#কাঞ্চাসোনা ২
#পর্ব_০২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সকালের এমন কাঁদোকাঁদো অবস্থা থেকে রক্ষা করলো মিতু।মিতু এসে ধ্রুবকে দেখে অবাক হলো।ধ্রুব আজকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসলো না?পরক্ষনেই নিজের অবাকের রেশ লুকিয়ে বললো,
“ভাইয়া!কখন এলে?”
এতোক্ষণ সকালের যতো দোয়া মুখস্থ ছিলো সব মনে মনে পড়ে ফেলেছে।মিতুকে দেখে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।মিতুর কথায় ধ্রুব নড়েচড়ে দাঁড়ায়।সকালের মুখের দিকে তাকিয়েই বলে,
“মাত্র এসেছি।”
ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় মিতু নিজ থেকেই বললো,
“ভাইয়া আমাদের সাহানা খালা আছে না?মনে আছে তোমার?সকাল সাহানা খালার মেয়ে।”
তারপর সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সকাল উনিই আমার ভাইয়া।ধ্রুব ভাইয়া।”
সকাল থমথমে মুখে সালাম দেয়।ধ্রুব?যার কথা তার মা বাবা আলাপ করতো?সে!সকালের খুব লজ্জা লাগছে।মা বাবা শুনাতে না চাইলেও তার কানে ঠিক বিয়ের কথাগুলো এসেছে,কিন্তু সে না জানার মতো নিশ্চুপ থেকেছে।এখন সেই না দেখা পাত্রই তার সামনে!কখনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলা কিংবা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকায় তার অ/সস্থি হচ্ছে।কাচুমাচু করে মিতুর দিকে তাকায়।মিতু সকালের অসস্থি বুঝতে পারে,তাই সকালের হাত ধরে বেরিয়ে যায়।ধ্রুব বিছানায় গিয়ে বসে।শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ভাবে এই মেয়েটাই তবে মায়ের পছন্দের পাত্রী!মায়ের ভাষ্যমতে অতী সুন্দরী।ধ্রুব নিজের মনেই ভাবে সব মেয়ের মতোই তো লাগলো অতিরিক্ত সুন্দরী তো মনে হলোনা।হ্যাঁ চুলগুলো সুন্দর একটু বেশীই সুন্দর আর চোখগুলো মুগ্ধ করতে বাধ্য,একবার এই চোখে তাকালে আরো তাকাতে ইচ্ছে করে।আর সব চলনসই।ধ্রুবর মনে হয় মানুষকে এক দেখায় সুন্দর অসুন্দর যাচাই করা যায় না।যার জন্য মনের মাঝে ভালোবাসার সৃষ্টি হয় সে দেখতে যেমনি হোক না কেনো প্রিয় মানুষের কাছে সুন্দর।এই সুন্দর্য সবাই দেখতে বা উপলব্ধি করতে পারে না এই সৌন্দর্য কেবল প্রিয় মানুষেরা দেখে।ধ্রুব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে গোসলে যায়।
মনোয়ারা বেগম টেবিলে খাবার দিয়ে ধ্রুবকে ডাকছে।ধ্রুব টেবিলে এসে বসে।প্লেটে ভাত নিতে নিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসে।মনোয়ারা এই ছেলে নিয়ে বেশ যন্ত্র/ণায় আছেন।গায়ে গতরে,বয়সে বড়ো হলেও উনাকে ঠিক বাচ্চার মতো জ্বা/লায়।এতো বড়ো ছেলের আবদার কিনা বাচ্চাদের মতো।ভাবা যায়!ধ্রুব দাঁত কেলিয়ে হাসি দেখে উনি চোখ সরু করে বললো,
“এমনে দাঁত বের করে হাসছিস কেনো?কি হয়েছে?”
ধ্রুব প্লেটে তরকারি নিয়ে বলে,
“হাসি সুন্দর না?”
মনোয়ারা নিজেও হেসে দেয়।ধ্রুবর হাসি সুন্দর,অতিরিক্ত সুন্দর।শ্যামলা গায়ের অধিকারী ধ্রুব তবুও সবার নজর কাড়তে সক্ষম।মনোয়ারার মাঝে মাঝে মনে হয় উনার নিজেরই না নজর লেগে যায়।আগেরকালের মানুষেরা বলতো মায়ের নাকি নজর লাগে।মনোয়ারা মাঝে মাঝেই ছেলের গায়ে থু থু ছিটিয়ে মনে মনে মাশাল্লাহ বলে।
“খালি খালি হাসিস কেনো?”
ধ্রুব মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“পাত্রী বাসায় নিয়ে এসেছো কেনো আম্মা?মতলব কি?”
মনোয়ারা অবাক হয়ে বললো,
“ওহ এই কারনে এমন হাসি?পাত্রী বাড়ি নিয়ে এসেছি কেনো মনে হলো?”
“দেখলাম তো।”
“আমার বোনের মেয়ে ফালানো না যে পাত্রর বাড়িতে এসে দেখা দিতে হবে।ওর জন্য এমনি পাত্রের সিরিয়াল।ভালো কথা,সকালকে দেখেছিস?কেমন?”
ধ্রুব ঠোঁট উল্টে বললো,
“কেমন আবার!মেয়ের মতো।”
ধ্রুবর কথায় মনোয়ারা রে/গে যায়।ধ্রুব মাথায় থা/প্পড় দিয়ে বললো,
“আমি কি ছেলে বলেছি নাকি?সকাল তো মেয়েই।কিন্তু তোর কাছে কেমন লাগলো?”
ধ্রুব মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সুন্দর।”
মনোয়ারা উৎসাহ নিয়ে বললো,
“বিয়ে করার মতো সুন্দর?”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“বাচ্চা!”
মনোয়ারা সন্তুষ্ট হলেন না।দু’দিকে মাথা নেড়ে বললো,
“স্কুল পেরিয়ে গেছে কিছুদিন পরে কলেজে ভর্তি হবে এই মেয়েকে তোর বাচ্চা মনে হয়?”
ধ্রুব ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“তো!”
“সকালের বয়সের কতো মেয়েরই বাচ্চা আছে।তাহলে তোর সমস্যা কি?”
“তা ঠিক।কিন্তু আম্মা মনের একটা ব্যাপার আছে না?”
“বিয়ে হলে এমনিতেই মনের ব্যাপার মিটমাট হয়ে যাবে।সকাল কতো সুন্দরী!”
তারপর মনোয়ারা সকালের এখানে আসার কারণ ব্যাখা করেন।ধ্রুব খাবার খেতে খেতে শুনে।মনোয়ারা কথা শেষ করার পরে বললো,
“ভালো হয়েছে।মেয়েটা এখানে এসেছে।এসব বিয়ে টিয়ের কথা বন্ধ করে ওর যত্ন নাও।মেয়ে মানুষ এসব শুনলে খারা/প না?ল/জ্জা পাবে।”
মনোয়ারা বুঝলেন এই ছেলের ঘাড়ের রগ সোজা হওয়ার না।আর কিছু না বলে আস্তে করে উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।ধ্রুব মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই আশ্চর্যজনক ভাবে একবার দেখা সকালের মুখটা স্পষ্ট তার চোখে ভেসে উঠে।ধ্রুব ফট করে চোখ খুলে ফেলে।কি আশ্চর্য!এই মেয়ে চোখে ভাসে কেনো?এক দেখায় এতো এগিয়ে যাচ্ছে!ধ্রুব নিজেকে ঝাপটে ঘুম পাড়াতে চায় কিন্তু তার আরেকটা ভ/য়ংকর ইচ্ছা জেগেছে সেটা হচ্ছে এখন আবার সকালকে দেখতে ইচ্ছা করছে।ল/জ্জা ল/জ্জা কথা বলে সকালের লাজুকলতার মতো মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে।আচ্ছা মেয়েটাকে তার পাত্রী হিসেবে দেখা হয়েছিলো বলেই কি এসব উল্টাপাল্টা ইচ্ছা হচ্ছে?হোক তাতে কি ধ্রুব মনকে আটকে রাখতে জানে।
আজম মির্জার দুই ছেলে।সারোয়ার মির্জা আনোয়ার মির্জা।দুই ছেলেকেই ঢাকায় ব্যবসা বানিজ্যের পথ হাটিয়ে নিজে পরপারে পা রেখেছেন।আজম মির্জা মারা যাওয়ার পরে সবাই ভেবেছিলো পরিবারে বুঝি ভাঙন লাগবে কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে স্বামীর ছাড়া দড়ি নুরজাহান আঁকড়ে ধরেছেন।সোনার সংসার ভাঙতে দেন নি।কড়া শাসনে সবাইকে একসাথে নিয়েই আছেন।বড়ছেলে আনোয়ারের এক ছেলে।ছোট ছেলে সারোয়ারের এক ছেলে এক মেয়ে।ব্যস সুখী সংসার।নুরজাহান বেঁচে থাকতে আলাদা হওয়ার কথা কেউ ভাবতেও পারেন না।প্রতিদিন সকালে নুরজাহান দুধ চায়ে মুড়ি নরম করে খায়।আজকেও খাচ্ছে।আড়চোখে বারবার মিতুর পাশে বসা মেয়েটাকে দেখছে।মিতু তার দাদীর চোখের চাহনী লক্ষ করে সকালকে নিয়ে উঠে যায়।তার দাদীর মুখের পর্দা পাতলা যা ইচ্ছা বলে ফেলেন।মিতু সকালকে নিয়ে রুমে যায়।
আনোয়ার মির্জা ভালো মানুষ।বড়ো ছেলে বিধায় কিছুটা শান্ত।মায়ের কাছে বসে বললেন,
“আম্মা।আপনার ওষুধ কি শেষ?”
নুরজাহান মাথা নেড়ে বললো,
“না রে বাপ।”
“শরীরটা আগের থেকে ভালো লাগে নি আম্মা?”
“ভালোই লাগে।মাঝে মাঝে পা-গুলো বেশী ব্যা/থা করে।”
“আচ্ছা আমি ডাক্তারকে বলে ওষুধ এনে দেবো।”
আনোয়ার মির্জা তার স্ত্রী তাসলিমাকে ডাকে।তাসলিমা তার জা মনোয়ারার সাথে রুটি বানাচ্ছিলো স্বামীর ডাক শুনে আসে।আনোয়ার মির্জা তাসলিমাকে দেখে বললো,
“শাহীন কোথায়?রাতে তো বাসায় আসলো না।এসেছে?”
তাসলিমা কাচুমাচু করে তাকায়।শাহীন রাতে বাসায় আসেনি এই খবর আনোয়ার মির্জা ঠিক পেয়ে গেছে।একমাত্র ছেলে বিধায় তাছলিমা সবসময় ছেলেকে আদরে আদরে রেখেছেন।যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন।আনোয়ার মির্জা ছিলো কঠোর ছেলেকে শাসনে রাখতে চেয়েছেন কিন্তু তাসলিমার জন্যই পারেননি।স্বামীর কথায় তাসলিমা কি বলবে ভেবে পায় না।স্ত্রীর নিশ্চুপতা দেখে আনোয়ার মির্জা বলে,
“কিছু বলেছি।”
“না আসেনি।রাতে ফোন করেছিলো বলেছে বন্ধুর বাসায় থাকবে।”
“হ্যাঁ কই থাকে আমি কি আর বুঝি না?ছেলেকে ভালো করো।ভালো হতে পয়সা লাগে না।”
তাসলিমা কপট রে/গে যায়।
“আমার ছেলে ভালোই।”
“তর্ক করো না।”
নুরজাহান শাহীনকে খুব ভালোবাসে।বড়ো নাতী বিধায় আদরের ভাগ শাহীনের কপালেই বেশী ঝুটেছে।আনোয়ারের কথায় মুখ অন্ধ/কার করে বললো,
“তুই না বাপ!বাপ হয়ে ছেলেকে কেউ এসব বলে?আমার নাতী ঢের ভালো।লাখে একটা।”
আনোয়ার মির্জা উঠে দাঁড়ায়।
“আপনাদের সবার লাই পেয়েই আজকে এই অবস্থা।শুনুন কোনো দূর্ঘ/টনা ঘটালে কিন্তু আমাকে পাবেন না বলে দিলাম।”
নুরজাহান বললো,
“যদি আমার নাতী কোনো দূর্ঘ/টনা ঘটায় তাহলে আমি থাকতে তোকে টানবো না।”
আনোয়ার মির্জা চলে যায়।সারোয়ার মির্জা ডাইনিং এ বসে সব কথাই শুনে কিন্তু কোনো শব্দ করেনা।বড়ো ভাইকেই দাম দেয়া হয়না উনি বললেও শুনবেনা।
কলিংবেল বাজে।কাজের মেয়ে টুনি দরজা খুলে দেয়।সামির কোনো কথা না বলে ডুকে।টুনি দরজা আটকে বলে,
“ভাইজান!ধ্রুব ভাইজান তো উঠে নাই।ঘুমায়।”
সামির আশেপাশে তাকায়।হাই তুলে পকেট থেকে ফোন বের করে।টুনির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ডাকো।বলো আমি এসেছি।”
টুনি কিছু বলার আগেই তার ডাক আসে নুরজাহানের রুম থেকে।টুনি অসহায় চোখে সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“দাদীর কথাটা শুনে আসি নাহলে আমাকে বকা দিবো।”
“আচ্ছা।”
সামির নিজেই ধ্রুবর রুমের দরজায় নক করে কিন্তু দরজা বন্ধ।কোনো উপায় না পেয়ে সামির সোফায় চুপচাপ বসে আছে হাতে কমদামি এন্ডয়েড সেট।সে আপাতত ফ্রী ফেসবুক চালাচ্ছে।আপাতত বললে ভুল হবে সে সবসময়ই ফ্রী ফেসবুক চালায়।এমবি কিনে ফেসবুক চালানো তার কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।সে মাথা উপরে তুলে আবার আশেপাশে তাকায় তখনি একটা দরজার পর্দা নাড়িয়ে সেখান থেকে একজোড়া পা সরে যায়।সামির মুচকি হাসে তারপর মাথা নিচু করে মোবাইলের মাঝে চোখ রাখে।মনোয়ারা রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বের হয়।সামিরের কাছে যেতে যেতে বললো,
“সামির!কখন এসেছো?”
মনোয়ারাকে দেখে সামির মিষ্টি করে হাসে।
“পাঁচ মিনিট।আন্টি ধ্রুবকে ডেকে দিন একটু দরকারী কাজ ছিলো।”
মনোয়ারা ধ্রুবর দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি ধ্রুবর রুমে যাও।”
“দরজা বন্ধ।”
মনোয়ারা কয়েকবার ডাকে।ধ্রুব ভেতর থেকে আসছে বলে।মনোয়ারা রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘর থেকেই মিতুকে ডাকে।মিতু যেনো এই ডাকের জন্যই অপেক্ষা করছিলো ডাকার সাথে সাথে রান্নাঘরে যায়।নাস্তা আর চা সামিরকে দিয়ে আসতে বলে।মিতু খাবারের ট্রে নিয়ে টি টেবিলে রাখে।সামির মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে খাবারের দিকে তাকায়।খাবার দেখেই কিনা খিদা বেড়ে গেছে।হঠাৎ উপলব্ধি করে একজোড়া তৃষ্ণার্থ চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।সামির সরাসরি মিতুর দিকে তাকায়।মিতু অপ্রস্তুত হয়।চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।সামির বললো,
“কিছু বলবে মিতু?”
মিতু মাথা নাড়ে।চলে যেতে যেতে ফিরে তাকায়।কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে যাবে তারপরেও তীব্র অনুভূতির খেলা সামিরের জন্য।সামিরকে দেখলেই বুকের ভেতরে সুখে ছেঁয়ে যায়।অজানা শিহরণে মন পুলকিত হয়।সারাক্ষণ সামিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।আচ্ছা সামিরকে দেখলে মিতুর এমন পা/গল পা/গল লাগে কেনো?কেনো সবটা উজার করে সামিরের পায়ের নিচে ঢেলে দিতে ইচ্ছে করে?মিতুর কি কোনো অ/সুখ করেছে?সামির কি এই অ/সুখটা বুঝতে পারছেনা?মিতু যে খুব শীগ্রই মা/রা যাবে তা কি সামির বুঝে না?নাকি বুঝতে চায় না।মিতুর বুকের কাঁপন কি সামিরকে ছুঁয়ে যায় না।যায় না বোধহয় গেলে তো সামির বুঝতো।তন্নতন্ন করে মিতুর ওষুধ খুঁযে মিতুর অ/সুখ সারাতে চাইতো কিন্তু সামির তো ফিরেও তাকায়না।মিতু আরেকবার মাথা ঘুরিয়ে সামিরের ফর্সা মুখটার দিকে তাকালো তারপর রুমে ঢুকে যায়।সামির রুটি চিবুতে চিবুতে সবটাই পর্যবেক্ষণ করে।কিশোরীর হৃদয়ের পবিত্র ভালোবাসার বাতাস তাকে খুব করে ছুঁয়ে যায়।ভাসা ভাসা চোখের চাহনিতে না বলা কথা সামির বেশ বুঝতে পারে।কিন্তু সামির অসহায়।সমাজ তার হাত পা বেধে রেখেছে।
ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সামিরের পিঠে কিল বসিয়ে বলে
“সা/লা!আসছো একটা ফোন করতে পারো না।নতুন জামাইর মতো বসে আছো?”
সামির পিঠে হাত দিয়ে বললো,
“মোবাইলে ব্যালেন্স নাই রে ভাই।”
ধ্রুব কোনো কথা না বলে সামিরের পাশে বসে।সামির চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
“তোর মা যা খাওয়াইছে তুই মা/ইরা হজম কইরা দিছোস।”
“ভালো করেছি।”
তারপর সামির আর ধ্রুব কিছুক্ষণ কথা বলে।তখনি মিতু আর সকাল চঞ্চল পায়ে বেরিয়ে আসে।সকালকে দেখে ধ্রুব নড়েচড়ে বসে।সামিরকে ইশারা করে সকালকে দেখায়।দুজনে রান্নাঘরে চলে যাবার পরে সামির বললো,
“কাহীনি কি মামা?এই পাখি কে?”
“এর কথাই আম্মা বলছিলো।আম্মার পছন্দের পাত্রী।”
“ভালোই তো।রাজি হলি না কেনো?”
“মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।ছোট না?”
“বা/লের ছোট।গিয়া দেখো মাইয়া বহুত পাকনা।”
“দরকার নাই।”
“পরে আবার আটকাই যাইয়ো না।”
“নো চান্স।”
সামির হাসে।তারপর উঠে চলে যায়।সামির চলে যাবার পরে ধ্রুব ডাইনিং এ গিয়ে নাস্তা করতে বসে।মিতু আর সকাল নাস্তা করছে।ধ্রুব যাওয়াতে সকাল চুপসে যায়।এতোক্ষণ হেসে হেসে কথা বলা মেয়েটা মুহূর্তেই কু/কড়ে যায়।মিতু সকালের অ/সস্থি বুঝতে পেরে মুচকি হাসে।মেয়েটা ল/জ্জা পাচ্ছে।এতো ছোট মেয়ের সামনে এতো বড়ো ছেলে আসলে তো ল/জ্জা পাবেই।আর এই পিচ্ছির সাথে কিনা তার মা এই দামড়া ছেলেটাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো!ভাবা যায়?
ধ্রুব না চাইতেও তার চোখ বারবার সকালের মুখের উপরে চলে যাচ্ছে।সকালের রুটি চিবানোটা খুব সুন্দর লাগছে।লজ্জায় কাঁপা চোখের পাতা আরো ভালো লাগছে।ধ্রুব হঠাৎ বুঝতে পারলো সকালের কাছে এসে তার খুব ভালো লাগছে। সকালকে দেখতে ভালো লাগছে।ধ্রুব নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়।মাত্র একদিনেই তার মনের উপর এতো অনিয়ন্ত্রনহীনতা?তাও এই পিচ্ছি মেয়েটার উপরে?সকাল যে তার উপস্থিতিতে লজ্জা পাচ্ছে এটা সকালের মুখে স্পষ্ট ফুটে আছে।ধ্রুব জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়।মিতু উঠে রান্নাঘরে যায় তখনি সকাল চোখ তুলে ধ্রুবর দিকে তাকায়।তার চোখের সাথে ধ্রুবর চোখ মিলে গেলে সকাল অপ্রস্তুত হলেও ধ্রুব অপ্রস্তুত হয় না।মুচকি হেসে বললো,
“সকাল!তুমি কি আমাকে ল/জ্জা পাচ্ছো?”
সকাল মনে মনে ধ্রুবকে বকে দেয়।ল/জ্জা পাচ্ছে বুঝতে পেরেই এই ছেলে আরো ল/জ্জা দিতে চাইছে।সকাল মাথা নেড়ে বললো,
“না।”
ধ্রুব হেসে বললো,
“তাহলে আমার দিকে তাকাও।”
“না।”
“এতো ল/জ্জা পাও কেনো।বাচ্চাদের এতো ল/জ্জা পেতে নেই।”
সকাল ধ্রুবর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কে বাচ্চা?”
“তুমি!”
সকাল থম মেরে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থাকে মুখে কিছু বলে না।চেয়ার ছেড়ে উঠে মিতুর রুমের দিকে চলে যায়।ধ্রুব সকালের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।চোখগুলো এতো সুন্দর কেনো?সকাল কি খাটো?হ্যাঁ মানুষটা একটু ছোটখাটো।ধ্রুব মনে মনে নিজের পাশে সকালকে দাঁড় করিয়ে দেখে কেমন লাগবে।তারপর মুচকি হেসে মাথা চুলকে নাস্তায় মনোযোগ দেয়।
দুপুরে কেউ কলিংবেল দেয়।মিতু কলেজে চলে গিয়েছে বিধায় সকাল ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো।কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেয়।শাহীন সকালেকে দেখে থমকে যায়।সকালের দিকে তাকিয়ে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে।সকাল শাহীনকে চিনে না।শাহীন যে এই বাসারই ছেলে এটাও জানে না।তাই সে আস্তে করে বললো,
“কাকে চাচ্ছেন?”
শাহীন এই কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
“তুমি কে?”
“সকাল।”
“সকাল নাকি এ/টোম বো/ম।আগুনের হলকা বেরোচ্ছে।অ মাই গড!”
উনার কথায় সকাল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।বলে কি এই ছেলে।পা/গল নাকি?
চলবে….
এই পর্বে পরিবারের সবাইকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।ভিষণ রাইটিং ব্লকে আছি।লিখতে পারছিনা অথচ মাথায় গল্পের অভাব নেই।সবাই কমেন্ট করে যাবেন আপনাদের ছোট ছোট কমেন্ট দেখে যদি ব্লক কাটে।