কাছে দূরে পর্ব ২১

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_mehra
#পর্ব___২১ ♥️

সাবাবের পেছনে হীর। সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে ডাক পড়ল মিলির।

—-‘ কি ব্যাপার ড্রেস চেঞ্জ?’

মুখ তুলে তাকালো হীর। আঁড়চোখে সাবাবের অবস্থান দেখে সিঁড়ির শেষ ধাপ অতিক্রম করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

—-‘ চুরিদারটা আলপিনে আঁটকে ছিঁড়ে গেছে!’

বড় আফসোস হলো এশার।

—-‘ ইশ, একটু সাবধানে হাঁটা চলা করবি না?’

এশার কথাটা পছন্দ হলো না আদ্রর। তাই মুখ কুঁচকে বলল,

—-‘ তুই বলছিস সাবধানে হাঁটার কথা? রাস্তায় এক গাদা গোবর থাকলেও তো তুই সোজা ভাবে হাঁটতে পারিস না! আর শেষ অব্দি সেই গোরবে পা!’

ফিক করে হেসে দিলো মিলি। আদ্রর কথায় সম্মতি দিয়ে বলল,

—-‘ ঐ যে সেবারের ঘটনাটা মনে আছে তো? কি বোকার মতো অকাজ টাই না করেছিলিস তুই?’

এশা বোবা চোখে দুই বন্ধুর ঠাট্টা দেখে চলেছে! হীরকে সাবধানে হাঁটার বাণী শুনিয়েও পার পাওয়া গেলো না নিজের বেখেয়ালি চলাফেরার জন্য। এশাকে জলে পড়তে দেখে হীর তার সঙ্গ দিলো।

—-‘ তোরা কত সোজা হয়ে হাঁটা চলা করিস জানা আছে কিন্তু আমার!’

হীরের কথায় মুখের হাসি উড়ে গেলো দু’জনেরই। মুখে হাত চেপে অসহায় চোখে হীরের দিকে তাকালো। এশা বুকে বল পেলো। আদ্র আর মিলির দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

—-‘ আব কাহা জায়োগে তুম লোগ?’

হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ল। তিনজনের উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ তোরা হলি কুকুরের বাঁকা লেজ! যা ধরে ঝুলে পড়লেও কখনও সোজা হওয়ার নয়। ঠিক তেমনি একজনকে সাপোর্ট করলে সেও হাতে চাঁদ পেয়ে বসে। আর লেগে পড়ে আরেকজনের মজা উড়াতে।’

তিনজনেই এবার তটস্থ চোখে তাকালো হীরের দিকে। জবাবে মুখে হাত চেপে দাঁত কেলিয়ে হাসল। হীর চোখে মুখে বিরক্তি ঢেলে বলল,

—-‘ অলরেডি অনেক লেট আমরা। আর বেশি লেট করার ইচ্ছে থাকলে বাসায় থাক তোরা।’

এবারও জবাবে তারা কিছু বলতে পারল না৷ তিনজন স্রেফ মুখ চাওয়াচাওয়ি করে জিহ্বা কাটলো।

___________

সাবাবের সহজ কথা, ‘তোরা গাড়িতে গিয়ে বস, আমি কলটা ধরে আসি।’

আধঘন্টা পার হতে চলল। সাবাবের কলে কথা বলা এখনও শেষ হয়নি! হীর বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। বাকি তিন বন্ধুর জমিয়ে আড্ডা চলছে ভেতরে। তাতে তার মন বসছে না। তার কৌতুহল সাবাবের কলদাতার উপর। ফোনের ওপাশে কে আছে? এতক্ষণ ধরেও যার কথা বলা শেষ হচ্ছে না! আচ্ছা, কলদাতা কি সেই মেয়েটা যার কথা সাবাব সেদিন তাকে বলেছিলো? যার সাথে তার চার বছরের প্রেম! নাম্বারটা কি তার বন্ধু সংগ্রহ করতে পেরেছে? সংগ্রহ করে তাকে দিয়েও দিলো?

হীরের মনে আগুন জ্বলে উঠলো! বুকের ভেতর কষ্ট হতে লাগল। মেয়ে টা আবারও সাবাবের জীবনে ফিরে এসেছে, এটা মানতে পারছে না হীর! বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলেও নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করল না সে। চাতকিনীর মতো তীক্ষ্ণ চোখে সাবাবকে দেখল। সে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে! চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। যেন অনেক গুলো দিন বিরহে কাটিয়ে অবশেষে আজ সুখের দিশা মিলল।

হীরকে পানসে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি সুক্ষ্ম হলো সাবাবের। ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে তাড়াতাড়ি বিদায় দিয়ে কলের লাইন কাটল। বড় বড় ধাপ ফেলে এগিয়ে আসতেই হীরের প্রশ্ন তীরের মতো ছুটে এলো,

—-‘ আমেরিকাওয়ালির নাম্বার পেয়ে গিয়েছো?’

আকস্মিক প্রশ্নে সাবাব ভড়কালো কিঞ্চিৎ! ভাবুক কন্ঠে বলল,

—-‘ আমেরিকাওয়ালি কে?’

হীর অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ মানে কি?’

সাবাব কি বুঝল বোঝা গেলো না। হীরকে তাড়া দিয়ে বলল,

—-‘ এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সেই কখন বললাম গাড়িতে বসতে? জানিস কত লেট হয়ে গিয়েছে?’

হীর অবাক দৃষ্টি মেলে তাকালো। কপাল কুঞ্চিত করে বলল,

—-‘ কত লেট হয়েছে জানতেই ঘড়ি দেখতে বের হয়েছিলাম।’

কথাটা বলে সাবাবের জবাবের অপেক্ষা করল না সে। হুট করে ঢুকে গেলো গাড়িতে। সাবাব হীরের ঝাঁঝাল কন্ঠে কিছুক্ষন তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইল। এখানে রাগ বা অভিমান কেন আসল তার কারন উদঘাটন আর করতে পারল না। আদ্রর ডাকে ঘোর কাটিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। গাড়ি চালাতে চালাতে কয়েকবার আঁড়চোখে দেখার চেষ্টা করছিলো হীরকে কিন্তু হীর নিজেকে আড়াল করে এমন ভাবে বসল যে সাবাব তার দিকে ঘুরে বসে গাড়ি চালালেও তাকে দেখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

গাড়ি এসে থামলো শপিংমলের সামনে। পেছন থেকে গাড়ির দরজা খুলে বের হলো আদ্র,এশা আর মিলি। হীর বসে আছে সাবাবের পাশের সীটে। শপিংমলের হদিশ মিলতেই সেও ঝটপট করে নামার প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু ব্যার্থ হলো। গাড়ির দরজায় হাত রাখতেই সাবাব গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। হীর চমকে উঠলো। ভড়কানো চোখে সামনের অবস্থান দেখলো। সাবাব তাকে নামতে না দিয়ে গাড়ি নিয়ে পার্কিংএ এলো। সবাই তো নেমে গেছে! তাহলে তাকে কেন নামতে দেওয়া হলো না? তবে কি সাবাব আমেরিকা-ওয়ালির চিন্তায় ভুলে গেছে তার পাশে হীর বসেছিলো? হীরের রাগে শরীর কাঁপতে আরম্ভ করল। ভেতরে চাপা কষ্ট হতে লাগল। গাড়ি চলতে থাকা অবস্থাতেই ইচ্ছে হলো গাড়ি থেকে নেমে পড়তে। কিন্তু তাকে ততোদূর কষ্ট করতে হলো না। তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে পাশ থেকে সাবাবের সরল কন্ঠ ভেসে আসল,

—-‘ কি নিয়ে এতো ভাবা হচ্ছে?’

হীর বিরস মুখে তাকালো। শুঁকনো হাসি দিয়ে বলল,

—-‘ আমার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভাবছি।’

—-‘ হেয়াট!’

—-‘ জি।’

সাবাবকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না হীর। গাড়ি থেকে নেমে মলের দিকে হাঁটা ধরলো সে। সাবাবের মনে আগুন লেগে গেলো। হীরের বয়ফ্রেন্ড! এটা কি করে সম্ভব? আর কে তার বয়ফ্রেন্ড? দেখতে হচ্ছে তো! তাকে এক গুলিতে না মারতে পারলে তো সাবাব শান্তি পাবে না। সাবাব গাড়ি পার্কিং করে বের হতে হতে ততক্ষণে হীর শপিংমলের ভেতরে চলে গিয়েছে। সাবাব গাড়ির চাবিটা পকেটে রাখতে রাখতে হাত ঘড়িতে নজর বুলালো। ঠিক তখনই কেউ আচমকা সামনে এসে দাঁড়ালো তার। সাবাব না চাইতেও দাঁড়িয়ে পড়ল। তার বুকের ভেতরটা কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার বার্তা দিয়ে কেঁপে উঠলো!

______

সানিয়ার পায়ে পায়ে ঘুরছে নেহাল। সানিয়া যেখানে যাচ্ছে নেহালও সেখানেই যাচ্ছে। শপিংমলের সবাই সানিয়া আর নেহালের অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে বেশ। কেউ কেউ ভাবছে এদের মধ্যে ভালোবাসাটা বিরল। আবার কেউ কেউ ভাবছে এরা একজন আরেকজনের প্রতি ওভার পজেসিভ। সাবাব দূরে দাঁড়িয়ে সানিয়া-নেহালকে দেখে বেশ কিছুক্ষন মজা উড়িয়ে এবার বেশ সিরিয়াস হয়ে হীরকে খুঁজতে লাগল। হীর এখানে নেই। গ্রাউন্ড ফ্লোরে কিছুক্ষন আগে দেখা গেলেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সাবাব ভাবল মাকে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু মা তো মহা ব্যস্ত নেহালের মায়ের সাথে। আর বাবা ব্যস্ত নেহালের বাবার সাথে। হীরও নেই আর তার ফ্রেন্ডরাও নেই। হোপফুললি তারা চারজন একসাথেই আছে। সাবাব কাউকে একটা ফোন করতে করতে সেকেন্ড ফ্লোরে গেলো। সেকেন্ড ফ্লোর কেবল জেন্টসদের জন্য। জেন্টস শার্ট-প্যান্ট,জুতা দিয়ে ভরপুর চারিপাশ। এখানে হীরের না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই নিরাশ মনে থার্ড ফ্লোরে চলে গেলো সাবাব। থার্ড ফ্লোর অনলি ফর লেডিস্ শপ। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো সাবাব। আবার গেলো ফোর্থ ফ্লোরে। এখানে সব খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। সাবাব চারপাশে তীক্ষ্ণ নজরে তাকাতে লাগল। হীরের জন্য এই মুহুর্তে ভীষণ দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে তার! কোনো বিপদ যেন না হয়! এখানেও হীরকে চোখে পড়ল না সাবাবের। চার চারটা মানুষ গায়েব হয়ে গিয়েছে! আদ্র,এশা, মিলি কেউ নেই! সাবাব আবারও ফোন বের করল। তাড়াহুড়ো করে মাহদীর নাম্বারে ডায়াল করল। একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ‘স্যার’ বলে সম্মোধন করল মাহদী। সাবাব ভীত কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ বাইরের সব কিছু ঠিক আছে তো?’

—-‘ ইয়েস স্যার।’

—-‘ আচ্ছা একটা কথা বলোতো, হীর বা হীরের কোনো ফ্রেন্ড আই মিন আদ্র,এশা,মিলি ওদের কাউকে বের হতে দেখা গিয়েছে? একা বা একসাথে?’

—-‘ স্যার, আমরা তো উনাদের কাউকে ভেতরে যেতেই দেখিনি!’

—-‘ হোয়াট রাবিশ! ওরা তো একসাথেই ভেতরে এসেছে। এন্ড ফাইভ মিনিটস আগেও তারা গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো!’

সাবাবের রাগে মাহদী মাথা নত করে নিলো। নীচু স্বরে বলল,

—-‘ স্যার, তখন আমি আর কিরন এসে পৌঁছাতে পারিনি এখানে। আমর দু’জন মাত্রই এলাম এন্ড আপনিও কল দিলেন!’

মাহদীর কথায় সাবাবের রাগটা আরও চড়াও হলো। ভয়ংকর রেগে বলে উঠলো,

—-‘ ইডিয়ট কাজের সময় তোমাদের লেট কি করে হয় আমি বুঝতে পারিনা!’

—-‘ স,,সরি স্যার।’

—-‘ জাস্ট শাটআপ। ইভান কে ফোন দাও।’

মাহদী ভয়ে ঢোক গিলল। ইভানকে ফোন তুলে দিতেই সাবাব ইভানকেও একই প্রশ্ন করল। ইভান সাবাবকে আস্বস্ত করে বলল,

—-‘ নো স্যার! হীর বা তার ফ্রেন্ডদের কাউকেই বের হতে দেখা যায়নি।’

সাবাব কপালে হাত ঠেকালো! কোথায় গেলো হীর! আর কোথায় গেলো বাকিরা?

#চলবে_ 🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here