কাঞ্জি পর্ব -১১

#কাঞ্জি
#পর্ব-১১
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

“শাহ্ এভাবেও ভালোবাসি বলা যায়?”

“মানলেও মানতে হবে,না মানলেও মানতে হবে।তোমার প্রতি আমার কেবল আমার অধিকার।”

“আমার জন্য কি কি করতে হবে জানেন তো?এ পথ সহজ হবে না।”

“না হলেও আপত্তি নেই। যত কঠিন হবে ততই ভালোবাসবে আমাকে।”

“আর যদি কখনো ছেড়ে যাই?”

“যেতে দিলে তো।”

“আপনি চলে যাবেন।ভবিতব্য নেই এই সম্পর্কের।”

“সময় বলে দিবে।”

শাহরিয়ার কোনো কথা বলে না।চুপচাপ আবৃতির উদরে মাথা রেখে বসে থাকে।সেই সময় আবৃতির মনে হয় তার শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই। বুকের ভিতরে শ্বাস বন্ধের মতো লাগে। একবার মনে হয়, এটা নিছক স্বপ্ন, চোখ খুলবে সব শেষ হয়ে যাবে আবার মনে হয় না সব বাস্তব। এই স্পষ্ট স্পর্শ বাস্তব, কানে শোনা কথাগুলো বাস্তব। দুহাতে সমুদ্রের জলে হাত ছোঁয়ার মতোন বাস্তব। দুজন প্রিয় মানুষ কাছাকাছি থাকলে সময় কখন চলে যায় কে জানে?কিন্তু আবৃতির পা সঙ্গ দিলো না।সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না।একে শরীর দুর্বল উপরন্তু শাহরিয়ারের এমন হুটহাট ভালোবাসি বলাটা তার শরীরে বেশ ভালোভাবে ক্লান্তি এনে দিলো।শাহরিয়ারের মাথায় হাত রেখে বলল,

“আমি একটু পাশে বসবো?”

“কেন?”

“পায়ে ব্যথা করছে।বসবো?”

“হ্যাঁ বোসো।”

“আপনি হুট করে এভাবে আজ বলছেন যে?”

” একটা সময় আমাদের জীবনে চলে আসে যে আমরা এক মুহুর্ত নষ্ট করতে চাই না।তোমাকে না বলতে পেরে আমার কষ্ট হচ্ছিলো।আর এই কষ্টটা সহ্য করা যাচ্ছিলো না বলে বলেই দিলাম। আচ্ছা শুনো কিছু কথা বলার ছিল।”

“বলুন।”

“আমাদের কথা আপাতত কাউকে বলবে না।বিশেষ করে কোনো বন্ধুবান্ধবদের।”

“কেন?”

“সম্পর্কে আমি তোমার টিচারও হই আবৃতি।বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো কথা তোমাকে বলুক এটা আমি চাইছি না।”

“কী বলবে?আর কাউকে জানাবো না আমি।”

“তুমি কি খেয়াল করেছো? তুমি যে ইয়ারে থাকো সেই ইয়ারের পরীক্ষার কোনো দায়িত্বে আমি থাকি না।”

“খেয়াল করিনি যে তা নয়।কিন্তু ওভাবে চিন্তা করিনি।”

“কারণ আমি চাই না আমার সাথে তোমার একটা সম্পর্ক আছে। আমি তোমার কাজিন। ভাবতেই পারে আমি তোমাকে পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে সাহায্য করছি। তোমার রেজাল্ট বরাবর ভালো। এমন প্রশ্ন উঠুক আমি চাই না বলেই কোনো দায়িত্বে থাকি না।”

“কিন্তু কেউ তো জানেই না।”

“হ্যাঁ জানে না।কারণ জানানোর প্রয়োজন হয়নি।ঠিক এমনি এই সম্পর্কের কথাও জানানোর প্রয়োজন নেই। লেখাপড়া শেষ হলে যখন বিয়ে করে নিবো তখন সবাই এমনিতেও জানবে।”

চকিতে শাহরিয়ারের দিকে তাকায় আবৃতি। শাহরিয়ারের মুখে দ্যুতি খেলা করছে।উত্তরের বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা।সেই বাতাস যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আবৃতিকে।তিরতির করে কাঁপলো তার দুটি ঠোঁট।শাহরিয়ারের দৃষ্টি এবার চোখ থেকে নেমে এলো অধরে। স্মিত প্রসারিত হলো অধর।উষ্ণ স্পর্শ হাতে হাত রাখতেই আবৃতি বলল,

“বিয়ে?
আমি যদি রাজি না হতাম?ফিরিয়ে দিতাম?তবে কি করতেন?”

“ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।তাছাড়া আমি তোমার চোখের ভাষা বেশ পড়তে পারি।তাই পড়লাম আর জানালাম।তুমিও তো না করতে পারতে।করলে না কেন?ঠিক আমার প্রতি মনে ভালোবাসা নিয়ে বসে আছো।”

“কাকী কোনো দিন মেনে নিবে না। মাঝ থেকে কতগুলো মানুষ কষ্ট পাবে।আমরা যেমন আছি তেমন দূরেই থাকা ভালো হবে।ভালোবাসলেই বিয়ে করে সংসার করতে হবে এমন কিন্তু নয়।”

শাহরিয়ার ভ্রু-কুঁচকে ফেলল। আবৃতির মনোভাব বুঝার চেষ্টা কর‍তে লাগলো সে।কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।আবৃতির হাত থেকে গামছাটা নিয়ে ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে।প্রত্যাখান পায়নি সে কিন্তু অনুমতিও কি পেল? হয়তো না।

আবৃতি উঠে এসে গামছাটা হাতে নিয়ে বলল,

“আমি এই এক মনে অন্য কাউকে আর ভালোবাসবো না শাহ্।কথা দিচ্ছি আপনাকে।কিন্তু আপনি কি পারবেন আপনার মায়ের আবদার ফেলে দিতে?আজ ওয়াজিফারা আসছে। কেবল শাহানারার বিয়ে উপলক্ষে নয় আপনার বিয়ের কথাও উঠবে।আপনি কি করবেন?”

“সেটা আমি বুঝবো।তোমার কাজ তুমি কেবল নিজের খেয়াল রাখবে।হাসি খুশি থাকবে।যখন যেটার প্রয়োজন সেটা আমার থেকে নিয়ে নিবে।”

“যখন যেটা প্রয়োজন?”

“হ্যাঁ,এই যে আমার কার্ড রইল।এতো দিন অধিকার ছিল না কিছু বলিনি। আজ জোর করতে হলে তাই করবো।হেটে কোথাও যাবে না। অন্তত রিক্সায় যাবে।”

“আমি এসব কেন নিবো?”

“তো আমি কার জন্য এসব জমিয়েছি।এটার একাউন্ট তোমার নামেই এবং পিনটাও তোমার প্রিয় নাম্বারে।”

আবৃতি কিছু বলার আগেই দরজায় টোকা পড়লো।কেউ একজন এসে আবৃতি কে ডাকছে।এতক্ষণে মাথা কাজ করলো দুজনের।দো তালায় দাদার বাড়িতে ওরা। কিন্তু শাহরিয়ার গায়ে মাখলো বলে মনে হলো না।কিছু সময় আবৃতিকে আগলে রেখে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।তার পিছন পিছন আবৃতি বাইরে বেরিয়ে এলো।ড্রয়িং রুমে ওয়াজিফার বাবা মায়ের সাথে ও নিজেও বসে আছে।শাহরিয়ারের উপস্তিতিতে মৃদু হাসলো মেয়েটা।উঠে এসে শাহরিয়ারের হাত ধরে বলল,

“আমাদের দুজনের বহু বছরের অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে।শাহানারার বিয়ের দুদিন পরেই আমরা এক হতে চলেছি।”

আবৃতি কিছু না বলে স্মিত হাসলো।এমন কিছু হবে এটা আগে থেকেই তো নির্ধারিত ছিল।কেবল মাঝের কয়েকটা মিনিট সে না হয় একটা সুন্দর স্বপ্ন ভেবেই পুরো জীবন কাটিয়ে দিবে।

চলবে( এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন। আগামীকাল পরবর্তী অংশ দিবো। আর হ্যাঁ আমার নতুন ই-বুক #এক_চামচ_ভালোবাসা পড়েছেন তো?)

#ছবিয়ালঃছবিপ্রতিচ্ছবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here