‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৬০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
দিয়ারা দ্রুত পায়ে দেবাংশু যেদিকে গেছে সেদিকে চলে যায় একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে। কিছুদূর যেতেই দেখে দেবাংশু বার সাইডে হাতে ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে বসে আছে। দিয়ারা দেখেছে চলে আসার সময় দেবাংশুর মুখের অভিব্যক্তি। চোখ মুখ সহ্য হয়ে লাল হয়ে গিয়েছিলো ওর। চোখটা ছলছল করছিলো। দিয়ারা থাকতে পারেনি ওভাবে দেবাংশুকে দেখার পর, একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে চলে এসেছে।
দিয়ারা দেবাংশুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেবাংশু হাত থেকে গ্লাসটা রেখে দিয়ে মাথা নীচু করেই বসে থাকে।
দিয়ারা: আবার ড্রিংক করছো?
দেবাংশু: …..
দিয়ারা: চলে এলে কেন এভাবে ওখান থেকে?
দেবাংশু: ভালো লাগছিলো না।
দিয়ারা: ভালো না লাগার কারণ?
দেবাংশু: নেই।
দিয়ারা: মিথ্যে বলছো কেন আমায়?
দেবাংশু: মিথ্যে বলার কি আছে? তুই যা, যাঁদের সাথে কথা বলছিলিস গিয়ে কথা বল। আমি ঠিক আছি এখানে।
দিয়ারা: আমি অন্যদের সাথে কথা বলছিলাম সেইজন্য রাগ করেছো তুমি?
দেবাংশু দিয়ারাকে একবার দেখে নিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। দিয়ার সেটা দেখে বললো,
দিয়ারা: কিন্তু আমার তো মনে হয় তুমি সেইজন্য রেগে নেই অংশু। কারণটা অন্য।
দেবাংশু: আবার কি কারণ হতে যাবে? আর, আর কোনো ক..কারণ নেই।
দেবাংশু বার সাইডের দিকে ঘুরে গেলো। দিয়ারা জানে যে সে সত্যি অনুমান করেছে। কারণ দেবাংশু তাঁকে বিশ্বাস করে, এই সামান্য বিষয়ে দেবাংশু তাঁর উপর রাগ করবে না। দেবাংশু, দিয়ারা যেদিকে ছিলো সেদিকে তাকিয়ে ছিল তবে দিয়ারার দিকে তাকিয়ে ছিলো না। দেবাংশুর নজর দিয়ারাকে উপেক্ষা করে পিছন দিকে চলে গেছিলো। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো দেবাংশুর মা! অবশ্য উনি দেবাংশুকে লক্ষ্য করেননি, ব্যস্ত ছিলেন অর্জুনকে নিয়ে। তাঁকে আদর করতে, ভালোবাসতে। দেবাংশুর দিকে চোখ পরতেই দেবাংশু সেখান থেকে সরে আসে।
দিয়ারা: কথা বলবে না আমার সাথে অংশু? এদিকে তাকাও, বলো আমায় কি হয়েছে?
দেবাংশু নিরুত্তর দেখে দিয়ারা চুপ করে যায়। ভাবতে থাকে ওর এখন ঠিক কি করা উচিত। কিছুক্ষণ ভাবার পর দিয়ারার মনে হয় দেবাংশু যখন চায় না বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে তখন না হয় থাক। এখন না হয় দেবাংশু একটু একা থাকুক, সেটাই ভালো হবে হয়তো। ভাবা মাত্রই দিয়ারা চুপচাপ ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু তখনই ওর হাতে টান পরে, চোখটা বন্ধ করে নেয় দিয়ারা। চোখ খুলে দেবাংশুর দিকে ফিরতেই দেবাংশু দিয়ারাকে কাছে টেনে ওকে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা রাখে। বার সাইডটা অন্ধকার থাকায় এখানে মিডিয়া নেই আর লোকজন খুব একটা নেই কারণ ওয়েটাররা ড্রিংক সার্ভ করছে। দিয়ারা অত না ভেবে দেবাংশুর মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে শুরু করে।
দেবাংশু: আমি কি দোষ করেছিলাম দিয়ু? আমাকে কেন উনি ভালোবাসতে পারলেন না? আমি কি এতটাই খারাপ? ছেলে হওয়ার যোগ্য নই আমি? আমাকেই কেন এত অবহেলা করেছেন উনি? দিনের পর দিন খারাপ ব্যবহার কেন করেছিলেন? এমন করার হলে তো জন্মের পরই মেরে ফেলতে পারতেন।
দিয়ারা: (মাথা সোজা করিয়ে, দু গালে হাত রেখে) অংশু! কি আজে বাজে কথা বলছো এসব? কে বলেছে তুমি খারাপ? অযোগ্য? উনি তোমাকে ভালোবাসতে পারেননি এটা ওনার অক্ষমতা। তোমার এতে কোনো দোষ নেই।
দেবাংশু: কি দরকার ছিলো ওনার, আজ আমার চোখের সামনে আসার। সহ্য করতে পারিনা আমি, জাস্ট সহ্য করতে পারি না। ওনাকে দেখলেই আমার ভিতরটা নড়ে যায়।
দিয়ারা: এটা অর্জুনের শো, তাই জন্যেই হয়তো উনি এসেছেন। অংশু, আমরা সবাই সব পাই না কখনও। তুমি যেমন মায়ের ভালোবাসা পাওনি আমিও বাবার ভালোবাসা পাইনি। তফাৎ একটাই তোমার ক্ষেত্রে থেকেও না থাকার সমান ছিলো আর আমার ক্ষেত্রে মানুষটা ছিলো না বেশিদিন। কিছু করার নেই এতে আম…
দিয়ারার কথাগুলো দেবাংশু শুনছিল চুপ করে এমন সময় ওর চোখ সামনের দিকে গেলেই ও উঠে দাঁড়ায়। দেবাংশুকে দাঁড়াতে দেখে ওর চাহুনি অনুযায়ী পিছন ফিরে তাকাতেই দেখেন দেবাংশুর মা দাঁড়িয়ে আছেন। দিয়ারা একবার দেবাংশুর দিকে তাকাচ্ছে একবার ওর মায়ের দিকে। একটু সময় পর দেবাংশুর মা এক পা এগালে দেবাংশু উঠে দাঁড়িয়ে ওনার সামনে এগিয়ে যায়। উনি হেসে দেবাংশুর গালে হাত রাখতে নিলেই দেবাংশু মুখটা পিছনে সরিয়ে নিয়ে বলে,
দেবাংশু: আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আপনি হারিয়েছেন। আমি কখনও কাওর দয়া গ্রহণ করি না এবং বাধ্য হয়ে কেউ আমার কাছে আসুক সেটাও চাই না। যখনকার জিনিস তখন না পেলে আমার চাওয়াটা মরে যায়, থেকে যায় শুধু আফসোস। আপনার থাকা এবং না থাকা দুটোই আমার জীবনে এতদিন প্রভাব ফেলেছিল। অনেক কষ্টে সেটা কাটিয়ে উঠেছি তাই আবারও সেটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না কারণ তাতে বিফল হবেন। দিয়ু! চলে এসো।
দেবাংশু একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই ওর না পিছন থেকে বলে ওঠে,
__এটা বুঝি আমার হবু বউমা?
দেবাংশু: না! ও আমার বাবা, সুধাংশু গাঙ্গুলির হবু বউমা। আপনি ওর কেউ হননা। আমার মা অনেক আগেই মারা গেছেন।
দেবাংশুর হাত সাথে সাথে ধরে দিয়ারা ও’কে আটকানোর চেষ্টা করে।
দিয়ারা: অংশু প্লিজ!
দেবাংশু দিয়ারার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে গিয়ে আবারও থেমে যায়। পিছন না ফিরেই বলে,
দেবাংশু: আপনি সে, যাঁর জন্য আমি ও’কে কষ্ট দিয়েছি। দূরে থাকবেন ওর থেকে।
দেবাংশু দিয়ারাকে টেনে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু দিয়ারা আটকে দেয়। দেবাংশু দিয়ারার দিকে তাকালে দিয়ারা বলে ওঠে,
দিয়ারা: তুমি যাও আমি আসছি। যাও! (জোর দিয়ে)
দেবাংশু দিয়ারার দিকে তাকিয়ে একবার পিছন ফিরে তাকায় আর চলে যায় ওখান থেকে। দেবাংশুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে দিয়ারা পিছনে ফিরতেই দেবাংশুর মা ওর মুখোমুখি হয়।
__তুমি?
দিয়ারা: দিয়ারা সান্যাল।
__আজকে তো তুমিই শোজ টপার ছিলে তাই না?
দিয়ারা: হ্যাঁ, আমি পেশায় একজন মডেল।
দেবাংশুর মা দেবাংশুর শেষ কথাগুলোর মানে বুঝতে পারলেন দিয়ারার উত্তরে। একটু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
__আজ যখন অর্জুন আমাকে অবহেলা করে, মা বলে মানেই না তখন আমি বুঝতে পারি দেবের সাথে আমি কতটা খারাপ ব্যবহার করেছি আর ও কতটা কষ্ট পেয়েছে।
দিয়ারা: (তাচ্ছিল্য হেসে) তাই জন্যেই ও হয়তো বললো ও কাওর দয়া গ্রহণ করে না এবং বাধ্য হয়ে কেউ ওর কাছে আসুক সেটা চায় না। আপনার ছেলে আপনাকে মানছে না দেখে বাধ্য হয়ে আপনি এসেছেন ওর কাছে যদি ও আপনাকে মেনে নেয় তাই তো? আপনি তো জানেন ও কতটা ভালোবাসতো আপনাকে, কতটা চাইতো আপনার ভালোবাসা। তাই ভেবেছেন এই সুযোগে দয়াও করে দেবেন আবার অন্য ছেলের চোখে ভালোও সাজতে পারবেন।
দিয়ারার কথাগুলো শুনে দেবাংশুর না চুপ করে রইলো। মন থেকে একটা ধিক্কার বেরিয়ে এলো দিয়ারার। সেটা প্রকাশ করে দিয়ারা বললো,
দিয়ারা: ছিহ! আমার ভাবতেই অবাক লাগে আপনি একজন মেয়ে সব থেকে বড়ো বিষয় একজন মা! কীভাবে? কীভাবে এতটা স্বার্থপর হতে পারলেন আপনি? জানেন? কতটা প্রভাবিত করেছিলো আপনার ব্যবহার ওর জীবনকে? প্রথম থেকে নিয়ে কিছুদিন আগে অবধি ও মেয়েদের বিশ্বাস করত না। বাইরে গিয়ে নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছিলো, ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। সেসময় ভিকি দা ও’কে সামলেছে আর কিছুদিন আগে আমি ওর মন থেকে ওর অতীত থেকে এগিয়ে আসতে সাহায্য করেছি। নাহলে আজও ছেলেটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যেত। একটা কথাই বলবো, আপনি আপনার পাপের শাস্তি এই জন্মেই পাবেন। তাই দেবাংশুর সাথে যা করেছেন তার পুনরাবৃত্তি করবেন না জানো। আসছি।
দিয়ারা দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে গেলো যেদিকে দেবাংশু গেছে। দেবাংশুর মা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে সরে এলেন।
অন্যদিকে,
সিয়ারা ও আধভিক দুজনে কথা বলছিলো এমন সময় একজন প্রোডিউসার এসে ওদের সামনে দাঁড়ালে আধভিক হেসে ওনার সাথে হ্যান্ডশেক করে।
আধভিক: কেমন আছেন মিস্টার বাজাজ?
মিস্টার বাজাজ আধভিকের অভিবাদনে সাড়া দিয়ে হিন্দির টানে বাংলা ভাষায় বললেন,
মিস্টার বাজাজ: বহাত খুব! আমি আজকে আপনার সাথে একটা কোথা বলতে এসেছি।
আধভিক: অবশ্যই। তার আগে আমি আপনার সাথে আমার উড বি ওয়াইফকে ইন্ট্রোডিউস করাতে চাই। সিয়ারা, সিয়ারা সান্যাল!
সিয়ারা: হ্যালো মিস্টার বাজাজ। (হাসিমুখে)
মিস্টার বাজাজ: হ্যালো বিউটিফুল! আজ আমি আপনার জন্যেই কথা বলতে এসেছি। আধভিক, আমি চাই তোমার উড বি আমার সাথে একটা কাজ করুক।
আধভিক: কিন্তু ও তো অভিনয়ে..
মিস্টার বাজাজ: আমি জানি, আমি জানি। উনি অভিনয় করতে পছন্দ করেন না কিন্তু একটা অ্যাডভারটাইজমেন্ট তো করতেই পারেন তাই না? আমি শুনেছি উনি সিরিয়ালে ডেবিউ করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কিছু কারণে কাস্টিং চেঞ্জ হয়েছে। আজকে ওনাকে রাম্প ওয়াক করতে দেখেছি আমি, কোনো মডেলের থেকে কম মনে হয়নি আমার। তাই আমি চাই উনি আমার জুয়েলারি কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করুন।
আধভিক হেসে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে সিয়ারাও ওর দিকে তাকিয়েছে। আধভিক সিয়ারাকে আশ্বস্ত করে বলে,
আধভিক: দেখুন এই প্রপোজালটা আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে। আমার কোনো অসুবিধা বা অমত নেই। কিন্তু সিয়ু কি চাইছে সেটা জানাটা দরকার। ও নাহয় একটু সময় নিক, আমি আগামীকালের মধ্যে আপনাকে জানাবো।
মিস্টার বাজাজ: একদাম, একদাম! নো প্রবলেম। আজকে তাহলে আমি আসি? (হাসিমুখে)
আধভিক: সিওর! (হাসিমুখে)
মিস্টার বাজাজ চলে গেলে আধভিক সিয়ারার দিকে তাকাতেই সিয়ারা বলে,
সিয়ারা: আমার কোনো অসুবিধা নেই যদি সুধাংশু আংকেল অনুমতি দেয় তো।
আধভিক: হম, তুমি একবার স্যারের সাথে কথা বলে নাও। তাছাড়া আমাদের সম্পর্কের বিষয়েও ওনাকে তেমন ভাবে কিছু জানানো হয়নি। আজকে প্রেসের সামনে যখন বলেছি উনি জেনে যাবে নিশ্চয়। তখন তোমার সাথে কথা বলতে চাইবেন, খুব ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টা ডিল করো কিন্তু!
সিয়ারা: (গালে হাত দিয়ে) বাহবা! কে কাকে কি বিষয়ে জ্ঞান দিচ্ছে দেখো! (হেসে ফেলে) যাঁর কি না নিজেরই মাথা ঠাণ্ডা রাখার প্রয়োজন আর ভেবে চিন্তে কাজ করা দরকার। (মুখে হাত দিয়ে হেসে)
আধভিক: সব সময় মজা করো তুমি আমাকে নিয়ে!! (গাল ফুলিয়ে)
সিয়ারা জোরে হেসে ফেললো। আধভিক একটা নিশ্বাস ফেলে গটগট করে বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে গেলো। সিয়ারা পিছু পিছু গেলো আধভিকের হাসি থামিয়ে।
এদিকে,
দিয়ারা দেবাংশুকে খুঁজতে এসে দেখে দেবাংশুর সামনে একটা অন্য মডেল দাঁড়িয়ে আছে আর সে দেবাংশুকে কিছু বলছে হেসে হেসে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি দেবাংশুর হাতের উপর হাত রাখলে দেবাংশু ওর দিকে তাকায়। এতক্ষণ সে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। দেবাংশু তাকাতেই মেয়েটা হেসে চলে যায় ওখান থেকে।
দিয়ারা: এই রোহিণী আবার কি কথা বলছিলো অংশুর সাথে? আর অংশুও শুনছিল।
দিয়ারা বিড়বিড় করে কথাটা বলে দেবাংশুর সামনে দাঁড়ালে দেবাংশু মাথা উঠিয়ে দিয়ারাকে একবার দেখে নেয় তারপর আবার ফোনে মনোযোগ দেয়।
দিয়ারা: কি বলছিলো মেয়েটা তোমাকে?
দেবাংশু: ….
দিয়ারা: কি হলো? বলো কি বলছিলো তোমাকে?
দেবাংশুকে চুপ থাকতে দেখে দিয়ারা দেবাংশুর বাহুতে চাপর মেরে জোরে ওর নাম ধরে ডাকলো।
দিয়ারা: অংশু!! কিছু জিজ্ঞেস করছি তো আমি?? তুমি পাত্তা পর্যন্ত দিচ্ছ না?? (রেগে)
দেবাংশু: বল। ওহ এক মিনিট!
দেবাংশু কান থেকে এয়ারপডসটা খুলে ফেললো তারপর দিয়ারাকে জিজ্ঞেস করলো,
দেবাংশু: কি হয়েছে? রেগে আছিস কেন?
দিয়ারা: (অবাক হয়ে) তুমি, তুমি গান শুনছিলে?
দেবাংশু: হ্যাঁ! কেন?
দিয়ারা: ওই মেয়েটা তোমাকে কি বলছিলো?
দেবাংশু: (মেয়েটা যেদিকে গেছে সেদিকে তাকিয়ে) কি জানি! হবে কিছু একটা। আমি শুনিনি। ও জিজ্ঞেস করেছিলো আমি শুনছি কি না তো তখন আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি। তারপর কথা বলা শুরু করতেই গান চালিয়ে দিয়েছিলাম। কি বা বলবে, দেখা করার কথা ছাড়া? নট ইন্ট্রেসটড! ভাগ্যিস নাম্বার চায়নি, চাইলেই ধরা পরে যেতাম। মনে হয় নাম্বার আছে ওর কাছে।
দিয়ারা: হ্যাঁ। থাকারই কথা।
দেবাংশু: কীভাবে?
দিয়ারা: আগে তুমি নিজের নাম্বার সব মেয়েদের বিলিয়ে বেড়াতে তাই জন্যে। খুব ফেমাস তো তুমি! (দাঁতে দাঁত চেপে)
দেবাংশু: ধুর, কি বলছিস এসব? আমি কাওকে নাম্বার দিইনি আজ অবধি। আই মিন কোনো মেয়েকে দিইনি খুব দরকার না হলে বা পরিচিত না হলে। কোথা থেকে জুটিয়ে নেয় কে জানে? আর তুই আমাকে এভাবে সবসময় টিজ কেন করিস? (চোখ সরু করে)
দিয়ারা: বেশ করি! একশো বার করবো, হাজার বার কর… এই! দূরে যাও। কাছে আসছ…
দেবাংশু: বল, বল কি বলছিলিস?
দিয়ারা পিছিয়ে গেলে দেবাংশু খপ করে ওর হাতটা ধরে নেয় আর টেনে নিয়ে হলের বাইরে চলে যায়।
কয়েকদিন পরে,
আজকে সিয়ারা মিস্টার বাজাজের অ্যাড শুট করার জন্য সেটে এসে উপস্থিত হয়েছে। আধভিকও সঙ্গে এসেছে সিয়ারার। শুট ব্রেকে মিস্টার বাজাজ আধভিকের সাথে কথা বলতে এলে আধভিকও কথা বলতে থাকে। কথা বলার মাঝে সিয়ারার দিকে তাকাচ্ছিলো সে বারবার। হঠাৎ করেই আধভিক একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে আর সাথে সাথে মিস্টার বাজাজকে জিজ্ঞেস করে,
আধভিক: মিস্টার বাজাজ, ওই লোকটা কি আপনার সেটের লোক? এতক্ষন তো ওনাকে দেখিনি?
মিস্টার বাজাজ: না, এনাকে তো আমি চিনি না। ইনি এখানে কি…
মিস্টার বাজাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই আধভিক সিয়ারার কাছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মুহুর্তের মধ্যেই সিয়ারা চিৎকার করে উঠলো…
“অ্যাসিডড!!”
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৬১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
আধভিক: সি..সিয়ু!
সিয়ারা: (কাঁদতে কাঁদতে) আভি!!
আধভিক: ঠিক, ঠিক আছো তুমি?
সিয়ারা: শাট আপ আভি! তোমার হাতে অ্যাসিড লেগেছে, আমার কিচ্ছু হয়নি। খুব জ্বলছে তাই না?
সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে আধভিককে তুলে দাঁড় করায় আর ও’কে টেনে নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে যাতে জল দিতে পারে।
কিছুক্ষণ আগে,
মিস্টার বাজাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই আধভিক সিয়ারার কাছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মুহুর্তের মধ্যেই সিয়ারা চিৎকার করে উঠলো…
“অ্যাসিডড!!”
আধভিক ব্যক্তিটির হাতে একটা কাঁচের বোতল দেখে কিছু আন্দাজ করেই ছুটে যায় সিয়ারার কাছে। সিয়ারাকে টেনে নিয়ে পরে যেতেই সিয়ারাকে গার্ড করে ফেলে নিজের শরীর দিয়ে পুরোপুরি। ওদের পাশে কাঁচের বোতলটা পরে ভেঙে যায়। ছুঁড়ে দেওয়ার ফলে কিছুটা অ্যাসিড আধভিকের হাতে লাগে আর কিছুটা ছিটকে ওর পিঠে আসে। সিয়ারা বিষয়টা বুঝতে পেরেই চিৎকার দেয় “অ্যাসিড” বলে।
বর্তমানে, ব্যক্তিটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আধভিককে নিয়ে সিয়ারা সাথে সাথে হসপিটালের দিকে রওনা হয়েছে। হসপিটালে পৌঁছে আধভিককে ট্রিটমেন্ট দেওয়া শুরু হলে সিয়ারা ফোন করে একে একে সবাইকে জানায় বিষয়টা। বেশ কিছুটা সময় পর ডক্টর পারমিশন দেয় আধভিককে দেখতে যাওয়ার। সিয়ারা কেবিনে গিয়ে দেখে আধভিকের হাতে যেখানে অ্যাসিড লেগেছে সেই জায়গাটা ব্যান্ডেজ করা। আধভিক পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে বসে আছে আধশোয়া হয়ে। সিয়ারা পাশে গিয়ে বসতেই আধভিক মাথা সোজা করে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
আধভিক: তোমার কোথাও লাগেনি তো? তখন ঠিকভাবে দেখতে…
সিয়ারা: কি দরকার ছিলো ওভাবে আসার?
আধভিক: (হেসে) তো কি করতাম? সব দেখেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম? আমার জায়গায় তুমি থাকলে দাঁড়িয়ে থাকতে বুঝি?
সিয়ারা: (ব্যান্ডেজের উপর হাত রেখে) খুব জ্বলছে তাই না?
আধভিক নিজের ব্যান্ডেজের উপর জলের ফোঁটা দেখতে পেয়ে বাম হাত দিয়ে সিয়ারার মুখটা উপরে তুলে চোখের জলটা মুছিয়ে দেয়।
আধভিক: তখন জ্বলে যাচ্ছিলো, এখন ঠিক আছি।
সিয়ারা: পিঠে..??
আধভিক: ওটা…
__ভিকি!
আধভিক কথার মাঝেই নিজের বাবার ডাক শুনতে পেল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো আভাস বাবু দাঁড়িয়ে আছেন। আভাস বাবু ভিতরে আসার পর পরই দেবাংশু আর দিয়ারা ঢুকে এলো। সিয়ারা উঠে সাইডে দাঁড়ালে আভাস বাবু আধভিকের কাছে চলে যান। দিয়ারা দিদির পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
দিয়ারা: দি, কীভাবে এসব হলো? ভিকিদা, কেমন আছো এখন?
আভাস বাবু: কোথায় কোথায় লেগেছে তোমার? দেখি, দেখাও আমাকে। (আধভিকের মুখে, দু কাঁধে হাত রেখে উত্তেজিত হয়ে)
আধভিক: ড্যাড শান্ত হও, আমি ঠিক আছি। বেশি কিছু হয়নি আমার।
দেবাংশু: কিন্তু এটা হলো কীভাবে? তোকে কেউ কেন অ্যাসিড অ্যাটাক করবে? (চিন্তিত হয়ে)
আধভিক সিয়ারার দিকে তাকাতেই সিয়ারাও আধভিকের দিকে তাকালো। সিয়ারা মাথা নীচু করে নিলে আধভিক দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে বললো,
আধভিক: অ্যাটাকটা আমার উপর না সিয়ুর উপর করার প্ল্যান ছিলো। আমি সাকসেসফুল হতে দিইনি।
দিয়ারা: (আঁতকে উঠে) কি?
দেবাংশু: কি বলছিস টা কি? সিয়ার উপর অ্যাসিড অ্যাটাক? (অবাক হয়ে)
আধভিক: হম।
আধভিক ঘটনা খুলে বললে সবাই চিন্তিত হয়ে পরে। সেই মুহুর্তে ডক্টর ঘরে এসে উপস্থিত হন। আধভিককে জিজ্ঞেস করেন,
ডক্টর: এখন কেমন লাগছে? এখনও জ্বলছে?
আধভিক: নাহ, কমে গেছে।
ডক্টর: ওষুধের কারণে এখন কম আছে। আবার শুরু হলে তখন একটু সহ্য করতে হবে। হাতে যেই জায়গাটা পুড়েছে সেই জায়গাটাই বেশি জ্বলবে। পিঠে অতটাও ক্ষত হয়নি হাফ কোর্ট থাকায়। ত্বকটা হালকা পুড়েছে, ওটা সেরে যাবে তাড়াতাড়ি। তবে হাতের ক্ষত সারলেও দাগটা এমনই থেকে যাবে কারণ এটা সরাসরি ত্বকে সৃষ্টি হয়েছে। ব্লেজার থাকলে হয়তো একটু রক্ষে পাওয়া যেতো।
আভাস বাবু: তোমার ব্লেজার খুলে রাখার স্বভাবটা গেলো না। (রেগে)
আধভিক: (হতবাক হয়ে) এটাও আমার দোষ? আমি কি করে জানবো এমন কিছু হতে পারে?
আভাস বাবু: চুপ করো! নিজের প্রতি তোমার কোনো খেয়াল নেই।
আধভিক আভাস বাবুর ধমক খেয়ে চুপ করে মাথা নীচু করে নেয় গাল ফুলিয়ে ফলে সবাই হালকা হাসে। ডক্টরের সাথে আভাস বাবু কথা বলে নেন বাইরে গিয়ে। একটা দিন আধভিককে অবজারভেশনে রেখে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়।
দুই মাস পর,
আধভিকের ক্ষত এখন প্রায় সেরে গেছে। কোনরকম গাফিলতি সিয়ারা করেনি আধভিকের যত্ন নিতে। প্রত্যেকদিন সময় করে ওষুধ খাওয়া, মলম লাগানো সবকিছুই সিয়ারা করেছে যতদিন আধভিক বাড়িতে রেস্টে ছিলো। এর ফলে ওদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে এবং সুধাংশু বাবুও সবটাই জেনে গেছেন। আধভিক অবশ্য বেশ মজাই করেছে এই দুই মাস কারণ ও’কে সিয়ারার কাছে যেতে হতো না। সিয়ারা নিজেই ওর কাছাকাছি থাকতো সবসময় সেটা বাড়িতে হোক বা অফিসে। পনেরো দিনের বেশি রেস্ট আধভিক নেয়নি, অফিসে জয়েন করে নিয়েছে। সিয়ারা তাই সবসময় আরো বেশি করে আধভিকের সাথে সাথে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্যাশন কম্পিটিশন।
সুধাংশু বাবু: বেড়াচ্ছো সিয়া মা?
সিয়ারা: হ্যাঁ আংকেল। কেন কিছু বলবে?
সুধাংশু বাবু: হ্যাঁ। আসলে অনেকদিন ধরেই বলতে চাইছিলাম কিন্তু ভিকির শরীরটা খারাপ থাকায় তুমি ব্যস্ত ছিলে। আর বলে ওঠা হয়নি।
সিয়ারা: তুমি বলতে পারতে। আমি মোটেই এতটা ব্যস্ত ছিলাম না যে তোমার কথা শুনতে পারবো না। বলো কি বলবে। তোমার শরীর ঠিক আছে তো? (চিন্তিত হয়ে)
সুধাংশু বাবু: হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক আছে। আমি, আমি দুই মাস আগে হওয়া ফ্যাশন শোয়ের দিন জানতে পারলাম যে, তোমার আর ভিকির সম্পর্ক আছে। ভিকির সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো দুই বছর আগে।
সিয়ারা মাথা নীচু করে নেয় সুধাংশু বাবুর কথা শুনে। তা দেখে সুধাংশু বাবু হেসে সিয়ারার মাথায় হাত রেখে বলেন,
সুধাংশু বাবু: ভয় পাচ্ছো কেন? ভয় পাওয়ার মতো কোনো কাজ তো তুমি করনি। আমিও কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম প্রথম থেকে তোমার আর ভিকির একে অপরের প্রতি ব্যবহার দেখে। ভেবেছিলাম তোমাকে নিজের ঘরের বউ করবো কিন্তু সেটা হয়তো কপালে লেখা ছিলো না। (তাচ্ছিল্য হেসে) যাই হোক, আমার অমত নেই তোমাদের সম্পর্কে। সেই ছোটো থেকে ভিকিকে চিনি আমি। নিজের ছেলের থেকে কোনো অংশে কম মনে করিনি কখনও। খুব ভালো থাকবে তুমি ওর সাথে।
সিয়ারা: আংকেল দেব…
সুধাংশু বাবু: আমি জানি, তোমরা দুজন শুধুই একে অপরের বন্ধু হও। আচ্ছা যাও, তুমি তো বেড়াচ্ছিলে। আর ভিকিকে বলো আমি যাবো ওর সাথে দেখা করতে।
সিয়ারা আর কথা না বাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে হেসে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার পর পরই ওর মুখ থেকে হাসিটা মুছে গিয়ে চিন্তার ছাঁপ ফুটে ওঠে। একবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সিয়ারা।
অফিসে,
আধভিক একবার করে ফাইলের দিকে তাকাচ্ছে একবার করে দরজার দিকে। অধৈর্য্য হয়ে ফাইল রেখে নিজের চেয়ারে বসে ল্যাপটপটা নিজের সামনে টেনে নেয়। সেক্ষেত্রেও ল্যাপটপ নামেই খোলা রয়েছে, আধভিকের চোখ দরজার দিকে।
আভাস বাবু: (একটু কাশি দিয়ে) এতো অধৈর্য্য হয়ে পরো না। তোমার প্রিয়তমা এলো বলে।
আধভিক চমকে উঠে সোফায় ম্যাগাজিন পড়তে বসে থাকা নিজের বাবার দিকে তাকালো। আমতা আমতা করে বললো,
আধভিক: ইয়ে, কি কি বলছো? আমি কেন অধৈর্য্য হব…
সেই মুহূর্তেই সিয়ারা কেবিনে ঢুকলো আর আধভিক উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আধভিক: কোথায় ছিলে? এতো দেরী হলো কেন তোমার?
আভাস বাবু হেসে ফেললেন আধভিকের প্রতিক্রিয়া দেখে। তারপর চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন সিয়ারার দিকে একবার হাসিমুখে তাকিয়ে।
সিয়ারা: আংকেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরী হয়ে গেছিলো তার উপর অনেক ট্রাফিক ছিলো আজকে। কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো?
সিয়ারা আধভিকের কাছে এগিয়ে গেলে আধভিক সিয়ারাকে আলতো করে টেনে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে। ওর মাথাটা নিজের হৃদয়ের উপর চেপে ধরে ধীরে ধীরে বলে,
আধভিক: চিন্তা হচ্ছিলো খুব।
সিয়ারা আধভিকের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ শুনে বুঝতে পারলো সে কতটা চিন্তিত ছিলো। সিয়ারা হালকা হেসে শক্ত করে আধভিককে জড়িয়ে ধরে। অ্যাসিড অ্যাটাকের পর থেকেই আধভিকের চিন্তা বেড়েছে।
সিয়ারা: ঠিক আছি আমি আভি। তুমি চিন্তা করো না।
আধভিক সিয়ারাকে সোজা করে ওর কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই দরজায় কেউ নক করলো। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে সরে এসে বললো,
সিয়ারা: কাম ইন!!
দিয়ারা হুড়মুড় করে ঢুকে সিয়ারাকে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
দিয়ারা: দি, কাম উইথ মি ফাস্ট!
সিয়ারা দিয়ারার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করতেই দিয়ারা চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো।
সিয়ারা: আভি, আমি আসছি। একটা দরকারি কাজ আছে। তুমি সাবধানে থাকবে ঠিক আছে?
আধভিক: কোথায় যাচ্ছো? আমাকে বলা…
সিয়ারা: এসে বলবো সবটা। এখন আসছি। টাটা, লাভ ইউ!
সিয়ারা দিয়ারাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই আধভিক বিড়বিড় করে উঠলো,
আধভিক: যখনই বোনকে পায় তখনই আমায় ভুলে যায়। ধুর! ভালো লাগে না।
চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো আধভিক। কিন্তু মুহুর্তেই ওর ঠোঁটে ফুটে উঠলো বাঁকা হাসি।
হসপিটাল,
সিয়ারা: মা!
সিয়ারা আর দিয়ারা, দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের মায়ের সামনে। দিয়ারা সকালেই জানতে পারে ওদের মা সাড়া দিয়েছে। সিয়ারা প্রথম থেকেই সময় করে রোজ মায়ের কাছে আসতো। সিয়ারা আসার পর থেকেই উনি ওষুধে সাড়া দিতে শুরু করেন। এক মাস আগেই যখন সিয়ারা আধভিককে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারছিলো না তখনই দিয়ারা জানায় ওনার হাতের আঙুল, পায়ের আঙুল নড়ছে। সিয়ারা জানিয়ে দেয় সে আর যাবে না দেখা করতে, ওনার জন্য জানো স্পেশাল গার্ড রাখা হয়। সিয়ারার মনে হয়েছিলো ওর মা হয়তো ও’কে কিছু বলতে চায়। সিয়ারা আবার চলে গেছে ভেবে হয়তো উনি আরো বেশি করে চেষ্টা করছেন ফিরে আসার। সিয়ারা ওর মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললো,
সিয়ারা: মা! আমি এসেছি। দেখো আমার দিকে।
দিয়ারা: দি, নার্স আমাকে বললো মা চোখ খোলার কিছুক্ষণ পরেই তোর নাম ধরে ডেকেছে।
সিয়ারা: মা, তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও? আমি এসেছি দেখো। বলো আমাকে কি বলবে।
সিয়ারার মা বীণা দেবী চোখ খুললেন। দিয়ারা হেসে বীণা দেবীর পাশে বসে বললো,
দিয়ারা: মা! তুমি সুস্থ হয়ে গেছো।
বীণা দেবী প্রথমে সিয়ারার গালে হাত রাখলেন তারপর দিয়ারার গালে। সিয়ারা একটু জল নিয়ে খাইয়ে দিলেন ওনাকে। হেসে বীণা দেবী বললেন,
বীণা দেবী: অনেক…অনেক অন্যায় করেছি…তোর সাথে।
সিয়ারা: আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে করনি মা। তোমাকে নিশ্চয় এমন করতে কেউ বাধ্য করেছে। এটা আমার ধীর বিশ্বাস। আমার মা কখনও আমাকে কষ্ট দিতে পারে না।
বীণা দেবী: হ্যাঁ! আমি চাইনি তোকে আধ..আধভিকের থেকে আলাদা করতে। কিন্তু সে…তোদের বিয়ের রাতে…আমার কাছে আসে। আমাকে…আমাকে বলে জানো আমি তোকে…বাধ্য করি এই বিয়েটা না করতে…চলে যেতে এখান থেকে। তোর বদলে দিয়াকে বিয়েতে বসাতে নাহলে…
দিয়ারা: আস্তে মা, ধীরে সুস্থে বলো তুমি। তাড়াহুড়ো করো না।
বীণা দেবী: যতক্ষণ না বলতে পারছি আমার…আমার যে শান্তি নেই।
সিয়ারা: আচ্ছা, বলো। শান্ত হয়ে বলো তুমি।
বীণা দেবী: আমাকে ভয় দেখিয়েছিল…যে তোকে আর দিয়াকে মেরে ফেলবে। আমি চুপ করে যাই…ঠিক করি ওনার কথা…ওনার কথা মত কাজ করবো। আমি জানতাম…আধভিক তোকে ব্যতীত…কাওকে বিয়ে করবে না। তাই পরে আধভিককে জানাবো। কিন্তু…কিন্তু সবাই যখন জেনে গেলো…তুই চলে গেছিস…তখনও উনি ওখানেই উপস্থিত ছিলেন…আমি কিছু বলতে পারিনি। আধভিক বেরিয়ে যেতেই…আমি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যাই। বাড়ি থেকে বেরিয়ে… আধভিক যখন গাড়িতে উঠবে তখন…আধভিক…আধভিক বলে চিৎকার করতেই…জানি না কোথা থেকে একটা গাড়ি…আমার সামনে চলে এলো…আর তারপরেই…
সিয়ারা বীণা দেবীর চোখের জল মুছিয়ে দিলো। তারপর বললো,
সিয়ারা: অনেক কষ্ট পেয়েছো তুমি তাই না মা?
বীণা দেবী: আমি ভেবেছিলাম…তোকে বলতে গিয়ে জানাবো। পারিনি, নজর রেখেছিলো আমার উপর…লোক দিয়ে। আমার কোনো চেষ্টা…সফল হয়নি। তোকেও আটকাতে পারিনি…আধভিককেও কিছু জানাতে পারিনি।
সিয়ারা: কে করেছে এমন মা? চেনো তুমি তাঁকে? নামটা বলো আমাকে শুধু।
বীণা দেবী নিজের চোখটা বুঝে ফেললেন। সিয়ারা ও দিয়ারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার বীণা দেবীর দিকে তাকালো। বীণা দেবী চোখ খুলে বললো….
[ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]