কর্নেল_সাহেব পর্ব ১১

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১১

– সত্যি বলতে আপু আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।কারণ তোমার ভুলের জন্যে আমি এমন একটা মানুষকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়েছি।আর হ্যাঁ এটাই সত্যি বুঝেছ?
তুমি কেন দাদির (সায়েরা) কথা শুনে নিজের সংসারে অশান্তি বাড়াচ্ছো? এটা কোরো না প্লিজ আপু।তুমি ভুল করছ।তুমি যতই তোমার সংসারে একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে নাক গলাতে দিবে,ততই তোমার সংসারে তোমার গুরুত্ব কমে যাবে বুঝেছ? আমি তো এখনো ভাবতে পারছিনা তুমি দাদি কে বাবা-মায়ের এই বএিশ বছরের সংসার ভাঙতে সাহায্য করেছ।আমি আমার সাথে হওয়ার অন্যায় ভোলার চেষ্টা করলে ও আমার মায়ের সাথে হওয়া অন্যায় আমি কিছুতেই ভুলতে পারো না বুঝেছ? তুমি যদি আমাকে বলতে, আমি একটু ও ভানিতা না ইশানকে তোমার হাতে তুলে দিতাম বুঝেছ? কিন্তু তুমি তোমার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে আমার মা কে একটা টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছ।এটা আমি কি করে ভুলে যাবো বলো তো? মা নাকি আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাস? তুমি তো নিজেই এই কথা গুলো সবাইকে বলে বেড়িয়েছ।তাহলে নিজের হাতে সেই মায়ের সংসার কিভাবে তছনছ করেছ? তোমার একবার ও কি মনে হয়নি ওপরে আল্লাহ তাআ’লা আছেন আর তিনি সবকিছু দেখছেন তো? মিহা চোখের জল মুছতে মুছতে মিমকে বলে,
– আমি জানি,
তুই আমাকে তোর কথার জ্বালে ফাঁসিয়ে।সবার কাছে মহান সাজতে চাইছ।তুই যদি আমার ভালো চাইতি? তাহলে এ বাড়ি ছেড়ে অনেক আগেই চলে যেতি।মিম মৃদু হেসে বলে,
– আশ্চর্য!
আমি কেন এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো? এটা যেমন তোমারো শশুর বাড়ি,তেমন আমারো শশুর বাড়ি।তাহলে আমি কেন আমার জায়গা ছেড়ে দেবো? শোনো আপু,
তুমি এ আশা দয়া করে আমার কাছ থেকে রেখো না বুঝেছ? তোমার ভুল টা ধরিয়ে দেওয়া আমার কাজ ছিল।তাই ধরিয়ে দিলাম বুঝেছ? না হলে আমি ও জানি আর তুমি ও ভালো করে জানো আসল অপরাধী কে বুঝেছ? আমি আমার এক চুল ও অধিকার ছাড়বো না কারণ তুমি আমার মা কে কষ্ট দিয়েছ।প্রমাণ নেই বলে আজ আমার হাত বাঁধা নয়তো আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিতাম না বুঝেছ? তখন হঠাৎ সাভিন এসে মিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ছোটো মা (মিম) তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছ? মিম ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ধুরর,বাবা।কে বলেছে? কোই না তো?
– তুমি আজকে আমার করা ড্রয়িং গুলো দেখেছ? মিম ওর গালে চুমু খেয়ে বলে,
– না সোনা বাবা,খাতা টা কোথায় রেখেছ? খুঁজে পেলাম না তো?
– আরে তুমি দেখনি? আমি তোমার ঘরে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে খাতা টা একটু আগে রেখে এসেছিলাম তো? মিম ওর গাল টেনে ধরে বলে,
– ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি দেখতে ভুলে গেছি।চলো দুপুরে তোমার খাওয়া হয়নি।খাইয়ে দেবো তো।নিপা এসে একটা শপিং ব্যাগ মিমের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– তুই আসার পর আমার অর্ধক কষ্ট কমে গেছে ছোটো।ছেলে টা একটু ও আমার কাছে পড়তে চায় না অথচ তুই কি সুন্দর করে ওকে পরিয়ে দিচ্ছ? মিম একটু রেগে গিয়ে নিপা কে বলে,
– আশ্চর্য ভাবি? সাভিন কি আমার ছেলে না? তুমি এভাবে কেন বলছ? আর তোমার না মাইগ্রেনের পেইন উঠেছে? তাহলে কেন আবার হন্তদন্ত হয়ে নিচে ছুটে এসেছ? সাভিন কে আমি দেখে রাখবো ও আমার লক্ষী ছানা তো? সাভিন মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এর জন্যে আমরা তিন ভাই আমাদের ছোটো মা (মিম) কে এতো ভালোবাসি আম্মু বুঝেছ? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– যাও ভাবি এতো ছোটাছুটি কোরো না ভাইয়া (রাদ) আসলে আমি খেতে দেবো।নিপা যেতে যেতে বলে,
– শাড়ি টা কিন্তু আমার মা তোর জন্যে গ্রামে থেকে কিনে পাঠিয়েছে পরিস ছোটো? তখন মিহা নিপাকে বলে,
– তোমার মায়ের কেনা এই পাঁচশো টাকা দামের শাড়ি ওর গায়ে উঠবে তুমি সেই আশা রেখেছ? ধার করে না হয় আর একটু দামি শাড়ি কিনে পাঠাতে পারতো? আমি বাবা আবার এতো কম দামি শাড়ি পরতে পারি না।তাই ময়না কে দিয়ে দিয়েছি বুঝেছ? মিম নিপাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভাবি তুমি ওর কথা বাদদেও।আমি কিন্তু এই শাড়ি টা পরবো।ইমান হঠাৎ এসে মিমের হাত থেকে শাড়ি টা কেড়ে নিয়ে বলে,
– এই এতো সুন্দর শাড়ি টা তোমাকে কে উপহার দিয়েছে? বলো তো? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– নিপা ভাবির আম্মু।জানো সাথে তোমার জন্য একটা ম্যাচিং পাঞ্জাবি আছে?
– ওয়াও,ভাবি অনেক সুন্দর তো? আচ্ছা ভাবি তুমি কেন মন খারাপ করেছিলে বলো তো? নিপা হাসতে হাসতে মিমের হাত চেপে ধরে বলে,
– মানুষ চিনতে ভুল করার জন্য ছোটো ভাইয়া (ইমান) এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে জানো তো? আমি মন থেকে চাই তোমরা দু’জন খুব সুখে থাকো এবং আশাকরছি হয়তো আল্লাহ তাআ’লা দিলে আগামী মাসে খুশির খবর শুনতে পাবো।মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– ধুরর,বাবা ভাবি (নিপা) তুমি কি শুরু করেছ বলো তো? অধরা এসে ইমান কে বলে,
– ছোটো ভাইয়া (ইমান) তোমরা বউয়ের লজ্জা পাওয়া দেখো? ইমান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ কখন থেকে সেটাই দেখছি তো? চলো লক্ষীটি,তুমি এখনো খাওনি।তাই আমি তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।হৃদিকা এহসান ছোটো ছেলের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে বলেন,
– তুই দেখি বাবা তোর বাবার মতো হয়েছ? ইমান হঠাৎ নিজের ঠান্ডা হাত টা মিমের পেটে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
– ও না খেলে ঠিক আমার পেটের ভাত হজম হয় না মা বুঝেছ?
– হ্যাঁ বাবা।কিন্তু তোর হাত টা ওভাবে কেন গুটিয়ে রেখেছিস বলতো? ইমান একটু অপ্রস্তুত হয়ে মিমের পেটের ওপর থেকে হাত টা সরিয়ে নিয়ে বলে,
– কোই মা? কিছুনা তো? রিক্ত ওর কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
– আমি সবাই কে বলে দেবো তুমি রাঙা মায়ের পেটে আদর করেছ? ইমান হাসতে হাসতে ওকে বলে,
– তুমি কি চাও সোনা? আমি তোমার মা কে বাসায় পাঠিয়ে দেবো? রিক্ত ইমানের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– কোই না তো? তবে ঘরে বসে আদর করো।আশ্চর্য দাদাভাই তুমি “প্রাইভেসি” মানে বোঝো না? তুমি কি ছোটো? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– এতো বকবক করলে বাবার কথা মতো তোমাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবো।রিক্ত কি ভেবে বলে,
– থাক বাবা তার দরকার নেই।তুমি আমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দিলে আমি এই কথা টা বেমালুম চেপে যাবো।ইমান ওকে কাতুকুতু দিতে দিতে ঘরে এনে বলে,
– বুড়ি তুমি আমার সাথে ডিল করছ? মিম মৃদু হেসে বলে,
– দুটিতে মিলে কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছ বলো তো? ইমান এসে হঠাৎ ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,
– আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদের নাম কি হবে তাই ভাবছি গো। মিম লজ্জা পেয়ে ইমানের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে,
– যাহ! দুষ্টু।বাচ্চা টার সামনে কি শুরু করেছে? ইমান দুষ্টু হাসি দিয়ে মিমকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে,
– আই ওয়ান্ট মাই বেবি এন্ড আই কান্ট ওয়েট জাদু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here