কর্নেল_সাহেব পর্ব ৩৫

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩৫

মিম ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে,ওর এক দূর সম্পর্কের ফুফু শাশুড়ী বেড়াতে এসেছে ওদের বাড়িতে।মিম গিয়ে তাকে সালাম করতে চাইলে সেই ভদ্রমহিলা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,
– দরকার নেই বউ মা,তোমার ছেলে কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে ফুফি আম্মা এখন তার ঘুমোনোর সময়।তাই সে ঘুমে আছে।আপনার পরিবারে সবাই কেমন আছে?
– তারা ও ভালো আছে মা।তুমি কি যাবে নাকি? বেড়াতে আমার সাথে?
– নিশ্চয়ই যাবো ফুফু আম্মা,আপনার নাতি একটু বড় হোক?
– আচ্ছা বউ মা ঠিক আছে,এনা রান্নাঘর থেকে ননদের জন্যে কফি করে নিয়ে এসে বলেন,
– কদম আপা বললে না তো? আমার ছেলের বউ কেমন হয়েছে?
– মাশাল্লাহ্,খুব মিশুকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।না মানে আমাদের ছেলে যেমন,বউ মা তেমন হয়েছে।নয়ন তাঁর রান্নাঘর থেকে এসে মিমকে শাসনের ভঙ্গিতে বলেন,
– মা তোর একটা দুধের বাচ্চা আছে আর এখন এই অবস্থায় রোজা কে রাখতে বলেছে তোকে? রায়হান সাহেব পেপার টা সরিয়ে টেবিলের ওপরে রেখে মিমের কাছে জিজ্ঞেস করেন,
– আচ্ছা মা,তুই কি এই কারণে সকালে নাস্তা করোনি আমাদের সাথে?
– বাদদেও না বাবা,শুধু আজকে একটা রোজা রেখেছি আর রাখবো না।
– ঠিক আছে,
তবে এটাই কিন্তু শেষ নয়তো আমি বকবো তোমাকে? তখন অধরা এসে মিমকে বলে,
– এই যে ম্যাডাম ঘরে চলেন আপনার রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে গেছে।মিম হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ছুটে এসে দেখে,
জোভান কোলে তুলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে বাবুকে।পাশ থেকে সাভিন বলে,
– তুই পারবিনা জোভান ভাইকে দে আমার কাছে।মিম এসে বাবুকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– ওর খিদে লেগেছে বাবা আর তাই তো সে কান্নাকাটি করছে এভাবে।তোমরা একটু যাও আমি ভাইকে খাইয়ে তোমাদের ডেকে দেবো।
– আচ্ছা ছোটো মা ঠিক আছে।রিক্ত সে ঠায় বসে আছে তার জাদু সোনার কাছে।মাঝেমধ্যে আবার সে চুমু খাচ্ছে বাবুর হাতে।

কিছুক্ষণ পর,
মিসেস কদম এসে বলেন,
– দেখি বউ মা,দাদুভাই কে একটু দাও তো আমার কাছে? মিম মায়ন কে তার কোলে দিতেই ওর ফুফু শাশুড়ী একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দেয় মিমের হাতে।মিহা কে মিমের ঘরের দরজায় দেখে মিসেস কদম জিজ্ঞেস করে,
– মেঝো বউ মা তোমার কবে হবে? মিহা নিজের চোখের জল লুকিয়ে বলে,
– সন্তান দেওয়া,না দেওয়া আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছে ফুফু আম্মা।তাই আল্লাহ তাআ’লা যখন দিবে তখন হবে।
– ঠিক বলেছ মা,বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসে বসো আমাদের সাথে।মিহা মৃদু হেসে বলে,
– এখন সময় নেই ফুফু আম্মা।আপনাদের ছেলে এসেছে অফিস থেকে।আড়াই মাস আগে মিমের সাথে কথা-কাটাকাটি হওয়ার পর ইশান মন থেকে চেষ্টা করছে মিহা কে মেনে নিতে।তবে কোথাও মিমের প্রতি অনুভূতি গুলো ওর মনে আজও জেগে আছে।কিন্তু এখন আর কথায় কথায় মিমকে টেনে এনে আর ও তুলনা করে না মিহার সাথে।ও মনে করে এই মেয়েটির কি দোষ? বিয়ের আসরে সেদিন ও নিজ দায়িত্বে বিয়ে করেছিল মিহাকে।আজকাল ইশান দূরত্ব রেখে চলে মিমের সাথে।প্রয়োজন ছাড়া ওর কখনো কথা হয় না মিমের সাথে।

সকালে মিম ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই ওর ফোন বেজে ওঠে সাথেসাথে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে মুর্তিমান এর আগেও পাঁচ বার ফোন করেছে ওর কাছে।মিম তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে বলে,
– ক্ষমা করে দাও সোনা আমার ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– তাতে কি হয়েছে সোনা? আমি মোটেও রাগ করিনি তাতে।শুধু একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল,যে আমার লক্ষি টা তো কখনো এমন করে না আমার সাথে? আচ্ছা আমার বাবাই সোনা টা কোই? একটু ওর মুখখানা দেখাও তো আমাকে? মিম মৃদু হেসে ফোন টা বাবুর মুখের ওপরে ধরে বলে,
– দেখুন, সে আপনার স্টাইলে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে?
– ওলে লে লে লে বাবাই টা আমার,কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে? আচ্ছা দুধ খাইয়ে ছিলে ওকে? মিম কিছু টা লজ্জা পেয়ে বলে,
– হুমম,এটাও আবার জিজ্ঞেস করার মতো কথা?
– হ্যাঁ জিজ্ঞেস তো করতেই হবে আমাকে? আচ্ছা তুমি কেন রোজা রেখেছিলে পাগলি? এই অবস্থায় এমব করতে আছে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– তবুও বাসায় তো কেউ ছেড়ে দেয়নি? কালেকে মা আমার ইফতারের জন্য সব আইটেম বানিয়েছে।আচ্ছা তুমি খেয়েছ?
– খেতে বসে তোমার কথা আমার মনে পরেছে আগে।যাই হোক,সোনা সাবধানে থেকো এখন আমার বেরোতে হবে ঠিক আছে? মিম মৃদু হেসে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে দশ রাকআত নফল নামাজ আদায় করে নেয় সাথেসাথে।মিসেস কদম ক’দিন ধরে মিমকে দেখার পর রায়হান সাহেবকে এসে বলেন,
– সারাদিন দেখি মেয়ে টা ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে থাকে? ভাই তোরা কিছু বলো না কেন মেয়ে টাকে? পাশ থেকে আহমেদ সাহেব হাসতে হাসতে বলেন,
– সময় পেলেই আমাদের ছেলে ফোন করে কথা বলে বউ মায়ের সাথে এখানে ওর দোষ কি? শুধুশুধু কেন কথা শোনাতে যাবো মেয়ে টা কে?
– আমি বলছি,
মেয়ে টার হাবভাব ভালো ঠেকছে না আমার কাছে।ইশান একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ফুফু আপনি ক’দিন ধরে চেনেন ওকে? তবুও বলছি আপনার সন্দেহ হলে আপনি চোখে চোখে রাখতে পারেন ওকে।

মিম একদিন দুপুরে গোসল করে বাহিরে বের হয়ে ভিডিও কলে কথা বলছিল ইমানের সাথে।তখন মিমের পিছনে পা টিপে টিপে এসে মিসেস কদম দাঁড়ায় সাথেসাথে।ইমান হঠাৎ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
– আরে কদম ফুফু যে? তোমার শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে? বেচারি একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে মিমের মুখের দিকে।মিম মৃদু হেসে ফোন টা তার হাতে দিয়ে বলে,
– নিন ধরুন ফুফু আম্মা,আপনি কথা বলুন আপনাদের ছেলের সাথে।মিসেস কদম মৃদু হেসে মিমের হাত ধরে বলেন,
– পারলে ক্ষমা করে দিও বউ মা,আমি শুধুশুধু ভুল বুঝেছি তোমাকে।ইমান ব্যাপার টা আন্দাজ করে হাসতে হাসতে বলে,
– তুমি ও না ফুফু? তোমার সন্দেহবাতিক রোগ টা আজও রয়ে গেছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– বাদদেও না,ফুফু আম্মা আপনি কথা বলেন আপনার ছেলের সাথে।

দেখতে দেখতে আড়াই বছর কেটে গেছে,
সকালে মিমকে প্রচন্ড রেগে থাকতে দেখে নিপা এসে জিজ্ঞেস করে,
– কি রে ছোটো? ছেলে টা কি করেছে? তুই আবার মারবি টারবি নাকি ছেলে টাকে?
– বজ্জাত টা কোই? জানো সে দুধ খেয়ে গ্লাসে মুতু করে বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখেছে? হৃদিকা এহসান মিমের চিল্লাপাল্লা শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বলে,
– থাক মা,বকাবকি করিস না ছেলে টা কে।ফোনের ওপাশ থেকে ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– দুধের বাচ্চা ধরে টরে আবার মেরো না ওকে।মিম ইমানকে ঝাড়ি মেরে বলে,
– শোনো একদম ছেলের হয়ে সাফাই গাইতে আসবে না আমার কাছে।আমার ছেলেকে মারার কোনো প্রয়োজন নেই।সে এমনি তেই খুব ভয় পায় আমাকে।মিম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামায় সময় শুনতে পায় ছেলের প্রিয় গান “টুম্পা সোনা” বাজছে হল ঘর থেকে।সে পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।নিচে এসে দেখে দাদা,নাতি,ভাই আর ফুফু মিলে ভালোই নাচানাচি করছে টুম্পা সোনা তে।হঠাৎ মা কে দেখে মায়ান গিয়ে ইশানের পেছনে লুকিয়ে বলে,
– মেদো আব্বু,বাতাও হামাকে।ইশান হাসতে হাসতে ওকে কোলে তুলে নিয়ে মিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– বাবা তুমি আবার কি ঘটিয়ে এসেছ আজকে? দুষ্টু মায়ান মিটিমিটি হেসে বলে,
– বেতি কিতু না,শুধু মুতু দিয়ে এসেছি দুদুর গেলাতে (গ্লাসে)।ইশান হাসতে হাসতে শেষ,রাদ এসে মিমকে বলে,
– বোন বকা দিয়ো না ওকে।মায়ান মায়ের চোখ রাঙানি দেখে ভদ্র ছেলের মতো ইশানের কোল থেকে নেমে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– চমা (ক্ষমা) কলে দাও মা।আর কখুনু এমন কব্বো না দুদুর সাথে।অধরা হাসতে হাসতে মিসেস এনা কে বলে,
– ইমান ভাই ওকি এমন জ্বালাতন করতো নাকি ছোটো মা আপনাকে?
– তোমরা আমার কথা বাদদেও মা,আমি অবাক হয়ে দেখছি আমার নাতিকে।মায়ান মায়ের কাছে কোনো পাত্তা না পেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– মা এত্তা দান (গান) চুনাবো তুমাকে? এবারও মায়ের কাছ থেকে সে কোনো উওর না পেয়ে বলে,
– টুম্পা সুনা (সেনা) জালা হাম্পি দে না।হামি মাইলি বুলছি আল কুইনি থাবো না।চাঁদনি লাতে হামার টুম্পার চাতে।যাবো দিনার ডেতে।না হামি মা কে ছেলে কোথাও দাবো না।চলি মা,আল দুষ্টু কব্বো না।সবার সাথে মিম এবার হাসতে হাসতে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি পঁচা ছেলে,একটু ও আমার কথা শোনো না।
– চলি মা,থুমি আমাল “টুম্পা সুনা মা” মিম হাসি সামলে ছেলেকে বলে,
– আর কখনে এই পঁচা গান গাবে না।
– নাহ!
থুমি আমাল টুম্পা সুনা মা,আমাকে ধুম যাওয়াইয়া দেবা না? ইশান হাসতে হাসতে বলে,
– “ধুম যাওয়াটা” যে কি? সেটা আমার আজও বোধগম্য হলো না।মিম ব্রু কুঁচকে বলে,
– আপনার এতো বোধগম্য হতে হবে না।মিম ছেলেকে নিয়ে ঘরে যেতেই মিহা হাসতে হাসতে বলে,
– তোমার এতো কৌতূহল কেন হ্যাঁ? ইশান ওর হাত ধরে বলে,
– ধুম যাওয়ার মানে টাকি প্লিজ বলো না।রিক্ত হাসতে হাসতে বলে,
– ভাইয়া সেটা তোমার জেনে কাজ নেই হা হা।তারপর মায়ন এসে রিক্তর পিছনে এসে লুকোতেই মিম এসে বলে,
– এই বাপ-ব্যাটা দু’টোই মাথা মোটা।একবার আসুক দু’টো কে একসাথে বসিয়ে মাথায় মাথায় টাকাবো আর কখনো টুম্পা সোনা গান গাবে না।ইশান হাসতে হাসতে বলে,
– গান টা কিন্তু অতটাও খারাপ না?
– এই এলেন আমার ঘর শত্রু বিভীষণ? লোকটা কে আমার একটু ও সহ্য হয় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here