কালো মেয়েটি পর্ব:০৫

কালো মেয়েটি
পর্ব:০৫

লেখা:রাকিব মাহমুদ

রাত দু’টা অবধি ব্যালকনিতে অন্ধকারে দাড়িয়ে রইলাম।
তখনও চোখের সামনে ভেসে উঠছে অনামিকার মায়াবী মুখ। মাথাটাও ব্যাথা করছে। অনামিকাদের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছি। যে ব্যালকনিতে রোজ অনামিকার হাতে হাত রেখে জোছনার আলোতে অনামিকার মায়াবী মুখ দেখতাম সেই ব্যালকনি আজ অন্ধকারে ভরা। চারদিকে কোন আলো নেই। নেই অনামিকার উপস্থিতি। বেশিখন আর দাড়িয়ে রইলাম না ব্যালকনিতে। রুমে চলে আসলাম। সুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম আসছে না। তবুও ঘুমানোর চেষ্টা করছি। ভুলতে পারছি না অনামিকার মায়াবী মুখ। ভাবতে চাইছিনা আমি তবুও ভাবনাগুলো আমার পিছু ছাড়ছে না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি খেয়ালই নেই।।

ঘুম থেকে উঠে দেখি বেলা ১২ টা বাজে। ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে বসি আছি। আম্মু রুমে এসে আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন। কি হয়েছে জানতে চাইলেন আমি কিছু না বলে খেতে চাইলাম। আম্মুও আর কথা না বাড়িয়ে খাবার রেডি করলেন। আমি খেয়ে এসে বসে আছি রুমে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম অনামিকা কোন মেসেজ কল করেছে কি না। দেখলাম একটি কলও আসেনি। আসেনি একটা মেসেজও। আমার বড্ড রাগ হলো অনামিকার উপর।।

রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অনামিকা ফোন করে রিকুয়েষ্ট করলেই সম্পর্কটা আগের মতো করে নিব। আমি আম্মু ও মামুনের কোন কথাই শুনবো না। কিন্তু অনামিকা তো আর আগের অনামিকা নেই। ভিষন পাল্টে গিয়েছে। দিব্যি ভালো আছে।।

এখন তো মনে হচ্ছে আম্মু আর মামুন ঠিক ছিল। একে তো অনামিকা কালো অন্যদিকে ওর মনটা আজও বুজে উঠতে পারিনি আমি। আমাকে ছাড়া দিব্যি ভালো আছে অনামিকা। এই কারনের জন্য আমাকে ছেড়ে যেতে পারলো। আমাকে আরেকটিবার বুজিয়ে বলার প্রয়োজন মনে করলো না।

মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি অনামিকাকে ভুলে যাবো। যত কষ্টই হোক মনে রাখবো না আর ঐ মায়াবী মুখ। ভুলে যাবো অনামিকা নামটি। যে মেয়ে সামান্য কারনে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে সে কখনোই আমার জন্য পারফেক্ট ছিলনা।

প্রায় তিনমাস ভার্সিটিতে যাইনি। বারান্দায়ও যাইনি কখনো। শুধু রাতের বেলা ব্যালকনিতে যেয়ে একটু মনটা হালকা করতাম। বিকেল বেলা মাঝে মাঝে একটু বের হতাম। শুধু মনটা হালকা করার জন্য। আম্মু আমার পরিবর্তন দেখে বলেই ফেললেন “আচ্ছা বাবা মেয়েটি কালো হোক তুই পছন্দ করলে আমাদের্র আপত্তি নেই তাছাড়া মেয়েটি ধার্মিকও” আমি আম্মুর কথার কোন জবাব দেইনি। যতবার বলেছে আম্মু, যতবার আমাকে বুজানোর চেষ্টা করেছি আমি বিষয়টি এড়িয়ে চলেছি। শুধু একটা কথাই ভাবতে থাকি আমি কিভাবে অনামিকা এতটা পাল্টে গেল। গত তিন মাসে একটি মেসেজ/ কলও করার প্রয়োজন মনে করলো না। কখনো জানার চেষ্টা করলো না আমি কেমন আছি। কিভাবে পারলো অনামিকা এতটা পাষাত হতে। সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও আর মনে রাখবো না।।

গত তিন মাসে আমার বাবা-মা ছাড়া যে মানুষটি আমার পাশে ছিল ও আমার বন্ধু মামুন। দেখা করলাম সেদিন বন্ধু মামুনের সাথে। সুনীল কাকার দোকানে চা খাচ্ছি আমি আর বন্ধু মামুন। চা শেষ করে সিগারেট জালিয়ে বললাম…
-দোস্ত অনামিকাকে ভুলে যাওয়ার জন্য কি করা যায়? (আমি)
– নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে হবে।। (মামুন)
– কিভাবে?
– পুড়াশুনায়! তাছাড়া আরেকটা উপায় হলো নিউ রিলেশন কর।।
– আমার ধারা হবে না আর।।
– হবে তুই যাষ্ট টাইম পাস করবি।।
– আচ্ছা।।

পরের দিন বিকেল বেলা আমি আর মামুন ঘুরতে বের হলাম। একটা মেয়েকে দেখলাম। আহা ফিগারটা দেখে পাগল হ’বার অবস্থা। এক্কেবারে আগুন মেয়েটা। বন্ধু মামুন কে বললাম দোস্ত এটা কেমন হবে টাইম পাস করার জন্য। বন্ধু মামুন আমর সাথে সহমত হলেন। মেয়েটির পেছনে লাগলাম। প্রায় মাস খানেক ঘুরে রিলেশন করলাম।।

মেয়েটির নাম রিয়া। অসম্ভব সুন্দরী। যেকোন ছেলে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে। যদিও আমি টাইম পাস করার জন্য প্রেম করেছিলাম। কিন্তু অভিনয় করতে করতে কখন যে গভীর হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি তা সঠিক বলতে পারবো না।।

ইদানিং রিয়ার সাথে কথা না বললে কষ্ট হয়, ভিষন ইচ্ছা করে রিয়াকে দেখতে। বিকেল বেলা রিয়ার হাতে হাত রেখে না হাটলে যেন আমার দিনটাই অপূর্ন থেকে যায়।।

তবে কিছু সমস্যাও আছে রিয়ার পেছনে অনেক টাকা ব্যায় হয় আমার, মোবাইল রিচার্জ, শপিং করে দিতে হয় মাসে দু’বার, একটা মোবাইলও কিনে দিতে হয়ছে।।

আমার আর রিয়ার রিলেশনের বয়স যখন তিন মাসেরও বেশি তখন একদিন হটাৎ অনামিকার ফোন এলো।।
– হ্যালো আসসালামুআলাইকুম। (আমি)
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?? (অনামিকা)
– আল্লাহ যেমন রাখছেন আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ! কিছু জরুরি কথা বলার জন্য ফোন করেছি তাহসিন।
– জ্বী বলুন।।
– আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি তোমাকে অনেক ভুলতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তুমি যা চাইছো তাই হবে আমি রাজি প্লিজ সব কিছু আগের মতো করে নাও।।
– এতদিন পর হটাৎ? কিন্তু এখন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাছাড়া এতদিন একটিবারও জানার প্রয়োজন মনে করেননি কেমন আছি। আমি অনেক অপেক্ষা করেছি আপনার একটি ফোনের জন্য কিন্তু আসেনি। আজ আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়োছি।।
– আমার ভুল হইছে তাহসিন। আমি তোমার পা ধরে মাফ চাইতে রাজি আছি আর হ্যাঁ তুমি যা চাইবে তা পাবে যতবার খুঁশি ততবার তবুও প্লিজ আমাকে আগের মতো ভালোবাসা দাও তাহসিন।।
– আজ সত্যি আমার কিছু করার নেই আগে আপনার ভেবে দেখা উচিৎ ছিল। আমাকে ঐ সব না দিলেও বুজিয়ে বলতে পারতেন। যে আমাকে এই কারনে ছেড়ে যেতে পারে সে কি মত্যি আমাকে ভালোবাসে। আমার তো মনে হয়না সে আমাকে ভালোবাসে। আপনি কষ্ট পেয়েছেন কিনা জানিনা তবে আমি অনেক কেঁদেছি লাভ হইনি। একটি বারও আপনি আমার কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করেননি।।
– আমি সত্যি ক্ষমা চাই তোমার পা ধরে বলছি হাত জুর করে বলছি আমাকে গ্রহন করো।।
– দুঃখিত। আমার কিছু করার নেই, তিন মাস অপেক্ষা করেছি আমি তিন মাস পর আপনাকে ভুলে যাওয়ার জন্য নতুন কাউকে খুঁজে নিয়েছি।
– সত্যি।
-হুম।।

ফোন কেটে দিলাম। অনামিকা যখন ফোন করেছিল তখন গভীর রাত। তবে ফোন কাটার পর অনেক খারাপ লাগছে কি করবো কিছু বুজে উঠতে পারছি না। ব্যালকনিতে চলে গেলাম। আজও জোছনা নেই অন্ধকারে সিগারেট জালিয়ে ধোয়া উড়াচ্ছি আর ভাবছি কি করবো আমি। অনামিকাকেউ ভুলতে পারছি না। রিয়াকেউ ঠকানো উচিৎ হবে না। কাকে গ্রহন করবো কাকে ফিরিয়ে দিব কিছু মাথায় আসছে না। একটার পর একটা সিগারেট জালাচ্ছি আর ভাবছি। এখন এই ব্যাস্ত শহরটাও নিস্তব্দ হয়ে গিয়েছে চারদিকে অন্ধকার। তারারাও জেগে নেই জেগে আছি শুধু আমি। তখনও অন্ধকারে দাড়িয়ে ভাবনায় ব্যাস্ত আমি।।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here