#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-৪
.
কেউ খুব জোরে আমাকে টান দিলো। পরশ ভাইয়ার বাহুডোরে আবদ্ধ থাকায় বেশ ব্যথা পেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি কাকিমা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি কাকিমাকে প্রশ্ন করলাম-
“কাকিমা তুমি এসেছো? আমার জন্য নারকেলের নাড়ু বানিয়ে এনেছো কি?? কই দেখি?(কাকিমায়ের হাতে কিছু আাছে কিনা দেখতে লাগলাম)
কাকিমা পরশ ভাইয়ের হাত ধরে চলে যেতে লাগলেন, কিছুই বুঝতেছিনা। পরশ ভাইয়ার দৃষ্টি কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আমি বুঝে উঠলাম না। পরীকে ডাকতে লাগলেন, পরী আমার রুম থেকে বের হতেই তারও হাত ধরে চলে গেলেন।
.
আমি ক্লাস টেনের প্র্রথম দিন ক্লাসে মনোযোগ দিতে পাচ্ছিনা। খুব ইচ্ছা করতেছে পরীর সাথে কথা বলতে কিন্তু কাকিমা মানা করায় সাহস পাচ্ছিনা।
.
এসএসসি এক্সামের আজ শেষ দিন।আমার খুব ইচ্ছা হলো পরীর সাথে কথা বলার তাই পরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলাম একটি ক্লাসে। পরীও আবেগেআপ্লুতো হয়ে পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো আমায়। দুজনেই রিতিমতো কান্নায় বঙ্গোপসাগর বানিয়ে তুলতে উঠেপরে লেগেছি। খুব ভালোবাসি যে। পরীকে নিতে সুমু ভাই এসেছে। আমাকে কেমন আছি প্রশ্ন করে নিজেও দু-ফোঁটা চোখের জ্বলে নিজেকে ভাঁসালেন। আমার কপালে আদরের পরশ দিয়ে বললেন-
“ভালো থাকিস পাখি। দোয়া করি যেন আমার বোনটা সবসময় ভালো থাকে।”
এইদিকে প্রায় ৪বছর পরশ ভাইয়ার সাথে দেখা হয়নি আমার। তাই পরী আর সুমু ভাইকে প্রশ্ন করলাম-
“পরী সুমু ভাই পরশ ভাইয়া কোথায়? এতোগুলো বছর হয়ে গেলো দেখা হয়নি তার সাথে”
পরী কান্নারত কন্ঠেই বলল—
“তোর পরশ ভাই দেশের বাহিরে মৃদু।”
আমি বুঝলাম না তাই আবারো প্রশ্ন করলাম-
“দেশের বাহিরে মানে?”
সুমু ভাইয়া এবার বললেন-
“তুই তো জানিস-ই পরশ ছোট থেকেই ডক্টর হবে বলতো। আর এখন বড় হওয়ার সাথে সাথে ওর স্বপ্ন আরো বড় হয়েছে রে পাখি। সার্জন হবে আমাদের পরশ তাই আমেরিকায় আছে দু-বছর থেকে।”
.
পরশ ভাই দুটো বছর থেকে দেশের বাহিরে অথচ আমার সাথে একবার দেখা করেও গেলোনা? অন্তত মা-বাবার সাথেও তো দেখা করতে পারতো। আমি অভিমানমাখা কনে্ঠ বললাম-
“কই ভাইয়া তো দেখা করে গেলোনা। আমরা কি এতোটাই পর হয়ে গেলাম?”
.
পরীর ডাকে বর্তমানে ফিরে এলাম আমি। রাত ২টা বাজে আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পরায় আমায় খাবার দিতে এসেছে। আজ কাকিমা আমায় ডাকেনি যে? আজ কি ওনার মন অনেক বেশি খারাপ? কেন জানি ওনার মন খারাপ থাকলে আমার ভালোলাগেনা। আমি খাবার নিয়ে পরীকে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিলাম। খাওয়ার ইচ্ছা নেই তাই না খেয়েই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
.
“আর কতো দিন এভাবে কান্না করবে রুশু?(কাকিমায়ের নাম রুশানা) মৃদুকে তো ওর দোষ না থাকা সত্যেও শাস্তি দিচ্ছো। তোমার কথায় আমিও ভালো ব্যবহার করিনা ওর সাথে। স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করলেন রুশানা বেগম। তারপর আলমিরা থেকে বোনের রেখে যাওয়া শেষ অবলম্বন *চিঠি* নিয়ে পড়তে লাগলেন—
.
.
“বুবু”
আমি যা করতে যাচ্ছি জানি সেটা পাপ কিন্তু কি করবো বুবু আমি যে নিজের হাতেই সব শেষ করে দিছি। স্বামীকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করাইলাম যেন একটা সন্তান নসীব হয় ওনার আর আমিও মা ডাক শুনতে পারি। আমি কি জানতাম বুবু যে আমি নিজের হাতে নিজেই আমার গড়ে তোলা সংসারটা ভাইঙ্গা দিমু? ওনার বিয়ে দেওয়ার পরেও কতো ভালোবাসতো আমারে। মুনিরা(মৃদুর মা) সবসময় কতো সেবা-যত্ম করে আমার। ওনার বিয়ের ২বছর পর মৃদু আসে আমার সংসারে। মাইয়াটা কতই না সুন্দর হইছে একদম বাপের মতোন, তাইনা বুবু?? কই আমার মতো তো কিছুই হয়নাই বুবু তাহলে কি আমি ওর মা হইতে পারুমনা? মৃদুর জন্মের ২মাস পর তোমার পরীডাও আইলো দুনিয়াত। তুমি কি দেখছো বুবু পরী আমার মতোন হইছে?? আমি তোমার কাছে পরীরে নিতে চাইছিলাম কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনাই, কেন জানো? সন্তান মায়ের কাছে কি এইডা আমি বুইঝা গেছিলাম। সুমেন হওয়ার সময় তো আমার বিয়াও হয়নাই দেখোনাই পোলাডা কেমনে শুধু আমার কাছেই থাকতো? বড় বুবুর কাছে কানলেও আমার কাছে আইয়া চুপ হইয়া যাইতো। আমরা তিনবোন কতো ভালো নিজেদের সংসারে ছিলাম, তাইনা বুবু? আমি কেন বন্ধা হইলাম বুবু? আমি কি বড় কোন পাপ করছিলাম যার জন্য মাবুদ আমারে এত্তো বড় শাস্তি দিলো। যদি ওনাকে একটা সন্তানের সুখ দিতে পারতাম তাহইলে মুনিরারে আসা লাগতো না। মৃদুটারে অনেক ভালোবাসি বুবু কিন্তু কেন জানিনা মুনিরারে আমার সহ্য হচ্ছিলনা। ওর উপর রাগ কইরা আমি মৃদুরে মারছি বুবু, ইশ্ মাইয়াডা কেমনে কানতাছিলো বুবু আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার কলিজাডারে ছুড়ি দিয়া কাঁটতাছে। কিন্তু মুনিরার উপরের রাগ ঝাড়তে যাইয়া মৃদুরে মারলাম আর আমার স্বামীডা আজকে আমার গায়ে হাত তুলছে বুবু। যারে এতো ভালোবাসলাম সেও আমারে বুঝলো না বুবু আমি যে সহ্য করতে পারতেছিনা। কারোই কোনো দোষ নাই বুবু সব দোষ আমার। আমি চইলা যাইতাছি বুবু তুমি কিন্তু কারো উপ্রে রাগ করবানা। ভালো থাকবা সবসময় আর আমার পাখিগুলারে ভালো রাখবা। আমার কাছে আর সময় নাই বুবু যাইতে হইবো যে। আমি ভালো থাকবো একদম চিন্তা করবানা। আমার লাশ কিন্তু আম্মা-আব্বার কবরের পাশে দাফন দিবা।
.
ইতি তোমার
…‘রুনা’…
.
.
“মৃদু আর মৃদুর মায়ের জন্য আমার বোনটা মরছে। ওদেরকে কখনো মাফ করবোনা আমি।”
“তোমার বোন নিজেই এটার জন্য দায়ী ছিলো রুশু”
স্বামীর দিকে অশ্রুভেজা নয়য়ে তাকিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরেন রুশানা বেগম্।।
*ভালোবাসা রুনার জন্য না মৃদুর বাবার না মৃদুর মায়ের আর মৃদুর কারোই কম ছিলোনা রুনার জন্য কিন্তু রুনা নিজের হিংসাকে প্রাধান্য দিয়ে সব ভুলে গেছে।*
চলবে-