কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব -১৩

#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_১৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

ধ্রুব অফিস থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নেয়;বিয়ে যেহেতু করেছে এখন স্ত্রীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার কর্তব্য তার।যতোদিন না শাহীন কানাডা যাচ্ছে ততোদিন সকালকে একা ছাড়ার কোনো মানে হয় না।কথায় আছে না কুকুরের লেজ তেল দিয়ে মালিশ করলেও সোজা হয় না তেমনি শাহীনের মতো অ/সভ্য এতো তাড়াতাড়ি শুধরাবে না,তার চোখ যে সকালের উপরে আছে সেটা আর কেউ লক্ষ না করলেও ধ্রুব লক্ষ করেছে,তাইতো অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।বাচ্চা বউ যেহেতু বিয়ে করেছে বাচ্চাটাকে দেখে দেখেও তো রাখতে হবে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চা তার কাছে ধরা দিচ্ছে না সকাল থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে,তার মায়ের বগলছাড়া হচ্ছে না। ধ্রুব কয়েকবার নানা বাহানায় রান্নাঘরে গিয়েছে সকালকে চোখের ইশারায় রুমে আসতে বলেছে কিন্তু কিসের কি যেই লাউ সেই কদু।বাচ্চা বউ এই দামড়া জামাইর ইশারা বুঝে না কিংবা বুঝেও সে সাড়া দিচ্ছে না।ধ্রুব পায়ের উপর পা তুলে সোফায় আড়াম করে বসে।সোফা থেকে রান্নাঘরের চিত্র দেখা যাচ্ছে,ধ্রুব একধ্যানে সকালকে দেখে কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো সকাল একবারও ধ্রুবর দিকে তাকাচ্ছে না।ধ্রুব মনে মনে ভাবে ‘সকাল এখন তো পাত্তা দিচ্ছো না তোমাকে আমি এমন পা/গল বানাবো যে প্রতি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ধ্রুব জপ করবে।অপেক্ষা করো সোনা।’

ধ্রুব যে বারবার নানা বাহানায় রান্নাঘরে আসছে এটা সকাল বেশ বুঝতে পারছে।আর বুঝতে পেরেই মুখে লাজুক হাসি ফুটে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে।ধ্রুব যে তার সঙ্গ চাইছে এটা সে বুঝেছে কিন্তু ইচ্ছে করেই রুমে যায়নি।ধ্রুবর সামনে যেতে কেমন জানি লাগে।অজানা আ/তংকে শরীর হীম হয়ে আসে,কিন্তু দুষ্টু মন যে ধ্রুবর কাছে যেতে চায়,ধ্রুবর শীতল চোখের চাহনী সারা অঙ্গে মাখতে চায়।হ্যাঁ এটা সত্য যে সে ধ্রুবকে একান্ত পুরুষ হিসেবে চাইতো আর আল্লাহর ইশারায় ধ্রুব এখন তার স্বামী।কথা সেটা না কথা হচ্ছে ধ্রুব যে তার স্বামী, সকালের উপরে তার পূর্ন অধিকার আছে,ধ্রুব যেভাবে চাইবে সেভাবেই প্রেয়সীকে রাঙ্গাতে পারবে এটা ভাবলেই সকালের ম/রে যেতে ইচ্ছে করে।ধ্রুবর পা/গল করা চাহনী দেখে নিজেকে সারাক্ষণ লুকিয়ে রাখতে মন চায়।তাইতো সকাল থেকেই শাশুড়ী কাছে এটা সেটা কাজ করার নামে রান্নাঘরে নিজেকে আটকে রেখেছে কিন্তু ধ্রুব বারবার এটা ওটার বাহানায় আসছে,চোখের ইশারায় সকালকে কাছে ডাকছে,আর এখন বাবু সেজে সোফায় বসে তাকেই দেখছে ধ্রুবর করা প্রতিটা কাজই সকাল লক্ষ করেছে,আর লক্ষ করেই লজ্জায় কাটাকাটা হয়ে গেছে মন।সকাল অবুজ না,ধ্রুবর চাহিদাটা ঠিক বুঝে।আর না বুঝার কি আছে!একটা বিবাহিত পুরুষ কি বাসনায় স্ত্রীর পিছনে ঘুরঘুর করে এটা আর কেউ না বুঝলেও স্বয়ং স্ত্রী বুঝে।সকাল মুচকি হেসে ধ্রুবর দিকে তাকায়।
ধ্রুব সকালের তাকানো দেখে দাঁত বের করে হাসে।তারপর ফটাফট কয়েকবার বাম চোখ মে/রে দেয়,শুধু চোখ মে/রেই ক্ষান্ত থাকে না চোখ মা/রার পরে ঠোঁট গোল করে চুমুও পাঠায়,তারপর আবার মুচকি হাসে।ধ্রুবর এমন কাজে সকাল হতভম্ব হয়ে যায়।মাথা ঘুরিয়ে শাশুড়ির দিকে তাকায়।পাশ থেকে টুনি খিলখিল করে হেসে উঠে।মনোয়ারা অনেকক্ষন ধরেই ছেলের মতিগতি লক্ষ করছিলেন এখন আচমকা মাথা ঘুরিয়ে এহেন কাজ দেখে উনি নিজেও হতভম্ব।কিন্তু বেশরম টুনি ঠিকি খিলখিল করে হেসে উঠে মনোয়ারা টুনিকে ধমকে চুপ করালেও মিতুকে চুপ করানো গেলো না,সকালের কানে কানে এসে বললো,
“রুম থেকে বের হয়েছো কেনো?বেচারা এতিম বাচ্চার মতো চোখ মুখ ঝাপ্টাচ্ছে,ঠোঁট ফুলাচ্ছে।বিয়ের এক সাপ্তাহ রুম থেকে বেরোনো নিষেধ যাও রুমে যাও।”

সকাল আস্তে করে বললো,
“আপু!”

“আরে লজ্জা পেও না।আমার মতো ননদ থাকতে চিন্তা কিসের ঠিকি রুমে ডুকিয়ে দেবো।যাও।”

শাশুড়ীর সামনে এমনতর কথায়
সকাল আর কিছু বলতে পারে না লজ্জায় রুমে চলে যায়।এই ধ্রুবটাই সবার সামনে তাকে লজ্জায় ফেললো।সকাল সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,রান্নাঘরের তাপে হাত পা ময়লা হয়ে গেছে।হাত পা ধুতে ধুতে ভাবে,এতো পাজি কেনো এই ছেলে?সবাই কি ভাবছে?ধুর ধুর।

মিতু ধ্রুবর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে হি হি করে হাসে।ধ্রুব কপাল কুঁচকে বললো,
“খালি খালি বলদের মতো হাসিস কেনো? ”

“তুমি যেই কারণে হাসো সেই কারনে আমিও হাসি।”

ধ্রুব কটমট করে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“বেশী পাকনামি করবি না।যাহ ভাগ।”

মিতু আস্তে করে বললো,
“আপনার চোখ কাঁপার ওষুধ,ঠোঁট চোখা হওয়ার ওষুধ রুমে পাঠাইছি ভাইজান।”

ধ্রুব কিছু বলার আগে মিতু ছুটে চলে যায়।ধ্রুব এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত পা টান টান করে রুমে যায়,নিজের রুমে যেতেও এখন কেমন লাগে,বিয়ের পরে এই কি যন্ত্রণা শুরু হলো।রুমে এসে সে অবাক! একি তার বউ কই!ধ্রুব বাথরুমের দরজার সামনে এসে থম মে/রে দাড়িয়ে থাকে তারপর আস্তে করে ডাকে”বউ অ বউ।”
সকাল ধ্রুবর এমন কাজে হতবিহ্বল হয়ে যায়।ধ্রুব যে এমন দুষ্ট এটা বিয়ের আগে ভুলেও বোধগম্য হয়নি।কিন্তু এখন দেখছে এই ছেলে ভিষণ দুষ্টু।আর সকালের মনে হয় ধ্রুব তাকে লজ্জা দিতে ইচ্ছে করেই এমন করে।সকাল দরজা খুলে দেখে ধ্রুব বিছানায় বসে আছে।সকাল ধ্রুবর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ধ্রুব হাসে।সকাল বলে,
“তখন এমন করলেন কেনো?”

ধ্রুব না বোঝার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললো,
“কখন?”

সকাল নিজেকে শান্ত করে বললো,
“সোফায় বসে।”

“কিছু করেছিলাম নাকি!মনে পরছে না তো।”

সকাল দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“আপনি এতো খারাপ!”

“ঘরের বউ ঘরে না পেলে সব পুরুষই খারাপ হয়।”

“সবাই কি ভাবলো?আমি খুব লজ্জা পেয়েছি।”

“হুহভাবুক গে।আমার কাছে আসোনা কেনো?আমি কি পরপুরুষ?”

সকাল কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে।ধ্রুব আবার বলে,
“রুমে আসোনা কেনো?”
আমি কি অন্য হাজবেন্ডের মতো জোড় করে কাছে টেনেছি?আমি চাইছি আমাদের বন্ধুত্ব হোক,আমাদের মন কাছাকাছি আসুক।দুজন স্বইচ্ছায় নিজেদের সুখের সন্ধানে নামতে।অথচ তুমি আমাকে জ/মের মতো ভ/য় পাচ্ছো।আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো।”

সকাল নিশ্চুপ।ধ্রুব আবার বললো,
“তুমি কি আমাকে শাহীনের মতো ভাবছো?হ্যাঁ?সকাল আমাকে বিয়ে করে কি তুমি ভুল করেছো?”

সকাল আমতা আমতা করে বললো,
“না।”

“কোনো ব্যাপার না৷ যদি মনে হয় ভুল করেছো কোনো সমস্যা নেই আমি বিয়ে যেহেতু করতে পেরেছি এখন তোমার ইচ্ছায় আমার থেকে দূরেও সরিয়ে দিতে পারবো। ”

ধ্রুবর কথায় সকাল চমকে উঠে।দুদিকে মাথা নেড়ে কান্নায় বুজে আসা গলায় আড়ষ্ট হয়ে না বলে।ধ্রুব মনে মনে হাসে।পাখিকে কিভাবে ফাঁদে ফেলতে হয় তা শিকারী ধ্রুবর বেশ জানা আছে কিন্তু মুখের ভাব গম্ভীর করেই বললো,
“কি না?”

সকালের চোখ বেয়ে তখন পানি পড়ছে।কিছুক্ষণ দুজনের কেউই কথা বললো না।খানিক পরে ধ্রুব সকালের ফুপানোর শব্দ শুনতে পেলো।সকালের হাত ধরে বিছানায় বসায়।নরম,মোলায়েম হাতটা বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় নিয়ে রাখে,
“কি হলো?কাঁদছো কেনো?”

সকাল ধ্রুবর চোখের দিকে তাকায়।সে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কান্নার কারণে বলতে পারছেনা।তারপরও বললো,
“আমি কখনো বলেছি যে আপনাকে ছেড়ে যাবো?আপনি কিভাবে বললেন আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন?আমিতো আপনাকে ছাড়বো না।একটুও ছাড়বো না।”

ধ্রুবর বুকে সুখ সুখ বাতাস বয়ে যায়।সকালের দিকে মাথা কাত করে তাকায়।
“একটুও ছাড়বে না?”

“না।”

“কি করবে?”

“ধরে রাখবো।”

ধ্রুব বললো,
“কিভাবে?”

সকাল তার ছোট পাখির মতো হাত দিয়ে ধ্রুবর বলিষ্ঠ হাত আঁকড়ে ধরতে চায় কিছুটা সফলও হয়।ধ্রুব মুচকি হাসে।সকালের চোখে চোখ রেখে বললো,
“তুমি আমাকে ধরে রাখতে হবে না শুধু আমাকে ভালোবেসো,আমার সর্বসুখের কারণ হইও তাহলেই হবে আমি সারাজীবন তোমার পাশেই থাকবো।”

সকাল মুগ্ধ হয়,ধ্রুব এতো সুন্দর করে কথা বলে যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।তার ইচ্ছা করে ধ্রুবর বুকে লুটিয়ে পড়তে কিন্তু এটা খুবই লজ্জাজনক,যা সকাল কখনোই পারবেনা।
ধ্রুব পাশের বেডসাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে সকালকে পানি খেতে দেয়।সকাল পানি খায়।তারপর বলে,
“আর কখনো দূরে সরানোর কথা বলবেন না।”

“বলবো না।”

“কষ্ট পাই।”

ধ্রুব আস্তে করে বললো,
“সরি বউ।”

সকাল হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো গলে যায়।মুখে ফুটে উঠে লাজুক হাসি।বউ!ইশ কি মিষ্টি ডাক।এই পা/গলকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।খুব ভালোবাসে তো,ছোট মনে মা/তাল বাতাস বইয়ে দেয়ার রাজা যে ধ্রুব।এই পাগলকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব?না কখনো না।ধ্রুব সকালের হাত ছেড়ে বলে,
“আমিতো রুমেই আছি কোনো দরকার হলে ডাকবে।আর হ্যাঁ শাহীনের থেকে যতোসম্ভব দূরে থাকবে।ঠিক আছে?”

সকাল মিষ্টি করে হাসে।মাথা নেড়ে মুখে বললো,
“জ্বী।”

সকাল চলে যেতে নিলে ধ্রুব বললো,
“আর মাঝেমধ্যে রুমে এসো।তোমার চাঁদ মুখ না দেখলে ভালো লাগে না বউ।”

সকাল হেসে চলে যায়।লোকটা এতো এতো সহযে সবকিছু বলে কিভাবে?মনের ভাব ফুটিয়ে তোলার অসীম ক্ষমতা আছে ধ্রুবর।যা সকালকে সুখ দেয়।সকাল আবার পিছু ফিরে তাকায় ধ্রুব তখনো তাকেই দেখছে সকাল তাকানোতে দুজনের চোখের মিলন হয় সকাল মুচকি হেসে রুম থেকে প্রস্তান ঘটায়।মনে মনে ভাবে এই ভ/য়ংকর দুষ্টু পুরুষটা তার।

সাহানা মেয়ের সুখ দেখে আড়ালে কাঁদে।সব বাবা মাই চায় সন্তান সুখে থাকুক।সকালের সুখ দেখে সাহানার বুকে সুখের আন্দোলন হয়।ধ্রুবর মতো বর আর তার বড়ো আপার মতো শাশুড়ী পেয়ে মেয়েটা কখনো অসুখী হবেনা।মেয়েটাকে নিয়ে তার রাজ্যের চিন্তা ছিলো এখন সব চিন্তার অবসান হলো।সাহানা ঠিক করেন কালকেই গ্রামে ফিরে যাবে।

সকাল সন্ধ্যায় চা নিয়ে রুমে যায়।ধ্রুব তখন মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করছে সকালকে দেখে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।সকাল বললো,
“আপনার চা।”

“চায়ের কথা বলেছিলাম নাকি? ”

“না।আমার মনে হলো চা খাবেন।”

ধ্রুব হাসে।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দেয়।তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,
“চিনি ছাড়া চা কেনো?”

সকাল ধ্রুবর হাত থেকে কাপটা নিয়ে বললো,
“চিনি দিয়েছি তো।”

“খেয়ে দেখো।”

সকাল একটা চুমুক দেয়।তারপর ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো,
“ঠিকই তো আছে।”

ধ্রুব সকালের হাত থেকে কাপটা নিয়ে সকাল যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে চা খেয়েছে ধ্রুব সেখানেই ঠোঁট লাগিয়ে চা খায়।সকালের হাত তখন আপনা আপনি তার ঠোঁটে চলে যায়।ধ্রুব আস্তে করে বললো,
“এভাবে খাওয়া নাকি সুন্নত,বউ থাকতে সুন্নতি কাজ বাকি রাখবো কেনো?”

সকাল ছুটে বেরিয়ে যায়,ইশ তার বরটা কি রোমান্টিক!আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে হাটে।হঠাৎ করে শাহীন সকালকে টেনে তার রুমে নিয়ে যায়।সকালের মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।অন্যহাতে কেচি ধরে আছে।শাহীনের উদ্যেশ্য আর কিছু করতে পারুক আর না পারুক এই লম্বা চুলগুলো তো কাটতে পারবে।এতেই হবে।শাহীনের গায়ের জ্বালা কিছুটা কমবে।
শাহীনের হাতে কেচি দেখেই সকাল ছটফট করে উঠে।শাহীনের উদ্যেশ্য বুঝতে কষ্ট হয় না।এই চুল কাটা যাবে না এই চুল যে ধ্রুবর খুব পছন্দ!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here