ্য হয়ে বলেই ফেললো কথাটা।

আধভিক: জানি তো। বাট জানলেই যে মানতে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি? ক্যালিফোর্নিয়াতে তো এর চাইতেও বেশী স্পিডে ড্রাইভ করতাম।

সিয়ারা: মানে? সত্যি আপনার মাথায় সমস্যা আছে জানেন তো? এইভাবে ড্রিংক করে কেউ গাড়ি চালায়? তাও আবার এতো স্পিডে? এখনও কি কম স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছেন নাকি আপনি? প্রাণের ভয় নেই তাই না?

আধভিক: না।

আধভিক তাচ্ছিল্য হেসে কথাটা বললে সিয়ারা রেগে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। একটু সময় নিয়ে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো আধভিকের মুখটা।

সিয়ারা: কেন?

আধভিক: আমার কোনো পিছুটান নেই তাই। আমি মরে গেলে কাওর একটুও যায় আসবে না। আমি মরলাম নাকি বাঁচলাম সেই নিয়ে কাওর কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং মরে গেলেই হয়তো…

সিয়ারা: এইসব কি বলছেন আপনি? আপনার বাবা আপনাকে ভালোবাসেন। আর আপনি বলছেন কাওর যায় আসবে না?”

আধভিক: তুমি কিছুই জানো না সিয়ারা। এই পৃথিবীতে সবাই ভীষণ স্বার্থপর। নিঃস্বার্থ মানুষকে পাশে পাওয়া খুব কঠিন। আমার কেউ নেই, থেকেও নেই।”

সিয়ারা আধভিকের চোখে জল লক্ষ্য করলো। কেন জানো কথাগুলো শুনে ভীষন খারাপ লাগছে ওর, সাথে কৌতূহলও হচ্ছে। এটা জানার জন্য যে, কি এমন কারণে এতটা কষ্টে আছে আধভিক। বাইরে থেকে মানুষকে বা তাদের সম্পর্ক দেখে কোনো কিছু ভেবে নেওয়া ভীষণ ভুল। ভিতর থেকে দৃশ্যটা অনেক সময় একদম অন্যরকম হয়।

সিয়ারা: আপনি আমাকে শেয়ার করতে পারেন।

সিয়ারা নিজের অজান্তেই কথাটা বলে ফেলে আধভিকের দিকে তাকিয়ে। আধভিক ঝট করে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে সিয়ারা একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে এক চিল্টে হাসি খেলে যায় ওর। বলে,

আধভিক: অবশ্যই! তোমার সাথে তো নিজের লাইফ শেয়ার করার কথা ভেবে রেখেছি আমি। যেদিন প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই। সো নো টেনশন, আই উইল বি ইউর অলওয়েস।

কথা শেষ করেই আধভিক সিয়ারাকে চোখ টিপ দেয়। সাথে সাথে সিয়ারা সোজা হয়ে বসে নিজের ঘোর কাটিয়ে। বিড়বিড় করে বলে,

সিয়ারা: বদ্ধ পাগলের পাল্লায় পরেছি। উফ! জীবন ওষ্ঠাগত করে ফেললো কয়েক ঘন্টায়। শুনেছি মেয়েরা বক বক করে কিন্তু এখানে দেখছি পুরোটাই উল্টো।

সিয়ারা আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো আধভিক মলিন হাসলো ওর কথাটা শুনে। খারাপ লাগছে সিয়ারার। সে এভাবে বলতে চায়নি কিন্তু আধভিক কেন ওর কথাটা মানলো না? বরং দুটো কথা শুনিয়ে দিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই ওরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে সিয়ারা হাঁটা শুরু করলে আধভিক গাড়িটা পার্ক করে আসে। তাড়াতাড়ি পার্ক করে এসে সিয়ারা যেদিকে গেছে সেদিকে গেলেই আধভিক দেখতে পায় একটা এনজিও। বাইরেটা দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায় সে। তারপর ফোনটা বার করতে গেলেই কেউ ছোঁ মেরে তার আঙুলের ফাঁক থেকে সিগারেটটা নিয়ে নেয়। আধভিক সামনে তাকাতেই দেখে সিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। ওর কিছু বলার আগেই সিয়ারা বলে ওঠে,

সিয়ারা: গাড়িটা আপনার ছিলো তাই সেখানে আপনি আমার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু এই এনজিও টা আপনার নয় তাই আপনি এখানকার টিচারদের কথা মানতে বাধ্য। এইসব এখানে অ্যালাউ নয়।

সিগারেটটা ফেলে দিয়ে, পা দিয়ে সেটাকে পিষে ফেললো সিয়ারা। তারপর রাগী দৃষ্টিতে আধভিকের দিকে তাকিয়ে এনজিওর ভিতরে চলে গেলো। আধভিক এখনও হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আধভিক: বাপ রেহ! কি রাগ। ভস্ম করে দেবে মনে হলো। থাক, এখানেও আর এসব চলবে না যখন, তখন বাড়িতে নিজের ঘরই একমাত্র এসবের জন্য নিরাপদ স্থান।

আধভিক ভিতরে যেতেই দেখলো সিয়ারাকে কেন্দ্র করে অনেক ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওকে জড়িয়ে ধরে। ওই বাচ্চাগুলোর মধ্যে কয়েকজনকে আধভিক চিনতে পারলো। আগের দিন এরাই ছিলো সিয়ারার বৃষ্টিতে ভেজার সঙ্গী হিসেবে। আধভিককে দেখতেই একজন বাচ্চা বলে উঠলো,

“আরে? এটা সেই দাদাটা না? যে কি না আগের দিন দিদির সাথে কথা বলতে এসেছিলো?”

আধভিক ধীর পায়ে বাচ্চা মেয়েটার কাছে গিয়ে পায়ে ভর করে বসে বললো,

আধভিক: একদম ঠিক বলেছো। আমিই সেই দাদাটা যে তোমাদের দিদির সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। আজকে তোমার দিদিকে এখানে নিয়ে এসেছি। তোমাদের দিদির মন খারাপ করছিলো তোমাদের জন্য, তাই।

“দিদির জন্য আমাদেরও মন খারাপ করছিলো। আমরাও দিদির অপেক্ষা করছিলাম অনেক্ষন ধরে। থ্যাংক ইউ দিদিকে নিয়ে আসার জন্য।”

বাচ্চাটা হেসে আধভিকের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সিয়ারার কাছে চলে যায়। আধভিক সেদিকে তাকিয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে হাসে, আগে এরকম ভালো লাগেনি। বাচ্চাটা খুব মিষ্টি। সব বাচ্চারা এক জায়গায় হলে সিয়ারা ওদের সবাইকে আঁকতে দেয়। তারপর সরে এসে আধভিকের কাছে দাঁড়ালে দেখে আধভিক বাচ্চাদের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে।

সিয়ারা: কি দেখছেন ওভাবে ওদের দিকে?

আধভিক: হম? এটাই যে এরা একসাথে কত ভালো একটা সময় কাটায়। আমি কখনও এমন সময় কাটাতে পারিনি। আমার ছোটবেলাটা হস্টেলে পড়াশোনার মধ্যেই কেটে গেছে।

সিয়ারা: আপনি হস্টেলে থাকতেন? কবে থেকে?

আধভিক: চার বছর বয়স থেকে। কলকাতায় এসেছি দিন পনেরো হবে। জীবনের আঠেরোটা বছর আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে কাটিয়ে ফেলেছি। কলকাতার কিছুই চিনি না, জানি না।

সিয়ারার বেশ অবাক লাগছে বিষয়গুলো শুনে। আধভিককে কেমন জানো আপসেট লাগছে। গাড়িতে ওর বলা কথাগুলো কি খারাপ লেগেছে? তাই হঠাৎ করেই আপসেট হয়ে গেলো নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে? নিজের অতীতের কথা মনে করে এমন আপসেট হয়ে পরেছেন?

আধভিককে সিয়ারা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই হঠাৎ করেই একটা বাচ্চা ছেলে হাতে কাগজ নিয়ে ওদের দিকে ছুটে এসে, ওদের সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। হাতটা উপরে করে কাগজটা দেখিয়ে বললো,

“দিদি এটা আমার ডিজাইন। অনেক কষ্টে করেছি এতদিনে। দেখো না ভালো হয়েছে?”

সিয়ারা ছেলেটির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ভালো ভাবে দেখে বললো,

সিয়ারা: বাহ, আশু! খুব সুন্দর হয়েছে ডিজাইনটা। যাক, এতদিনে তুমি তোমার ডিজাইন কমপ্লিট করতে পারলে। তুমি বলো আগে, তোমার মনের মত হয়েছে তো এবার?

আশু: হ্যাঁ দিদি। এইটা একদম আমার মনে মতো হয়েছে। যেমন ভেবেছিলাম তেমনই।

সিয়ারা: সবাইকে দেখিয়েছো?

আশু: নাহ। এবার দেখাবো, আগে তোমাকে দেখলাম। সবাই বলছিলো না আশু ডিজাইন বানাতে পারে না? এইবার গিয়ে দেখাবো ওদের। হুহ!

আশু দৌঁড়ে চলে গেলো ওর বন্ধুদের কাছে। আশু চলে যেতেই আধভিক সিয়ারাকে প্রশ্ন করলো,

আধভিক: ডিজাইনটা কিন্তু সত্যি খুব ভালো করেছে। ওর বয়সী বাচ্চার পক্ষে এত সুন্দর ডিজাইন কীভাবে সম্ভব?

উত্তরে সিয়া মরা মুচকি হেসে বলে,

সিয়ারা: ও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিলো নিজের ডিজাইনটা পারফেক্ট করার। কিন্তু প্রতিবার কিছু না কিছু ভুল রয়েই যাচ্ছিলো। তাই এইবার আমি একটু ঠিক করে দিয়েছি যেটা ও ধরতে পারেনি। অনেক পরিশ্রমী ও। যতক্ষণ না মনের মত হচ্ছে ডিজাইন ততদিন ও চেষ্টা করেই যাবে। কিন্তু সবাই ওকে নিয়ে মজা করছিলো তাই একটু সাহায্য করে দিলাম।

আধভিক: তুমি? তুমি ওদের ড্রেস ডিজাইন শেখাও?

সিয়ারা: আমি ওদের আঁকা শেখাই এখানে। কিন্তু একদিন আমি নিজে একটা ডিজাইন বানিয়েছিলাম আর সেটা ওরা দেখার পর বায়না করতে শুরু করলো ওরাও শিখবে। তাই আর কি।

আধভিক: আচ্ছা। এবার এটা যদি আশু জানতে পারে যে, তুমি ওকে হেল্প করে দিয়েছো। তখন কি হবে?

সিয়ারা: জানবে তো ও নিশ্চই। ঘরে গিয়ে নিখুঁত ভাবে খুঁটিয়ে দেখবে নিজের করা ডিজাইনটা। তখনই ধরে ফেলবে আর সাথে সেটা মুছে আমি যেমন করে দিয়েছি তেমন করবে। ব্যাস, হয়ে গেলো সম্পুর্ণ নিজের করা ডিজাইন।

আধভিক: তুমি তো দেখছি খুব বুদ্ধিমতী।

সিয়ারা: কই শাখ?

আধভিক: ডেফিনেটলি নট।

আধভিক আর সিয়ারা দুজনেই হেসে ফেলে। বাচ্চারা এরপর সিয়ারাকে ডাকলে সিয়ারা ওদের ড্রয়িং দেখা শুরু করে। সেই ফাঁকে আধভিক গিয়ে আশুকে জিজ্ঞেস করে,

আধভিক: আচ্ছা আশু? তুমি তোমার দিদির করা ডিজাইন আমাকে দেখাতে পারবে?

আশু: তুমি দেখবে? চলো আমার সাথে।

আধভিকের হাত ধরে আশু ওকে নিয়ে যায় ওদের ঘরে যেখানে ওরা থাকে। তারপর একটা ডায়েরির ভাঁজ থেকে অনেকগুলো ডিজাইনের কাগজ বার করে আধবিকের হাতে দিয়ে বলে,

আশু: এইগুলো দিদির ডিজাইন। আমি নিজের কাছে রেখেছি যাতে আমার অসুবিধা হলে সাহায্য নিতে পারি।

আধভিক এক এক করে মন দিয়ে সব ডিজাইন দেখে বেশ বিস্মিত হয়ে পরে। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে আশুকে কাগজগুলো ফেরত দিয়ে বলে,

আধভিক: তুমিও কি ডিজাইনার হতে চাও, তোমার দিদির মত?

আশু: হ্যাঁ। ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাই। কিন্তু দিদি তো ফ্যাশন ডিজাইনার নয়।

আধভিক: নয় তো কি হয়েছে? হয়ে যাবে। আচ্ছা তোমার দিদি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কি পড়াশোনা করেছে?

আশু: না তো। দিদি তো উচ্চ মাধ্যমিক অবধি পড়ার পর আর পড়াশোনা করেনি। দিদির বোনের পড়াশোনার জন্য দিদি কাজে লেগে পরে। দিদির বোন যেসব নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাতে অনেক খরচ তো তাই দিদি আর পড়েনি। কিসব ইনস্টিটিউটে দেবে বলেছিলো দিদির বোনকে, অনেক খরচ।

আধভিক: তোমার দিদিকে বলবে না আমি এসব জানতে চেয়েছি। ওকে?

আশু: ওকে।

আধভিক চলে আসে সিয়ারার কাছে। ভাগ্যিস আশুর বয়সটা একটু বেশি ছিলো ওদের থেকে। তাই ঠিকঠাক খবরটা পেয়ে গেছে।

সিয়ারা: কোথায় চলে গেছিলেন আপনি?

আধভিক: এই তো একটু ঘুরে দেখছিলাম জায়গাটা। কেন? আমাকে মিস করছিলে বুঝি?

আধভিক দুষ্টু হেসে কথাটা বললে সিয়ারার মুখে আবারও বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে।

সিয়ারা: আমি স্যারের সাথে কথা বলে নিয়েছি স্যার বলেছেন আজকে আমাকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে, কোনো অসুবিধা নেই।

আধভিক: ওয়াও! তুমি আমার সাথে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে নিলে? এতটা একসাইটেড? গ্রেট!

সিয়ারা: এই আপনি থামুন তো। সব সময় নিজের খেয়াল থাকেন তাই না? আমি কেন আপনার সাথে যাওয়ার জন্য একসাইটেড হবো?

আধভিক: (মুখ কালো করে) সে কি? তুমি একসাইটেড নও?

সিয়ারা: আজ্ঞে না। আমার বোন আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমাকে নিয়ে চলুন। আমি আমার স্কুটিটা আনলে নিজেই চলে যেতাম।

আধভিক: আমার ড্যাডের সাথে কথা হয়ে গেছে। দিয়ারার অডিশন দেওয়া হয়ে গেছে আর ও ফিরে গেছে বাড়ি।

সিয়ারা: কি? এইজন্য! এইজন্য আমি আপনার সাথে আস্তে চাইছিলাম না। আমার বোনটা একা একা…

আধভিক: আরে তোমার বোন বাচ্চা নয় যে বাড়ি যেতে পারবে না। আর আমাদের অ্যাসিস্টেন্ট সোহম ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছে। এবার তুমি চলো আমার সাথে।

সিয়ারা: আপনার সাথে যাবো মানে? কোথায় যাবো?

আধভিক: গেলেই জানতে পারবে। তুমি কথা দিয়েছিলে নেক্সট টাইম মিট হলে তুমি আমার সাথে যাবে। সো লেটস গো।

আধভিক সিয়ারাকে কিছু বলতে না দিয়েই হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়। সিয়ারা মনে মনে ভাবে,

সিয়ারা: ভারী অদ্ভুত লোক তো? দেখা হওয়ার দুদিনেই কে এমন করে? কেমন একটা অধিকার ফলাতে শুরু করেছে এখন থেকে। আর আমিও বা কি? আটাকাচ্ছি না কেন ওনাকে? কিছুতেই আটকাতে পারছি না ওনাকে। নাকি… আটকাতে চাইছি না?

সিয়ারা কথাটা ভাবতেই ওর শরীর দিয়ে একটা শিহরন বয়ে যায়। ও আধভিকের হাতের দিকে তাকায় যেটা শক্ত করে ওর হাতকে ধরে রেখেছে। সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকায় আর ভাবে, “ছেলেটা সত্যি পাগল হয়ে গেছে।”

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারা: দেখুন মিস্টার আর সি কোলা, আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি গাড়ি থামান আমি নামবো।

আধভিক: ফাস্ট অফ অল তো, তুমি আমার নামের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো আর সেকেন্ডলি তুমি তোমার কথার খেলাফ করতে পারো না।

সিয়ারা: ফাস্ট অফ অল তো আমি আপনার নামের বারোটা বাজিয়ে বেশ করেছি। বারোটা না বাজিয়ে বারো দুগুনে চব্বিশটা বাজানো উচিত ছিলো আর সেকেন্ডলি আমি কি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম?

আধভিক: মানে টা কি? একে তো আমার নকল করলে, আমার নামের বারোটা বাজিয়ে বেশ করেছো বলছো তার উপর অস্বীকার করছো তোমার কথা। এরপরেও কীভাবে আশা করো আমি তোমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেবো মিস সিঙ্গারা?

সিয়ারা: আপনার সাহস তো কম নয় আপনি আমার নাম নিয়ে উল্টো পাল্টা বলছেন। (রেগে)

আধভিক: ত..তো? তুমি আমার নাম নিয়ে উল্টো পাল্টা বললে দোষ নেই আমি বললেই দোষ?

আধভিক একটু ঘাবড়ে গেছিলো ঠিকই সিয়ারার রাগ দেখে কিন্তু পরমুহুর্তে সেটা বুঝতে না দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে কথাটা বলে। এদিকে সিয়ারার মন চাইছে আধভিকের মাথা ফাটিয়ে দিতে। কথা বলতে বলতে, আহা! বলা ভালো, ঝগড়া করতে করতে একটা সময় ওরা দুজন আধভিকের কমপ্লেক্সের সামনে এসে দাঁড়ালো। আধভিক গাড়ি থেকে নেমে সিকিউরিটিকে গাড়িটা পার্ক করতে বলে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পুরো কমপ্লেক্সটা দেখছে আর আঙুল কচলাচ্ছে।

আধভিক: এই এতো সুন্দর কমপ্লেক্সটা কে দেখে তোমার কি এটাকে গুহা মনে হচ্ছে? যেখানে বাঘ ভাল্লুক তোমাকে খাবে বলে অপেক্ষা করছে?

সিয়ারা: ওয়েট..হোয়াট? কি বলতে চাইছেন আপনি?

আধভিক: এতো ভয় পাচ্ছো কেন?

সিয়ারা: আব, আসলে..আমি কখনও এমন বড়ো জায়গায় আসিনি। তাছাড়া ভিতরে আপনার পরিবার আছে, তাঁদেরকে তো আমি চিনিও না। কি পরিচয় যাবো?

আধভিক: ওহ গড! মানে একজনের বাড়িতে যাওয়ার আগে এতো কিছু ভাবতে হয়? এখনই যদি ভয় পেয়ে যাও তাহলে সারাজীবন কাটাবে কীভাবে এইখানে?

সিয়ারা: (অবাক চোখে) মানে?

আধভিক প্রতি উত্তরে মুচকি হেসে সিয়ারার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

আধভিক: কিছুক্ষণ আগে পারমিশন নিইনি তাই জন্য স্যরি। এইবার পারমিশন চাইছি, চলো।

সিয়ারা আধভিকের চোখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে একসময় নিজের হাতটা নিজের অজান্তে আধভিকের হাতের উপর রাখে। আধভিকের সংস্পর্শে আসতেই হুঁশ ফিরে আসে ওর। তৎক্ষণাৎ হাত সরাতে চায় কিন্তু ততক্ষণে আধভিক শক্ত করে ওর হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করেছে। হাঁটা শুরু করে কমপ্লেক্সের ভিতরে গিয়ে লিফটে উঠে যায় ওরা। নিজের ফ্লোরে আসার পর দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। দরজা খোলার আগে মুহুর্তে সিয়ারার দিকে তাকায়। সিয়ারা মাথা নীচু করে ছিলো। “কেউ তাকিয়ে আছে” এমন অনুভূতি হতেই ও আধভিকের দিকে তাকায়। দুজনের নজর একজায়গায় স্থির হলে আধভিক ডান ঠোঁটের কোণে মলিন হাসির সামান্য রেখা টেনে বলে,

আধভিক: আমার পরিবার এই কমপ্লেক্সের ভিতরে নয়, আমার সাথে আছে। আমার পাশে আছে।

সিয়ারা আধভিকের মলিন হাসি প্রশস্ত হতে দেখে। কিছু বলার আগেই দরজা খুলে গেলে আধভিক ওকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। সব কিছু কেমন জানো খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যাচ্ছে। সিয়ারা কোনো কিছু ভাবার অবকাশ পাচ্ছে না, সব কিছু কেমন জানো ওর ধরা ছোঁয়ায় বাইরে মনে হচ্ছে। যা কিছুতেই নিজের নাগালে পাচ্ছে না। আধভিক সোজা সিয়ারাকে নিজের বেডরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে সিয়ারা ভয় পেয়ে যায়।

সিয়ারা: দরজা কেন বন্ধ করলেন?

আধভিক: দরজা বন্ধ করে মানুষ কি করে?

আধভিক সিয়ারার কাছে চলে এলে সিয়ারা এক পা পিছিয়ে গিয়ে বলে,

সিয়ারা: তো এটাই আপনার ইন্টেনশন ছিলো মিস্টার আধভিক রায় চৌধুরী? আপনারা সব প্রোডিউসাররা বুঝি এমনই হন? আমি ভাবতাম যে না, কেউ কেউ হয়তো ভালো হয়। আর যাই হোক আপনি সেই ভালো মানুষদের লিস্টে নেই। আপনি তো সেই লিস্টের মানুষ যারা মেয়েদেরকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে জানে।

আধভিক: সিয়ারা! মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!

সিয়ারা: সত্যি কথা বললে গায়ে তো লাগেই। তাই তো ভাবি, হঠাৎ দুদিনের দেখায় একটা মানুষ এতোটা ডেসপারেট কীভাবে হতে পারে। আপনার মতো বড়োলোকের ছেলেদের আমি খুব ভালো ভাবে জানি। আপনাদের ওই বিদেশি কালচার এখানে চলবে না মিস্টার রায় চৌধুরী। আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম আর আপনি একটা দুশ্চরিত্র লোক বেরালেন। না জানি আমার বোনটা কেমন আছে। ও যদি আপনাদের স্বীকার হয় তাহ…

আধভিক একটা ফুলদানি ভেঙে ফেললে সিয়ারা ঘাবড়ে গিয়ে থেমে যায়। আধভিকের তাকিয়ে ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ করে না। আধভিক নিজের রাগটা যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলে,

আধভিক: তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমার কোনো খারাপ ইন্টেনশন ছিলো না যেমনটা তুমি ভাবছো। আমি তোমাকে এখানে…

সিয়ারা: যেতে দিন আমাকে। (কিছুক্ষণ থেমে) আপনি যখন কোনো খারাপ ইন্টেনশানে আমাকে এখানে আনেননি তাহলে যেতে দিন আমায়!!

সিয়ারা গলা উঁচু করে কথা বললে আধভিকের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। অতিরিক্ত রেগে সে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ঘুষি মারে। সিয়ারা আঁতকে উঠে আটকাতে গিয়েও এগোয় না ভয়ে, রাগে।

আধভিক: আমি তোমাকে এখানে এনেছিলাম তোমাকে কিছু দেখাতে। কেউ যাতে ডিস্টার্ব না করে তাই জন্য আমি দরজা বন্ধ করেছি। এতো কিছু ভাবিইনি আমি যা যা তুমি এতক্ষণ আমাকে বলে গেলে। ঠিকই বলেছো তুমি, দুদিনের পরিচয়ের মানুষকে আমি একটু বেশিই প্রায়োরিটি দিয়ে ফেলেছি। যেটার যোগ্যই সে না। আমারই ভুল, তোমার মত একটা চিপ মেন্টালিটির মেয়েকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। তুমি আজ প্রমাণ করে দিলে সেটা আমার জীবনের দুঃস্বপ্ন, তুমি আমার জীবনের দুঃস্বপ্ন।

আধভিক বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। সিয়ারা নিজের জায়গায় স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ দিয়ে জল গাল গড়িয়ে পরে। বুঝতে পারে সে ভুল করে ফেলেছে, বিশাল বড়ো ভুল। নার্ভাস হয়ে এতো বেশি বলে ফেলেছে যে উল্টোদিকের মানুষটা কে, কেমন কোনো কিছুই সে ভাবেনি।

সিয়ারা নীচে চলে যায় তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল বুঝতে পেরে কিন্তু কাওকে দেখতে পায় না। লিফটে করে নেমে আসতেই দেখে আধভিক নিজের গাড়িতে উঠে পরেছে। ও দৌঁড়ে পৌঁছে যাওয়ার আগেই আধভিক বেরিয়ে যায়।

সিকিউরিটি: ম্যাডাম কি হয়েছে? স্যার এভাবে কেন বেরিয়ে গেলেন? হাত কেটে গেছে দেখলাম।

সিয়ারা: অনেকটা কেটে গেছে তাই না? (চিন্তিত কণ্ঠে)

সিকিউরিটি: হ্যাঁ। অনেক রক্ত পরছিলো। আমি কিছু বলার আগেই বেরিয়ে গেলেন গাড়ি নিয়ে। আপনার সাথে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?

সিয়ারা: হ্যাঁ..মানে ওই একটু…

সিকিউরিটি: স্যারের সাথে সবটা মিটিয়ে নিন ম্যাডাম। স্যার অনেক ভালো। আজ পর্যন্ত ওনার সাথে আমি কোনো মেয়েকে দেখিনি। মেয়ে কি বলছি, কোনো বন্ধু বান্ধব দেখিনি। ভীষণ একা উনি বরাবর। আজকে উনি যখন আপনার হাত ধরলেন তখন বুঝলাম আপনি হয়তো ওনার জীবনে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু। তাই বললাম।

সিয়ারা: আপনি ওনার ব্যাপারে এত কিছু জানলেন কীভাবে? উনি তো দেশে ফিরেছেন পনেরো দিন মতো হবে।

সিকিউরিটি: আমি ওনার সাথে ক্যালিফোর্নিয়াতেই ছিলাম। আসলে ওখানে আমার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। বাঙালি দেখে উনি আমাকে ওনার বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে রাখেন। আমার তো কেউই ছিলো না, একটা দুর্ঘটনায় সবাইকে হারিয়েছি। তাই উনি আসার সময় আমাকেও এখানে নিয়ে এসেছেন সাথে করে।

সিয়ারা এক হাত কোমরে দিয়ে আরেক হাত ঠোঁটে চাঁপা দিয়ে অন্যদিকে ফিরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করে,

সিয়ারা: আপনি বলতে পারবেন উনি কোথায় গেছেন?

সিকিউরিটি: স্যারের রাগ সাংঘাতিক এটা জানি। কিন্তু উনি এইভাবে রেগে যান খুব কম। ওনার একা থাকার সঙ্গী হিসেবে একমাত্র নেশার জিনিসই আছেন বলতে পারেন। হয়তো বারে গেছেন।

সিয়ারা: কিন্তু এই শহরে তো অনেক বার আছে। কীভাবে খুঁজবো ওনাকে আমি? (কাঁদতে কাঁদতে)

সিকিউরিটি: আপনি এভাবে কাঁদবেন না ম্যাডাম। আপনি আমার নাম্বারটা নিয়ে যান। স্যার ফিরে আসলে আমি আপনাকে জানাবো। এই শহরে ওনাকে খোঁজা মুশকিল।

সিয়ারা: কিন্তু…

সিকিউরিটি: আপনি চিন্তা করবেন না আমি ওনাকে খোঁজার ব্যবস্থা করছি। আপনি সাবধানে বাড়ি ফিরে যান।

সিকিউরিটি সিয়ারাকে আশ্বস্ত করলে সিয়ারা ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে কাওর সাথে কথা না বলে শুধু খোঁজ নেয় দিয়ারা বাড়ি ফিরেছে কি না। বাড়ি ফিরেছে শুনে ও নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে। হঠাৎ করেই কি থেকে কি হয়ে গেলো। এই দুদিন আগেই সে একটা সাধারণ মেয়ের মতো জীবন কাটাচ্ছিলো কিন্তু এখন ওর জীবনে হঠাৎ করেই একটা ছেলের প্রবেশ পুরো পরিস্থিতিই ঘুরিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে একসময় ওর চোখ লেগে যায়। পরে যখন চোখ খোলে, ঘড়িতে দেখে রাত দুটো। ধরফর করে উঠে বসে ও।

সিয়ারা: এতো রাত হয়ে গেছে? ভাগ্যিস মাকে বলে দিয়েছিলাম রাতে খাবো না। জানো না ডাকে। কিন্তু আমি বিকেল থেকে এতক্ষণ ধরে ঘুমিয়ে রইলাম কীভাবে?

আধভিকের কথাটা মনে পরতেই সিয়ারা নিজের ফোনটা হাতে নিলো। কিন্তু কই? কোনো ফোন আসেনি। তার মানে এখনও আধভিক ফেরেনি?

সিয়ারা: কেন যে আমি অত বাজে কথা গুলো বলতে গেলাম ওনার কথা না শুনে কে জানে। একটাবার শোনা উচিত ছিল আমার ওর কথা। এখন, এখন কি করবো আমি? আচ্ছা সিকিউরিটিকে কল করি একবার? ওনাদের তো নাইট ডিউটি, জেগে আছেন নিশ্চয়। ফোন না ধরলে না হয় আর করবো না।

সিয়ারা আর না ভেবে ফোন করলো সিকিউরিটিকে। সিকিউরিটির আশাহত কণ্ঠে জানালো আধভিক ফেরেনি। সিয়ারা ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে নিজের মুখ ঢেঁকে বসে রইলো কিছুক্ষণ। অস্থির লাগতে শুরু করলে নিজের ঘরের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় সে।

সিয়ারা: কীভাবে যোগাযোগ করবো আমি ওনার সাথে? আজকে কতবার আমার নাম্বার চাইছিলেন উনি কিন্তু কিছুতেই আমি দিলাম না। সিকিউরিটির কাছ থেকেও নাম্বার নেওয়া হলো না। এক মিনিট, এখন একবার ওনার নাম্বারটা চাই।

সিয়ারা ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ঠিকই কিন্তু আবার ঘুরে তাকালো। ওর মনে হলো ও কিছু একটা দেখলো। একটু ঝুঁকতেই সিয়ারা আঁতকে উঠলো।

সিয়ারা: আ..আধভিক? উনি এখানে..??

সিয়ারা আর কিছু ভাবতে পারে না। ও দেখে আধভিক গাড়ি থেকে নেমে সেই মারাত্মক চাহুনি নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে গাড়িতে ঢেলান দিয়ে। সিয়ারা ঘরে চলে যায়। ওড়নাটা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। দৌঁড়ে আসলেও নীচে নেমে আধভিকের সামনে আসার আগে ওর পা জানো জমে যেতে শুরু করে। আধভিক এখনও একভাবে সিয়ারার দিকেই তাকিয়ে আছে। যায় কারণে সিয়ারা আরও বেশি গুঁটিয়ে যাচ্ছে। ধীর পায়ে আধভিকের সামনে দাঁড়ায় সিয়ারা। নীচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

সিয়ারা: আপনি আমার বাড়ি কীভাবে চিনলেন?

আধভিক: চিন্তা নেই। তোমার ক্ষতি করতে আসিনি।

সিয়ারা: কিন্তু নিজের তো ক্ষতি করেছেন তাই না? হাতটা দেখান।

সিয়ারা নিজের হাত সামনে এগিয়ে দিলে আধভিক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাত এগিয়ে সিয়ারার হাতের উপর রাখে। সিয়ারার চোখটা ছলছল করে ওঠে, সত্যি অনেকটা কেটে গেছে।

সিয়ারা: আপনার গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স নেই?

আধভিক না বোধক মাথা নাড়তেই সিয়ারা বলে,

সিয়ারা: দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি।

আধভিক: (সিয়ারার হাত ধরে বাঁধা দিয়ে?) দুশ্চরিত্র মানুষদের নিয়ে এত না ভাবলেও চলবে। আমি শুধু তোমাকে বলতে এসেছি…

সিয়ারা: আই অ্যাম সরি।

আধভিক সিয়ারার কান্নামাখা গলা শুনে কেমন জানো দমে গেল। সিয়ারার চোখগুলোও জ্বলে ভর্তি, গাল থেকে নিয়ে গলা অবধি ভিজে রয়েছে চোখের জলে। সিয়ারাকে এভাবে দেখে আধভিকের যা একটু নেশা হয়েছিলো সেটাও কেটে যাচ্ছে।

সিয়ারা: আমি না বুঝেই অত কিছু বলে ফেলেছি আপনাকে। আসলে আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম। আপনি দরজা বন্ধ করায় আরো ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই। আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি অনেক সাধারণ ঘরের মেয়ে। আপনার মতো মানুষদের প্রায়োরিটি পাওয়ার যোগ্য নই তাই তো ভেবেছিলাম আপনি আমার ক্ষতি করতে চান। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি আর আপনার সামনে কখনও আসবো না।

আধভিক: আমি থাকলে তো আসবে।

সিয়ারা আধভিকের ভাঙা গলায় স্বর শুনে আধবিকের দিকে তাকায়। আধভিক সাথে সাথে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,

আধভিক: আমার কপালে একা থাকাই লেখা আছে। তাই তো প্রথম কাওকে নিজের জীবনসঙ্গী করতে চাইলাম আর সেও হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে আমিই অযোগ্য। আমিই পারিনা কাওকে ধরে রাখতে।

সিয়ারা: আপনি এতকিছুর পরেও আমার সঙ্গ চাইছেন? (অবাক চোখে)

আধভিক: হ্যাঁ চাইছিই!! (জোর দিয়ে)

সিয়ারা: কিন্তু কেন? কি দেখেছেন আপনি আমার মধ্যে? আমাদের তো ঠিকভাবে পরিচয় পর্যন্ত হয়নি। দুদিনের পরিচয়ে আপনি…

আধভিক: তোমাকে নিজের করে পেতে চাইছি। হ্যাঁ! দুদিনের পরিচয়ে আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করতে চাইছি।

সিয়ারা: এইসব কিছুদিনের অনুভূতি যেটা আপনি বুঝছেন না। আজকে যেই ঘটনাটা ঘটেছে সেটা প্রতিনিয়ত ঘটবে এরপর থেকে যদি আপনি আপনার সঙ্গ চান। আপনি কোথায় আর আমি কোথায়, তার উপর দুজন দুজনকে চিনি পর্যন্ত না। চলে যান আপনি।

সিয়ারা আধভিকের থেকে সরে এসে চলে যেতে নেয়। দু পা এগোতেই আধভিক বলে ওঠে….

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here