#কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে
#পর্ব_৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
অফিসে সারাদিনের ব্যস্ততার পর নতুন বাসার ঝামেলার মাধ্যমে এই কয়েকদিন অনেকটা হাপিয়ে উঠেছে জুঁই । শরীরটাও ইদানীং ভালো না তার । নতুন বাসা পরিষ্কার করা ফার্নিচার সেট-আপ করা সব একা হাতেই করে জুঁই । পরিস্থিতি তাকে এতটাই শক্ত পাথর তৈরি করে দিয়েছে যে তার কাউকেই প্রয়োজন হয় না । তার জীবনে যদিও ভালোবাসা বলে কিছু থাকে তা হলো ইফসির জন্যে । মাঝে শুধু একদিন রাসেল এসে কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে গেছে ।
শুক্রবার দিন , আজ অফিসও বন্ধ । তাই জুঁই ঠিক করেছে আজকেই নতুন বাসায় চলে যাবে । সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের মাকে বুঝিয়ে ইফসিকে নিয়ে জুঁই বেরিয়ে যায় নিজের বাবার বাসা থেকে । জুঁইয়ের ভাষ্যমতে , যেখানে তার এবং তার মেয়ের থাকা নিয়ে নিজের ভাই আর ভাবীরা আলোচনা করে সেখানে সে এক মুহুর্তের জন্যও থাকবে না ৷ দূরে থাকলে কাছের মানুষগুলো হয়তো দূরে থাকবে কিন্তু সম্পর্কটা বেঁচে যাবে । যার জন্যে জুঁইয়ের এই সিদ্ধান্ত । রইলো বাকি ইফসির কথা । ইফসি মাশা-আল্লাহ তার মাকে অনেকটাই বুঝে । দেড় বছর বয়সে সে বুঝে তার মা একা এটাও বুঝে তার মায়ের পৃথিবীতে কেবল সেই আছে । আল্লাহ পাক যেন বাচ্চাটাকে ঠিক সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন । ৮ মাসের মাথায় এতিম করে দিয়েছে ইফসিকে । আল্লাহ পাক নাকি যা করে ভালো করে কিন্তু ৮ মাস বয়সী বাচ্চার মাথার উপর থেকে বাবার হাত সরিয়ে নিয়ে কি ভালো করলেন এর উত্তর আজও জুঁই খুঁজে বেড়ায় ।
জুঁইয়ের আর তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক ততটা ছিল না । বিয়েটা হয়তো কোন একভাবে হয়ে গেলেও বিবাহিত জীবনে সে কখনই সুখী ছিল না সে । কিন্তু কোন এক গভীর কারণে ছেড়ে চলে যেতে পারে নি সে তার সংসারকে । যার জন্যে সবটাই সহ্য করে থাকতে হয়েছিল তাকে । কিন্তু আল্লাহ পাক সেইখান থেকেও তাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন ।
মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা গুলো , যেদিন ফারুক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে । সেদিন এক ফোঁটা চোখের পানি পড়ে নি জুঁইয়ের চোখ দিয়ে । একদম পাথর ছিল সে । কষ্ট গুলো এতটাই খেপিয়ে দিয়েছিল তাকে যে , সে পাথর হতেও বাধ্য হয়েছিল । জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে ভাবছিল সেই দিনের কথা গুলো । অবশ্য ভাবছিল না সব কিছু যেন চোখের উপর ভেসে উঠছে তার ।
রাজশাহী শহরে একটা মফস্বল এলাকার গলি নাম্বার ৫ এর হাউজ নং ৫৫ এর তৃতীয় ফ্ল্যাটে জুঁই তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতো । ৫ম তলার একটি এপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন জুঁইয়ের শ্বশুর । আর ওনারই একমাত্র ছেলে ছিল জুঁইয়ের স্বামী মানে ফারুক ।
টাকা পয়সা কম ছিল না তাদের । তবে ব্যবহার ছিল অনেকটা কুকুরের মত । জুঁইয়ের পিছনেই লেগে থাকতো তারা সর্বক্ষণ । জুঁইয়ের দু পা একদিনের জন্যেও এক জায়গায় স্থির রাখতে দেয় নি তারা । ফরমায়েশ ছিল তাদের হাজার রকম । জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও ফারুক নিজের কর্মের ফল ভোগ করে গেছে ।
জুঁই তার শ্বশুরবাড়িতে কোন রকম শান্তি পায় নি । একটার পর একটা অশান্তি হয়েই গেছে । তিন বছরের বিবাহিত জীবনে সুখ বলতে কি ছিল তার জীবনে সে আদৌ বুঝে উঠতে পারে নি । স্বামী স্ত্রীর মাঝের সম্পর্কটা শুধু বিছানা অবদিই নয় । কিন্তু জুঁইয়ের বিবাহিত জীবনটা সেটাই ছিল । ফারুক আর তার মাঝের সম্পর্কটা ওই বিছানা অবদিই ছিল । ফারুক তার শারীরিক চাহিদা মেটাতো আর জুঁই তাকে খুশী করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতো । কয়েকবার হয়তো নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও থাকতে হতো ফারুকের সাথে তাকে ।
একদিন রাতে , শরীরের অসহ্য যন্ত্রনা আর জ্বরের তাড়নায় অনেক খারাপ অবস্থা ছিল জুঁইয়ের । কিন্তু সেদিনও ফারুকের কামনার কাছে হার মানতে হয়েছিল তাকে ।
– আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ফারুক ।
– তোমার কি সারাদিনই শরীর খারাপ থাকে ?
– তুমি এই কথা কিভাবে বলো ফারুক , তুমি কি এটা দেখতে পাও না আমি সারাদিন তোমার সংসারে কি পরিমাণ খাটি ।
– আমি কাছে আসলেই তোমার হাজারটা বাহানা থাকে ।
– আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখো তুমি । সন্ধ্যা থেকেই প্রচুর জ্বর আসছে আমার । আর তুমি কিনা ?
– ধুর ,
এই বলে ফারুক ওইদিকে ফিরে যায় । জুঁইও তখন লম্বা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে । কিন্তু ১০ মিনিট পর ফারুক আবারও এই দিকে ফিরে জুঁইকে আঁকড়ে ধরে । সে রাতে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও ফারুককে সুখ দিতে হয়েছে জুঁইকে ।
হঠাৎ ইফসির আম্মুন ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় জুঁই । চোখের পানি মুছে মেয়েকে হাত বাড়িয়ে কোলে নেয় জুঁই ।
– আম্মুন উঠে গেছেন আপনি ? ঘুম ভেঙেছে আমার আম্মুনের ।
মায়ের আদর খেয়ে পরম আদরে মায়ের গলা জড়িয়ে নেয় ইফসি । তার কাছে মা মানেই শান্তি ।
.
.
চলবে…………….