#কাঞ্জি
#পর্ব-১০
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো শাহরিয়ার। সে ভাবলো হয়তো দরজার ও পাশে আবৃতি দাঁড়িয়ে আছে বাইরে৷ তাকে ভিতরে আসতে বলল। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করলো সিজাদ।তাকে দেখে শাহরিয়ার জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কেন তুই?”
“আবৃতিকে নিয়ে এসেছি।ক্লাস না কি জরুরী।”
“ওর সুস্থতার থেকে বেশি কিন্তু নয়।”
“সেটা আমি জানি।তবে আমার তোর সাথে কিছু কথা বলার প্রয়োজন ছিল।”
“কি বিষয়ে?”
“আজ ওয়াজিফার পরিবার আসছে।মামী চাচ্ছিলেন আমি যেন তোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলি।”
“সিজাদ তোর সাথে আমার কিছু কথা ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। বিষয়টা আবৃতিকে নিয়ে। আমি চাইছি এই মুহুর্তে এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে কথার সমাধান হোক।”
আবৃতির নাম শুনে ভ্রু-কুঁচকে ফেলল সিজাদ।শাহরিয়ার পিয়নকে ডেকে বলল আজ সে আর কোনো ক্লাস নিবে না এটা জানিয়ে দিতে। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে যে মিটিং এর কথা ছিল সেটাও দশ মিনিটের মধ্যে সেরে বেরিয়ে এলো।আবৃতি ক্লাসে বসেছিল মাথা নিচু করে। ব্যাগের উপরে মাথা রেখে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। শরীরটা একটু বেশিই খারাপ লাগছিল তার। বাসায় না থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে শাহরিয়ারের মা আবৃতির উপর ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছে। মেয়ের আংটি বদলের সময় আবৃতি কেন ছিল? অন্য মেয়েদের এই অনুষ্ঠানে থাকার প্রয়োজনটাই বা কি এসব নিয়ে নিজ স্বামীর সাথে এক দফা কথা কাটাকাটি হয়েছে তার।সমস্যাটা কেবল আবৃতিকে নিয়ে নয়, রিমঝিম, অদিতি ওদেরকেও নিজ ছেলে মেয়ের আশেপাশে সহ্য করতে না পারার এক বিশেষ স্বভাব রয়েছে শাহরিয়ারের মায়ের।
আজ ও বাড়ি থেকে আবার মানুষ আসবে।বাড়িতে অদিতিও নেই। রিমঝিমকে নিয়ে বেরিয়েছে। আবৃতি নিজেকে সামলাতে চায়।একটা ছোট্ট অনুভূতি শাহরিয়ারের জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দিতে চেয়েও দিতে পারে না।দুই চোখ উপচে তার জল ছড়িয়ে পড়ে মুখশ্রীতে। ঈশ্ ভালোবাসা এত যন্ত্রণার কেন? আবৃতির কয়েকটি অভ্যেসের মাঝে একটি হলো সে সময় পেলে কোর-আন শরীফের বাংলা অনুবাদ পড়ে। গান শোনা,টিভি দেখা, বন্ধু এসবের থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে।হ্যাঁ তার গানের গলা ভালো, ফেস্টে অংশ নেয় কিন্তু মনের শান্তির জন্য সে বিভিন্ন সূরার অনুবাদগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে।তাকে অনুপ্রেরণা দেয়। এই যে তার ফোনের স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে সূরা ইউসুফের অনুবাদের সারমর্ম। যা আমাদের শেখায়,
“কাছের মানুষ আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, ভাঙ্গা হৃদয় ভালবাসা দিয়ে নিরাময় করা যায়, কষ্টের পরে স্বাচ্ছন্দ্য আসে, দুঃখিত হওয়া অকৃতজ্ঞ হওয়ার সমান নয়, এবং ধৈর্যশীল মানুষদের সুন্দর সমাপ্তি হয়।”
লেখাটা পড়ে স্মিত হাসলো শাহ্। গত পাঁচটি বছর যাবত সে ধৈর্য্য সহ্যের পরিসীমা দ্বিগুণ করেই এই মেয়েটাকে ভালোবেসে চলেছে।না হলে তার খুব প্রয়োজন ছিল না কষ্ট করে বিসিএস দেওয়া, চাকরি করার।সে দিব্যি বাবার ব্যবসা দেখতে পারতো কিন্তু সে জানে। তার মা কোনো দিন আবৃতিকে মেনে নিবে না। শুরুতেই বলবে ওকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে। যদি বাবার ব্যবসা বাদে তার কোনো ইনকাম না থাকে তবে কোথায় উঠবে এই মেয়েটাকে নিয়ে? এসব অনেক কিছুই ভাবতে হয় শাহ্ কে। ক্লাসটা ফাঁকা আছে বলেই শাহ্ এখানে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“জানো পাখি,কিছু সময় আগে আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে তোমাকে ভালোবাসি বলেছি। অদ্ভুত তাই না?একটু বেশিই অদ্ভুত।”
গাড়ি করে আবৃতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে শাহরিয়ার।সে সিজাদকে নিয়ে চলে এলো প্রায় ফাঁকা একটা রেস্টুরেন্টে। রুফটপ রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসেছে দুজন।খাবার অর্ডার দেওয়ার পর সিজাদ বলল,
“মামী চাচ্ছিলেন তুই এবার বিয়েটা করে নে।ওয়াজিফারা আসবে এবার।”
“এই কথা তো মা আমাকে নিজেও বলতে পারতো।”
“বলে লাভ হয়নি বলেই আমাকে পাঠিয়েছে।তুই না কি সরাসরি না করে দিয়েছিস? কারণটা কি জানতে পারি?”
“কোনো কারণ নেই,আবার অনেক কারণ আছে।”
“শোন, মামী তোর সব আবদার রেখেছে। সেটা তোর বাইরে পড়তে চাওয়া হোক কিংবা চাকরি করা।”
“বিসিএস কমপ্লিট করতে আমাকে রাত দিন করে পড়তে হয়েছে। আর তুই বলছিস এটা আবদার?”
“আমি আসলে ওভাবে বলিনি।”
“যেভাবেই বলিস।তোদের যেমন ফিজিক্যাল ট্রেনিং এ কষ্ট হয় আমার দশগুণ বেশি কষ্ট হয়েছে এটা শেষ করতে, এই আবদারের চাকরি পেতে।আর এতো কষ্ট আমি যার জন্য করেছি তাকে ছেড়ে অন্যকে বিয়ে করবো?”
“কার জন্য করেছিস?আবৃতির জন্য?”
“যখন জানিস তখন কেন বলছিস? তোর মনে আবৃতির জন্য মায়া জন্মাচ্ছে আমি জানি।কিন্তু এটাও সত্য আমি ওকে কাউকে দিতে পারবো না।”
সিজাদ নিশ্চুপ রইল। মাথাটা নিচু করে কিছু সময় বসে রইল সে।এরপর ফিসফিস করে বলল,
“ভালোবাসা জিনিসটা বলে কয়ে রয়ে সয়ে দরদাম করে হয় না। আমার মনে কি আছে সেটা থাকুক আমার কাছেই। কিন্তু তুই মেয়েটাকে অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দিচ্ছিস।তোর মা মেনে নিবে না ওকে।এত অপমান করার কি খুব প্রয়োজন?”
“আমি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছি।আবৃতির নামেই। শাহানারার বিয়ের পরেই বাবাকে বলবো।তাছাড়া দাদা তো আছেই।আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।”
“আর আবৃতি? ”
“আমি ওর চোখ পড়তে পারি রে ভাই।ওই দুই চোখে আমি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না।”
সিজাদ তাকিয়ে রইল শাহরিয়ারের দিকে।তার মুখে একটা দ্যুতি দেখা যাচ্ছে।বাড়ি ফিরে শাহরিয়ার সরাসরি আবৃতির রুমে ঢুকে গেল।আবৃতি তখন গোসল সেরে বেরিয়েছে।চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি ঝরছে।শাহ্কে বিছানায় বসে থাকতে দেখে সে ভ্রু-কুঁচকে ফেলল।কিছু জিজ্ঞাসা করার পূর্বেই শাহ্ তাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
“একদম মে’রে ফেলবো তোমাকে।তারপর নিজে ম’রে যাবো।বলে দিচ্ছি।”
“কিন্তু কেন?”
“ভালোবাসি তাই।”
“কাকে আমাকে?”
“না ওই পাড়ার মানুষকে।”
“তাহলে আমাকে ধরে আছেন কেন?ছাড়ুন বলছি।”
শাহরিয়ারের হাতের বন্ধন স্পষ্ট হয়।চুলের পানিতে ভেজা কামিজের অংশে তার আংগুলের ছাপ স্পষ্ট হয়।আবৃতি শিউরে উঠেছে।শাহরিয়ারের চুলে হাত বুলিয়ে সে ফিসফিস করে বলে,
“শাহ্ আপনি কি আমার প্রপোজ করছেন?এভাবেও ভালোবাসি বলা যায়?”
চলবে( এডিট ছাড়া। আগামীকাল পরবর্তী অংশ পেয়ে যাবেন।যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন। আর হ্যাঁ “এক চামচ ভালোবাসা” ই-বুকটা পড়েছেন?)
#ছবিয়ালঃankitaww