#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৫
– হুসস,আমি আর কোনো বাহানা শুনতে চাই না তোমার কাছে।মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– বলছিলাম বাচ্চা টা একা ঘুমিয়ে আছে।ইমান ওর গলায় নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
– তোমার স্বামী যে অভুক্ত হয়ে আছে? মিম মনেমনে বলে,”ধুরর,এই ঘাড় ত্যাড়া কে বুঝিয়ে লাভ নেই।এখনি সহবাস সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়ে দেবে।”
মাঝরাতে,
হঠাৎ রিক্ত ঘুম থেকে উঠে মিমকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে ভয় জড়ানো কণ্ঠে বলে ওঠে,
– রাঙা মা? কোথায় তুমি? মিম কোনো মতে শাড়ি টা গায়ে জড়িয়ে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এই তো সোনা? ভয় পেয়েছ তুমি?
– না মানে কোথায় ছিলে তুমি।মিম ইমানকে দেখিয়ে বলে,
– তোমার দাদাভাইয়ের ঘুম এতোই পঁচা যে রাগ করে কাউচে গিয়ে শুয়ে পরেছি আমি।রিক্ত ইমানকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
– ওই ছেলে ওই? ভালো করে শুতে পারো না তুমি?
– না পারি না।মারবি না কি? মিম হাসতে হাসতে দু’জন কে বলে,
– মাঝরাতে দু’জনে মিলে শুরু করেছ টাকি? চুপচাপ শুয়ে পরো নয়তো কাওকে আদর দেবো না আমি।ইমান মিম সহ রিক্তকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমাদের দু’জন কে বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি।মিম দু’জনের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– চুপচাপ ঘুমাও নয়তো দু’টো কেই প্যাঁদানি দেবে আমি।তারপর তিনজন একসাথে হেসে ওঠে হি হি হি।
সকাল আটটা,
রায়হান সাহেব কফি খেতে খেতে মিমকে জিজ্ঞেস করে,
– মা তোরা রাতে ঘুমাওনি না কি? মিম হাসতে হাসতে ইমান ও রিক্ত কে দেখিয়ে বলে,
– কি বলি বাবা? মাঝরাতে উঠে তোমার এই শাপ আর বেঁজির কারসাজি দেখেছি।হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে বলেন,
– হ্যাঁ মা পাশের ঘর থেকে তোদের কথোপকথন আমরা শুনতে পেয়েছি।ইমান তৈরি হয়ে এসে হঠাৎ সবার সামনে মিমের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– একটু বের হচ্ছি।কিছু লাগবে না কি? মিম ওর পকেটে একটা বাজারের লিস্ট ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,
– জিহ! বসুন্ধরা শপিং মলে এসে ইরাদ সবাই কে বলে,
– তোর ভাবি যে কি আনতে বলেছে আমি ভুলে গিয়েছি? ইশান হাসতে হাসতে বলে,
– সমস্যা কি? ভাবির কাছে ফোন কর?
– হ্যাঁ তারপর গাইল খাই আরকি? রাদ হাসি সামলে নিয়ে বলে,
– পাবলিক প্লেসে ফোন করে ভাই আমাদের বাপদাদা চোদ্দগুষ্টির মানসম্মান একবারে ধুয়ে দিক আরকি? ইমান হাসতে হাসতে নিজের সানগ্লাস ঠিক করে বলে,
– আমি ভাই আমার বউয়ের কাছ থেকে লিস্ট করে এনেছি।তখন হঠাৎ ইমানের এক বন্ধু বলে,
– কি রে? চার ভাই তোরা একসাথে? কোনো কাজ আছে নাকি? ইমান লিস্ট টা সবুজের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
– সব প্যাক করে দে দেখি? সবুজ মৃদু হেসে জিজ্ঞেস বলে,
– শুনলাম দেশে ফিরেই বিয়ে করেছিস নাকি? ভাবি কেমন হয়েছে?
– আলহামদুলিল্লাহ,যা চেয়েছি তার থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়েছি।তারমধ্যে ইরাদ মাথা চুলকতে চুলকতে বলে,
– ভাই একটা ডাব শ্যাম্পু দিস।ইমান হাসতে হাসতে বলে তুই কি?
– কি মানে? কিছু না কিছু তো নিয়ে যেতেই হবে শুধুশুধু গালি খাবো নাকি?
– এই তুই আমার বড় ভাই ছিঃ? বাসায় এসে ইমান মিমকে বলে,
– লিস্ট মিলিয়ে দেখো তো সব ঠিক আছে নাকি? অধরা এসে ইরাদের হাতে শ্যাম্পুর বোতল দেখে বলে,
– এই আমি কি তোমাকে শ্যাম্পু আনতে বলেছি? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– থাক ভাবি চিন্তা করছ কেন? তোমাদের যা লাগবে আমি তোমার দেওর কে দিয়ে আনিয়ে নিয়েছি।রাদ ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভাই এই পাঁচশো টাকার নোট রাখ।কটকটি ভাজা কিনে খাস।আজ এই যাএায় তোর ভাবির কাছ থেকে বেঁচে গিয়েছি।ইমান হাসতে হাসতে তিন ভাইয়ের হাতে পাঁচশো টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলে,
– আমি তোদের ঈদ সালামি দিলাম বলদ কতগুলো মিম একটু ঘরে চলো দেখি।নিপা আড়চোখে একবার মিমকে দেখে বলে,
– মেয়ে টার সবদিকে কত নজর? সাভিনের পেন্সিল লাগবে আমি ভুলে গিয়েছি।আহমেদ সাহেব হাসতে হাসতে বলেন,
– তাতে কি বউ মা? যে-ই আনুক না কেন।আমরা এক সংসারে থাকি তো নাকি? রাদ মন খারাপ করে বলে,
– এই সময় সাদ ভাইয়াকে খুব মিস করছি।বুঝতে পারছিনা ভাবির কথায় আমাদের ভুল বুঝে আলাদা হয়ে যাওয়ার মানে নাকি? রায়হান সাহেব ভাইপো কে বলেন,
– বাবা তোদের না ভাই ভাবির সামনে ওই নাম টা নিতে বারন করেছি? মিম এসে সবাই কে লেবু সরবত দিয়ে মিহা কে জিজ্ঞেস করে,
– আপু তোমার দেওর কে দেখেছ? রিক্ত এসে বলে,
– আমি দেখেছি।ভাইয়া এক্সারসাইজ করছে জিম এরিয়ায়।
– তাই বুঝি? পাকা বুড়ি আমার?
– জিহ! ইমান নিজের গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে ডান দিয়ে মিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার লজ্জা করে না নাকি?
– পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা? মাথার তাঁর ছিঁড়েটিরে গেছে নাকি? ইশান রাদ কে বলে,
– আরো ডাম্বেলের ওয়েট বাড়া।
– তোর মাথা টা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? অলরেডি ফিফটি আপ কি তোর সমস্যা কি? হঠাৎ ওর হাত থেকে ডাম্বেল ছুটে যেতেই ইরাদ সেটা ধরে ফেলে জিজ্ঞেস করে,
– মিমকে তুই আজো ভুলতে পারিসনি না কি? দেখ ও যে ঠকিয়ে বিয়ে থেকে থেকে অন্য করো হাত ধরে পালিয়ে গেছে এটা বিশ্বাস করি না আমি।আমরা শুধু মুদ্রার এপিঠ টা দেখেছি,ওপিঠে কি হয়েছিল কিছুই জানি না।
– তাতে কি?সেদিন আমি ঠোকে গিয়ে ছিলাম বলেই মিমকে উচিত শিক্ষা দিতে মিহা কে এবাড়িতে বউ করে এনেছি।মিম ইমানের গায়ে,হাত ও পায়ে অলিভওয়েল ম্যাসাজ করে দিতে দিতে বলে,
– চুল গুলো নিয়ে আমার দুষ্টুমি করছেন।কি হয়েছে টাকি? ইমান ওর মুখমণ্ডল দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,
– আমার বউ টাকে দেখতেছি।ছোট্টো রিক্ত হাসতে হাসতে বলে,
– কি প্রেম বাবা? হি হি হি।সন্ধ্যার সময়ে রিক্ত দুধ খেতে না চাইলে।মিম বুদ্ধি করে বলে,
– আজ আমি একটা কম্পিটিশনের আয়োজন করেছি।তখন অধরার দুই জামজ ছেলে আর সাভিন এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ছোটো মা হারলে পুরস্কার পাওয়া যাবে কি? মিম হাসতে বলে,
– হ্যাঁ অবশ্যই বাবা,আগে রিক্তকে দুধ খাওয়ার কম্পিটিশনে হারিয়ে দেখাও দেখি? রিক্ত নিজেই নিজেকে সাহস দিয়ে বলে,
– আই এম দ্যা বেস্ট এন্ড আই এম দ্যা উইনার রাইট রাঙা মা?
– জি,এবার ছোটো ফুফি হয়ে ভাইয়ের ছেলেদের হারিয়ে দেখাও দেখি? জোভান,জায়ান ও সাভিন হাসতে হাসতে বলে,
– ও তো পুঁচকি ফুফি আমাদের সাথে পারবে নাকি? রিক্ত সাথেসাথে ঘটঘট করে দুধের গ্লাস খতম করে বলে,
– ডু ইউ নো? “খালি কলসি বাজে বেশি?” সবাই হাসতে হাসতে শেষ।মাঝখান থেকে অধরা বলে ওঠে,
– বাচ্চা মেয়ে টার সাথে পারেনা তিন তিন তিনটে বলদা খাসি।মিম মৃদু হেসে বলে,
– ছিঃ,বড় ভাবি বাচ্চাদের এভাবে বলতে হয় নাকি? আর কখনো এভাবে বলবে না ঠিক আছে?
– জিহ!
বোন আমার ভুল করেছি।তবে কম্পিটিশন শুরু আর এরা তিনজন ডায়লগ বাজি করছে ছিঃ? চারজন এসে মিমকে বলে,
– মা মা উপহার দেখি? রিক্ত খুব খুশি হয়ে শপিং ব্যাগ দেখে বলে,
– ওয়াও,আমি চারটে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং হেয়ার ব্যান্ড আর জুতো পেয়েছি।জোভান হাসতে হাসতে বলে,
– লাভ ইউ ছোটো মা জানো আমি কতবার বাবা মাকে ঘড়ি কিনে দিতে বলেছি? জায়ান ওর ব্যাগটা বুকে জড়িয়ে ধরে মিমের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– আমি কিন্তু আমার ফেভারিট লোগো সেট পেয়েছি।সাভিন লাফাতে লাফাতে বলে,
– ওয়াও ওয়াও দুটো কালার বক্স আর ড্রয়িং পেপার? ছোটো মা তোমাকে খুব ভালোবাসি আমি? রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে আহমেদ সাহেব কে বলেন,
– ভাই ওকে বাড়ির বউ করে এনে কোনো ভুল করিনি আমি।আহমেদ সাহেব মৃদু হেসে বলেন,
– দিন যত যাচ্ছে মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা দেখে অবাক হচ্ছি আমি।তোর ভাবি আফসোস করে বলছে,”কপাল আমার ছোটো ছেলের বউ টাকে চোখের দেখাও দেখতে পারিনি আমি।” মিম এগিয়ে এসে বলে,
– বাবা তোমরা সেই কখন থেকে কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছ শুনি?
– কিছুনা মা।ওই ইমান তোকে ডাকছে দেখ ওর কিছু লাগবে নাকি? মিম দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ে ইমান ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কি মেম সাহেব? আমাকে ভুলে গেছেন নাকি? মিম লজ্জা পেয়ে আস্তে আস্তে বলে,
– কি ঘর শুদ্ধো লোকের সামনে বাচ্চাকাচ্চার সামনে জড়িয়ে ধরেছেন? আপনার লজ্জাটজ্জা নেই নাকি?
– না গো তা কেনো থাকবে? আমি কি আরেক ব্যাটার বউকে জড়িয়ে ধরেছি নাকি?
– প্লিজ ছাড়ুন,সবাই দেখে হাসাহাসি করছে ছিঃ।