কালো মেয়েটি পর্ব:০২

0
1384

কালো মেয়েটি
পর্ব:০২
লেখা: রাকিব মাহমুদ

ভার্সিটি থেকে চলে গেল অনামিকা। এরপর অনেক দিন ভার্সিটিকে দেখা যায়নি অনামিকাকে। নেহাল একটিবার ভুল করেও মনে করেনি অনামিকাকে। সেদিন নেহালকে দেখলাম একটা সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে। নেহাল হয়তো খুব ভালোই আছে। তবে অনামিকাকে দেখা যায় না কোথাও।।

সেদিন বারান্দায় বসে ফেইসবুকিং করছি।কিছুখন পর অনামিকা অনামিকাদের বারান্দায় আসলো। আমি তাকাতেই অনামিকা চোখ সরিয়ে নিল। হয়তো লজ্জা পেল তবে আজ বারান্দা থেকে চলে গেল না অনামিকা। বারান্দায় বসে আছে অনামিকা।।

আমি মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকাচ্ছি অনামিকার দিকে। অনেক মায়া লাগছে অনামিকার জন্য। কখনো কারো প্রেমে পড়িনি আমি। তাই আমার অভিগ্যতাও নেই। ভালোবাসা হয়তো এমনই। একজন ভালোবেসে কষ্ট পায়।
অন্যজন দিব্যি সুখে থাকে। আচ্ছা চেহারা কি খুব বেশি জরুরি? সুন্দর মনের কি কোন মূল্য নেই। আচ্ছা আমি অনামিকাকে নিয়ে ভাবছি কেন? মেয়েটির অনেক বেশি কষ্ট। কেউ বুজতে চেষ্টা করেনা অনামিকাকে।।

সেদিন সব লজ্জা ছেড়ে ভার্সিটিতে গিয়েছে অনামিকা। আজ অনেক বদলে গিয়েছে অনামিকা। আজ হয়তো অনামিকা বুজে গিয়েছে রূপ ছাড়া মানুষের কোন মূল নেই। আজ অনামিকা কারো সাথে মিশে না। তবে ক্লাসের সেরা ছাত্রী হচ্ছে অনামিকা। দিন যাচ্ছে অনামিকা যেন আরও বেশি মেধাবী হচ্ছে। অনামিকা দেখতে কালো তবে চেহারাটা মায়ায় ঘেরা। তাকালে এক প্রকার তৃপ্তি পাওয়া যায়। তবে অন্যকারো কথা আমার জানা নেই আমি অনামিকার দিকে তাকালে তৃপ্তি পাই।

কিছুদিন পরের কথা। আমি আর বন্ধু মামুন চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। হটাৎ মামুন বলে উঠলো আচ্ছা দোস্ত তর ক্রাশ কে। আমি বললাম অনামিকা। বন্ধু মামুন হেসে দিল। আমি অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকালাম। মামুনের হাসার কারন জিঙ্গেস করলাম মামুন জবাবে বললো কাইল্যা মেয়ে তর ক্রাশ। মামুনের কথায় আমার ভিষন রাগ হলো। মামুন হয়তো বুজতে পারলো তাই হয়তো আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো…
– দোস্ত মজা করলাম। মেয়েটি কালো হলেও অনেক গুন আছে তবে ভার্সিটির সবাই ট্রল করে এটা সহ্য করার মতো নয়। (মামুন)
– হুম। আচ্ছা দোস্ত চেহারা সুন্দর হওয়াটা কি খুব বেশি জরুরি? সুন্দর মনের কি কোন মূল্য নেই।। (আমি)
– সবার মন তো তর মনের মতো নয়। বর্তমানে ছেলেরা প্রেম করে রূপ দেখে আর মেয়েরা প্রেম করে টাকা দেখে।
– তর কথা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। শতকরা ৯০% রিলেশন রূপ এবং টাকা দেখে হয়। তবে এটাও সত্যি সবাই একরকম নয়।।
– হুম। অনামিকা কিন্তু অনেক কিছু সহ্য করে আজ রূপ নেই বলে অনামিকা অবহেলিত।।
– হুম দোস্ত। আচ্ছা দোস্ত অনামিকাকে আমার সাথে কেমন লাগবে??
– দু’জনকে এক সাথে দাড়া করিয়ে দেখা লাগবে দোস্ত।।
– দোস্ত আমি সিরিয়াস।।
– হুম… খারাপ লাগবে না।।
– আমি অনামিকার সাথে প্রেম করবো এবং অনামিকাকে বউ করবো।।
– সবই ঠিক আছে দোস্ত। তবে অনামিকা তো কারও সাথে কথাই বলে না। রাজি হবে বলে মনে হয় না।।
– আচ্ছা কি করা যায়?
– দোস্ত তুই একটা ফেইক ফেইসবুক আডি খোল। আমি ওর বান্ধবীর থেকে অনামিকার আইডির লিংক এনে দিব।
– ধন্যবাদ দোস্ত।।

যেই কথা সেই কথা। একটা ফেইক ফেইসবুক আইডি খোলে ফেললাম। আইডির নাম দিলাম “ভালোবাসার কাঙাল” বন্ধু মামুন আইডির লিংক এনে দিল। আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিলাম অনামিকাকে।।

তিনদিন হয়ে গেল এখনও অনামিকা রিকুয়েষ্ট এক্সেপট করে নাই। আমি বাধ্য হয়ে মেসেজ করে এক্সেপট করতে বললাম, বললাস জরুরি কথা আছে।।
– কেমন আছেন?? (আমি)
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি? (অনামিকা)
– আলহামদুলিল্লাহ..কি করেন?
– পড়তে ছিলাম…আপনি?
– সুয়ে আছি..আপনি কি সারাক্ষন পড়েন?
– পড়াশুনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই।।
– আচ্ছা আমাকে পড়াবেন?
– আমি ছেলেদের প্রাইভেট পড়াই না।।
– আমাকে পড়ানো যায় না?
– আপনি আমার কে হন যে আপনাকে পড়াতেই হবে?
– আপনি যা হতে বলবেন।।
– কিছু হওয়া লাগবে না।।
– আপনাকে আমার ভিষন ভালো লাগে।
– মাথা ঠিক আছে?
-হুম।
– আপনি কাকে ভেবে কাকে কি বলছেন?
– আপনি অনামিকা নন?
– আমি অনামিকা তবে আপনি হয়তো অন্য অনামিকাকে ভেবে আমাকে এসব কথা বলছেন।।
– না! আমি আপনাকেই বলছি।।
– আমি দেখতে অনেক কালো।
– আমি জানি আপনি দেখতে কালো তবে আপনি হয়তো জানেন না আপনার চেহারা অনেক মায়াবী।।
– মজা নেন?
– সত্যি বলছি।

আমি অফলাইন হয়ে গেলাম। অনামিকার জন্য আমার মায়া লাগে। তবে জীবন সঙ্গী করার ক্ষেত্রে আমার মন বেশি আগ্রহী নয়। বন্ধু মামুনের সাথে বলেছিলাম ঠিক। তখন হয়তো আবেগ কাজ করেছিল আমার মনে। তবে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে দেখলাম একটা কালো মেয়ের সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকবো। তবে আমার অনামিকার জন্য ইদানিং আমার মায়া খুব বেশি বেড়ে গিয়েছে। কি করবো কিছু বোঝে উঠতে পারছি না।
আচ্ছা অনামিকাকে নিয়ে আমি কেন ভাবছি। থাকুক না অনামিকা অনামিকার মতো তাতে আমার কি? তবে জানিনা কেন অনামিকার মুখটি বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমি সত্যি ভাবতে চাইনা অনামিকাকে নিয়ে।।

ভাবনা গুলো আমাকে পুড়ে পুড়ে খাচ্ছিল। কি করবো আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না। আম্মুর কাছে চলে গেলাম।।
– আচ্ছা আম্মু একটা কালো মেয়েকে আমার সাথে কেমন লাগবে? (আমি)
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন? (আম্মু)
– আমার জানা জরুরি তুমি উত্তর দাও।।
– শুন তর জন্য আমি একটা মিষ্টি লাল টুকটুকে বউ আনবো। একদম রাজকন্যার মতো দেখতে হবে। আমার ছেলে তো রাজপুত্রের থেকে কোন অংশে কম নয়।।
– আচ্ছা “মা” সবাই যদি সুন্দরী মেয়েকে জীবন সঙ্গী করতে চায় তাহলে কালো মেয়েদের কি হবে?
– কালো মেয়েদের কি হবে তা জেনে তর কাজ কি? মাথায় কিসের ভূত চাপছে তর। এই নে পানি খা!
– আমি পানি খেয়ে বললাম “মা” সবাই তো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে আমি না হয় কালো মেয়েকেই বিয়ে করবো।।
– কিসের বিয়ে বিয়ে করছিস। আগে পড়াশুনা কর তারপর লাল টুকটুতে বউ এনে দিবো এখন যা মাথা ঠান্ডা কর।।

আমি রুমে যেয়ে বন্ধু মামুনকে ফোন করলাম। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো মামুন…
– দোস্ত একটা কথা বল মন থেকে। (আমি)
-কি কথা? (মামুন)
– দোস্ত মন থেকে বল অনামিকাকে আমার জীবন সঙ্গী করলে কেমন হয়?
– দোস্ত সত্যি বলতে ঐ মেয়ে তর সাথে যায়না। এই যুগে সবাই সুন্দরী মেয়ে দেখে প্রেম করে, সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করে। তাহলে তুই এরকম করছিস কেন দোস্ত কি হয়েছে তর? দোস্ত মেয়ের কি অভাব আছে। তর মতো হ্যান্ডসাম ছেলের জন্য অনেক সুন্দরী মেয়ে অপেক্ষা করছে তুই একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে প্রেম কর। এসব কাইল্যা মেয়ের কথা ভুলে যা।।
– আচ্ছা দোস্ত মেয়েটির জন্য আমার যেন কেমন কেমন লাগে সেজন্যই বলতেছি।।
– তুই সবসময় অর কথা ভাবতে থাকিস এজন্যই এমন হয়। তুই ভলেও ওর কথা মনে করবি না নিজরকে অন্য কাজে ব্যাস্ত রাখ।
– আচ্ছা দোস্ত ভালো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।।

সেদিন রাত্রি বেলা চুপচাপ সুয়ে আছি। তখনও ভাবছি আমি কি করা যায়। অনামিকাকে কেন আমার এত মনে পড়ে। কেন মায়া লাগে অনামিকার জন্য। কেন বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে অনামিকান ঐ মায়াবী মুখ। তবে কি সত্যি আমি প্রেমে পড়েছি অনামিকার। কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ভাবনা গুলো আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ফেইসবুকের ইনবক্স দেখতেই অনামিকার মেসেজ গুলো আমাকে অবাক করে দিল।। অনামিকার মেসেজগুলো ছিল…

“কি ব্যাপার অফ লাইন হয়েগেলেন”

“আচ্ছা আমি কালো হয়েছি এটা কি আমার দোষ যদি আমার দোষ না হয় তাহলে কেন সবমসয় আমার কথা শুনতে হয়। কেন সবার হাসি ঠাট্রা নিরবে সহ্য করে হয়।
কেন সবাই ট্রল করে। জানিনা আমার পাপ কি ছিল তবে সত্যি আর সহ্য করতে পারছিনা আমি”

” আচ্ছা আমি আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম? আপনিও আমার সাথে মজা নিলেন। আমি আপনাকে চিনিনা তবে হয়তো আপনি আমার পরিচিত কেউ হবেন। সেজন্যই হয়তো মজা করছেন। তবে জানেন আপনি যখন বলেছিলেন আমি মায়াবী তখন আপনার প্রতি আমার আকর্ষন হয়েছিল। কেন জানেন আপনি প্রথম মায়াবী বলেছিলেন আমাকে আমার মনে মনে অনেক আনন্দ হচ্ছিল। তবে এখন কষ্ট হচ্ছে আমি আপনার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করেছিলাম আপনাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম। সত্যি কথা বলতে ভাগ্য সবার সহায় হয় না। আমি কালো এটা কি আমার ব্যার্থতা। নাকি কোন পাপ করেছিলাম নাকি আপনার কোন ক্ষতি করেছিলাম। কেন জানিনা সবাই আমার উপর উঠে পরে লেগেছে। রাস্তায়, ভার্সিটিতে ট্রল করেও শান্তি পননি আপনারা?বাসায় একটু শান্তিতে থাকি এটাও হয়তো আপনাদের সহ্য হয়না এজন্য ফেইসবুকের ইনবক্সে এসে ট্রল করে মজা নেন।।

“অনেক কিছু বলে ফেলেছি এজন্য আমি দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।।

অনামিকার মেসেজ গুলো পড়ে সত্যি আমার চোখে জল এসে গিয়ছে। মনের অজান্তেই আমার দু’নয়নে অশ্রুর মেলা। আমি অফলাইন হয়ে গেলাম। ভাবছি কি করবো আমি। কেন আমি অনামিকাকে কষ্ট দিলাম। কেন আমার মায়া হয় অনামিকানর জন্য। কেন আমার ভাবনায় অনামিকার স্থান সবসময়। কেন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে অনামিকার ঐ মায়াবী মুখ।প্রশ্ন গুলোর উত্তর মিলছে না। তখনও তবুও ভাবছি আমি।।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here