#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_meher
#পর্ব___২৫
—-‘ আদু? ডালটা দে না?’
আদ্র দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকালো এশার দিকে। এশা দাঁত বের করে হাসতেই টুং করে ঘন্টা বাজালো তার মাথায়। এশা আচমকা মাথায় গাট্টা খেতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামনের দিকে খানিকটা এগিয়ে গেলো। ব্যাথায় মুখ কুঁচকে গেলো তার। টেবিলের তলা থেকে আদ্রর পায়ের উপর লাথি বসিয়ে শয়তানি হাসল এশা। আদ্র এবার রেগেমেগে এশার চুল টেনে দিলো। এশা মাথায় হাত চেপে মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো। পাশ থেকে মিলি বোবা চোখে তাকিয়ে আছে দু’জনের প্রতি। হাতে গুনলে দশ সেকেন্ডও পেরোবে না অথচ দু’জনে কতকি ঘটিয়ে ফেললো চোখের পলকে। কোনো কিছুই নজর এড়ালো না আজিম সাহবের। গম্ভীর মুখে চশমার ফাঁক দিয়ে সবটাই পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি। হীর পড়ল লজ্জায়। বন্ধুরা যে একবার শুরু হলে খেয়াল রাখেনা সামনে কে থাকে আর কে যায়! হীর মাথা নীচু করে আঁড়চোখে মিলিকে ইশারা করে দু’জনকে থামাতে বলল! মিলি অসহায় চোখে তাকিয়ে ইশারায় বুঝালো, ‘ওদের থামাতে গেলে আমাকেও মারামারির স্বীকার হতে হবে।’
সানিয়া মুখ টিপে হাসছে আর দু’জনের কান্ড দেখছে। সাবাবও খেয়াল করল হীর আর মিলির চোখে চোখে কথা বলতে দেখে। বাবা পাশে বসে আছে বলে মুখে কিছু বলে উঠতে পারল না সে। তাই গলা খাঁকারি দিয়ে দু’জনকে সতর্ক বানী দিতেই গলায় গলায় হাত দিয়ে এশা আর আদ্র মাথায় মাথা ঠেকালো। ঠোঁটের কোনে কৃত্রিম হাসি এঁটে সবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে বোকা গলায় বলে উঠলো, ‘উই আর ভেরি গুড ফ্রেন্ড।’
সানিয়ার পক্ষে আর হাসি চেপে রাখা সম্ভব হলো না। হু হা করে হেসে উঠতেই আজিম সাহেব মুখ তুলে তাকালেন। খাওয়া শেষ করে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
—-‘ খাওয়ার সময়ও তোমরা স্থির থাকতে পারোনা তাই না?’
বাবার গম্ভীর স্বরে সানিয়া মুখে হাত চেপে নিলো। হাসিটাকে ভেতরেই গিলে নিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
—-‘ ওরা আছে বলেই তো এতো বিনোদন পাওয়া যাচ্ছে বাবা।’
আজিম সাহেব জবাবে কিছুই বললেন না। হাত ধুয়ে নিজের রুমের দিকে হেঁটে গেলন। আজিম সাহেব চোখের আড়াল হতেই এশা আর আদ্রর পিঠে মারের ধুম পড়ে গেলো। মিলি মারছে একদিন থেকে তো হীর মারছে একদিক থেকে। সাবাব মুখ টিপে হাসতে লাগল। মার খেয়ে বেচারা আদ্র কুঁকড়ে পড়ে বলল,
—-‘ খাওয়ার আগেই তো সবটা হজম করিয়ে দিলি। এখন আন্টি কি আমাকে আরও দুই বেলা করে বাড়তি খাবার দেবে।’
হীর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-‘ তোরা না সত্যিই কুকুরের বাঁকা লেজ! দেখছিস যে বাবাই এখানে খেতে বসেছে তবু্ও দেখ তোরা সেই ঠিকই কামড়াকামড়ি শুরু করে দিলি!’
আদ্র ঠোঁট উল্টে বলল,
—-‘ আমি কি করেছি? সব তো এই শাঁকচুন্নি করেছে। সেই কাল থেকে আমাকে আদু বলে ডাকছে। তুই জানিস কাল শপিং মলে একটা মেয়ে আমায় দেখে প্রায় পটে যাচ্ছিলো কিন্তু এই অসভ্য আমাকে আদুভাই ডেকে পুরো কচুভর্তা করে দিলো! মেয়েটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি উনাকে আদুভাই কেন ডাকলেন?’ ও উত্তর দিলো, ‘কারন আদুভাই চারবছর ইন্টার ফেল করে অবশেষে বিবিএর ক্লাসে পা রেখেছে। জানেন, এবারও ও ইন্টারের গন্ডি পেরোতে পারতো না! ও পেরেছে কেবল আমাদের জন্য। আমারা এক্সাম হলে ওকে সব লেখা পেপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এসেছিলাম বলেই কোনো মতে টেনেটুনে পাস করে গিয়েছিলো।’ এই কথা শুনে মেয়েটার সেকি রিয়াকশন জানিস? মনে হচ্ছিলো যেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে হুহ্।’
আদ্রর কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো। এশা মুখ কুঁচকে বলল,
—-‘ আরে আমি কি ওসব মেয়েটাকে ভাগাতে করেছি নাকি? আমি তো জাস্ট ট্রাই করছিলাম মেয়েটা কেমন কি? দেখ শেষ অব্দি ও সামান্য মজাকে এতো বড় ইস্যু করে তোকে ঝাড় মেরে চলে গিয়েছে।’
আদ্র নাকি ফুলিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
—-‘ তখন না হয় খুব উপকার করলি মানলাম। কিন্তু এখন? এখন কেন আদু আদু করছিস?’
এশা দাঁত কেলিয়ে হাসল। আদ্রর গাল টেনে আহ্লাদী গলায় বলল,
—-‘ তোমার এই নামের যে প্রেমে পড়েছি আমি। ওগো, ওগো তুমি কি বুঝতে পারছো না?’
আদ্র দাঁত খিঁচিয়ে ঠাস করে এক চড় বসালো এশার গালে। এশা চমকে উঠলো প্রথম দফায়। আবার পরক্ষণেই ফুঁসে উঠে আদ্রর দিকে তাকাতেই আদ্র দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
—-‘ তোমার ঐ সুন্দর গালে যে মাছি বসেছিলো সোনা। আমি যে সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই থাপ্পড় মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি।’
এশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-‘ বদ ছেলে কোথাকার। তুই দাঁড়া? আজ তোর হচ্ছে।’
—-‘ চাচা আপন প্রান বাঁচা।’
কোনো মতো সংলাপটা উচ্চারণ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পালালো আদ্র। এশাও চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে পড়ে তাকে ধরতে গেলো। তাদের কান্ড দেখে আরও একদফা হাসাহাসির রোল পড়ল। অতঃপর সবাই পূনরায় খাবারে মনোযোগ দিলো।
সানিয়া খেতে খেতে খেয়াল করল হীরের গলাটা খালি। চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
—-‘ হীর? তোর গলার লকেট কোথায়? খুলে রেখেছিস?’
সানিয়ার প্রশ্নে হীরের টনক নড়লো। চমকে উঠে গলায় হাত রাখতেই মনে হলো গলাটা খালি! বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো। মায়ের শেষ চিহ্ন এই লকেট! হারিয়ে গেলো না তো? কথাটা মনে হতেই চোখমুখ রক্ত শূন্য হয়ে পড়ল হীরের। মনে ভর করল একরাশ ভয়! লকেটটা হারিয়ে গেলে যে মার শেষ স্মৃতিটাও হারিয়ে যাবে। মিলি আর সানিয়া প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকিয়ে আছে হীরের মুখের দিকে। হীর লাফিয়ে উঠে সিঁড়ি ভেঙে নিজের রুমে চলে গেলো! চারপাশটা ভালো করে খুঁজতে হবে! মায়ের লকেটটা হারালে চলবে না।একদমই চলবেনা!
হীরকে ছুটে যেতে দেখে সাবাব বিচলিত চোখে হীরের রুমের দরজার দিকে তাকালো। বুক পকেটে হাত রেখে লকেটটার নিরাপত্তা যাচাই করে সেও উঠে দাঁড়ালো। হীরকে আর চিন্তায় না ফেলে লকেকটা এখনই ফেরত দেওয়া উচিত।
হীরের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুই কদম এগোতেই কল এলো মাহদীর। সাবাব ফেনটা কানে তুলতেই মাহদী তাকে তাদের সিক্রেট রুমে যেতে বলল। সাবাব কলের লাইন কেটে চলে যাবে ঠিক করে হীরের রুমের দিকে আরেকবার তাকালো। মনে মনে বলল,’ চিন্তা নেই হীরপরি! তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমার কাছে যথেষ্ট নিরাপদে আছে।’
______________
দেয়ালের বুকে টানানো ঘড়ির সময় ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট। সাবাব চেয়ারে বসে ফাইল ঘাটছে। পাশেই অসংখ্য ফাইলের বিশাল স্তুপ। কিরন সেখানে ছানমান করছে কিছু পুরনো ফাইলের হদিশে। সাহায্য করছে আভিক আর ইভান। মাহদী সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাবাবের সম্মুখে। দু’জনের মুখেই চিন্তার ছাপ। সাবাব ফাইল ঘাটার মাঝেই মাহদী বলে উঠলো,
—-‘ স্যার ছেলেটার নাম সিয়াম পাটোয়ারী। বাবা আকবর পাটোয়ারী। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে সিয়াম। হীরের সাথে তার আলাপ হয় মাঝরাস্তায়। হীরের সাথে ঘটা কোনো এক এক্সিডেন্টের থ্রু! সিয়াম হীরকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো। বছর দুয়েক আগে। সিয়াম হীরের ভার্সিটিতে পড়েনা। অন্য ভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু সে নাকি হীরের জন্য মাঝেমধ্যেই হীরের ভার্সিটিতে আসত। হীরকে পড়লেখা নিয়ে অনেক সাহায্য করত। মনোহর চাচা ছেলেটাকে কড়া নজরে রেখেছিলো!’
—-‘ হীর আর ওর ব্যাচ সেম নয়! এটা হীর জানে?’
—-‘ নো স্যার। হীর ওর ব্যাপারে কিছুই জানেনা। এই দুটো বছরে হীর যতবারই ওকে ওর পরিবার, পড়াশোনা,বাড়ি এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে? ও ততবারই একটা না একটা বাহানায় কাটিয়ে উঠেছে। হীরকে ওর নিজের সম্মন্ধে কখনোই কোনো রিয়েল তথ্য দেয়নি।’
—-‘ সন্দেহজনক! হীরকে সব বিষয় এতো হেল্প করতো অথচ সে নিজের পরিচয় প্রায় সবটাই লুকিয়ে এসেছে! কেন?’
—-‘ সেটাই প্রশ্ন স্যার! আজ অব্দি হীরের কোনো ক্ষতি কিন্তু ও করেনি স্যার! কিন্তু এভাবে নিজের পরিচয় গোপন করার রিজন টা কি হতে পারে?’
—-‘ ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড!’
—-‘ জি স্যার?’
—-‘ ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্মন্ধে সকল ইনফরমেশন আমার চাই?’
—-‘ কিন্তু স্যার ওর পরিবারে ও আর ও মা ছাড়া তো আর তেমন কেউ নেই!’
—-‘ ওর মাকে জেরা করো! হয়তো ওর বাবার এমন কোনো পরিচয় আছে যেটা জানলে আমাদের কাছে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে! আর সেটা জানতে পারলে হয়তো হীরও ওকে চিনতে পারবে। তাই হয়তো ও সবটা লুকাচ্ছে হীরের থেকে!’
—-‘ স্যার, ছেলেটা সত্যিই হীরকে খুব ভালোবাসে!’
—-‘ কি করে বুঝলে?’
‘স্যার, ফাইল পেয়ে গিয়েছি।’
কিরনের হাতে মোটা মোটা দুটো ফাইল দেখে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলো সাবাব। কিরনের হাত থেকে ফাইল দুটো একরকম টেনে নিলো সে। তাড়াহুড়ো করে ফাইল দুটো নিয়ে টেবিলে বসে প্রথম ফাইলটা খুলল। ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিয়াদ আহমেদ’ উপরের মোটা কালিতে লেখা নামটার উপর হাত বুলাতেই ভেতরটা হাহাকার করে উঠল সাবাবের। কন্ঠ নালি কান্নায় ভেঙে আসতে চাইলো। শরীরটা কেমন অবস হয়ে আসতে চাইলো! চোখের মধ্যে চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠতেই চোখজোড়া আলতো করে চেপে ধরলো হাত দিয়ে। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ থেকে হাত সরিয়ে আবারও দৃষ্টি রাখল নামটার উপর। ভেতরটা হাঁকডাক পেড়ে বলে উঠলো, ‘ তোমার খুনিদের আমি নিজ হাতে শাস্তি দিবো বাবাই! নিজ হাতে ওদের খুন করবো! আই প্রমিজ।’
—-‘ স্যার! আর ইউ ওকে?’
ইভান এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল সাবাবকে। সাবাব ঢোক গিয়ে ঘোলাটে চোখে দেখলো ইভানকে। মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে ফ্যাকাসে কন্ঠে বলল,
—-‘ ইয়াহ আম ফাইন!’
কিরন তড়িঘড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
—-‘ স্যার প্লিজ পানিটা খেয়ে নিন।’
সাবাব কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে পানিটা নিয়ে ঢোক ঢোক করে গিলে খেলো। পুরো পানিটা এক নিমিষেই শেষ করে দিলো। যা দেখে সবাই অসহায় মুখ করে তাকালো সাবাবের দিকে। পরক্ষনেই সবাই একজোট হয়ে একত্রে বলে উঠলো,
—-‘ উই আর অলওয়েজ উইথ ইউ স্যার। উই উইল অল ফাইট টুগেদার। উই প্রমিজ্ড স্যার। প্লিজ স্যার, ডোন্ট বি আপসেট!’
সাবাব স্মিত হাসার চেষ্টা করল। ফাইলের উপর নামটায় আরও একবার হাত বুলিয়ে ভেজা কন্ঠে বলল,
—-‘ আই মিসড ইউ সো মাচ বাবাই। মিসড ইউ!’
_____________
বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করালো সাবাব। হাতে সময় একদম নেই বললেই চলে। এয়ারপোর্টে পৌঁছতে পৌঁছতে কম করে হলেও চল্লিশ মিনিট লেগে যাবে। ঠিক বারোটায় প্লেন ল্যান্ড করবে। এতোগুলো বছর বাদে দেশে ফিরে তাকে তো এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করানো যায়না। কাজটা ঠিক হবেনা। হাতে যতই কাজ থাকুক একজন মেহমানকে তো আর ব্যস্ততা দেখিয়ে অপেক্ষা কারনোটা সাজেনা। মোটেই না! সাবাবের হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। ঘড়ির কাটা মৃদু আওয়াজ করে একটু একটু করে এগোচ্ছে। সাবাব বা হাতটা মুখের সামনে তুলে সময়টা দেখলো। —১১টা ৩৪। চারপাশে ভ্যাঁপসা গরম! আজকাল ওয়েদারের কখন কি হয় ঠিক বলা যায়না! এই ঝুম বৃষ্টি তো এই ভ্যাঁপসা গরম। কিছুক্ষণ আগে একছলাট বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। আসতে আসতে গাড়ির অর্ধেক সেই বৃষ্টিতেই গোসল করে ফেলেছে। বাকিটা এখন এই ভ্যাঁপসা গরমে স্যাঁতস্যাঁতে ভাবে শুঁকিয়ে গিয়েছে প্রায়।
বাড়ির মেইন গেট খোলা। হীরের এতক্ষণে এসে পরার কথা। সানিয়াকে আসতে আসতে কল করে জানিয়েছে হীর যেন রেডি থাকে। এয়ারপোর্টে সেও যাবে সাবাবের সঙ্গে। মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলো। এখনও কেন এলোনা! সাবাব ফোন বের করল। উদ্দেশ্যে সানিয়াকে আরেকবার কল করবে। মাথা নীচে করে সানিয়ার নাম্বার খুঁজতে নিলেই গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে কেউ বসল। সাবাব মাথা তুলে দেখতেই সন্ধান মিলল হীরের মলিন মুখখানার! সাবাব প্রথমে হাসি মুখে হীরকে দেখলেও পরক্ষণেই মুখ কালো করে নিলো। ভেতর থেকে শব্দ এলো,’হীরপরির মন খারাপ।’
হীর চুপচাপ ভেতর বসে গাড়ির দরজা লাগিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে নিলো। সাবাব তাকে কেন রেডি থাকতে বলল? কেন আসতে বলল? তারা কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? কে আসবে? এমন ধরনের কোনো প্রশ্নই হীর করল না। সাবাব অশান্ত চোখে বারবার তাকালো বটে কিন্তু প্রশ্ন বিশেষ করতে পারল না। হীরের থমথমে মুখটা দেখেই তাদের যাত্রা শুরু করতে হলো।
হীর গাড়ির কাচটা নামিয়ে নিয়েছে। গাড়ির বেগ অনুযায়ী বাতাস প্রবেশ করছে সেখান থেকে। কখনও খুব জোরে আবার কখনও খুব আস্তে। হীরের অবাধ্য চুলগুলো বাঁধন হারা হয়ে উঠছে। হীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন! সে আনমনে বাইরের ছুটে চলা দৃশ্য দেখছে। সাবাব আর টিকতে পারল না। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ মন খারাপ?’
সাবাবের গলার স্বর হীরের মগজ স্পর্শ করতে পারেনি। সে এখনও আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। সাবাব গাড়ি দাঁড় করালো। আচমকা গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে সেটা হীরের ভাবনাতীত ছিলো। গাড়ির ব্রেক কষতেই সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলো দু’জনে। হীর নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ ফিরে সাবাবের দিকে তাকালো। চোখে মুখে ভয়। ভীত কন্ঠে বলল,
—-‘ কেউ আমাদের ফলো করছে?’
সাবাব হীরের প্রশ্নের জবাব দিলো না। সে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। হীর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সাবাব গাড়ি থেকে বের হয়ে হীরের পাশে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে ধরল। হীর বিচলিত চোখে আশেপাশে তাকাতে লাগল। সাবাবের মুখ থমথমে! কি হয়েছে বুঝতে পারছেনা হীর। ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে বের হতে সাবাব শব্দ করে গাড়ির দরজাটা লাগাতেই হীর চমকে উঠলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সাবাবের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বলল,
—-‘ কিক,,কি হয়েছে ভাইয়া?’
সাবাব এবারও জবাব দিলো না। আচমকা হীরকে গাড়ির সাথে চেপে ধরল। হীর কেঁপে উঠে লেপ্টে গেলো গাড়ির সাথে। সাবাবের চোখ জোড়া রক্তিম আভায় ঘিরে উঠছে। হীরের বুকের ভেতর কাঁপছে! ভয়ার্ত চোখের চাহনি নিমিষেই ঝুঁকে গেলো মাটিতে। কোনো অপরাধ না করেও নিজেকে মহা অপরাধি বলে ঠাহর হচ্ছে। সাবাব দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন স্বরে বলল,
—-‘ সিয়ামের জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে তাই না? এতো ভালোবাসা সিয়ামের জন্য যে মাত্র চারঘন্টা কল করেনি বলে তোর দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছে? কতদিনের এই প্রেম? বল?’
শেষ কথাটা সাবাব বেশ চেঁচিয়েই বলে উঠলো। হীর কেঁপে উঠেও কেমন বোবা চোখে তাকালো সাবাবের পানে। সিয়ামকে সাবাব কি করে খুঁজে পেলো? আর কোথায়ই বা পেলো?
—-‘ কি বলছো তুমি এসব ভইয়া? সিয়াম আমার….’
—-‘ সিয়াম তোর ভালোবাসার মানুষ তাইতো?’
—-‘ আমি কখন বললাম এই কথা?’
—-‘ তাহলে কে সিয়াম? আর ওর সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?’
—-‘ সিয়াম… সিয়াম আমার যেই হোক! আমি সেটা তোমাকে কেন বলবো?’
হীরের কঠিন বক্তব্যে সাবাবের রাগ চড়াও হলো। ক্ষেপে গিয়ে হীরকে আরও শক্ত করে চেপে ধরল গাড়ির সাথে। হীর ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। ভয়ার্ত হারিণীর ন্যায় ছটফট করতে লাগল সে। সাবাব আরও কিছু বলার জন উদ্যত হতেই তীক্ষ্ণ আওয়াজে বেজে উঠল তার ফোন। সাবাব তার রাগ গুলোকে গিলে খেলো। হীরকে ছেড়ে দিয়ে ফোন নিয়ে চলে গেলো খানিকটা এগিয়ে। কারোর সঙ্গে জরুরি আলাপ সেরে আবারও ব্যস্ত ভঙ্গিতে এসে উঠে পড়ল গাড়িতে। অন্যপাশ থেকে হীর উঠে বসতেই আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
#চলবে_ 🖤
[ [ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ ]]