কর্নেল_সাহেব পর্ব ১০

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১০

– মরার কথা বললে, কিন্তু সত্যি সত্যি এবার রেগে গিয়ে আপনার টাক ফাটিয়ে দেবো? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– বন্ধু বেশি শক্রর হাতে নৃশংস ভাবে মরার চাইতে,আমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে বিষ পান করে মরতে বেশি পছন্দ করবো।মিম মন খারাপ করে বলে,
– আপনি আসলেই একটা অসভ্য।ইমান ওর পিঠে চুমু খেয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ওদিকে তাকিয়ে আছো কেন? আবার কি আমার সাথে রাগ করেছ? মিম চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
– আপনি এতো খারাপ কেন? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে
– আমি আবার খারাপের কি করলাম বলো? জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু তখন অবধারিত।মিম কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আমি আপনাকে হারাতে চাই না।
– আমাকে এতো ভালোবাসো? মিম ইমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কোই না তো? এবার ইমান মিমের মাথাটা চেপে ধরে বলে,
– মিথ্যে বলে লাভ নেই সোনা।তাড়াতাড়ি বাই বাই কিসস দাও তো? বেচারি লজ্জা মাখা মুখ টা দেখিয়ে ইমানকে বলে,
– আপনি কি কানা? দেখতে পাচ্ছেননা? আমাদের রিক্ত বিছানায় ঘুমিয়ে আছে তো? ইমান জোর করে মিমের ঠোঁট চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কেমন দিলাম বলো তো? রিক্ত ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
– আমি কিন্তু দেখেছি,দাদাভাই রাঙা মা কে আদর করেছ? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– বুড়ি তুমি কিন্তু বয়সের চেয়ে বেশি পেকে গেছো? রিক্ত চোখ,নাক,মুখ খিচিয়ে ইমানকে বলে,
– তুুমি খারাপ ভাইয়া,নিজেকে কি ভেবেছ? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– ভেবেছিলাম তোমার রাঙা মা কে বছর খানেকের জন্যে তার মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো।রিক্ত দৌড়ে এসে ইমানকে বলে,
– মা চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? ইমান দুষ্টুমি করে বলে,
– কেঁদে লাভ নেই।তোমার মাকে আমি তার মায়ের বাড়িতে বেড়াতে পাঠাবোই পাঠাবো।মিম এসে রিক্তর হাতে ব্রাশ তুলে দিয়ে বলে,
– সকাল সকাল দু’ভাইবোন মিলে কি শুরু করেছ? রিক্ত ইমানকে মুখ ভেঙিয়ে বলে,
– আমি আমার মা কে কিছুতেই এই বাড়ি থেকে যেতে দেবো না।ভালো করে শুনেছ? খাওয়ার টেবিলে রায়হান সাহেব ছেলেকে ডেকে বলেন,
– বাবা তুই নাকি মা (মিম) কে বেয়াইন সাহেবার (মাহি) সাথে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবি বলেছ? ইমান মিটিমিটি হেসে রিক্ত কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– বা বাহ!
মুখ থেকে বের করতে পারিনি আর এর মধ্যে তুমি এসে বাবাকে নালিশ করেছ? রিক্ত কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
– শোন শয়তান ছেলে,আমি আমার মা কে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে দেবো না বুঝেছ? তারপর জোভান এসে হঠাৎ মিমের শাড়ির আঁচল টেনে ধরে বলে,
– ছোটো আব্বু তুমি কি শুরু করেছ? শোনো ছোটো মা (মিম) এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেনা শুনেছ? ইমান নাক সিঁটকে বাচ্চাদের বলে,
– হ্যাঁ রে বাবা?
তোরা কি আমার বউ টাকে সবার ফাইফরমাশ খাটাতে এই বাড়িতে বউ করে নিয়ে এসেছ? ইশান ইমানের তালে তাল দিয়ে বলে ওঠে,
– হ্যাঁ বাবা তোমরা মিমকে ওর মায়ের সাথে যেতে দাও।বাড়িতে তোমাদের মেঝো মা (মিহা) আছে তো? সাথেসাথে সাভিন ও জায়ান রেগে গিয়ে বলে ওঠে,
– তোমার বউ যে খ্যাঁচড়া? তুমি বরং তাকেই তার বাপের সাথে পাঠিয়ে দাও মেঝো আব্বু (ইশান)? কারণ তাকে মেঝো মা (মিহা) বলে আমাদের ডাকতে ইচ্ছে করে না বুঝেছ? সায়েরা বানু এসে মিহা কে খোঁচা মেরে বলে,
– সব হচ্ছে তাবিজ কবচের কামাল।মিম হয়তো তাবিজ কচব করেছে? আমার প্রখর সন্দেহ হচ্ছে তো? নূর জাহান বিরক্ত হয়ে বলেন,
– আহ!
মা এই তাবিজ কবচ হয়তো একদিন আপনাকে নিঃস্ব করে দেবে।এবার একটু চুপ করে বসুন তো? মিম এগিয়ে এসে রিক্ত কে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– তোমার দাদাভাই বললেই হলো নাকি? কোনো মা তার চার সন্তানকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারে নাকি? অধরা হাসতে হাসতে বলে,
– এলেন আমার মুসকিল আসান হি হি হি।কাল রাতে জোভান তোমার ভাইয়া (ইরাদ) কে বলে,
– বাবা আম্মু এক্সচেঞ্জ অফার আছে নাকি? তাহলে আমরা ছোটো মায়ের (মিম) সাথে আমার খচ্চর মাতা (অধরা) কে এক্সচেঞ্জ করে নিতাম হি হি হ।মিম ইমানকে গাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে এসে বলে,
– কর্নেল সাহেব সাবধানে থাকবেন এবং পৌঁছে আমাকে ফোন করবেন।।
– জি,এবার আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে সোনা আসি? মিম হঠাৎ ইমানের গালে চুমু খেয়ে দৌড় সাভিন হাসতে হাসতে বলে,
– ইয়ে আমি দেখে ফেলেছি।সেনানিবাসে রুদ্র ইমানকে লাঞ্চের সময় বলে,
– স্যার সবাই যে আপনাকে বউ পাগল বলে ক্ষ্যাপায় তাতে রাগ হননা আপনি? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– কি আশ্চর্য?
এতে রাগ করার কি আছে ভাই? আমি আপনার ম্যাম কে নিজে পছন্দ করে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।আর আমার ভালোবাসা এতো ঠুনকো নয় যে কারো কথা গায়ে মেখে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী কে অবজ্ঞা এবং অসম্মান করবো আশাকরি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি? দুপুরে ইমান অফিস থেকে ফেরার পর হৃদিকা এহসান ওর হাতে কাঠ গোলাপের মালা দেখে হাসতে হাসতে বলেন,
– এই বাড়ির ছেলেদের বউয়ের জন্য হাতে বাজিয়ে এটা-সেটা জিনিস আনতে খুব কম দেখেছি।আমার ছোটো ছেলেটা একদম অন্য রকম।ও মিশনে গেলে মিমকে ছেড়ে কি করে থাকবে সেটাই ভাবছি? মিহা রান্না ঘরে মিমকে একা পেয়ে বলে,
– ইমান তোর খুব যত্ন করে তাই না? একটু আগে তোর খোপর কাঠ গোলাপের মালা টা ওর হাতে দেখেছি।মিম মৃদু হেসে বলে,
– সত্যি বলতে আপু আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।কারণ তোমার ভুলের জন্যে আমি এমন একজন মানুষ কে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here