কর্নেল_সাহেব পর্ব ৬

#কর্নেল_সাহেব
সুরিয়া মিম
পর্ব- ৬

– প্লিজ ছাড়ুন,সবাই আমাদের দেখে হাসাহাসি করছে ছিঃ।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– আই ডোন্ট মাইন্ড।কারণ আমি আমার বউকে দেনমোহর দিয়ে শরীয়ত এবং আইন মোতাবেক বিয়ে করেছি।ঘরে চলো না লক্ষীটি প্লিজ? সেই কখন থেকে আমি তোমার আদর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।হঠাৎ ইশান ফোন টিপতে টিপতে এসে বেখেয়ালে ইমানকে ধাক্কা মেরে বলে,
– এটা কি তোমাদের রোমান্স করার জায়গা? বাড়িতে কি বেড রুম নেই নাকি? মিম লজ্জা পেয়ে ইমানকে ছাড়িয়ে বলে,
– ছিঃ কপাল আমার? ট্রেনিং প্রাপ্ত ঘ্যাড় ত্যাড়া জামাই পেয়েছি।ইমান মৃদু হেসে ইশানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– ভাই সবে তো রোমান্স পার্ট ওয়ান শুরু করেছি? আল্লাহ দিলে খুব তাড়াতাড়ি খুশির খবর শুনতে পাবি এখন আসি? ইশান তব্দা খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
– লাইক সিরিয়াসলি? শেষমেশ তুই ও এই মেয়ে টার পাতা ফাঁদে পা দিলি?
– আরে ভাই চিল।বিয়ে করা বউ হয় তো নাকি? ইমান ঘরে এসে ঢুকতেই মিম ওর কান টেনে ধরে বলে,
– নির্লজ্জ কোথাকার,আপনার মুখে কিছু আঁটকায় না নাকি? ইমান দরজা চাপিয়ে দিয়ে মিমকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর গালে ও গলায় চুমু খেতে খেতে বলে,
– বুঝে ও না বোঝার ভান করে থাকো নাকি? মিম ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে বলে,
– আমার আজকে পিরিয়ড হয়েছে।সকালেই বলেছি।ইমান ওকে সরিয়ে দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকায় মিম কষ্ট পেয়ে মনেমনে বলে,”শুধু মাএ শারীরিক চাহিদার জন্যে আমাকে বিয়ে করেছেন বুঝি? কোই এই ক’দিনে তো মনে হয়নি? তাতে কি? আমি আজ থেকে সাতদিন এই বিছানায় আপনার পাশে শুবো না এখনি চলে যাচ্ছি।” ইমান হঠাৎ ওর হাত টেনে ধরে বলে,
– খবরদার যদি বিছানার বাহিরে দিয়েছ? তাহলে ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো আমি।কি মনে করো আমাকে? তোমার কষ্ট হলে সেটা সম্পর্কে জানার আমার কোনো অধিকার নেই নাকি? মা বলেছিল পিরিয়ড হলে তোমার খুব কষ্ট হয়।আদা জল খাও।সেটাই খাওয়ার জন্যে এই পর্যন্ত টেনে এনেছি তোমাকে।মিম ইমানের বুকে ঝাপিয়ে পরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– ক্ষমা করে দিন।আপনাকে ভুল বুঝেছি আমি।ইমান হাসতে হাসতে,
– তাতে কি? মানুষ মাএই ভুল হয়।নিজের দিকে একটু ও নজর দিচ্ছি না তুমি।তাই এবার তোমাকে মিষ্টি করে ছোট্টো একটা শাস্তি দেবো আমি।নিপা খেতে বসে মিমকে খোঁচা মেরে বলে,
– মাগরিব শেষে ভেজা চুল যে? আমার দেবর একটু ও ছাড়তে চায় না নাকি? মিম কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে অধরা হাসতে হাসতে বলে,
– আমার তো মনে হচ্ছে মিহার আগে তুই পেট বাজাবি? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– আহ!
ভাবি তোমাদের দু’জনের মুখে কিছু আঁটকায় না নাকি?
– কেন আটকাবে? আজ অব্ধি তোর বাসর রাতের গল্প আমাদের সাথে করেছিস নাকি? নিপা হঠাৎ মিমের কোমরে হাত দিয়ে বলে,
– তোর তো প্রতি রাত বাসর রাত হয়,তোর মতো সোনার সোহাগা কপাল করে আমরা বর পেয়েছি নাকি? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– ভাবি স্বামী স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত সম্পর্কে জানানো হয়তো উচিৎ নয়।আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।প্লিজ তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও আমি একটু মা (এনা) কে দেখে আসি? অধরা হাসতে হাসতে নিপাকে বলে,
– এর মুখ থেকে বোমা মারলে ও কথা বের হবে না।আমরা বৃথাই চেষ্টা করছি।নিপা মিটিমিটি হেসে বলে,
– তোমার রাদ ভাই ছোটে ভাইয়ের (ইমান) কাছে জিজ্ঞেস করেছিল সে ও কোনো মুখ খোলেনি।অধরা হাসতে হাসতে বলে,
– যেমন জামাই তেমন তার বউ হি হি হি।মিম বাগান বাড়িতে এসে দরজা নক করে রায়হান সাহেব কে বলে,
– বাবা আসি?
– হ্যাঁ মা আয়,তুই আবার কষ্ট করে কেন এখানে এলি?মিম মৃদু হেসে এনা খানের পাশে বসে বলে,
– বারে আমার মা কে দেখতে ইচ্ছে করেনা নাকি? আজ মাকে দেখতে কত সুন্দর লাগছে? মা কে তুমি সাজিয়ে দিয়েছ নাকি?
– আরে মা আমি কেন সাজাতে যাবো? তোর মা নিজেই তো সাজতে পারে নাকি? অতঃপর কি ভেবে থেমে গিয়ে বলেন,
– ওই আরকি? মিম বাসায় ফিরে এসে দেখে হৃদিকা এহসান খাবার টেবিলে একা-একা খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে।মিম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
– মা তোমার খেতে ইচ্ছে করছে না নাকি?
– না রে মা তোর বাবা এখনো আসেনি তার জন্যে অপেক্ষা করছি।মিম আমতা আমতা করে বলে,
– যদি তুমি কিছু মনে না করো? তোমাকে খাইয়ে দেবো আমি? মিসেস হৃদিকা এহসান কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে মনেমনে বলেন,”যদি কখনো জানতে পারিস আমি তোর ক্ষতি করেছি।তখন কি আর এভাবে মা বলে ডাকবি?” মিম মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,
– কি হলো মা? কি ভাবছ তুমি? তোমাকে খাইয়ে দেবো আমি? হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে বলেন,
– আচ্ছা দে,তবে এক শর্ত আছে তোকেও নিজের হাতে খাইয়ে দেবো আমি।
– তারপর না হয় দু’জনে মিলে টিভি সিরিয়াল দেখবো? হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে বলেন,
– নাহ!
তোরা যে কি সব বলিস না? ক্রাশ,বয়ফ্রেন্ড,প্রেমিক? কার পিছনে কয়টা ঘুরতো? তাই নিয়ে আলাপ করবো? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– বিশ্বাস করো মা আমার সে রকম কেউ ছিলো না বুঝেছ? হৃদিকা এহসান ওর মুখে গ্রাস তুলে দিতে দিতে বলেন,
– নাহ!
আমি বিশ্বাস করিনা।সবারি একটু আধটু থাকে খুকি বুঝেছ? দু’জনে খাওয়া শেষ করে গল্প করতে করতে মশগুল হয়ে গেলো।মিম কথায় কথায় বলে,
– জানো মা সালমান শাহ আমার জান তোমাদের সময়ে হিরো ছিলো তো।মিসেস হৃদিকা দুঃখ করে বলেন,
– ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার চাচাতো বোন লায়লা আপা গলায় দড়ি দিয়েছিল।কপাল ভালো ছিল আব্বা দেখে ফেলেছিলেন সে যাএায় আপা বেঁচে গিয়েছিল আর হ্যাঁ সে আমারো কিন্তু তোর কি বলিস? জান? হ্যাঁ ওইটা ছিল।গল্প করতে করতে একসময় মিম মিসেস হৃদিকা এহসানের কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলে।হঠাৎ রায়হান সাহেব এসে হাসতে হাসতে বলেন,
– সালমান শাহ যে তোমার ক্রাশ ছিলো কখনো বলোনি তো? হৃদিকা এহসান মৃদু হেসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আরে বাদ দাও তো? আল্লাহ আমাকে দু’টো ছেলে দিয়েছে একটা ওর মতো মিষ্টি মেয়ে দিলে পারতো।
– তোমরা তো মিমকে ইশানের জন্য পছন্দ ছিলনা।এখন মনে ধরেছে তো? মেয়ে টা কিভাবে তোমাকে নিজের হাতে আদর করে করে খাইয়ে দিচ্ছিল? মিসেস হৃদিকা এহসান মনেমনে বলেন,”হ্যাঁ সেটাই,মেয়েটির সাথে বড্ড বেশি আমি অন্যায় করে ফেলেছি তো?” ইমান হঠাৎ এসে বলে,
– বাব বাহ!
বড় মা? ম্যাডাম তোমার কাছে? এনাকে খুঁজতে খুঁজতে পুরো বাড়ি আমি চষে ফেলেছি তো?
– থাক বাবা ডাকিস না।ইমান মৃদু হেসে ওকে কোলে তুলে নিলো।তারপর বলল,
– দেখেছ মা অবস্থা? কাকে দিয়ে ওর ব্লাউজ গুলো বানিয়েছ বলো তো? যাগগে ওর শাড়ির আঁচল টা তুলে বুকের ওপর দিয়ে দাও তো? বাবার গলা পেলাম না এই মাএ? কোথায় গেলে? হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে বলেন,
– এই তো ছোটোর ডাক্তার আহাদ ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে অফিসের জরুরী কিছু কাজ করার জন্য স্টাডিতে চলে গেলো।ইমান মিমকে এনে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে,
– ঘুমলে তোমাকে দেখতে এতো কেন সুন্দর লাগে বলো তো? রিক্ত এগিয়ে এসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– থাক রাঙা মাকে ডেকো না।ঘুমাতে দাও বুঝেছ? ওই ছেলে বুঝেছ? ইমান রিক্ত কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমার রাঙা মায়ের মতো আদর করে তোমাকে ঘুম পারাতে না পারলেও আজকে আমি তোমাকে ঘুম পারাবো বুঝেছ? তারপর ওরা দু’জনে গল্প করতে করতে মিমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে,
হৃদিকা এহসান মিমের ঘরে এসে বলেন,
– মা তোর সব ব্লাউজ গুলো দে তো।আজি ঠিক করিয়ে আনবো।
– না থাক মা সমস্যা হচ্ছে না তো।এবার হৃদিকা হাসতে হাসতে বলেন,
– তুই বললে হবে? গতকাল রাতে আমার ছেলে এসে আমার কাছে অবজেকশন দিয়ে গেছে মা বুঝেছ? মিম একটু রেগে গিয়ে বলে,
– ওই একটা মানুষ? তোমরা ওকে কি খাইয়ে মানুষ করেছ? এটাও মা কে গিয়ে বলার মতো কথা? ছিঃ,আস্তো একটা অসভ্য।মিসেস হৃদিকা নিজেই কর্ভাট খুলে সব ব্লাউজ গুলো নিয়ে নিলো।

এদিকে,
ইশান কথা বলতে বলতে করিডরে এসে দেখে,ইমান নিজেই নিজের ইউনিফর্মের বোতাম গুলে টেনেটুনে ছিঁড়ছিল।তারপর মিমকে ডেকো বলে,
– দেখ নতুন ইউনিফর্মের কি অবস্থা? একটু বোতাম গুলো সেলাই করে দাও তো? ইমানের কাণ্ডকারখানা দেখে ইশানের মাথা যেন ঘুরে গেলো? পাশ থেকে রাদ হাসতে হাসতে ওর মুখ টা চেপে ধরে বলে,
– আরে ভাই বন্ধ কর।মাছি ঢুকে যাবে তো? মিম ইমানকে বকা দিয়ে বলে,
– কর্নেল সাহেব,একটু সোজা হয়ে দাঁড়ান।আপনার নজর কোন দিকে বলুন তো? ইমান দু’হাত দিয়ে শক্ত ওর কোমর চেপে ধরে বলে,
– আমার বউ কে দেখি বুঝেছ?
– তাহলে আমি কে?
– কেন আমার বউ? দুষ্টু? যাগগে অফিসে যাওয়ার আগে বাই বাই কিস দাও তো? মিম হাসতে হাসতে ইমানের নাক টেনে ধরে বলে,
– আহারে সাহেবের শখ দেখো? আশেপাশে সবাই ঘোরাঘুরি করছে ওসব এখন হবে না বুঝেছ? ইমান মিমের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
– কামওন কামওন একটা জলদি দেও তো? পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রায়হান সাহেব ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– বুড়ো বয়সে বাবা তোরা আর কি কি দেখাবি বলতো? মিম লজ্জা পেয়ে উল্টো দিকে দৌড় এদিকে রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে নিচে চলে এলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here