কাঞ্জি পর্ব -০৩

#কাঞ্জি
#পর্ব-৩
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

পাত্রপক্ষ যখন এসেছে তখন আবৃতি কেবল ডিম নয়, আটা দিয়েও ভর্তি।পরপর তার মাথায় চারটে ডিম এবং এক কেজি আটা দিয়েছে শাহরিয়ার এবং বর্ণ।দুই মিনিটের মাঝে এতো কিছু হয়ে যাবে কেউ বুঝতে পারেনি। পাত্রপক্ষের সাথে দরজায় দাঁড়িয়ে ফয়সাল সাহেব কিছুটা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আবৃতি থরথর করে কাঁপছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শাহরিয়ার বলল,

“বর্ণের জন্মদিনে আবৃতি এমন করেছিল।তাই বর্ণ চেয়েছিল এমন করতে।”

শাহরিয়ারের মিথ্যে কথার প্রতিবাদ করতে পারলো না বর্ণ।কারণ ইতিমধ্যে সে এই মিথ্যের জন্য বড়সড় একটা ঘু ষ নিয়ে ফেলেছে। সুফিয়া খাতুন শাহানারা এবং নাজিয়াকে বললেন ভিতরে যেতে।আবৃতির গোসল করা দরকার। এই রাতের বেলা আটা আর ডিমে মাখো-মাখো হয়ে আবৃতি মনে হলো এখন একটু চিনি এবং তেলের কমতি।এরপর ওভেনে গিয়ে বসে পড়বে।
গোসল সেরে বেরিয়ে আসার পর সুফিয়া খাতুন রুমে এসে বললেন,

“অদিতি, আবৃতি বের হওয়ার দরকার নাই।নাজু তুমি শাহানারাকে সাজিয়ে দাও।শাড়ি পরাও ওরে দেখতে আসছে।”

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু-কুঁচকে ফেলল শাহরিয়ার।শাহানুরকে দেখতে এসেছে? চোয়াল শক্ত করে বর্ণের দিকে তাকাতেই বর্ণ কিছুটা দূরে গিয়ে বলল,

“আমার দোষ নেই ভাই।আমি শুনেছিলাম আবৃতি আপুর জন্মদিনের দিন পাত্রপক্ষ আসবে।কাকে দেখতে আসবে তা শুনিনি।হতেও তো পারতো তারা সত্যিই আবৃতি আপুকে দেখতে আসতো।তাছাড়া আপুকে আজ যা লাগছিল, তারা দেখলে পছন্দ করতো না এটার গ্যারান্টি নেই কিন্তু।”

দীর্ঘ শ্বাস ফেলল শাহরিয়ার।আহারে বেচারি আবৃতি। কাঁচা ডিমের গন্ধ সহ্য কর‍তে পারে না।না জানি আজ কতোবার শ্যাম্পু করবে সে।”

গোসল সেরে শুভ্র রঙের সালোয়ার কামিজ পরে বের হলো আবৃতি। রুমের একপাশে বর্ণ, নাজিয়া, রত্নাবেগম , অদিতি সবাই বসে আছে।আবৃতির নাকটা লাল হয়ে গেছে।বিরক্ত লাগলো রত্না বেগমের।সামান্য শীত পড়েছে। ঠাণ্ডা লাগলে আরেক বিপত্তি।তাই নিজের কাছে বসিয়ে ভালোভাবে চুল মুছিয়ে দিলেন।অদিতিকে দিয়ে হেয়ার ড্রায়ার আনিয়ে চুল শুকানোর সময় চার পাঁচটে হাঁচি দিলো আবৃতি।কিন্তু সেই সময় মেয়ে নিয়ে যাওয়ার ডাক পড়লে অদিতি বাদে সবাই বেরিয়ে গেল।এখানে থেকে কোনো লাভ নেই তাই অদিতিও নিজের ঘরে ফিরে গিয়েছে।

রুমে একা আবৃতি নিজের চুলে চিরুনি চালানোর সময় একমগ চা হাতে দরজায় টোকা দিলো শাহরিয়ার।অনুমতি পেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে মগটা দিয়ে বলল,

“আবৃতি খবরদার কিছু বলে ডাকবে না।মুখ ফসকে এমন কোনো কথা বলবে না।বর্ণ আশেপাশেই আছে।”

“বলবো না এক শর্তে।”

“কি?”

“উপস্থিতি বিষয়ক নাম্বার আমায় পুরো দিতে হবে।না হলে সবাইকে বলে দিবো আপনি আমার কি হোন।”

কিছুটা তামাশার ছলে শাহরিয়ার জিজ্ঞেস করলো,
“আমি তোমার কি হই?”

থতমত খেয়ে শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে রইল আবৃতি।শাহরিয়ার তখন স্মিত হেসে পা বাড়ালো বাইরের দিকে।আর সে গুনগুনিয়ে গাইছে,
“ইটের ভাটার কয়লা দিয়া আগুন জ্বালাইছে, দেওয়ানা বানাইছে……. ”

পরদিন সত্যি সত্যি জ্বর এলো আবৃতি। জ্বর শরীরে ক্লাসে হাজির হয়েছে সে।তৃতীয় বেঞ্চের সাইডে বসে মনোযোগ দিয়ে দেখছিল শাহরিয়ারকে।কেমন অদ্ভুদ একটা বাচন ভঙ্গি তার।সরু নাকের উপর রিমলেস চশমা।শার্টের হাতাটা কনুই অবধি গোটানো।হাতের শিরাগুলো ফুলে আছে।মার্কারটা দুই আংগুলে অদ্ভুত ভাবে ধরে আছে।কেন?এসব কি কেবল আবৃতির কাছেই অদ্ভুত লাগে? না কি বাকীদের কাছেও?
পড়ানোর সময় শাহরিয়ার পুরো ক্লাস হেঁটে হেঁটে পড়ায়।আবৃতি কাছে এসে যেন বইয়ের পাতা দেখার নাম করে স্বল্প সময় দাঁড়ায় সে।ইশারায় আবৃতিকে বইয়ের নির্দিষ্ট পেজ বের করতে বলে।আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বইয়ের পাতা বের করে দিলো।শাহরিয়ার ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো

“অসুস্থ?”

দু দিকে মাথা দুলিয়ে আবৃতি বলল,
“জ্বর এসেছে।”
“তো ক্লাসে কেন এসেছেন?”
“সামনে এক্সাম।”
“রেস্ট নিন।বন্ধুদের থেকে পড়ে নিয়ে নিবেন।”

ক্লাসের কারোর কাছেই বিষয়টি অদ্ভুত লাগেনি।প্রতিটি স্টুডেন্টের প্রতি শাহরিয়ারের মনোভাব একই।তাদের সমস্যা হলে তারা প্রথমে তাকেই জানায়। বিশেষ করে ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ইয়ারের ছেলেদের সাথে বেশ সখ্যতা রয়েছে তার।ট্যুর প্ল্যান কিংবা কোনো অনুষ্ঠান বলতে সকলে শাহরিয়ারকেই চিনে।খুব দ্রুত ক্যাম্পাসে ফেস্টিভ্যাল শুরু হতে চলেছে।ফাইনাল ইয়ারের দীপ্ত এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়।ক্লাস শেষ হতেই আবৃতির ডাক পড়লো মাঠে।এই রোদের মাঝে মাঠের ছায়ায় একপাশে বসেছে ডিপার্টমেন্টের অধিকাংশ স্টুডেন্ট। তৃতীয় বর্ষ মানে এক একটা হীরের খনি।এমনটাই বলে ফাইনাল ইয়ারের সবাই।এই যেমন আবৃতি ভীষণ ভালো গান গায় তেমনি নীলা খুব ভালো নাচে। শামীম ফুটবলে পারদর্শী এছাড়া আরো তো আছেই।তাদের আসতে দেখে ইশা আপু মাঝখানে জায়গা করে দিয়ে বলল,

“এই এই খানে বোস।আজ কিন্তু ছাড়ছি না আগেই।কাল কেন চলে গিয়েছিলি?”

“আপু জ্বর এসেছে আমার।”

“জ্বর না কি প্রেমের জ্বর আমার টিয়া পাখি?”

“প্রেমের আবার জ্বর হয় বুঝি?”

“হয়। যে প্রেমে পড়লে তোর জ্বর আসবে সে প্রেমে খালি দুঃখ পাবিরে। তাই যদি প্রেমের জ্বর আসে তবে গা ধুয়ে ফেল।বেঁচে যাবি।”

আবৃতি স্মিত হাসে।কানের পিঠে চুল গুঁজে নিতে নিতেই দীপ্ত গিটারে সুর তুলে। ক্লাস শেষ হয়েছে। অধিকাংশ স্টুডেন্ট বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত নিজেদের প্রিপারেশন এর প্ল্যান নিয়ে। সেই সময় আবৃতির চোখ যায় ডিপার্টমেন্টের দিকে।তিন তলায় দাঁড়িয়ে আছে শাহরিয়ার।তার হাতে চায়ের কাপ।গাছের আড়াল দিয়েও যেন আবৃতি অনুভব করছে তাকে। হাত বাড়িয়ে সে দীপ্তর কাছে গিটার চেয়ে নিয়ে সে খালি গলায় গেয়ে উঠে…

“বসে ভাবি নিরালায় .
আগে তো জানি না বন্দের পিরিতের জ্বালা,
বসে ভাবি নিরালায় .
আগে তো জানি না বন্দের পিরিতের জ্বালা,
যেন ইটের ভাটায় কয়লা দিয়া আগুন জালাইছে,
ইটের ভাটায় কয়লা দিয়া আগুন জালাইছে
দেওয়ানা বানাইছে,
কী যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে
কী যাদু করিয়া রে বন্দে মায়া লাগাইছে।”

হাত তালিতে শেষ করে গানটা আবৃতি।নিচের ঠোঁট কামড়ে ফোন কানে স্মিত হাসে শাহরিয়ার। ফিসফিসিয়ে নিজেই নিজেকে বলে,

“পাখি ভালোই যখন বাসো তবে দূরে থেকে লজ্জা কেন পাও?এতো লজ্জা আমি সইবো কী করে?”

ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরে আসার পর রত্না বেগমের মুখোমুখি হয় আবৃতি। কোনো একটা বিষয় নিয়ে রেগে আছে ভদ্র মহিলা।দুপুরের খাবার নিতে গেলে কাজের মেয়েটা জানায় আজ কণা মানে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী এসেছিলেন।সাথে নিয়ে এসেছিলেন অনেক কিছু।সেসব কিছুই রত্না বেগম ফেলে দিয়েছেন। ভাতের প্লেটটা ওভাবেই রেখে নিজের ঘরে ফিরে আসে আবৃতি। জ্বরে মুখটা তেঁতো হয়ে আছে।গলার কাছে কিছু অনুভব হতেই ওয়াশরুমে দৌড়ে যায়।বমি করে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল।কিন্তু রত্না বেগম ছুটে এলেন।দু চার ঘা মেয়ের মুখে পিঠে গালে বসিয়ে দিলেন।জ্বরের ঘোরে অবচেতন আবৃতি বার কয়েক জিজ্ঞেস করলো,

“মা কি করেছি আমি?মা?”

কিন্তু শব্দ বের হলো না।কেবল সে শুনতে পাচ্ছিলো,
“ভাব ধরা হচ্ছে কু ত্তা র বা চ্চা। এক বারে মে রে ফেলবো।ভাত না খেয়ে আদিখ্যেতা করছিস?আজ তোর জন্য আমার জীবন এমন। ভাব ধরিস? দেখি আজ তোকে কে বাঁ চা য়।”

আবৃতির নাকে উষ্ণতা অনুভব হলো। রত্না বেগম তার চুল ধরে অনবরত ঝাঁকুনি দিচ্ছিলো।আধো বোজা চোখে জ্ঞান হারানোর আগে সে দেখলো দরজায় আবৃতি দাঁড়িয়ে আছে।নীরব দর্শকের মতোন। হাতে নেইল পলিশ পরছে সে।আর আজমীর দৌড়ে এসে মাকে ছাড়িয়ে তাকে বুকে আগলে নিয়ে বলল,

“এভাবে না মে রে একবারে মে রে ফেলো না মা।ওর জন্ম কোনো ভুল ছিল না।”

চলবে (এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন।আর হ্যাঁ আমার ই-বুক #উষসী_আলো পড়েছেন তো?”

#ছবিয়ালঃইন্সাগ্রাম (পেজের নাম ভুলে গেছি।কারো পরিচিত হলে জানাবেন।এডিট করে দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here