কর্নেল_সাহেব পর্ব ১২

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১২

– আই ওয়ান্ট মাই বেবি এন্ড আই কান্ট ওয়েট জাদু।
– তাই বুঝি? “লুক সি ইউ নট ফর মাইন্ড বেবি” ইমান কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে,
– তোমার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন করেছ নাকি? মিম হাসতে হাসতে বিছানা ছেড়ে উঠে বলে,
– পানির নিচে ডলফিন থাকে জঙ্গলের মতন,হেই দাদা জঙ্গলের মতন।ইমান বেশ চিন্তিত হয়ে বলে,
– মাথার তাঁর ছিঁড়ে গেছে নাকি? মিম একটু দুষ্টুমি করে বলে,
– ইসস,আমার বর টা কোথায় গেলো? সেই কখন থেকে খুঁজছি? ইমান ওর চশমা খুলে টেবিলের ওপরে রেখে জিজ্ঞেস করে,
– তাহলে আমি কে? আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি? মিম মৃদু হেসে হেসে এদিক সেদিক করে বলে,
– ধুরর,
আমার কিউট জামাই টা কোথায় গেলো? আমি সেই কখন থেকে খুঁজছি? ইমান মনেমনে বলে,”ফাজিল বেটি,দাঁড়াও তোমাকে মজা দেখাচ্ছি?” তারপর ইমান হঠাৎ মিমের কোমরে হাত রেখে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁট জোড়া দখল করে আধাঘন্টা পর ছেড়ে দিয়ে বলে,
– সি ইউ নট ফর মাইন্ড বেবি।তখন হঠাৎ ওরা শুনতে পায় রিক্ত কাওকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে,
– তুমি আমাকে মারলে কেন? আমি আমার ভাইয়ের (ইশান) মোবাইল ফোন ধরে কি অপরাধ করেছি? মিহা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
– বেয়াদব মেয়ে যেন কোথাকার? আমার সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলবে না আমি তোমাকে আগেও বলেছি।রিক্ত কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম।তবে তুমি খুব খারাপ একটা মানুষ ছিঃ।মিহা দ্বিতীয় বারের জন্যে রিক্ত কে মারতে এগিয়ে আসতেই মিম এসে ওকে ধাক্কা মেরে রিক্ত কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি জানতে চাই আপু তোমার অসুবিধে টা কি? কেন তুমি ওকে মেরেছ? ওর অপরাধ টাই বা কি? মিহা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
– কারো জিনিস ধরলে,সেটা তার অনুমতি নিয়ে ছুঁতে হয়।এটা ওকে কেউ শেখায়নি না কি? রাদ তেড়ে এসে মিহা কে বলে,
– আমি খোলাসা করে জানতে চাই তোমার অসুবিধে টা কি? রিক্ত কেন ওর ভাইদের জিনিস ছোঁয়ার আগ তার অনুমতি নিতে যাবে এবং এতো ফর্মালিটি করার প্রয়োজনীয়তা টা কি? ইরাদ সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলে,
– আমি তোমার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।তুমি কোন সাহসে আমাদের একমাত্র বোনের গায়ে হাত দিলে? আমরা কি সে অধিকার তোমাকে দিয়েছি? ইমান প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলে,
– ছোটো মানুষ ভুল করলে তুমি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারতে।তার গায়ে হাত তোলার দরকার টাই বাকি? মিহা হাসতে হাসতে বলে,
– তোমরা তো আর এই বেয়াদব মেয়ে টা কে শাসন করো না।তাই আমি একটু তোমাদের হয়ে এই মেয়ে টা কে শাসন করেছি।ইশান হঠাৎ এসে মিহার গালে চর মেরে বলে,
– এর জন্যে বাড়ির বাচ্চারা তোমাকে সহ্য করতে পারে না।সেটা আমি আজ ভালো করে বুঝেছি।মিহা হাসতে হাসতে বলে,
– সৎ বোন তোমার,তার জন্যে তুমি তোমার বউয়ের গায়ে হাত তুললে ইশান? ছিঃ।ইশান খুব রেগে গিয়ে টেবিলে একটা লাথি মেরে বলে,
– ওই “সৎ” শব্দ টা তুই আর কখনো মুখে আনবি না।তোকে কতবার বলেছি? সায়েরা বানু এগিয়ে এসে বলে,
– নাত জামাই তাই বলে, তুমি আমার নাতনিকে মারবে? আমি তো তোমাকে বিচক্ষণ মানুষ ভেবেছি? ইশান তাকে উল্টো ঝাড়ি মেরে বলে,
– কূটনামি করতে হয় নিজের বাড়িতে গিয়ে করুন।এই বাড়িতে নয় আশাকরি বোঝাতে পেরেছি? আদিব চৌধুরী এগিয়ে এসে ইশানের হাত চেপে ধরে বলে,
– বাবা আমার মেয়ে এই শিক্ষা পায়নি।
– হ্যাঁ সে তো দেখতেই পাচ্ছি? আর কখনো আপনি আপনার মা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কে নিয়ে এই বাড়িতে আসবেন না আশাকরি আপনাকে বোঝাতে পরেছি? এসে থেকেই দাদি ও নাতনি মিলে আলাদা ঘরে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে এসব কি? এই সংসারে ওর কোনো দায়দায়িত্ব নেই না কি? আমার বোন কেন ওর অনুমতি নিয়ে আমার জিনিস ধরবে এবং তার প্রয়োজনীয়তা টা কি? আমার বোন আমার কত আদরের সেটা আপনার বিলেত ফেরত মেয়ে বুঝতে পারছেনা নাকি? ও কোন সাহসে আমার বোনের গায়ে হাত তুললো? যেখানে আমি আজ অব্ধি বকা দেওয়া তো দূরের কথা নিজের বোন কে কখনো চোখ রাঙিনি পর্যন্ত দেইনি।দু’দিনের একটা মেয়ে এসে আমাকে কে আপন,কে পর? এই মাপকাঠির ভেদাভেদ শেখাবে নাকি? মিম রিক্ত কে ঘরে এসে ওকে বলে,
– গালের ওপর থেকে হাত সড়াও মা দেখি? রিক্ত কাঁদতে কাঁদতে শক্ত করে মিমের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি জানতে চাই রাঙা মা মেঝো ভাইয়ার (ইশান) মোবাইল ফোন টা আমি হাতে নিয়ে কি অপরাধ করেছি? মিম ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– কোনো অপরাধ করোনি মা তুমি।তাই তো আমরা সবাই ওকে বকে দিয়েছি? মিম ইমানকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
– ড্রয়ারে দেখো,ফাস্ট এইড বক্স ওখানে রেখেছি।হৃদিকা এহসান সবটা শুনে তার চাচাতো বোন লায়লা বেগম কে বলেন,
– সব আমার দোষ আপা।আমি ভুল করেছি।ছেলের ভালো করতে গিয়ে নিজেই খাল কেটে কুমির বাড়িতে এনেছি।মিম আনমনে হৃদিকা এহসানের ঘরে এসে বলে,
– ভয় পেয়ো না মা,আমি ওকে খাইয়ে ঔষধ লাগিয়ে তোমার ছোটো ছেলের (ইমান) কাছে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি।নয়ন তাঁরা বেগম পান চিবোতে চিবোতে এসে বলেন,
– মেয়ে টাকে আমি আগে কত ভালো ভেবেছি? রায়হান সাহেব অফিস থেকে ফিরে মেয়ের (রিক্ত) মাথার কাছে বসে আছেন।তার ভয় পেয়ে জ্বর এসেছে নাকি? মিম রায়হান সাহেব কে আস্বস্ত করে বলে,
– যাও বাবা,গিয়ে জামাকাপড় ছেড়ে খেয়ে দেয়ে রেস্ট নাও।আমরা আছি তো নাকি? আহমেদ সাহেব সবটা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
– মেয়ে টা কত বড় বেয়াদব? আমি সেটাই ভাবছি? ও কি জানে না? আমরা আমাদের মেয়ে কে কত আহ্লাদে মানুষ করেছি? মিম এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পরে ও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।আশ্চর্য! আমরা কি ওকে সংসারের হাল ধরতে বারণ করেছি? নয়ন তাঁরা মৃদু হেসে বলেন,
– ও যে ছোটো বউ মা (মিম) কে অপছন্দ করে।সেটা তো আমি ওকে প্রথম দিন দেখে বুঝেছি।মেয়ে টা (মিম) এসেই কি সুন্দর ওর দায়দায়িত্ব পালন করছে।বুঝতে পারছিনা আমি সেখানে মেঝো বউ মায়ের (মিহা) অসুবিধে টা কি?

সকালে,
ঘুম থেকে উঠে রিক্ত চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,আম্মু যাবো আমি যাবো।আম্মু কোথায় তুমি? মিম ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এই তো সোনা,আজকে আমি তোমার জন্যে নুডলস পিঠে আর সাথে গরুর মাংসে ঝোল করেছি।আচ্ছা মা,তোমরা ভাইয়েরা যে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছে।তুমি সেই দেখতে যাবে না নাকি? রিক্ত শক্ত করে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– জানো রাঙা মা? আমি এবার ভাইয়া কে পিংক কালারে গরু কিনতে বলেছি।ইমান এসে রিক্তের গাল টেনে ধরে বলে,
– পিংক কালারের গরু তো পাইনি সোনা,তাই সাদাকালো রঙের গরু টা কিনে এনেছি।মিহা এসে রিক্তর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে,
– চলো সোনা আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি? রিক্ত কাঠকাঠ জবাব দেয়,
– নাটক কম করো একটু।আমি আমার মায়ের (মিম) হাতে খাবো আগেই বলেছি।ইমান বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
– রাতে এতো কাণ্ড করে ও কি আপনার সাধ মেটেনি? প্লিজ দয়া করে এখান থেকে চলে জান ভাবি।খাবার টেবিলে বসে রিক্ত মিমকে বলে,
– এটা নুডলস পিঠে রাঙা মা? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– সেটাই,আগে কখনো এটা চোখে দেখিনি।কি যেন নাম বললে আরেকটা এর? মিম হাসতে হাসতে,
– শেয়াই পিঠে,আমার নানু বাড়িতে এর অনেক চল।নানুমণিকে এই পিঠে বানাতে দেখেছি ছোটো বেলা থেকে।আর মায়ের কথা কি বলবো? আমরা এই পিঠে বানানোর হাতেখড়ি মায়ের কাছ থেকে।তখন অধরা এসে হাসতে হাসতে মিমকে বলে,
– দেখে আয়,তোর তিন ছেলে বদলা দিচ্ছে মেশিনের কাছে।মিম মৃদু হেসে জোভান,জায়ান ও সাভিন কে ডেকে বলে,
– খেতে চলে আসো বাবা,ওখানে তো ভাইয়ারা আছে?তিন জন এসে মিমকে বলে,
– জানো ছোটো মা শেয়াই পিঠের মেশিন টা বেশ ভালো লেগেছে আমাদের কাছে।ইমান হাসতে হাসতে মিমকে চোখ মেরে বলে,
– আমার তো মনে হয় তোমাদের মায়ের চেয়ে মেশিনের ওজন অনেক বেশি হে হে হে।মিম মৃদু হেসে ওর মুখ টা চেপে ধরে বলে,
– মুখ টা বন্ধ করেন নয়তো পিঠের সাথে মশা-মাছি যা হোক কিছু একটা ঢুকে যাবে।আশেপাশে সবাই ইমানের চেহারা দেখে মিটিমিটি হাসছে।ইমান মনেমনে বলে,”রাতে একা পাই? মনের আঁশ মিটিয়ে প্রতিশোধ নেবো তোমার কাছ থেকে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here