কাছে দূরে পর্ব ২৩

#কাছে_দূরে ❤️
#moumita_mehra
#পর্ব___২৩

হীর আনমনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই পেছনে সাবাবের অস্তিত্ব টের পেলো। সে নড়েচড়ে দাঁড়াতে সাবাব নরম গলায় বলল,

—-‘ তখন তোকে দেখতে না পেয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। শুধু ভয় হচ্ছিল তুই ঠিক আছিস তো?’

হীর অদ্ভুত হাসি দিলো। যা সাবাবের চোখ এড়ালোনা। সাবাব হীরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। হীরের মুখে এখনও উদাসীনতার ছাপ। সে বুঝল হীরের ভীষণ মন খারাপ! মন খারাপের কারন উল্লেখ করে কিছু বলতে নিলেই হীর তার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বলে উঠলো,

—-‘ তোমার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু ভীষণ সুন্দরী। সত্যি বলতে উনাকে প্রথমবার দেখেই ভীষণ মনে ধরে গিয়েছিলো আমার। যদিও মাথায় আসেনি এটা তোমার গার্লফ্রেন্ড হতে পারে। তবে তোমার পছন্দের উপর আমার ডাউট ছিলো না। আমি মনে মনে যেমন টা ভেবেছিলাম সেটাও ছাড়িয়ে গিয়েছে উনার সৌন্দর্যে। তোমার পছন্দ জাস্ট অসাধারণ ভাইয়া। খুব মানাবে তোমাদের!’

—-‘ মানে?’

—-‘ মানে এটাই যে এখন থেকে তোমার আর মন খারাপ হবেনা তরী আপুর সাথে কথা বলতে না পেরে। তরী আপু কিন্তু ভুল বলেনি, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! তুমি ইচ্ছে করে তরী আপুকে খুঁজোনি বলেই তাকে পাওনি। কিন্তু তরী আপু তোমায় খুঁজেছে বলেই আজ সে তোমার সামনে। এখন কিন্তু আমার কাছে সবটা ক্লিয়ার! তোমার চারবছরের প্রেম, বিয়েতে দুরকমের কার্ড! বড়মা তরী আপুকে তোমার জন্য এক কথায় মেনে নিবে। ও নিয়ে যেন আবার চিন্তায় পরোনা। তাছাড়া আমি তো আছি। বড় মা রাজি না হলে আমি বড়মাকে রাজি করিয়ে দিবো।’

হীরের চোখ টলমল করছে পানিতে। সাবাব বোকার মতো দাঁড়িয়ে হীরের কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। কিছু বলছে না! স্রেফ বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে তার প্রতি হীরের ভালোবাসাটা ঠিক কতটা গভীর। হীরের জন্য সাজানো গল্পটা যে এভাবে কাজ করে যাবে সাবাব ভাবতে পারেনি! সেদিন সাবাব এক মেয়ের কথা ঠিকই বলেছিলো কিন্তু সে তরী ছিলো না! কারন তরী তো তার খুব ভালো একজন বন্ধু। যাকে মন খুলে সবটা শেয়ার করা যায়। তরী হীরের কথা আরও চারবছর আগে থেকেই জানে। সাবাব তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার কয়েকদিনের মাথায়ই শুরু হয়েছিলো তরীর পাগলামি। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে সারাক্ষণ সাবাবকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর থাকতো সে। তরী প্রথমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও ধীরেধীরে সে সাবাবের প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে তার মনে হয় সাবাব ছাড়া এই পৃথিবীতে কোনো ছেলেই নেই। একমাত্র সেই ছেলে যাকে তরী ভালোবাসতে পারে। আর সারাজীবন একই ভাবে ভালোবেসে যাবে। তরীর পাগলামো দেখে সাবাব তৎক্ষনাৎ তাকে হীরের ব্যাপারের জানিয়ে ছিলো ঠিক কতটা ভালোবাসে সে হীরকে! একটা নয় দুটো নয় প্রায় বারোটা বছর ধরে মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পড়ে থেকেছে সে এই দেশে। শুধুমাত্র হীরকে নিজের করে পাবে বলে। হীরের সমস্ত ভার যেন নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারে সেজন্য। হীরের সব শত্রুদের যেন পিষে মারতে পারে সেজন্য।

হীরের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই বুকের ভেতরটা চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠলো সাবাবের। হীর চোখ নামিয়ে নিলো মাটিতে। প্রাণপনে চেষ্টা করছে সাবাবের নজর থেকে চোখের জল লুকাতে। কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে চোখের জলটা মুছে নিয়ে গলা খাঁকারি দিলো গলার স্বর স্বাভাবিক করতে। কতটুকু স্বাভাবিক হলো জানা হলো না কারোরই। এরমধ্যেই নাজমা বেগমের বিচলিত কন্ঠটি ভেসে আসল।

—-‘ হীরপরি? কই ছিলে তুমি? বড়মা তোমায় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে সেই কখন থেকে!’

হীর জোরপূর্বক হাসতে চেষ্টা করল। মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বড়মার পানে এগিয়ে গেলো। বড়মার বাহু আগলে বলল,

—-‘ আমরা সাবাব ভাইয়ার ফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম বড়মা। উনি এসে আমাদের সাবাব ভাইয়ার কথা বলে কফি খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলো! সেখানেই আড্ডা দিতে দিতে সময় পেরিয়ে গেলো ঘন্টা দুয়েক। তারপর ভাইয়া এলো। তরী আপুর সাথে কথা বলল। জানো, তরী আপু আর সাবাব ভাইয়া নাকি আমেরিকাতে একসাথেই ট্রেনিং নিয়েছিলো?’

নাজমা বেগম উৎসাহ নিয়ে বললেন,

—-‘ তাই? তা বেশ ভালো। কিন্তু মা তুমি এখনও কিছু কেনাকাটা কেন করলে না বলো তো? সবার কেনাকাটা হয়ে গেলো। আদ্র,এশা, মিলি ওদেরও তো হয়ে গিয়েছে শুনলাম। তাহলে তুমি কেন বাদ রইলে? আপির বিয়েতো তুমি কি কিছু কিনবেনা হ্যাঁ?’

হীর মৃদুস্বরে বলল,

—-‘ আমার ড্রয়ার ভর্তি নতুন জামাকাপড় বড়মা। আমার আলাদা করে কিছু কেনার নেই। ওদের কিনে দিয়েছি তাতেই হবে।’

‘কি করে হবে? মা সবাই তো কিনেছে একমাত্র ও একাই বাকি!’

সাবাবের গলা পেয়ে হীরের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। কান্নায় জড়িয়ে আসছে তার গলা। কিন্তু সে কাঁদবে না। নিজেকে শক্ত করে সাবাবের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-‘ আমার কেনার দরকার নেই। আমার আলমারি,ওয়ারড্রব ভর্তি অনেক ড্রেস আছে। বিয়েতে সব পার্ফেক্টি হয়ে যাবে।’

নাজমা বেগম হতাশ গলায় বললেন,

—-‘ শোনো মেয়ের কথা। তাই বলে একটাও ড্রেস নিবেনা?’

—-‘ না বড়মা। সত্যি বলছি আমার নতুন ড্রেসের কোনো দরকার নেই!’

নাজমা বেগম নিঃশ্বাস ফেললেন। বাসায় ফেরার তাড়া করে বললেন,

—-‘ তাহলে কি এখন আমরা বাসায় ফিরবো সবাই?’

হীর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই সাবাব বলে উঠলো,

—-‘ না মা। সবাই যাচ্ছি না। আব.. তুমি বরং এক কাজ করো? যাদের যাদের কেনাকাটা ডান তাদের নিয়ে তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। আর যাদের বাকি তারা থাকবে। শেষ করে তবেই বাসায় ফিরবে।’

নাজমা বেগম ছেলের কথা সহজেই বুঝে গিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে চলে গেলেন। হীর যেতে চাইলে সাবাব তাকে বাঁধা দিলো। তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই চুপসে গেলো হীর। এক কোনে গিয়ে চুপটি করে বসে আঁড়চোখে দেখতে লাগল সবার চলে যাওয়া। এক এক করে সবাই চলে গেলেও থেকে গেলো তরী। সানিয়ার বিয়েতে তাকে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে ইনভাইট করার দরুন সে পুরো শপিং সাবাবের পছন্দেই শেষ করল। আর হীর বিরহ মনে সবটাই দেখে গেলো।

রাত ২টা বেজে ১০ মিনিট। তরী বাড়ি ফিরল আধঘন্টা পার হতে চলল। এতক্ষণে সাবাব হীরকে নিয়ে পুরো মল ঘুরে ঘুরে তার জন্য শপিং করে ফেলেছে। কিন্তু হীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন! সে আনমনে শুধু সাবাবের পেছন পেছন হাঁটছে। সাবাব তার জন্য কি কি কিনেছে কিছুই চোখ মেলে দেখলো না সে।

সারাদিনের ক্লান্তির পর একটুও বিশ্রাম না নেওয়ার জন্য এখন শরীর ভেঙে রাজ্যের ঘুম চাপল হীরের চোখে। কেনাকাটার শেষ পর্যায়ে সাবাব যখন খেয়াল হীর হাঁটছে আর ঘুমচ্ছে তখন আর এক দণ্ডও থাকলো না ভেতরে। শপিং ব্যাগ গুলো ইভান আর আভিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে নিয়ে চলে গেলো বার্গার, পিৎজার ছোট্ট স্টলে। সাবাব খুব ভালো করে জানে বাসায় গিয়ে এখন হীর একটা দানাও মুখে তুলবেনা। রুমে ঢুকেই ঘুমের দেশে দলভারী করতে ছুটবে। তাই এখনই কিছু খেয়ে নিলে আর পেট খালি নিয়ে ঘুমানোর ভয় থাকবেনা। হীরের হাত ধরে স্টলে ঢুকতেই এক মধ্যবয়স্কা মহিলা এগিয়ে এলেন। দু’জনের জন্য চেয়ার টেনে দিয়ে হাসি মুখে বসতে বললেন। সাবাব মহিলাটার দিকে একবার তাকিয়ে হীরকে নিয়ে চেয়ারে বসল। আভিক এবং মাহদী বাইরে অপেক্ষা করছে৷ আর ইভান এবং কিরন গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

সাবাব হীরকে বসিয়ে মহিলার উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ একটা পিৎজা।’

মহিলাটি মুচকি হেসে বলল,

—-‘ ওকে স্যার।’

মহিলাটা যেতে নিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল,

—-‘ ম্যামের জন্য পানি দিবো স্যার?’

হীর ঘুমে ঢুলছে। সাবাব হীরের ঘুম জড়ানো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

—-‘ হ্যাঁ দিন।’

হীর টেবিলের উপর মাথা রাখল। ঘুমে তার কিচ্ছুটি যেন ভালো লাগছেনা। অসহ্য বিরক্তিতে তার গা রি রি করছে! সাবাব হীরের মাথায় হাত রাখল। নরম গলায় বলল,

—-‘ ক্ষিদে পায়নি?’

হীর নড়ল না। চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো,

—-‘ এতো জ্বালাচ্ছ কেন আমায়?’

—-‘ আমি জ্বালাচ্ছি?’

—-‘ তা নয়তো কি?’

—-‘ কেউ যদি ইচ্ছে করে জ্বলে তাতে আমার কি দোষ?’

হীর ফুঁসে উঠল। তৎক্ষনাৎ টেবিল থেকে মাথা তুলে সাবাবের দিকে ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

—-‘ সব নিজে করে এখন সাধু সাজা হচ্ছে?’

সাবাব ইচ্ছেকৃত ভয় পেলো। হীরের থেকে একটু দূরে সরে এসে মেকি ভয় ফুটিয়ে তুলে বলল,

—-‘ আমি কি করলাম?’

হীর জবাব দিলো না। আবারও মাথা রাখল টেবিলের উপর। মাথা ঠেকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,

—-‘ তুমি খুব খারাপ!’

সাবাব মুখ টিপে হাসল। সামনে তাকাতেই খেয়াল হলো মহিলাটি হাতে ছোট্ট একটা পানির বোতল নিয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

—-‘ স্যার,পানি। পিৎজা হতে দশমিনিট সময় লাগবে।’

মহিলার মুখে মিষ্টি হাসি। হীর আঁড়চোখে একবার খেয়াল করল। মহিলা হীরের দিকে তাকাতেই হীর মুখ লুকিয়ে নিলো। সাবাব হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা নিয়ে বলল,

—-‘ ওকে নো প্রবলেম। হীর?’

সাবাব হীরকে ডাকার মাঝে মহিলা মাথা দুলিয়ে চলে গেলেন। হীর সাবাবের ডাকের জবাব দিলো না। অভিমানে গাল ফুলিয়ে চুপটি করে রইলো সে। সাবাব তার কাঁধ ধরে উঠিয়ে বসাতে চেষ্টা করল। কিন্তু হীর শক্ত হয়ে বসল। যেন সাবাব টানলেও তাকে নড়াতে না পারে।

—-‘ আরে.. কি হলো হীর? পানি টা তো খাবি? ওঠ বলছি!’

সাবাবের কথা গুলো ভুলক্রমেও কানে তুলল না হীর। নিজেকে শক্ত করে রেখে চুপটি করেই থাকল সে। সাবাব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। হীরকে উঠানোর টেকনিক সে খুব ভালো করেই জানে। পানির বোতলটা টেবিলের উপর রেখে সেও ঝুঁকে গেলো হীরের মতো। মুখটা হীরের কাছে এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

—-‘ আজ তরীকে পারপেল কালারে কত কিউট লাগছিলো বল? আমি তো চোখই ফেরাতে পারিনি ওর থেকে। হায়.. আমি তো…’

সাবাব কথা গুলো সম্পুর্ন শেষও করতে পারেনি। তার মাঝেই যেন বিদ্যুৎে ঝটকা লেগে হীর লাফিয়ে উঠল। টেবিলে রাখা পানির বোতলটা ছো মেরে হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই অর্ধেক পানি শেষ করে দিলো। সাবাব হীরের কান্ড দেখে মুখে হাত চেপে হাসতে লাগল। হীর টলমল চোখ জোড়া দু’হাতে চেপে ধরে আবারও মাথা ঠেকালো টেবিলে। প্রয়োগ করা টেকনিক কাজে লাগলেও হীর কাঁদুক সেটা যেন সহ্য হলো না সাবাবের। তাই নড়েচড়ে বসে সে হীরের দিকে তাকালো। হীরের দুই কাঁধে হাত দিয়ে একটানে উঠিয়ে বসালো সে। হীর হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগল সাবাবের থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য। সাবাব শান্ত কন্ঠে বলল,

—-‘বেশি নড়াচড়া করলে কিন্তু এক্ষনি তরীকে কল দিবো!’

হীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো। ফোপাঁতে ফোপাঁতে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাবের দৃষ্টি শান্ত হয়ে গেলো। হীর কাঁদলে তার মুখটা মায়ায় ভয়ে ওঠে। সাবাব হীরকে একদম নতুনভাবে আবিস্কার করে। হীরের নাকের ডগা টকটকে লাল হয়ে উঠলো। সাবাব মলিন হেসে বলল,

—-‘ কাঁদা হচ্ছে কেন?’

—-‘ তোমায় কেন বলবো?’

হীরের শক্ত জবাব। সাবাব মনে মনে হেসে উঠলো। পূনরায় বলল,

—-‘ তরীকে বুঝি মানাবে না আমার সাথে?’

—-‘ খুব মানাবে!’

—-‘ সত্যি? আমি তো ভাবলাম আমাদের দু’জনকে মানায় কি না সেই দুশ্চিন্তায় তুই কাঁদছিস?’

হীর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-‘ তোমাদের চিন্তায় আমার কাঁদতে তো বয়েই গিয়েছে। টানা চারঘন্টা পার হতে চলল আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে কল দিচ্ছে না! আদৌও বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে সেই চিন্তায় কাঁদছি আমি।’

সাবাব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। ভড়কানো গলায় বলল,

—-‘ অ্যা? ত,,তোর বয়ফ্রেন্ড মানে?’

—-‘ আমার বয়ফ্রেন্ড মানে আমার প্রেমিক পুরুষ! বুঝেছো?’

সাবাবের ভ্রু জুগল কুঁচকে গেলো। ফ্যাকাসে মুখে বলল,

—-‘ কি বলছিস?’

—-‘ কি বলছি? তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না? শুদ্ধ বাংলায় বলেছি। তুমি বললে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে দিবো!’

সাবাব ধমকানো সুরে বলল,

—-‘ এই চুপ কর।’

হীর তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। সাবাব ফুলছে। একদম ফুলকো লুচির মতো ফুলতে ফুলতে বেলুন হয়ে যাচ্ছে সে। হীরের দম ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসা যাবেনা। একদম হাসা যাবেনা।

—-‘ স্যার, আপনাদের পিৎজা।’

চোখের সামনে পিৎজা হাজির হতেই ঝটপট খেতে আরম্ভ করল হীর। সাবাবকে একটু হলেও জ্বালাতে পেরে এখন তার মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে যেন। মনে মনে হাসতে হাসতে খেতে লাগল হীর। আঁড়চোখে একবার সাবাবকে দেখে নিয়ে ভারী দুঃখী গলায় বলল,

—-‘ আল্লাহ যেন ওকে বাঁচিয়ে রাখে ভাইয়া। আমার একার দোয়া বোধহয় কবুল হচ্ছে না! তুমিও একটু দোয়া করে দিবে?(সাবাব ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকাতেই) প্লিজজজ!’

সাবাবের শরীরে আগুন জ্বলছে। মোটে সহ্য হচ্ছে না হীরের মুখে তার বয়ফ্রেন্ডের কথা! কে সে? কে কে কে?
সাবাব গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করল। অতঃপর হীরের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ কে ছেলেটা?’

হীর মুখ ভর্তি করে পিৎজা নিলো। সাবাবের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস লাগল,

—-‘ কোন ছেলেটা?’

সাবাব বিরক্তিতে মুখ ফেরালো হীরের থেকে। রাগে শরীরের রক্ত টগবগ করছে তার। ঠোঁট কামড়ে ধরে ঘাড়ে হাত চাপল সাবাব। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রাগটাকে কোনোরকমে সংযত করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। হীরের সত্যিই বয়ফ্রেন্ড আছে? কোথায় থাকে? কি করে? দেখতে কেমন? কতদিনের সম্পর্ক? মাথায় হাজারটা প্রশ্ন!

সাবাবের অস্থিরতা দেখে হীর মনে মনে হাসতে লাগল। সাবাবের জন্য মুখে একটা বানী উচ্চারণ করতে খুব ইচ্ছে হলো তার, ‘দেখ কেমন লাগে?’

#চলবে_ ♥️

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here