#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
অন্তিম পর্ব- ৩৬
– এই এলেন ঘর শত্রু বিভীষণ আমার? লোকটা কে একটু ও সহ্য হয় না।ইশান হাসতে হাসতে বলে,
– তা কেন হবে? দু’দিন পরে আপনার জামাই দেশে ফিরছে।আপনি তো আছেন চিল মুডে।
– তো আপনি কি চান? ধেইধেই করে নাচি আপনার সাথে? মিহা হাসতে হাসতে ইশান কে বলে,
– এতো অপমানিত হওয়ার পর ও তুমি কেন লেগে থাকো মেয়ে টার পিছে? তখন মায়ান পা টিপে টিপে এসে মা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আম্মু থুমি লাকি মাক্কেটে দাবে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– হ্যাঁ,
তোমাকে ধুম যাওয়া ইয়া রেখে তারপর যাবো।কেন কি হয়েছে? ছোট্ট মায়ান আমতা আমতা করে বলে,
– হামাকে লিয়ে দাবে থুমার থাথে? মিম একটু গম্ভীর হয়ে বলে,
– নাহ!
তুমি একটু ও আমার কথা শোনো না।তুমি বরং থাকো,তোমার আন্নির (মিহা) কাছে।কে শোনে কার কথা? মন খারাপ করে দু’বার মায়ানের নালিশ করা হয়ে গেছে তার বড় দাদু ভাইয়ের সাথে।আহমেদ সাহেব ছোটো নাতির কাণ্ড দেখে বলেন,
– যাও দাদু ভাই,তুমি গোসল করে আসো।তারপর মার্কেটে যেও আম্মুর সাথে? মায়ান ভদ্র ছেলের মতো একা একা গোসল করে গামছা পেঁচিয়ে এসে মাকে বলে,
– মা ইবাল লিয়ে দাবে? হামাকে তুমার থাথে? মিম হাসতে হাসতে ছেলের গা,হাত,পা মুছিয়ে দিয়ে বলে,
– আচ্ছা নিয়ে যাবো,চলো একটু ধুম যাওয়াই দেই?
– না হামাল ধুম তলে গেচে।সবাই হাসতে হাসতে শেষ মায়ান তার চোখের পিসি টেনে ধরে আছে দেখে।ইমানের জন্য কিছু কেনাকাটা করে মার্কেটের বাহিরে বের হতেই মায়ান বলতে শুরু করে,
– মা উু দেখ মামমেট (অমলেট)? মিম পিছনে ফিরে দেখে একটা রুটি ও অমলেট এর দোকান আছে দু’হাত কাছে।মিম ছেলের গালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আচ্ছা বাবা চলো,অমলেট খাবে? মায়ান চোখ পিটপিট করে বলে,
– না আম্মু,থুমি হামাকে বাচায় গিয়ে বানিয়ে দেবে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– সোনার টুকরো একটা এখানে বসে খেলে কি হবে? মায়ান ওর নাক চেপে ধরে বলে,
– পতা গন্ধ আচে ডেলেন (ড্রেন) থেকে।মিম হাসতে হাসতে শেষ,বাসায় এসে দেখে থমথমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে।মিহার নাক ও মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে।আদিব সাথে মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ তাকিয়ে আছে মিসেস মাহির দিকে।ইশান কিছু বলতে পারছেনা,তার চোখ দু’টো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে।দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
– সেদিন একবার হলে ও আমার মিমের কথা টা শোনার প্রয়োজন ছিল।আমি বা অন্য কেউ সেদিন বিয়ের আসরে গ্রাহ্য করিনি তাকে।মিম কিছু একটা আন্দাজ করে বলে,
– যা হওয়ার হয়ে গেছে,এখন তা নিয়ে ভেবে কি হবে? মিহা আদিব সাহেবের গায়ে হাত রাখতেই সে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বলেন,
– তুমি একদম ছুঁবে না আমাকে।তুমি এর জন্য তোমার কর্মফল ভোগ করছ আজ যে আল্লাহ তাআ’লা কোনো সন্তান দিচ্ছে না তোমাকে।পাপ কখনো বাপকে ও ছাড়ে না এতোদিন পরে হলেও সে কথার সত্যতা আজ প্রকাশ পেয়েছে।মিম এগিয়ে এসে বলে,
– প্লিজ বাবা এভাবে বোলো না আপুকে।আপু হয়তে সেদিন একটা কাহিনি সাজিয়েছিল? যেটা তোমরা বিশ্বাস করেছিলে ঠিক আছে? ও বললো,আমার আব্বুর বিজনেস রাইভেল নিলয়ের সাথে সম্পর্ক আছে এবং আমি সেই ছেলেটার সাথে পালিয়ে যাওয়ার সময় দাদিকে অজ্ঞান করে রেখে গেছি আর তোমরা সেটা মেনে নিলে? হাউ সুইট হে হে হে আর এই একজন আমাকে উচিত শিক্ষা দিতে সোজা গিয়ে বিয়ের আসরে আমার বড় বোন কে বিয়ে ফেলেছে।হাউ ফানি হে হে হে? আমার আপু কিন্তু একবারও বলেনি,যে আমাকে বিয়ে করুন।সে কিন্তু নিজ দায়িত্বে বিয়ে টা করেছে।আর সমস্যা তো শুধু আপুর না,আমার দুলাইভাইের ও আছে? আমি এখন আর এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।সবাইকে হাসিখুশি দেখতে চাইছি এই বাড়িতে।
এদিকে,ইমান দেশে ফেরার গোছগাছ অলরেডি সেরে ফেলেছে।রাত বারো টায় ফ্লাইট কাল সকালে সে তার স্ত্রী সন্তানের মুখ দেখতে পাবে।
ওদিকে,
মায়ান সবাইকে বাড়িময় বলে বেড়াচ্ছে,হামাল আব্বু আচতেছে।মিম ওর জন্য ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত মেখে জিজ্ঞেস করে,
– কলিজার টুকর? এ কথা কে বলেছে তোমাকে?
– হামি তো ডানি আম্মু,কাক্কে হামাল আব্বু আচতেছে।সবাই হাসতে হাসতে শেষ বাবুর খুশি দেখে।মিম ছেলেকে মাছ ভাত খাইয়ে বুকের দুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয় ওকে।ইমান ফ্লাইটে ওঠার আগে প্রায় এক ঘন্টা যাবত ভিডিও কলে কথা বলে মিমের সাথে।মিম ইমানের সাথে কথা বলে ফোন রেখে বাহির এসে শোনে ইশান মিসেস হৃদিকা কে বলছে,
– তোমার মতো মা যেন আর কারো হয় না।আমি দোয়া করি মন থেকে।কেমন মা তুমি? নিজের ছেলের সুখ টাও সহ্য হলো না তোমার কাছে? অবশ্য দোষ টা আমার আমি সেদিন এক মুহূর্তের জন্য আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না মেয়ে টাকে।দু’জনের কথা শেষ হতে না হতেই মিম এসে বলে,
– মা আপনার ছেলে কে নিয়ে নিয়ে খেতে চলুন অনেক রাত হয়ে গেছে।নিচে এসে এতো জোগাড়যন্তর দেখে ইশান মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,
– ভাই আসছে বলে তুমি সব ওর পছন্দের খাবার রান্না করবে নিজের হাতে? মিম মাথা নাড়িয়ে সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে বলে,
– অবশ্যই,আপনার কোনো সন্দেহ আছে? অধরা এসে মায়ান কে মিমের কোলে বলে,
– নেন ধরেন,আপনার পুত্তুর উঠে গেছে।মিম ঘরে এসে আবারও দুধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দেয় ছেলে টা কে।তারপর কোমর বেঁধে কাজে লেগে পরে সবার সাথে।এনা খান এগিয়ে এসে মিমকে বলে,
– মা তুই গিয়ে রেস্ট কর,বাদবাকি টা আমি করে ফেলবো বড় আপার (নয়ন) সাথে।নয়ন তাঁরা হাসতে হাসতে বলেন,
– হ্যাঁ মা তুই গিয়ে ঘুমা,দেখ গিয়ে হয়তো দাদুভাই উঠে গেছে? তখন মায়ান ছুটে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– মা মায়ান বাবু ধুম যাবে।ইশান মিহা কে চুপচাপ দেখে জিজ্ঞেস করে,
– “ধুম যাওয়া” টা কি একটু বুঝিয়ে বলবে আমাকে? মিহা আনমনে হাসতে হাসতে বলে,
– মায়ান তো বুকের দুধ খেয়ে ঘুমায় ওর মায়ের কাছে।তাকে বলে “ধুম যাওয়া” আর কোনো প্রশ্ন আছে? ইশান মৃদু হেসে মিহা কে কোলে করে ঘরে নিয়ে যায় নিজের সাথে।
সকালে,
মিম ও খুশি সহ আরো অনেকে এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইমান প্লেন থেকে নামতেই মায়ান আব্বু আব্বু করতে করতে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।ইমান ছেলেকে কোলে নিয়ে বেশ অবাক।বিশ্বাস করতে পারছেনা যে তার ওই অতটুকু ছেলে এতো বড় হয়ে গেছে? মিম দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে বাবা ও ছেলের মধুর মিলন দেখে।ইমান হঠাৎ হেসে ছেলেকে বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ডান হাত প্রসারিত করে দেয় মিমকে দেখে,মিম নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ছুটে গিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তাকে।ইমান চুমু খেতে খেতে ভরিয়ে দেয় দু’জনাকে রায়হান সাহেব এগিয়ে এসে ছেলে কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে।মিম ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আই এম প্রাউড অব ইউ।ইমান সাথেসাথে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় মিমের ঠোঁটে।মায়ান করতালি দিতে দিতে বলে,
– ইয়ে আম্মু হামি দিয়েছে,হামাল টুম্পা সুনা আম্মুকে।মিম লজ্জা পেয়ে ছেলেকে তার বাপের কোলে রেখেই ছুটে গিয়ে বসে বাড়িতে।বিহান যেতে যেতে বলে,
– মনে হচ্ছে যেন? এ বছরি দ্বিতীয় খুশির খবর পাওয়া যাবে? ইমান হাসিমুখে বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে গাড়িতে এসে বসে মিমের পাশে।বাড়ি পৌঁছে মিম ইমানকে গোসল করিয়ে পাত পেরে খাইয়ে দেয় নিজের হাতে।মায়ান রাগ করেছে বুঝতে পেরে ইমান অনেক অনেক খেলনা আর চকলেট ওকে বের করে দেয় ট্রলি ব্যাগ থেকে।তবুও ছেলের রাগ কমছে না দেখে,রাগ করার কারণ জানতে চাইলে সে বলে,
– আব্বু থুমি হামাকে রেখে একা একা গুতুল করলে তেন মায়ের সাথে? সবাই অনেক কষ্টে হাসি সামলে রেখে তাকিয়ে আছে মায়ান এর মুখের দিকে।মিম এসে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– চলো বাবা ঘুম যাবে? ও মাথা নাড়িয়ে ইমানকে বলে,
– বাবা থুমি ও চলো হামাল থাথে।ইশান হাসতে হাসতে মুখ ফসকে ইমানকে বলে ফেলে,
– যাহ!
ভাই,তুই ও গিয়ে “ধুম যা” ছেলের সাথে।মিম লজ্জা পেয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে দৌড়।ইমান এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবির বাটান খুলতে খুলতে এগিয়ে আসে মিমের কাছে।বেচারি লজ্জা পাচ্ছে দেখে ইমানের ওদের বাসর রাতের কথা মনে পরে গেছে।মায়ান ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ইমান এগিয়ে এসে ছেলের গালে চুমু খেয়ে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– বাবু ঘুমিয়ে গেছে? মিম হ্যাঁ সূচক উত্তর ইশারা দিতেই ইমান ওকে কোলে তুলে পাশের ঘর নিয়ে এসে বুকের ওপরে মাথা রেখে বলে,
– কত রাত এভাবে ঘুমাই না তোমার কাছে? মিম বেশ লজ্জা পেয়ে কোনো কথা না বলে ইমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে।ইমান ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলে,
– তোমার মনে হয় না? আমাদের ছেলের ছোট্টো একটা খেলার সাথীর প্রয়োজন আছে? মিম এবার খুব লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ লুকোয় ইমানের বুকে।ইমান হঠাৎ ওর বুকের ওপর থেকে আঁচল টা সরিয়ে দিয়ে বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্প টা অফ করে দেয় সাথেসাথে।আড়াই বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে কাছে পেয়ে মিম নিজের সবটা উজাড় করে দেয় তার কাছে।ইমান যেন আজ নিজের মাঝে নেই? হারিয়ে গেছে কোনো এক অন্য জগতে।যেখানে আছে, শুধুই সুখ আর সুখ কোনো অশান্তির আনাগোনা নেই তাদের মাঝে।
——————————-সমাপ্ত—————————