কাছে দূরে পর্ব ২২

#কাছে_দূরে 🥀
#moumita_mehra
#পর্ব___২২

আটতলা ভবনের শপিংমল। পাঁচতলা অব্দি শপিংমল, আর বাকি তিনতলা হলো ফ্লাট। সেখানে কয়েকটা পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটা দুনিয়া। ভদ্রলোকের বাসায় অনুমতি ব্যাতিত প্রবেশ করা অনুচিত! তারউপর ভেতরে ঢুকে তল্লাশি করা তারা কিছুতেই এলাউ করবে না। তাই ইচ্ছে থাকলেও হীর আর তার বন্ধুদের খুঁজতে বাসা গুলোতে তল্লাশি করতে পারল না সাবাব। কিরন,ইভান,আভিক,মাহদী কেউ কোনো যুক্তিসঙ্গত কারন খুঁজে বের করতে পারল না যেটা দেখিয়ে বাসা গুলোতে ঢোকা যায়।

আটতলা ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে সাবাব। চারপাশে কৃত্রিম আলোর ছড়াছড়ি! রাস্তা থেকে ভেসে আসছে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা যানবাহন গুলোর আত্নচিৎকার। এসব অসহ্য শব্দ গুলোর মাঝেও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সব ভয়ংকর চিন্তাভাবনা! একের পর এক কল দিয়ে চলেছে হীরের নাম্বারে। ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। যার দরুন দুঃশ্চিন্তা গুলো আরও ভয়ংকর রূপ ধারন করছে। বাকিদের ফোনেরও একই অবস্থা! কি যে হচ্ছে মাথায় ঢুকছে না সাবাবের! মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। ভেতরের আতংক ক্রমশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

—-‘ স্যার, নীচে উনাদের কিছু জানাবো?’

কিরনের প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সাবাব। পেছন মুড়ে কিরনের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-‘ না, এই মুহুর্তে বাবা-মাকে কিছু জানালে ব্যাপারটা বিগড়ে যাবে। তারা অযথা দুঃশ্চিন্তা করবে আর দেখা যাবে সানির বিয়েটা আবারও মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হবে।’

কিরন হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ ওকে স্যার।’

মাহদী কারোর সঙ্গে কলে কথা বলছিলো এতক্ষণ। মাত্রই কল কেটে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো সাবাবের সামনে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল

—-‘ স্যার, নীচের সবগুলো সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হয়েছে। হীর বা তার ফ্রেন্ডরা কেউই বাইরে যায়নি! তারা ভেতরেই আছে কিন্তু ঘন্টা খানিক যাবত তারা ক্যামেরাতেও ধরা পড়েনি!’

সাবাব কপালে হাত ঠেকিয়ে নিঃশ্বাস আঁটকে নিলো। সবটা যেন গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে! কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে ধরতে পারছেনা তার মস্তিষ্ক!

‘এই বেটা আয় বলছি? একটা শব্দ করবি তো মাথা বরাবর সুট করে দিবো!’

আভিক এক লোকের কলার্ট টানতে টানতে নিয়ে হাজির হলো সাবাবের সামনে। লোকটা আভিকের হাতে রিভলবার দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। হাস ফাঁস করতে করতে কম্পিত স্বরে বলল,

—-‘ আ,,আমাক ছাড়ি দ্যান বাবু আমাক ছাড়ি দ্যান! আমি কিছু করিনি গো বাবু আমাক ছাড়ি দ্যান।’

সাবাব তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো লোকটা। উনিই সেই লোক যাকে পার্কিংএ দেখা গিয়েছিলো! যার হাবভাব চালচলন সবটাই সন্দেহজনক ছিলো। হীরকে খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছিলো! আর হঠাৎ সাবাবের সামনে এসে পড়েছিলো।

লোকটার অনুনয় ঘেরা কন্ঠে সাবাবের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সে লোকটার দিকে এগিয়ে আসতেই যেন লোকটার মরন বাচন দশা হলো। ভয়ের দরুন মুখের রং নীল হয়ে উঠলো। সাবাবকে এতোটা ভয় পাওয়ার কারন সাবাব নিজেও যেন ধরতে পারছেনা! সাবাবের মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এই ব্যাক্তি কারোর দলের হয়ে কাজ করে! আর সাবাব কে সে খুব ভালো করেই চিনে।

আভিক লোকটাকে সাবাবের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,

—-‘ স্যার, এই লোকটার চলাফেরা আমার প্রথম থেকেই খুব সন্দেহজনক লাগছিলো! সেই প্রথম থেকেই ওর উপর আমার নজর ছিলো। আর হীর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই লোকও বেশ কিছুক্ষণ গায়েব ছিলো!’

সাবাবের কপাল কুঞ্চিত হলো। তার শক্ত হাত আরও শক্ত হলো লোকটাকে মারবে বলে। সাবাব নিজের ক্রোধ সংযত করতে না পেরে লোকটার কান আর গলার মাঝখান বরাবর এক ঘুষি মারতেই লোকটা ছিটকে পড়ল কয়েকহাত দূরে। তীব্র যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠলো লোকটা। সাবাবের দয়া হলো না! সে আবারও তেড়ে গেলো লোকটার সম্মুখে। লোকটা নীচে পড়ে থাকা অবস্থাতেই সাবাব চড়ে বসল তার উপর। তার কলার্ট চেপে সাবাব হিংস্র চোখে তাকিয়ে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ কোথায় আছে হীর আর তার বন্ধুরা? কে ওদের কিডন্যাপ করিয়েছে বল?’

লোকটা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। চিত হয়ে থেকেই সাবাবের পা ধরার বৃথা চেষ্টা চালালো। চেষ্টা বিফল হতেই কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,

—-‘ আমি কিছু জানিনা বাবু। বিশ্বাস কইরেন বাবু আমি কিছু জানিনা!’

—-‘ ভালোয় ভালোয় বল বলছি! অন্যথা এর ফল খুব একটা সুমিষ্ট হবে না।’

সাবাব লোকটার মাথায় রিভলবার ঠেকাতেই লোকটার প্রান উড়ে গেলো। ভয়ের দরুন সে না পারছে কাঁদতে আর না পারছে কথা বলতে।

—-‘ কি হলো বল?’

সাবাব চেঁচিয়ে উঠলো বিকট আওয়াজে। লোকটা কেঁপে উঠে আবারও কেঁদে উঠল। সাবাব অধৈর্য্য হয়ে উঠল লোকটার কান্নায়। লোকটার কলার্ট ছেড়ে এবার লোকটার গাল চেপে ধরে মুখ হা করিয়ে ধরল সে। মুখে হা হতেই তৎক্ষনাৎ সাবাব আরও এক ভয়ংকর কাজ করে বসল। লোড করা রিভলবার টা লোকটার মুখে পুরে দিয়ে বলল,

—-‘ তোর মৃত্যু নিশ্চিত!’

লোকটা কাঁপতে কাঁপতে গোঙ্গাতে লাগল! ভয়ে ঢোক গেলাও এই মুহুর্তে তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া সে খুব ভালো করেই জানে সাবাব ঠিক কতটা ভয়ংকর। মাত্র এক মাসে সে অসংখ্য মানুষের মার্ডার করেছে।

নিরুপায় হয়ে লোকটা মুখ খুলতে রাজি হলো। সাবাব তাকে একটানে দাঁড় করালো! লোকটা হেলতে দুলতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,

‘চারতলা কফি হাউজে হীর আর তার বন্ধুরা আছে। কফি খাচ্ছে। আর সঙ্গে কেউ একজন আছে যেটা সে বলতে পারবেনা! সেটা সাবাবের জন্য সারপ্রাইজ।’

সাবাব হাতে প্রাণ ফিরে গেলো। লোকটাকে আভিকের দিকে ঠেলে দিয়ে সে এক দৌড়ে ছুটে গেলো চারতলা কফি হাউজটাতে। ভেতরে ঢুকে চারপাশ ছানমান করতে নিলেই এক লোক ছুটে এলো তার দিকে। ডান পাশের কোনের একটা রুম ইশারা করে বলল,

‘ স্যার আপনার জন্য আপনার ফ্রেন্ড ওখানে অপেক্ষা করছে।’

‘ফ্রেন্ড’ নামটা শুনতেই সাবাবের কপাল কুঁচকে এলো। প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে লোকটার দিকে তাকাতেই সে মৃদু হেসে বলল,

—-‘ প্লিজ কাম।’

সাবাব লোকটার পেছনে হাঁটা দিলো। কয়েকটা চেয়ার টেবিল অতিক্রম করতে দেখা মিলল ‘স্পেশাল’ নামে ছোট্ট একটা রুম। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই গোল টেবিলে বসে থাকতে দেখা গেলো পাঁচজন কে। রংবেরঙের লাইটিংএ চোখ ঝলসে এলো সাবাবের। তবুও সে চিনতে ভুল করলো না তার সামনের মেয়েটা হীর। হীরকে দেখতেই তার বুকের ভেতর শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। ভেজা গলায় ঢোক গিলল সে। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস নিতেই তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক জানান দিলো এখানে পাঁচজন লোক আছে। একজন অপরিচিত! সাবাব হাতে রিভলবার উঠালো। কাজ একটাই, এই অপরিচিতকে এখানেই শেষ করে দেওয়া। তার এতোটা দুঃসাহসের ফল তো তাকে পেতেই হবে। সাবাবের হাতে রিভলবারটা কারোর চোখই এড়ায়নি। হীর লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সাবাবের হাতের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বলল,

—-‘ ক,,কি করছো ভাইয়া?’

সাবাব ক্ষপ করে হীরের হাতটা ধরে তার দিকে টেনে আনলো। হীরকে বাহুডোরে আগলে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ মৃত্যু তার নিশ্চিত।’

অপরিচিত বাদে উপস্থিত সবাই ভড়কে গেলো। চারবন্ধু স্রেফ ফ্যালফ্যাল করে একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে। অপরিচিত মুচকি হাসল। হীর উপলব্ধি করল অপরিচিতর হাসিটা অসাধারণ। সাবাব তাকে ঠিক করে একবার দেখলেই তার হাসির প্রেমে পড়ে যাবে। কিন্তু রংবেরঙের লাইটিং এর অত্যাচারে সবার মুখই অস্পষ্ট ধরা দিচ্ছে চোখে।

অপরিচিত মুচকি হাসতে হাসতেই উঠে দাঁড়ালো। সাবাব আন্দাজ করে নিলো তার কাছেও রিভলবার থাকবে। তাই সত্যি হলো। সেও রিভলবার বের করে সাবাবের দিকে তাক করল। হীর কেঁপে উঠলো ভয়ে। বাকিরাও একই আতংকে কাঁপছে! হীর সাবাবের বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে সাবাবের সামনে এসে দাঁড়ালো। অপরিচিতর দিকে ফিরে তেজি গলায় বলে উঠলো,

—-‘ হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস?’

অপরিচিত আবার মুচকি হাসল। রিভলবারটা লোড করে ফিসফিস আওয়াজ করে বলল,

—-‘ দিস ইজ আ গেম সুইটহার্ট!’

হীরের বুক কেঁপে উঠলো। সাবাবের দিকে আরেকটু লেপ্টে দাঁড়াতেই ভেসে আসল সাবাবের নরম কন্ঠে,

—-‘ তরী!’

সাবাবের মুখে নিজের নাম আবিষ্কার করতেই হাসির ঝিলিক খিলে গেলো অপরিচিতর মুখে। পাশে সুইচ টিপ দিতেই রংবেরঙের লাইট বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক আলো জ্বলে উঠলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সবার মুখ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সাবাব হীরকে অতিক্রম করে মুখে মিষ্টি হাসির রেখা টেনে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটাও হাসলো সাবাবের ন্যায়। সাবাবকে ঝাপটে দূরত্ব মেটালো। সাবাবও বাঁধা দিলো না। ভদ্রতার খাতিরে সেও আলগাভাবে জড়িয়ে ধরলো তরীকে।

তরী হাস্যোজ্জ্বল চোখে দৃষ্টি বুলালো সাবাবের প্রতি। খানিক অভিযোগের সুরে বলল,

—-‘ বিলেত ফেরত অফিসার সাহেব দেশে এসে তো আমাকে একদম ভুলেই গিয়েছেন। না কোনো কল আর না কোনো ম্যাসেজ! কতটা স্বার্থপর তুমি!’

তরীর কথায় হেসে ফেললো সাবাব। মাথা চুলকে অপরাধী গলায় বলল,

—-‘ এখানে এসে এতোটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে তোমার সাথে কথা বলার আর কোনো সুযোগই হয়নি। আর সেই সাথে তোমার আগের নাম্বার অফ প্লাস তোমার বাংলাদেশের নাম্বার তো আমার জানা নেই!’

—-‘ ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়৷ বন্ধুমহলের সবার কাছে তরীর নাম্বার আছে আর নায়ক সাহেবের কাছে নাকি আমার নাম্বার নেই।’

—-‘ সো সরি ফর দ্যট। এখন থেকে তোমার নাম্বার, ঠিকানা সব একদম ঠোঁটের আগায় মুখস্থ রাখবো কেমন?’

সাবাবের কথায় হাসির ঝংকার তুলল তরী। হাসতে হাসতে গলারস্বরটা নীচু করে বলল,

—-‘ আমার ড্রাইভারটা বেঁচে আছে তো? নাকি স্পেশাল ভাবে হেডসট দিয়ে মেরেছো?’

সাবাব দাঁত কেলিয়ে হাসল। চোখের ইশারায় সরি বলে জানালো, ‘না বেঁচে আছে।’

তরী মুচকি হেসে বলল,

—-‘ আমি ভেবেছিলাম তার জীবন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। যাকগে বেঁচে আছে সেও অনেক।’

দু’জনের মধুরবানি শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেলো হীর। রাগে দুঃখে গায়ে জ্বালা করতে আরম্ভ করতে লাগল তার। সে আর এক দন্ডও তরী-সাবাবের মধুরবানিতে থাকতে চায়না। তাই নিজের পার্স আর ফোন তুলে হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেলো। হীর বেরিয়ে যেতে তার বন্ধুরাও আর দাঁড়ালো না একদন্ড। তারাও বেরিয়ে গেলো হীরের পেছন পেছন।

তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে তরী বলে উঠলো,

—-‘ হীরপরি ইজ টু মাচ কিউট ইয়ার। আমি ছেলে হলে আজ নির্ঘাত ওকে তুলে নিয়ে বিয়ে-ফিয়ে করে ফেলতাম।’

সাবাব হেসে উঠল। হীর তার উপর রাগ করেই যে বেরিয়ে গিয়েছে সে আন্দাজ তার হয়েছে। তাই স্মিত হেসে শান্ত স্বরে বলল,

—-‘ শি ইজ অনলি মাইন। একদম নজর দিবেনা।’

তরী দাঁত কেলিয়ে হাসল। মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ ওকে বস।’

_______

রাত ‘১০টা’। নাজমা বেগমের মুখ ভার। আজিম সাহেব বারবার ঘুরে ফিরে বউএর মন খারাপের কারন উদঘাটনের চেষ্টা করছে। চারঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটাও প্রায় শেষ তাদের। তাদের বলতে শুধু সানিয়া আর নেহালের। বাকিদের তাদের সাথে রাখেনি কারন সবাই যেন যার যার কেনাকাটা করে নিতে পারে। কারোর জন্য যেন কারোর কেনাকাটাই বাদ না পরে। সবার জন্য এই ব্যাপারটায় সুবিধা করে দিয়েও শেষ অব্দি দেখা গেলো কেউই কোনো শপিং করেনি। আসছে থেকে শুধু একবার সে হীরকে চোখের সামনে দেখেছিলো কিন্তু তারপর আর একবারও তার মুখটি দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। মেয়েটা অভিমানে কোথায় মুখ লুকিয়ে জানা নেই নাজমা বেগমের। যাকেই জিজ্ঞেস করা হয় হীর কোথায় আছে সেই বলে হীর দোতলায়,তিনতলায় বা চরতলায়! কেউই সঠিক খবর দিতে পারেনা। তারমধ্যে উড়ে এসে জুড়ে বসল তরী নামে সাবাবের কোনো এক মেয়ে বন্ধু। যাকে এজন্মে সে কখনও চোখে দেখেনি! আজই প্রথম দেখলো। মেয়েটা অতিমাত্রায় সুন্দরী। যাকে দেখা মাত্রই নেহালের মা বলে বসলেন আমার রাবিবের সাথে ভালো মানাবে। সে নিয়ে নাজমা বেগমের কোনো মাথা ব্যাথাও নেই। তার মাথাব্যথা হীরকে নিয়ে। কোথায় হীর?

—-‘ এইবার নিয়ে পাঁচ বার হলো জিজ্ঞেস করছি, কি হয়েছে তোমার?’

স্বামীর প্রশ্নে বিরক্ত প্রকাশ করলেন নাজমা বেগম। পানসে মুখে তাকিয়ে বললেন,

—-‘ চারপাশের খবর রাখো কিছু? আসছো থেকে হীরকে দেখেছো একবারও? জানতে চেয়েছো হীর কোথায় আছে?’

আজিম সাহেব বেশ সুন্দর করেই প্রশ্নটা করেছিলেন নাজমা বেগমকে। হাসি হাসি মুখে। কিন্তু নাজমা বেগমের জবাবে সত্যিই এবার তার দুঃশ্চিন্তা বেড়ে গেলো। কথাটা ভুল বলেননি তার বউ। এসেছে থেকে সে একবারের জন্যও দেখেননি হীরকে।

—-‘ হলো শান্তি? এবার সরো সামনে থেকে।’

বউয়ের ঝাঁঝালো কণ্ঠে আরেকটু দুঃশ্চিতার পাহাড় চাপলো মাথায়! অসহায় মুখ করে বউকে সাইড করে দিয়ে তার যাওয়ার পানে তাকালো। তার পেছন পেছন যাবে কিনা সেই ভাবনা নিয়ে দোটানায় পড়ল। এখন যদি সে এখানে বসে থাকে তবেও যে নাজমা বেগম কথা শোনাতে ছাড়বেনা। আবার যদি তার পেছন পেছন যায় তবুও কি পার পাবে নাজমা বেগমের কথা থেকে?পাবেনা! গেলেও কথা শুনবে আর না গেলেও কথা শুনবে। সে পড়ল মহা মুসকিলে!

_______

হাতে কফি ছোট্ট কাপ। মুখে উদাসীন ভাব। দৃষ্টি অন্ধকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টকে ছাপিয়ে। আনমোনে দাঁড়িয়ে কিসব যেন ভেবে চলেছে হীর। দূর থেকে সবটাই লক্ষ করল সাবাব। কিন্তু তার দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সব রাস্তাই আপাতত বন্ধ। নেহাল,সানিয়া, তরী, আদ্র, এশা এবং মিলি সবাই মিলেই পূনরায় কফিহাউজে এসে আড্ডার আসর জমিয়েছে। মহামূল্যবান টপিক নিয়ে আলোচনা সবার মাঝে। তরী সাবাবের সাথে একসাথেই ট্রেনিং নিয়েছে আমেরিকায়। প্রায় চারবছর তাদের পরিচয়। তাদের বন্ধুমহলের সবচেয়ে সুন্দরী রমনী ছিলো তরী। তরীর সাথে ভাব জমাতে প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা পারলে ট্রেনিং ছেড়ে ছুটে আসত। কিন্তু তরী অপেক্ষা করত সাবাবের সাথে ভাব জমাতে। তরীর মতে সাবাব হলো সেই ছেলে যে কিনা ডিপার্টমেন্টের কোনো মেয়ের দিকে আজও অব্দি চোখ তুলে দেখেনি। তরী বুঝেছিলো সাবাব কখনও প্রেমিক হতে রাজি হবেনা। কিন্তু বন্ধু হিসেবে মাথায় তুলে রাখবে। এবং তাই হলো।

সাবাব নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না তাদের মাঝে। একরকম অস্থির হয়েই উঠে দাঁড়ালো। হীরের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সানিয়া বলে উঠলো,

—-‘ কোথায় যাচ্ছিস ভাইয়া?’

সাবাব ছোট্ট করে জবাব দিলো,

—-‘ আসছি’

#চলবে_❤️

[ কষ্ট করে সময় নষ্ট করে গল্প পড়তে পারলে ছোট্ট একটা মন্তব্য জানাতে এতো কষ্ট?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here