#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৯
“একদিন না একদিন আমি বোধ হয় এই ব্যাটার টাক ঠিক ফাটিয়ে দেবো।” রাতে ইমান ওর বন্ধু মায়ন কে ফোন করে বলে,
– তোর ভাবি আমার সাথে রাগ করেছে।কি করি বলতো?
– তার পছন্দের কোনো গিফট দিয়ে দে বৎস।সবে তো তুমি সংসারের যাঁতাকলে পিষতে শুরু করেছ দোস্ত? ভবিষ্যতে আর কি কি দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেখো? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– আরে ভাই আমার বউ নিতান্তই একটা সহজ-সরল মেয়ে।ভাবির মতো খচ্চর নয় বুঝেছ? মায়ান মুচকি হেসে বলে,
– বিয়ের ছয় বছর পরে ও আমি ওকে চিনতে পারলাম না আর তুই মাএ বারো দিনে তোর বউকে চিনে ফেলেছ?
– সবাই এক হয় না ভাই এটা তো মানো? আর মিম খুব লক্ষী একটা মেয়ে সহজে ও রাগ হয় না ও।মায়ান হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে,
– তা দোস্ত,কি করবি বলে ঠিক করেছ? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– ইট’স রোমান্স টাইম,বাই বাই ব্রো।মায়ান ফোন কেটে দেওয়া আগে বলে,
– তৈরি থাক এটা ঘূর্ণিঝড়,আইলা শুরু হওয়ার আগে পূর্বাভাস বুঝেছ? যাগগে এখন রাখি রাতে কি হলো? তা কাল সকালে শুনবো।ইমান মিমের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ওর হাত চেপে ধরে বলে,
– অন্তত আমার অপরাধ টাকি? সেটা তো বলো? মিম এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– আমাদের তো কোনো প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই? তোমার বউ বাচ্চার মা হতে চায় সেটা তুমি ঘর শুদ্ধো লোককে বলে বেড়িয়েছ?
– বিশ্বাস করো আমি এই কাজ টা করিনি,বড় মা হয়তো খালামণিদের বলে বেড়িয়েছে?
– তো? আগ বাড়িয়ে নিজেই তো মা কে গিয়ে আমার এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছ।এখন আর কিছু জানো না তাই না? এসে ন্যাকামো শুরু করেছ? ইমান ওর কান ধরে মিমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
– আর এই কাজ টা কখনো হবে না বিশ্বাস করো? মিম গিয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পরে বলে,
– খবরদার একদম আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে না।না হলে এক হাত ভেঙে অন্য হাতে ধরিয়ে দেবো বুঝেছ? ইমান মন খারাপ করে বলে
– তুমি যদি এমন করো তাহলে আমি কোথায় যাবো?
– যেখানে ইচ্ছে জান,পারলে মায়ের কাছে জান।ছোটোবেলা থেকে তার নেওটা তো? ইমান দু’হাত দিয়ে মিমের মুখ টা চেপে ধরে বলে,
– ওদিকে কেন তাকিয়ে আছো? একটু আমাকে দেখ? মিম নিজেকে ইমানের হাত থেকে ছাড়িয়ে রিক্ত কে তাড়া দিয়ে বলে,
– নাও মা,লক্ষী মেয়ের মতো তাড়াতাড়ি দুধ টা খেয়ে নাও তো? রিক্ত ইমানের কান মলে দিয়ে বলে,
– তুমি খুব পঁচা,কেন বলতো আমার রাঙা মা কে রাঙিয়ে দিয়েছ?
– আমি তোমার মায়ের কাছে তো ক্ষমা চাইলাম আর কখনো এমন ভুল হবে না।বললাম তো? রিক্ত এগিয়ে এসে ব্রু কুঁচকে বলে,
– ক্লাস টু তে পড়ে আমি প্রাইভেসির মানে বুঝি দাদাভাই আর তুমি বোঝো না? অসহ্য।ইমান রিক্তের পাকা পাকা কথা শুনে পাঁচ মিনিট “হা” করে তাকিয়ে ছিল।মিম রিক্ত কে আদর করছে আর ওকে কাছে টেনে নিচ্ছে না।তাই ইমান কিছুক্ষণের জন্য কাউচে গিয়ে শুয়ে পরলো।তারপর উঠে এসে বিছানায় শুতেই মিম ওকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আজকে ক্ষমা করে দিলাম।নেক্সট টাইম এমন হলে সব সম্পর্ক শেষ বুঝেছ? ইমান ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? মিম ওর চুলে ছোটো করে বিলি কেটে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে,
– চোখ লাল কেন তোমার? কান্না করেছ? ইমান কিছু বলতে পারছিল না বা হয়তো মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছিল না? তাই চুপচাপ মিমের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে গেলো।মিম মনেমনে বলে,”বোকা কোথাকার,বললেই যেন চলে যাওয়া যায়? তোমাকে কার ভরসার রেখে যাবো? পাগল একটা এর জন্যে বোধহয় এতো ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে কর্নেল সাহেব বুঝেছ?”
সকালে,
মিম সায়েরা বানুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
– দাদি তুমি নাকি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছ? সে পান মুখে দিতে দিতে বলে,
– অসভ্য কোথাকার,তুই আমার নাতনির (মিহা) সংসারে ঢুকে কি শুরু করেছ? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– শোনো মাই প্রাক্তন কূটনী দাদি,ফাঁকা আওয়াজ করে কোনো লাভ নেই বুঝেছ? আমি ভালো করেই জানি তুমি এবং তোমরা মিলে আমি এবং আমার মায়ের বত্রিশ বছরের সংসার ধ্বংস করেছ।কি মনে করো তুমি সায়েরা বানু?
আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি হুমম? তোমাকে আমি ভয় পাই? তাহলে ভালো করে শুনে নাও পাই না বুঝেছ? আরে নূর জাহান যে?
আমার দাদি ও বোনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স তুমি করেছ? না মানে অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে দেবরদের দিকে নিজের হাতে প্রসারিত করেছ? সাথে ছিল আমার প্রাক্তন কূটনী দাদি অর্থাৎ তোমার আপন খালা।খালা বোনঝি মিলে ভালোই নাটক করেছ একদম টেন অন টেন।তা তোমাদের যে পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে তার হিসেবে কষে রেখেছ? ভালো করে শুনে রাখো, আমার কারো প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রয়োজন নেই তার কারণ, ওপর আমার আল্লাহ তাআ’লা আছে।সে ছাড় দেয় কাওকে ছেড়ে দেয় না বুঝেছ? প্রকৃতি কখনো অনিয়ম মেনে নেয় না একদিন না একদিন এর সামঞ্জস্য বিধান হবে আর তখন তোমরা কেঁদে ও কুল পাবে না লিখে রেখো।মিহা এসে হঠাৎ মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– বাহ রে বোন!
তুই তো খুব সুন্দর কথা বলতে শিখেছ? মিম হাসতে হাসতে ওকে শান্তনা দিয়ে বলে,
– তুমি নিজের স্বামীকে সামলে রাখতে পারো না আর তার দ্বায় আমার ঘাড়ে চাপাতে এসেছ? আগে নিজের ঘরে সামলে রেখে পরে অন্যের ঘরে উঁকি মারতে এসো।এখানে আমি এসে দিব্যি সংসার করছি তুমি আর তুমি তোমার কিছু সাগরেদদের নিয়ে আমাকে শাসাতে এসেছ? শোনো যার নিজের ঘরে ছাঁদ নেই তার অন্যের ঘরে উঁকি মারা মানায় না বুঝেছ? ছলচাতুরী করে তুমি তো ইশানকে আমার কাছ থেকে কেরে নিয়েছ,তবে কি তার স্ত্রী হিসেবে শারীরিক সুখ পেলেও তার মনে কি জায়গায় করে নিতে পেরেছ? পারনি আর এটাই তোমার ব্যর্থতা বুঝেছ? আমি কিছুই করবো না কারণ সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় ওই যে ওপরে বসে আসে ও।সে অন্ধ নয় বোন আমার ভালো হয়ে যাও।ভালো হতে পয়সা লাগে না বুঝেছ? মিমের কথা গুলো মিহার চোখ থেকে জল পরতে লাগলো।নূর জাহান চুপচাপ বিছানার এক কোণে বসে থাকলেও সায়েরা বানু এসে নাতনি কে আস্বস্ত করে বলেন,
– ভয় নেই দিদি ভাই আমি আছি তো? মিম যেতে যেতে বলে,
– হ্যাঁ তুমি তো মহান সায়েরা বানু।ওপরে আমার আল্লাহ তাআ’লা আছেন তাকে একটু ভয় করো বয়স হয়েছে তো? মাহি আলম চৌধুরী এসে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
– তুমি ওই ছাপোষা লোক গুলোর কাছে গিয়েছিলে? চলো আমি এক্ষুনি তোমাকে গোসল করিয়ে দেবো।মিম মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি এখন সেই ছোটো বাচ্চাটি আর নই মা।আমার স্বামী ও সংসার হয়েছে তো? মেয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেন,
– তাতে কি মা? তুমি এখনো আমার কাছে আমার সেই ছোট্টো সোনা পাখি টা রয়ে গেছো।ক’হাত দূরে দাঁড়িয়ে আদিব সাহেব তার মেয়ে এবং মাহি আলম চৌধুরীর কথা শুনছিল হঠাৎ মর্তুজা সাহেব কে দেখে সে চমকে গেলো।মর্তুজা সাহেব আলতো করে মিমের গাল টেনে ধরে বলেন,
– মা লেবু চা টা কিন্তু দারুণ ছিল? ইমান মাথা চুলকোতে চুলকোতে এসে মিমের হাত ধরে বলে,
– তুমি আমার লেফটেন্যান্ট কর্নেলের ব্যাচ গুলো দেখেছ? মিম মৃদু হেসে বলে,
– হ্যাঁ চলুন দিচ্ছি,আমার জুয়েলারি বক্সের মধ্যে রেখেছিলাম জানি না কোথায় গেলো? ইমান হঠাৎ মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– পেয়েছি,ওটা তো তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য বাহানা ছিল? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– যাহ দুষ্টু!
সারাদিন মাথায় এসব ঘুরতে থাকলে কাজে কিভাবে মনোযোগী হন? একটু শুনি তো? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– কেন? তোমাকে যে ফোন করে লাঞ্চ টাইমে কথা বলি তাতেই আমার রিফ্রেশমেন্ট হয়ে যায় বুঝেছে? মিম আয়াতুল কুরসি পড়ে ইমানের গায়ে ফুঁ দিতে দিতে বলে,
– সাবধানে থাকবেন কিন্তু? ইমান নিজের ঠোঁট ওর ঠোঁটের সাথে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
– তুমি যখন আমার সাথে আছো আমি তখন মৃত্যু কেও পরোয়া করিনা বুঝেছ? মিম রেগে গিয়ে বলে,
– মারার কথা বললে, কিন্তু সত্যি সত্যি এবার রেগে গিয়ে আপনার টাক ফাটিয়ে দেবো?