কলেজের বড় আপু
Sumon Al-Farabi
১১তম পর্ব
⬇⬇
⬇
আমি তাড়াতাড়ি করে বাইরে চলে আসলাম । বাইরে এসে মামার দোকানে বসে চা খাচ্ছি । সেখানে একটা বন্ধুর সাথে দেখা । ওর সাথে গল্প করছি কোথায় ভর্তি হওয়া যায় সেই বিষয় নিয়ে কথা বলছি ।
এমন সময় আম্মু ফোন করলো।
– হ্যা আম্মু
– হারামজাদা কই তুই
– পাশেই ।
– পাশেই কোথায়
– মামার দোকানে
– সিগারেট খাচ্ছিস
– ছি আম্মু কি বলো এসব
– তো
– আমায় তোমার এমন মনে হয় ?
– ছেলে মানুষ বিশ্বাস নাই ।
– তাই বলে নিজের ছেলেকেও না।
– ছেলে তো ছেলে নিজের কি আর অন্যের কি?
– হুম ।
– তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
– আচ্ছা
– আচ্ছা না। এখনি আয়
– আরে বাবা আসছি ।
বন্ধু টারে বিদায় দিয়ে বাসায় আসলাম । দরজা খুলে দিতেই আমি যেন হাই ভোল্টেজ এর শক খাইলাম
– আম্মু
-……
– ও আম্মু
– কি হইছে ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন
– এই ডা কে আম্মা
– কে মানে
– আগে তো কখনো আমাদের বাসায় দেখি নি
– কি?
– আফা আপনার বাসা কই
– আম্মু
– তুই দারা। তোর কি হইছে রে? যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তোর আব্বু আসছে
– আমি এই যাবো আর এই আসবো
– তার আগে বলে যা তোর বউকে কেমন লাগছে
– এটা কি আমার বউ?
– তো কার
– তাই তো বলি
– কি
– আমাদের বাসায় পেত্নী আসলো কবে ।
-কি?
– প্রথমে দেখে তো ভয় পাইছি। আজ রাতে সিয়র জ্বর আসবে ।
আমি জানি এখন আম্মু সামনে আছে তাই নীলাদ্রি কিছু বলবে না । তাই সুযোগ টা কাজে লাগাচ্ছি। যাকে বলে সুযোগের সৎ ব্যবহার।
প্রথমে আমি কোনো পরী মনে করেছিলাম । এতোটাই সুন্দরী লাগছে । ও তো দেখতে এমনি তেই অনেক সুন্দরী আর হালকা মেকাপে ওকে পুরো স্বর্গের দেবী মনে হচ্ছে ।
– আম্মু আমি কি দেখতে এতোটাই পঁচা ।
– দূর । তুই ওর কথা কানে নিস না তো।
– ও তো বললো
– ও কি বুঝে কোনটা সুন্দর আর কোনটা খারাপ । হারামজাদা একটা ।
– ঠিক বলছো আম্মু ।
– ঐ হারামজাদা আর কতক্ষণ লাগবে তোর
– আম্মু আর একটু ।
– নীলাদ্রি রুমে গিয়ে শয়তানটাকে কানে ধরে নিয়ে আয় তো।
– আচ্ছা যাচ্ছি ।
নীলাদ্রি মনে মনে ভাবছে আজ সুযোগ পাইছি ।
– কি রে এতো সাজুগুজু করছিস কেন?
– কে? ওহহ আপনি
– লাভ নাই ।
– কিসের লাভ নাই
– এতো সাজুগুজু করে লাভ নাই
– কেন?
– বাংলাদেশের কোনো মেয়ের চয়েজ এতো বাজে না যে তোর দিকে তাকাবে ।
– জানি আমি । কিন্তু নিজের কাছে সবাই রাজকুমার ।
– হুম । তোর কপাল ভালো
– কেন?
– গেট আপ নষ্ট হবে বলে কিছু করলাম না ।
– তাই । তাহলে তো আরও অনেক কিছু বলা যায়
– শুধু বলেই দেখ না পরে তোর কি হাল করি।
– কি করবেন শুনি?
– পরে তো তোর বারোটা বাজিয়ে দিবো সেটার তো কোনো সন্দেহ নেই ।
– কেন
– পরেই বুঝতে পারবি । এখন কি তোর সাজুগুজু শেষ
– হুম । আরে লাগছে তো? কি করছেন ?
কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কান ধরে টেনে আম্মুর সামনে নিয়ে এলো।
– আম্মু নিয়ে আসছি
– মানে কী আপনি আমার কান ধরে এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?
– আমি বলছি তাই ।
– ওহহ।
– এখন চল
– হুম চলেন।
এরপর সবাই মিলে চলে আসি। আব্বু আগেই আসছে । আমি একটু ভয়ে আছি কারণ হচ্ছে রাহুল আংকেল এর মেয়ে ।
আর যাই হোক ওর সামনে পরা যাবে না। তাই আমি চুপিচুপি ঘুরছি ।
অনেক মানুষ আসছে। বাহ কতো সুন্দরী মাইয়া। মনে হচ্ছে মেয়ের মেলা বসেছে ।
– সুমন
– হ্যা আম্মু
– একা একা কই যাস। নীলাদ্রি কে সাথে নিয়ে ঘোর না।
– তোমার সাথে রাখো না।
– গাধা আমাদের সাথে থাকলে ও বোরিং হয়ে যাবে ।
– আচ্ছা পাঠাও।
– এই নীলাদ্রি
– হ্যা আম্মু
– তুমি ওর সাথে ঘোরো যাও
– না আম্মু । আমি আপনার সাথে ঠিক আছি
– আরে আমি তো এখন ওখানে গিয়ে বসবো তুমি বোরিং হয়ে যাবে । তারচেয়ে বরং ওর সাথে ঘুরো।
– আচ্ছা ।
এরপর আমি আর নীলাদ্রি চারপাশ টা ঘুরে দেখতে লাগলাম । এমন সময় নুসরাত ফোন করে
– হ্যালো
– হুম । বলো
– তোমার কোনো খবরই নাই কেন জানি?
– এই তো আমি আছি
– ম্যাডাম কে নিয়ে কি খুব ব্যাস্ত
– একটু । তবে কাল থেকে ফ্রী।
– তাই ? তো কাল ঘুরতে যাবে ?
– কোথায়
– চোখ যেখানে যায়।
– আমার চোখ তো শুধু আমার বাসার দিকে যায়
– তো তোমার বাসায় যাবো
– কেন ?
– তোমার আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করতে
– ওহহ। এই কথা । আমি তো ভাবলাম অন্য কিছু
– মানে ?
– ভাবছিলাম বাসায় এসে
– বাসায় এসে কি?
– বলবো
– হ্যা বলো
– মাইন্ড করবে না তো
– না তবে উল্টো পাল্টে কিছু বললে খবর খারাপ করে দিবো
– তাহলে থাক না বলি
– না। তুমি বলো
– বলবো
– হুম
– সত্যি বলবো
– আরে বাবা হ্যা
– বললাম কিন্তু
– বার বার বলছো বললাম কিন্তু বলছো না তো
– এবার বলবো
– এবার বলো
– আমি ভেবেছিলাম
– হুম
– ভেবেছিলাম
– আরে কি ভেবেছিলে
– লজ্জা করছে
– সামনে পাইলে কিন্তু পিটাবো
– তাহলে তোমার সামনে যাবো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে বলো
– আমি ভেবেছিলাম
– হুম । তারপর
– তুমি আমাদের বাসায় এসে
– হুম তারপর
– আমার প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়াবে
– সুমন তুমি না
– কি আমি বলো
– না থাক
– আরে না বলো বলো
– তুমি একটা শয়তান ।
– রোজ শুনি পুরাতন হয়ে গেছে । নতুন কিছু বলো।
– তুমি এতো ফাজিল কেন?
– তোমার মতো সুন্দরী বান্ধবী আছে তাই
– হুম । কাল সময় মতো চলে এসো
– আচ্ছা । বাই।
এতক্ষণ ফোনে কথা বলার ঘোরে আশপাশটা তেমন নোটিশ করি নি। তবে এখন মনে হচ্ছে আমার পাশে কোনো বিশধর সাপ অনবরত নিশ্বাস ত্যাগ করছে ।
পাশে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে মনে হয় আমায় খেয়ে ফেলবে
– কি হয়েছে আপনার
– কার সাথে কথা বললি রে?
– আপনায় কেন বলবো
– বলতে হবে ।
– কেন
– আমি ঐ মেয়ের দাঁত ভেঙে দিবো
– কেন হিংসা হয়
– কিসের হিংসা হবে আমার
– এই আপনার স্বামী অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছে
– আমি তোর মতো ….
– আমি জানি আপনি আমার মতো ছোটলোক নন। তাহলে জানতে চাচ্ছেন কেন?
– তোর হাসি আমার সহ্য হয় না ।
– তাই ।
– হুম । আর তোরে কে স্বামী হিসাবে মানে ? তুই তো আমার বাসার কাজের লোক হওয়ার ও যোগ্যতা রাখিস না। আমার কাজের লোক ও আমার ব্যাপারে ভালো করে জানে
– তাই । আমিও জানি
– কি জানিস তুই
– বলবো না
– জানলে তো বলবি
– আচ্ছা তাহলে বলি
– হুম বল শুনি তুই কি জানিস
– কোমরের ডান দিকে একটা তিল আছে ।
– হুম । কিহ? হারামজাদা , কুত্তা, ছোটলোক । তারমানে তুই ঐদিন
– কি ঐদিন বলেন
– ঐদিন
– বলেন বলেন
– আমার সব শেষ ।
– কিভাবে ?
– তুই চুপ থাক কোনো কথা বলবি না ।
– আচ্ছা ।
নীলাদ্রি রাগ করে ভিতরে গেল।
ভাগ্য ভালো হাটতে হাটতে বাসার বাইরে চলে আসছিলাম । নয়তো আজ কেলোর কির্তী হতো ।
– কী রে কই তুই
– কেন
– নীলাদ্রি কে কি বলছিস
– কিছু না ।
– নীলাদ্রি ভিতরে একা একা ঘুরছে
– তো আমি কি করবো
– তো তুই কি করবি মানে ?
– হ্যা আমি কি করবো
– মেয়ে টা একা একা ঘুরছে আর তুই বলছিস তুই কি করবি?
– কেন? একা একা ঘোরা যাবে না
– যদি কেউ কোনো বাজে কথা ওকে বলে আর সেটা যদি আমার কানে আসে তাহলে বাসায় ঢুকতে দিবো না।
– আম্মু আম্মু …… টুটুটু
কি জ্বালা রে বাবা। এখন আবার ওনাকে খুঁজতে হবে । ঘুরতে এসেও শান্তি নাই । যাই দেখি কোথায় হারালো।
এমা একি এতো প্রেমার সাথে দাড়িয়ে গল্প করছে । না না ঐদিকে আগানো যাবে না । আমি ভাগি
– সুমন এই সুমন
– আমায় বলছো?
– হুম । এদিকে এসো
– কেন
– আসো না।
– আচ্ছা । বলো
– কেমন আছো
– ভালোই । তুমি
– আমিও । জানেন ভাবি আমি ওকে খুব পছন্দ করতাম । কিন্তু আপনার সাথে বিয়ে হয়ে গেল ।
– হুম । আমি খুব লাকি তাই না ।
– হুম । অনেকটাই । সুমন বিথি, মায়া এদের সাথে দেখা হইছিলো?
– এরাও আছে ?
– হুম । ওরাও আসছে । ওরা তো তোমার কথা অনেক আগেই আমায় বলেছে ।
– এ্যা।
– কি এ্যা বলছো মায়া নাকি তোমার কাছে শাড়ি পড়াই নিবে । ওকে দিলে আমাকেও দিতে হবে ।
– কি? ওরা এখন কই আছে
– মনে হয় রুমে ।
– ওহহ। আচ্ছা তুমি রুমে যাও আমি সময় করে আসবো ।
– সত্যি তো
– পাক্কা ।
– ভাবি চলেন
– ওনাকে রেখে যাও
– বউ ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করে না ।
– হুম ।
– ভাবি পরে কথা বলবো ।
– আচ্ছা
প্রেমা চলে গেল ।
– তুই যে এমন চরিত্র হীন জানতাম না
– মানে
– তুই এখন ওদের শাড়ি পড়াতে যাবি আর তারপর দেখবি কার কোথায় তিল আছে
– এই যে যতটা ভাবছেন ততটা না। বউয়ের দেখছি বলে কি সবার দেখবো । এখন কথা না বলে আসেন ।
নীলাদ্রি কে নিয়ে সোজা আম্মুর কাছে চলে আসলাম ।
– আম্মু আমি বাসায় যাবো
– কেন
– আমার মনে হচ্ছে ডায়রিয়া হইছে
– কি বলিস কি ভাবে
– ডায়রিয়া কিভাবে হয়
– ঔষধ খাইছিস
– হুম । ডাক্তার বলছে বাসা গেলে ঠিক হবে
– কি?
– না ইয়ে মানে হ্যা। আমি বাসায় যাবো ।
– আচ্ছা ।
– এনাকে তোমার সাথে রাখো
– আমিও বাসায় যাবো
– না আপনি থাকেন
– না আম্মু ও অসুস্থ একা একা থাকবে কেমন না
– তাই তো আচ্ছা দুজনই যাও।
– আচ্ছা ।
আব্বুর থেকে বাইকের চাবি নিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে ভাগলাম।
– একটা মেয়ের ভয়ে পালালি
– একটা না মোট ৪জন
– ওহহ।।।
– একবার হাতে পেলে আমার মগজ ধোলাই করে ছাড়তো।
– ভালোই হতো
– কিন্তু আপনি আসলেন কেন
– বাসায় কেউ নাই
– তো আজ কি রোমান্স করবেন নাকি
– সি.. রোমান্স তাও আবার তোর সাথে ডিজগাস্টিং
– তাই । তো কি করবেন
– তোরে ধোলাই করবো ।
– কি??? আমি বাসায় যাবো না ।
– এই আকাশ মেঘলা মনে হচ্ছে ।
– বৃষ্টি হবে হয়তো ।
– তাড়াতাড়ি চল। নয়তো ভিজে যাবো
– ধরে বসেন শক্ত করে।
– তুই জোরে চালা আমার টা আমি বুঝবো ।
– ওকে ।
আমি জোরে বাইক চালাতে লাগলাম। সামনে একটা স্পিড ব্রেকার দেখে স্লো করতেই ধপাস হলো
– মা গো মরে গেলাম রে
– আগেই বলছিলাম ধরে বসেন ।
– ঐ আমারে তোল।
– হুম । আমি ছাড়া তো আর কেউ তুলতে আসবে না । তুলছি।
– তাড়াতাড়ি ।
এরপর ওকে কোনো ভাবে বাইকে তুলে হালকা জোরে চালিয়ে বাসায় আসলাম ।
বাসায় আসার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে । এতো হাটতে পারছে না । কোন কুক্ষনে যে জন্ম নিছে আল্লাহ জানে খালি ধপাস ধপাস করে পড়ে যায়।
– হেল্প লাগবে
– দরকার নেই আমার। আমি একাই পারবো ।
– তাই ।
– একটু বসে রেষ্ট নিলে আমি নিজেই পারবো । নিজের চরকায় তেল দে।
– তেল একটু বেশি হইছে তো তাই অন্যের চরকায় ও দিতে চাচ্ছি । কেউ না নিলে তো করার কিছু নাই । ওকে আমি গেলাম । হেল্প লাগলে বইলেন ।
এই কথা বলে আমি রুমে চলে আসলাম….
…………
………..
……….
………
……..
…..
…..
….
…
.
To be continue