কাঞ্চাসোনা ২ গল্পের লিংক পর্ব -০১

#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

“আম্মা আমার বয়স দেখেছো?আমার বয়সের সাথে এই মেয়ে যায়?কতো ছোট!এতো ছোট বাচ্চার সাথে বিয়ে কিভাবে সম্ভব?”

ধ্রুবর কথা শুনে মনোয়ারার ভ্রু-জোড়া কুচকে যায়।তার ছেলের বয়স কি খুব বেশী হয়ে গেছে?
“বয়স তো ঠিক-ঠাকই আছে।ছোট বড়োর কথা আসছে কেনো?”

ধ্রুব মাথা ঝাকিয়ে বললো,
“এখন ঠিক আছে কিন্তু ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে বয়স ঠিক থাকবেনা,ওই মেয়ে থাকবে বাচ্চা আমি হয়ে যাবো বুড়া।বাচ্চা বুড়ার সংসার হয় না আম্মা।”

মনোয়ারা কড়াইয়ের করল্লা নেড়ে দিয়ে ধ্রুবর দিকে ফিরে।
“বিয়ের জন্য ছোট মেয়েই মানানসই।সমবয়সী হলে মাথায় চড়ে বসে।”

ধ্রুবর মুখ তখন বিরক্তিতে করল্লার মতো তিতো হয়ে গেছে।
“আম্মা এই যুগে এসব চলে না। বয়সের তফাৎ বেশি হলে দুই এক বছর হলেই যথেষ্ট।”

মনোয়ারার মাথা নেড়ে বিষন্ন মুখে বলেন,
“মা হিসেবে এতোটুকু চাইলাম তাও পুরন করতে এতো দ্বিধা?”

ধ্রুব কিছু বলেনা মলিন মুখে মাকে দেখে।তার যখন আঠারো বছর বয়স তখন একবার আব্বা আম্মার সাথে গ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো।তখন তার খালাদের পুরান আমলের ঘরগুলোই ছিলো।টয়লেট ছিলো বাড়ির এক কোনায়।ধ্রুব টয়লেটে গিয়ে সে কি মুসিবতে পরেছিলো।টয়লেটের দরজা লক করার কোন ব্যবস্থা নেই,হায় হায় এখন কিভাবে কি করবে?কেউ এসে যদি দরজা খুলে ফেলে?অনেকক্ষন খোজাখুজির পরে বুঝতে পারে,দরজায় লাগানো রশিটা সামনের কাঠে আটকালেই লক হবে।ধ্রুব মনে মনে ভাবে বাপ রে!গ্রামে এতো বড় ইঞ্জিনিয়ারের বসবাস।কি বুদ্ধি!তার পর থেকে আর কখনো গ্রামে যাওয়া হয়নি।সেই স্মৃতি মনে হয়েই বললো,

“আম্মা গ্রামের টয়লেটের যা অবস্থা সেখানে আবার বিয়ে! আস্তাগফিরুল্লাহ।”

মনোয়ারা রা/গে ফুসফুস করে বললো,
“তুই কি টয়লেটকে বিয়ে করবি?গ/র্দভ।গ্রাম এখন শহরের মতোই উন্নত হয়ে গেছে।”

ধ্রুব মাথা চুলকে মোবাইল টিপে।আসলেই গ্রাম এখন উন্নত,এসব কথা বলে তার আম্মাকে ভুলানো যাবে না।বিয়ে বিয়ে কথাগুলো তার ভালো লাগেনা খুব কঠিন লাগে।বরং এর চেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বেশী সহজ ছিলো।

মনোয়ারাই আবার বলেন,
“মেয়েটা খুব সুন্দরী আব্বা।”

ধ্রুবর মন টানে না।অফিসের স্নেহা তার প্রতি দুর্বল,ভিষণ সুন্দরী,ম্যাচিউরিটির দিক দিয়েও পারফেক্ট।তাছাড়া মেয়েটাকে এখনো সে দেখেইনি আর না দেখে কি বিয়ের মতো এতো বড়ো সিদ্ধান্তঃ নেয়া সম্ভব?দেখা যাবে গ্রামের বাচ্চাটাচ্চা বিয়ে করলে সোসাইটির সাথেই মিলিয়ে চলতে পারবেনা,তখন মানসম্মান চলে যাবে।
“এটা সম্ভব না আম্মা।মেয়েটা মিতুর চেয়েও ছোট!আমার ছোট বোনের মতো।ইম্পসিবল!”

মনোয়ারার মন খা/রাপ হয়।পাত্রীটা আসলে তার ছোট বোন সাহানার মেয়ে।পরীর মতো দেখতে,কখনো ঢাকায় আসেনি। কিছুদিন আগে মনোয়ারা গ্রামে বোনের বাড়িতে গিয়েছিলো তখনি দেখা হয়েছে।তিনি ধ্রুবর জন্য এই মেয়েটাকে পছন্দ করেছে।কোনমতে যদি একবার দেখানো যায়,পুরুষের মন সুন্দরের দিকে ফিরে তাকাবেই,কিন্তু বাপের মতো জন্মত্যাড়া ছেলেকে তো কোনভাবেই রাজি করানো যাচ্ছে না।মন খা/রাপ করেই বলে,
“আচ্ছা।”

ধ্রুব চুলোর উত্তাপের সাথে সাথে মায়ের মন খারাপের উত্তাপও টের পায়।মাথা দুলিয়ে বলে,
“আমি শহর থেকেই তোমাকে সুন্দরী বউ এনে দেবো আম্মা।”

মনোয়ারা আর কথা বাড়ায় না পাছে আবার তার শাশুড়ী শুনে ফেলে।তার শাশুড়ী নুরজাহান মনোয়ারার বাবার বাড়ির কাউকেই পছন্দ করে না।মনের ইচ্ছাটা মনেই পুষে রাখে।ধ্রুব মন থেকে এই বাচ্চার কথা বের করে অফিসে যায়।স্নেহার কথাবার্তায় বুঝা যায় মেয়েটা তাকে পছন্দ করে দেখা যাক সামনে কি হয়।

প্রায় দুইমাস পরের ঘটনা।সকাল চিপসানো মুখ নিয়ে বাসে বসে আছে।জীবনের প্রথম একা কোথাও যাচ্ছে।তাও এতোদূর।সকাল কোলের ব্যাগটা খামচে ধরে কান্না করে দেয়।ইদানীং এমপির ছেলে সাব্বির বেশি জ্বা/লাচ্ছে।বাপকে দিয়ে কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে।সকালের বাবা তারেক এতোদিন এটা বলেছেন যে সকাল ছোট এসএসসি পরিক্ষা শেষ হলে এসব ভাববেন।কিন্তু পরিক্ষার পরেই সাব্বিরকে আর আটকানো যাচ্ছিলো না।বাড়িতে এসে সকালের হাত ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছে,তারেক গ্রামের মানুষের কাছে বিচার চেয়েছে কিন্তু প্রভাবশালী এমপির সাথে কথা বলতে কেউ রাজি না।আজকে দুপুরে এমপি নিজে ফোন করে তারেক হক’কে দাওয়াত দিয়েছে,বলেছে আজকে বিয়ের ডেট ঠিক করবে।লোক পাঠিয়ে তারেককে নিয়ে গেছে।পরিস্থিতিতে বুঝা যাচ্ছে আজকেই বিয়ে হবে,তাই সকালের মা সাহানা তাকে ঢাকার বাসে তুলে ফোন করে মনোয়ারাকে জানিয়ে দিয়েছেন কয়টা দিনের জন্য মেয়েটাকে রাখার জন্য।মানোয়ারা খুব খুশী হয় একবার যদি ধ্রুব পছন্দ করে তাহলে সারাজীবনের জন্য রেখে দিবেন।বোনকে আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকি কিন্তু এদিকে অনেক কষ্ট করে শাশুড়ীকে মানিয়েছে।বিকাল চারটার দিকে সকালকে উনি বাসায় নিয়ে আসে।ক্লান্ত অবসন্ন সকাল জার্নি করে নেতিয়ে গিয়েছে।মিতু সমবয়সী সকালকে পেয়ে খুব খুশী হয়।মনোয়ারাদের জয়েন ফ্যামিলি।সকাল সবার সাথে কথা বলে,মিষ্টি ছোট্টখাটো পুতুলের মতো মেয়েটাকে সবারই পছন্দ হয়।

সন্ধ্যানাগাদ ধ্রুব বাসায় আসে।ক্লান্ত অবসন্ন শরীর টেনে,ফ্রিজ থেকে লেবুর শরবত নিয়ে রুমে যায়।রুমে ঢুকে ব্যাগটা রেখে সামনে তাকিয়ে পায়ের চলন থেমে যায়।ঠোঁটদ্বয় আপনা আপনি কিঞ্চিৎ ফাকা হয়ে যায়,আটাশ বছরের ধ্রুবর বুকে যেন ঝড়ের মতো ধাক্কা পড়ে।লম্বা চুল যে ধ্রুবর খুব পছন্দ!কিন্তু কে এই মেয়ে?যার কিনা এমন রেশমের মতো লম্বা চুল!মিতুর চুল তো এতো লম্বা না!সচরাচর শহরের মেয়েদের এতো বড়ো চুল দেখা যায় না তাহলে এটা কে?টেবিল ফ্যানের সামনে চুল ছেড়ে দাঁড়িয়েছে।মেয়েটা অনবরত হাত দিয়ে চুল নাড়ছে ফ্যানের বাতাসের তালে তালে চুল উড়ছে।ধ্রুব গলা ঝেড়ে বললো,
“আপনি কে?”

হঠাৎ পুরুষালী গম্ভীর গলা শুনে সকালের বুক কেঁ/পে ওঠে।অবেলায় গোসল করেছে বলে চুল শুকাতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই মিতু এই রুমের ছোট ফ্যানের সাহায্যে চুল শুকাতে নিয়ে আসে।এইতো কিছুক্ষণ আগে তার দাদী ডাকলো তাই মিতু চলে গেলো।ডাগর চোখ মেলে গম্ভীর চোখের মালিকের দিকে তাকায়।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁচু লম্বা সাদা শার্ট পরিহিতো ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।সকাল কি করবে বুঝতে পারলো না।ওরনা দিয়ে ঝটপট গোমটা দিয়ে ফেললো ।মেয়েটার মিষ্টি,চেহারা দেখে ধ্রুবর বুকে আবারো জলোচ্ছাসের মতো ধাক্কা খায়।এতো মায়াবী মেয়েটা মুগ্ধ না হয়ে থাকা যাচ্ছে না।মেয়েটা ধরা খাওয়া বিড়ালের মতো ভ/য়ে কেমন করে চোখ ঝাপটে তাকিয়ে আছে।ধ্রুব মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে।পরিচয় জানতে সামনে এগিয়ে আসে।হাতের গ্লাস পাশের টেবিলে রেখে সকালের সামনে এসে দাঁড়ায়।
“আপনি কি কথা বলতে পারেন না?কে আপনি?”

ধ্রুবর এগিয়ে আসা দেখে সকাল পিছিয়ে যায়।তোতলে বলে,
“সকাল।”

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না এখন সকাল নয় সন্ধ্যা।”

সকাল তার জীবনে এমন পরিস্থিতিতে এই প্রথম পড়লো।কি বলবে ভেবে পায় না।গলা কেঁ/পে ওঠে,
“আমি সকাল।”

ধ্রুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সকাল!তার মানে এটা তার খালাতো বোন।কত ছোট ছিলো আর এখন কতো বড় হয়ে গেছে।এই সুন্দরীকেই তাহলে তার মা পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেছিলো।খা/রাপ না মোটামুটি,ভালোই।ধ্রুব ফট করেই বললো,
“তোমাকে হাফপ্যান্ট পড়া অবস্থায় দেখেছিলাম।বড়ো হয়ে গেছো!”

অচেনা ছেলের মুখে এমন ধরনের কথা শুনে সকাল হতভম্ব হয়ে যায়।কি বলে এই ছেলে,প্রথম দেখায় কেউ কাউকে এসব বলে?পা/গল নাকি?সকাল চোখের পলক ফেলে অন্যদিকে তাকালো এমনতর কথার কি উত্তর হতে পারে তার জানা নেই।ধ্রুব সকালের হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।আরেকটু লজ্জা দিতে বললো,
“সেই বার তোমার নাক দিয়ে পানি পড়ছিলো।কি বিশ্রী অবস্থা!”

সকাল এবার এতো অবাক হলো যে তার ওষ্ঠদ্বয় আপনা-আপনি ফাঁকা হয়ে গেলো।এতো বড়ো ছেলে এসব কি বলে?শহুরে ছেলেরা আসলেই এমন।ব/জ্জাত!সকালের এতো লজ্জা লাগছে যে কা/ন্না চলে আসছে।

চলবে?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here