কর্নেল_সাহেব পর্ব ১৩

#কর্নেল_সাহেব লেখার সুরিয়া মিম পর্ব- ১৩ “রাতে একা পাই, মনের আঁশ মিটিয়ে প্রতিশোধ নেবো তোমার কাছ থেকে।” মিম মনে মনে বলে,”আশ্চর্য! গাছে কাঁঠাল আর ইনি বসে বসে এখনি গোঁফে তা দিতে শুরু করেছে? আরে আমার প্রাণের গুণোধর জামাই? বাগে পাবে তারপর তো মজা দেখাবে আমাকে?” রিক্ত গাল ফুলিয়ে গিয়ে রায়হান সাহেব কে বলে, – বাবা তুমি পিংক কালারের গরু কিনে আনোনি কেন আজকে? আহমেদ সাহেব কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে তাকিয়ে থেকে রিক্ত কে কোলে বসিয়ে বলে, – পিংক কালারের গরু হয় না মা।এ কথা কে বলেছে তোমাকে? – কেন আমার বান্ধবী রাতিয়া যে ফোন করে বললো ওরা রেডের ভিতরে পার্পেল কালারের গরু কিনেছে? মিম এসে রিক্ত কে কোলে নিয়ে বলে, – সোনা রাতিয়া তোমাকে ডাহা মিথ্যে কথা বলেছে।জোভান বাবা তোমার ল্যাপটপ টা দেও তো গুগলে সার্চ করে দেখি রেডের ভিতরে পার্পেল কালারের গরু কোন দেশে আছে? মিমের কথা শুনে রিক্ত ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, – বুঝেছি রাঙা মা,ঢপবাজ টা আমাকে মিথ্যে কথা বলেছে।কালকে কি বলে জানো? ওর বাবা নাকি ওর জন্যে সাউথ আফ্রিকা থেকে ডায়নোসরের ইয়া বড় বিশাল দাঁত নিয়ে এসেছে।এখন তো আমরা সন্দেহ হচ্ছে? ওর বাড়ির কেউ কি আদৌও কখনো সাউথ আফ্রিকা চোখে দেখেছে? ইশান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে আড়চোখে একবার মিমের দিকে তাকিয়ে ওকে উদ্দেশ্য করে বলে, – তুমি কি জানো? গত বছর ও নিজে কোরবানির পশুর হাটে পিংক কালারের গরু খুঁজতে গেছে।মিম হাসতে হাসতে ইশানকে বলে, – আপনারা ও তো কম না সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন বাচ্চা টাকে? জায়ান এসে মিমের গলা জড়িয়ে ধরে রিক্ত কে বলে, – দেখ পিচ্চি ফুঁপি,তোমার বান্ধবী রাতিয়ারা এবার কালো কালারের গরু কিনেছে।রিক্ত চোখ,নাক ও মুখ কুঁচকে বলে, – আমি আর জীবনে কথা বলবো না।এই মিথ্যেবাদী মেয়েটির সাথে। রাতে,ইমান রাদের সাথে ঈদের বাজার করে এসে মিমের কোলের ওপরে শুয়ে পরে বলে, – ঘরে চলো,আমার মাথা টা বেশ ধরেছে।মিম ওকে ভাত মেখে খাইয়ে দিতে দিতে বলে, – এখন খেয়ে ঘুমান সকালে উঠে তো সবার সাথে বদলা দিতে হবে? ইমান মৃদু হেসে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে, – হ্যাভ এ রেল্যাক্স বেবি,সি ইউ নট ফর মাইন্ড ওকে? রিক্ত মিমের কোলের মধ্যে থেকে বলে ওঠে, – ধুমা ধুম কিল না খেতে চাইলে একটু জ্বালাবে না আমার রাঙা মাকে।ইমান হাসতে হাসতে বলে, – হ্যাঁ রে বোন,আমার বউ তোর জন্যে রিজার্ভ করা এর জন্যে আমি কাছে পাইনা ওকে।মিম দু’জন কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, – কালকে ঈদ আর আজকে তোমরা ঝগড়া করছ কেন এভাবে? রিক্ত দু’হাত দিয়ে মিমের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে, – মা আমি,দাদাভাই আর তুমি কিন্তু ম্যাচিং ড্রেস পরবো কালকে? মিম ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে, – হ্যাঁ মা,এখন লক্ষী ছানার মতো ঘুমাও।ঠিক আছে? – আই লাভ ইউ রাঙা মা।খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে।মিম হাসতে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, – হ্যাঁ লক্ষীটি আমি ও খুব ভালোবাসি তোমাকে।ইমান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, – হুমম,সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।এখানে কেউ ভালোবাসে না আমাকে।তখন মিম আর রিক্ত গুনে গুনে পঁচিশ পঁচিশ পঞ্চাশ টা চুমু খায় ওকে।ইমান তারপর মিমকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলে, – এবার আমার খুব ভালো ঘুম হবে।মিম মনেমনে বলে,”হ্যাঁ দুটিতে মিলে ঘুমাও,তারপর আমাকে মায়ের কাছে রান্নাঘরে যেতে হবে।” নিপা মিমকে দেখে চমকে গিয়ে বলে, – আরে ছোটো তুই কেনো উঠে আসতে গেলি? আমরা তো আছি আম্মা (নয়ন তাঁরা) এবং চাচি আম্মার (হৃদিকা) সাথে।মিম মৃদু হেসে বলে, – তাতে কি ভাবি? তোমরা এখানে বসে কাজ করছ আমার কি ঘরে মন টেকে? হৃদিকা এহসান এগিয়ে এসে বলেন, – তোকে কিছু করতে হবে না মা।সব গুছিয়ে রাখা আছে।তুই আমাদের সবাইকে তোর স্পেশাল আদা চা করে খাওয়া আমাদের ঘুম কেটে যাবে? মিম হাসিমুখে চা বানাতে রান্নাঘরে এসে দেখে মিহা ফোর বার্নার গ্যাসের চুলো একটাই দখল করে আছে।মিম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলে, – আপু তোমার হলে আমাকে একটু সাইড দাও।মা ভাবিরা আদা চা খাবে।মিহা ওকে ব্যাঙ্গ করে বলে, – হ্যাঁ বোন তুই তো এ বাড়ির মালকিন? তোর শাশুড়ি লকারের চাবি দিয়েছে তোকে? মিম মৃদু হেসে বলে, – হিংসে করে লাভ কি বলো? তুমি বরং তোমার ওই আর্দশ বউয়ের নাটক টা চালিয়ে যাও ঠিক আছে? মিহা ক্ষেপে গিয়ে বলে, – আমি দিন দিন অবাক হচ্ছি তোর সাহস দেখে।মিম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, – চোরের মায়ের বড় গলা মানায় না ঠিক আছে? আমি তোকে ছেড়ে রেখেছি বলে উপর ওয়ালা তোকে ছেড়ে তার কোনো মানে হয় না বোন কানে গেছে? এখন তুমি সরবে না গিয়ে আমি ডেকে আনবো তোমার স্বামীকে? শোনো আমি তোমার সাথে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।তুমি শুধু শুধু ঝামেলা করছ আমার সাথে। সকালে, সবাই ঈদের নামাজ থেকে ফিরে ব্যস্ত হয়ে পরেছে গরুর সাথে।কোরবানি শেষে সবাই ডেকচি ভরে ভরে মাংস বিতরণ করছে দুস্থ ও অসহায় লোকদের মাঝে।মিম এক ফাঁকে ইমানকে ডেকে বলে, – কোরবানির গরুর গোস্তো ও যেন কাওকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় আদিব সাহেব ও আনান সায়ানের কাছে।কথা শেষ হতে না হতেই আনান কোরবানি গরুর গোস্তো নিয়ে আসে।ইমান ও এই ফাঁকে গোস্তো দিতে গিয়ে শশুর বাড়ি থেকে জামাই আদর খেয়ে আসে।মিহা মঞ্জিলে এসে ও দরজা নক করে বলে, – আদিব আঙ্কেল কি বাসায় আছে? আদিব সাহেব ইমান কে দেখে খুশি হয়ে বলে, – বাবা এতো কষ্ট করে কে আসতে বলেছে তোমাকে? ইমান পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে, – আপনার ছোটো মেয়ে (মিম) কোরবানির গোস্তো দিয়ে পাঠিয়েছে আমাকে।যতই রেগে থাকুক মনেমনে ঠিক আপনাকে ভালোবাসে সে।কথা টা শুনে আদিব সাহেবের বুকে হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠেছে।তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেন, – বাসায় এতো কোরবানির গোস্তো খাবে কে? যে রান্না করুক না কেন আজ আর খাবার নামবে না আমার গলা থেকে।নূর জাহান চোখের জল মুছতে মুছতে মনেমনে বলেন,”আমি কখনো চাইনি মাহি ও আপনার সংসার ভেঙে দিতে।যদি শাশুড়ি মায়ের মনে কি চলছে? সেটা যদি বুঝতে পারতাম।তাহলে অনেক দূরে চলে যেতাম এই বাড়ি থেকে।” তখন সায়েরা বানু এসে নূর জাহান কে বলে, – বউ মা এই শরবত টা খাইয়ে আসো ছেলে টা কে।নূর জাহান রান্নাঘরে এসে শরবত টা ফেলে দিয়ে বলেন, – আমি আর যাই হোক পারবোনা মেয়ে (মিম) টিকে কষ্ট দিতে।ওর জন্মের পর নিজের সন্তানের মতো করে আমি মানুষ করেছি ওকে।আপনি কি করে ভাবলেন মা? তার সর্বনাস আমি করবো? তাও নিজের হাতে? মিমের কোনো ক্ষতি করার আগে।আপনার লড়াই করতে হবে এই নূর জাহানের সাথে।আমি ওর মা নই তো কি হয়েছে? আমার সন্তানের ওভাব ওই মেয়ে টা পূরণ করে দিয়েছে।আদিব সাহেব ইমানকে বলেন, – আর কিছুক্ষণ বসে যাও বাবা চা নাস্তা করে যাও তোমরা চাচির হাতে।নূর জাহান বেগম মৃদু হেসে মনেমনে বলে,”লোকটা তো আমাকে তার মায়ের কথা মতে বিয়ে করে নিয়েছে,তবে ভালোবাসে না আমাকে।আমি আজ ও তার মরহুম বড় ভাইয়ের স্ত্রী সে সেভাবেই সম্মান করে আমাকে।তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন,মাহি তার প্রথম এবং শেষ স্ত্রী।আমার কোনো জায়গায় হবে না তার কাছে।” ইমান শরবত খেয়ে বলে, – আচ্ছা আঙ্কেল এবার উঠি।রাতে দাওয়াত রইলো আসবেন আন্টি এবং দাদির সাথে।আদিব সাহেব ইমানের হাত চেপে ধরে বলেন, – আমার ছোটো মেয়ের ভুলচুক ক্ষমার চোখে দেখো বাবা।তুমি নিশ্চয়ই জানো ও কি করেছে মিহার সাথে? ইমান একটু রেগে গিয়ে বলে, – দেখুন আঙ্কেল আপনার মিহা ও কিন্তু ফেরেশতা না।সে ও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ ঠিক আছে? আমি বুঝিনা বাপু, সে কি এমন পট্টি পরিয়ে রেখেছে আপনাকে, যে তার ভুলচুক গুলো পরে না আপনার চোখে।না আপনি মানতে পারছেন না? যে আপনার বড় মেয়ের ভালো এ্যাক্টিং স্কিল’স আছে।সে যাই হোক,এখন আসি আপনার ছোটো মেয়ে অর্থাৎ আমার বউ হয়তো এখনো না খেয়ে বসে আছে।আর শুনুন,আর কেউ বিশ্বাস করুক ছাঁই না করুক।আমি ষোলোআনা বিশ্বাস করি তাকে।আদিব সাহেব নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইমানের যাওয়ার দিকে।ও যেতেই মিম হঠাৎ এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, – ইসস,আমার জামাই টা কোথায় যে ছিল? কতক্ষন দেখিনি তাকে? ইমান আহ্লাদে গদগদ হয়ে ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলে, – চলো সবাই তো এখানে আছে।গিয়ে গোসল করি এক সাথে।গোসল শেষে মিম ইমানকে বলে, – ছাড়ুন প্লিজ,শুনতে পেলেন না মা ডেকে গেছে একটু আগে? ইমান নিজের ঠোঁট এগিয়ে দিয়ে বলে, – মাএ এক পিস দিয়ে যাও আমাকে? মিম লজ্জা পেয়ে চুমু খেয়ে বাহিরে বের হয়ে দেখে রিক্ত কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তারপর ও ছুটে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে, – লাভ ইউ রাঙা মা আমরা আজকের ম্যাচিং ম্যাচিং ড্রেস পরেছি এক সাথে।মিম মৃদু হেসে বলে, – হ্যাঁ সোনা একটু দাঁড়াও।দাদাভাইয়ের মাথা মুছে দিই নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।ইমান ওর হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, – সারা জীবন এভাবেই ভালোবাসবে তো আমাকে? মিম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয় ওকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here