কালো মেয়েটি পর্ব:০৪

কালো মেয়েটি
পর্ব:০৪

লেখা: রাকিব মাহমুদ

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম। অনামিকার দেখা নেই। আমি কিছুখন বারান্দায় দাড়িয়ে রইলাম। অনামিকার দেখা নেই। ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করেই ভার্সিটির উদ্দ্যশ্যে রওনা হলাম। রাস্তায়ও অনামিকার দেখা নেই। তখনও চিন্তিত আমি তবে কি দেখা হবে না অনামিকার সাথে। যতটা দ্রুত সম্ভব ভার্সিটিতে পৌছালাম।।

অনামিকার মায়াবী মুখ খানা দেখলাম। অনেকটা আনন্দ লাগছে তখনও তাকিয়ে আছি। অনামিকা মাঝে মাঝে আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিচ্ছে। হাসিটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে মনের গভীরে ভালোবাসার সৃষ্টি করছে। আমিও তাকিয়ে আছি ভালোবাসার দৃষ্টিতে অনামিকার দিকে। আজ অনামিকার চেহারাটা কালো লাগছে না লাগছে শুধুই মায়াবী। অনামিকার চোখে দেখতে পাচ্ছি ভালোবাসার ডাক। আমিও প্রস্তুত অনামিকার ভালোবাসা গ্রহন করতে। জানিনা কি হবে আজ কি বলবে অনামিকা। ভার্সিটির ক্লাস শেষ হতেই চলে গেলাম “সাজ্জাত রেষ্টুরেন্টে” অপেক্ষা করছি আমি। তখনও দেখা নেই অনামিকার। কিছুখন অপেক্ষা করার পর যেন শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর।

অনামিকা আর আমি “সাজ্জাত রেষ্টুরেন্টে” বসে আছি সামনা সামনি। অনামিকার চোখে আমার চোখ আর আমার চোখে অনামিকার চোখ। এক প্রকার আনন্দ লাগছে। কতখন যে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি তা বলতে পারবো না। ঘড়ি দেখার সময় পাইনি। কিছুখন তাকিয়ে থাকার পর একটা মিষ্টি হাসিতে আমার ধ্যান ভাঙলো। হ্যাঁ অনামিকা মিষ্টি হাসি দিয়েছে।।
– এইযে নবাব সাহেব? (অনামিকা)
– জ্বী রানী সাহেবা বলুন। (আমি)
– আর কতখন তাকিয়ে থাকবেন?
– যতদিন বেঁচে থাকবো।।
– দুষ্ট।
– হুম।
– তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে তাহসিন।।
– তোমাকে যে মায়াবী লাগছে সে খেয়াল আছে।
– তোমাকে একটা কথা অনেকদিন যাবৎ বলতে চাচ্ছি পারছিনা আজ বলার জন্যই এখানে ডাকছি।
– আচ্ছা বলো।।
– কিছু মনে করবে না তো?
– না বলো।।
– কথা দাও আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট করবে না আমাকে অপমান করবে না।
– আচ্ছা কথা দিলাম।।
– তোমাকে আমার ভিষন ভালো লাগে তোমাকে পেতে চাই আই লাভ ইউ।
– আমি মুচকি হাসছি।।
– জানি আমি কালো বলে ফিরিয়ে দিবে তবে রিকুয়েষ্ট আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করবে না প্লিজ।
– বোকা মেয়ে।। আমিও তো তোমাকে পেতে চাই।।
– সত্যি?
– হুম।

অনামিকা উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে অনামিকা। অনামিকার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি দু’চোখে অশ্রুর মেলা।।
– কাঁদছো কেন? (আমি)
– এ’টা সুখের কান্না তাহসিন। সত্যি তোমার মতো মানুষ হয় না। আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করিনি।।

এরপর দুজনে রেষ্টুরেন্টে খেয়ে রিক্সা করে বাসায় ফিরছি। একই রিক্সাই যাচ্ছি আমরা। আমার কাঁদে মাথা রাখছে অনামিকা। আমি অনামিকার কপালে আলতো করে কিস করলাম। অনামিকা আমার হাতে হাত রাখছে। অনুভুতিটা ভুলে যাওয়ার মতো নয়।।

বাসার কাছাকাছি যাওয়ার পর ফাঁকা জায়গায় রিক্সা থামাতে বললো অনামিকা। আমাকে নিয়ে একটা গলির চিপায় নিয়ে গেল অনামিকা। আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অনামিকা। ওর পাগলামি গুলো আমার ভিষন ভালো লাগছে।

” আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা তো তাহসিন। আমি তোমাকে ভালোবেসে মরতে চাই। আমি আমার সব ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে পেতে চাই তাহসিন। তোমাকে আমার ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা তাহসিন। বিকেল বেলা বারান্দায় এসো তোমাকে দেখবো মন ভরে।”

বাসায় ফিরলাম। আজ আমার মনের অনু্ভূতি অন্যরকম। বাসায় ফিরতেই আম্মু বলেই ফেললেন। “কিরে তাহসিন আজ তকে কেমন যেন খুঁশি খুঁশি লাগছে” আমি আস্তে করে বললাম কই। কথাটা কাটিয়ে রুমে চলে গেলাম। কিছুখন পর আম্মু দু’পুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে। আমি দুপরের খাবার খেয়ে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম।।

বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে চা দিতে বললাম। আম্মু চা দিতেই আমি চলে গেলাম বারান্দায়। বারান্দায় যেয়ে দেখি অনামিকা আমাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চা খাচ্ছি অনামিকা আমাকে দেখছে। আমিও তাকিয়ে আছি অনামিকার দিকে।।

দক্ষিনা বাতাসে অনামিকার চুল গুলো এলোমেলো। কখনো কখনো চুলগুলো অনামিকার মুখে পড়ছে। অনামিকা হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে আমি তাকিয়ে আছি অনামিকার দিকে। অনামিকাও তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।

অনামিকা আমাকে ফেইসবুকের ইনবক্স দেখতে বললো। আমি রুম থেকে মোবাইল নিয়ে এসে ফেইসবুক ইনবক্সে অনামিকার মেসেজ দেখতে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম।।
– তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। (অনামিকা)
– আমারও (আমি)
– রাতে ব্যালকনিতে আসতে পারবে?
– কিভাবে?
– প্রথমে তুমি তোমার বাসার ব্যালকনিতে আসবে তারপর লাফ দিয়ে আমার বাসার ব্যালকনিতে আসবে।
– আচ্ছা।।
– হুম রাত ১২ টার পর।।

বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল আমি রুমে চলে গেলাম। পড়তে বসলাম। পড়া শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখি ১১ টা বাজে। ফেইসবুকিং করা শুরু করলাম।
অনামিকা অফলাইন। অনামিকার নাম্বারে মেসেজ দিয়ে অনলাইনে আনতে বললাম।
– কি করছো (আমি)
– পড়ছি। (অনামিকা)
– এখনও পড়ছো।
– হুম বলো।
– আমি ব্যালকনিতে আসতেছি তুমি আসো।
– এখনও এক ঘন্টা সময় আছে।
– না এখনই।
– সবাই ঘুমালে আসবো।
– ওকে।

আমি আমাদেন ব্যালকনিতে চলে গেলাম। রাতের আকাশে অসংখ্য তারার মেলা। সাথে রয়েছে জোছনা। জোছনার আলোতে বেশ ভালো লাগছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে সিগারেট জালিয়ে টানসি আর জোছনা দেখছি। এখনও দেখা নেই অনামিকার।।

ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর অনামিকার আগমন। আমি অনামিকাদের ব্যালকনিতে চলে গেলাম। ব্যালকনিতে শুধু আমি আর অনামিকা। চারদিক অন্ধকার। জোছনার আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই। শুধু ডানে বামে বাসার লাইট গুলো জলছে। জোছনার আলোতে অনামিকার মুখ দেখা যাচ্ছে। অনেক মায়াবী লাগছে। জড়িয়ে ধরলো অনামিকা আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। প্রথমে কপালে কিস করলাম তারপর গালে। ঠোঁটেও করলাম। অনামিকার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে গেল। আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমিও চুপচাপ জড়িয়ে ধরি আছি। অনামিবা ফিসফিস করে বললো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো। আমিও জবাব দিলাম না কখনোই না। কথা দিতে হলো অনামিকাকে। কথা দিলাম। এভাবে রাত দু’টা পর্যন্ত ব্যালকনিতে প্রেম করলাম আমরা।।

রোজ এভাবেই প্রেম করতাম আমরা। আমাদের রিলেশনের বয়স যখন প্রায় এক বছর তখন আমি অনেক পাল্টে গিয়েছি। সিগারেট খুব কম খাই। পড়াশুনায় বেশ মনযোগী। তবে অনামিকার বারন ছিল আমার আর ওর রিলেশনের কথা যেন কাউকে কখনো না বলি।।

সেদিন আম্মু আমাকে আর অনামিকাকে বারান্দায় চোখে চোখে প্রেম করতে দেখে ফেলেন। আম্মু শুধু বলেছিল যা করছিস ভেবে করিস মেয়েটি কালো সারাজীবন থাকতে পারবি তো তার সাথে। আমি কিছু বললাম না। আম্মু মন্দ বলেনি। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত।।

পরের দিন বন্ধু মামুনের সাথে শেয়ার করলাম। প্রথমত মামুন রাগ করে বসলো যে এত বড় একটা বিষয় কিভাবে মামুনকে জানালাম না। তারপর ও আম্মুর সাথে একমত হলো। আমি কি করবো কিছু ভালো লাগছে না। ইদানিং আমারও খুব একটা ভালো লাগে না অনামিকাকে। বন্ধু মামুন কে জিঙ্গেস করলাম অনামিকাকে ছেড়ে দিব কিনা। জবাবে মামুন বললো ছেড়ে দিলে তো তুই দোষী থাকবি। তার থেকে এমন কিছু কর যাতে ও তকে ছাড়তে বাধ্য হয়।
আমি বললাম কি করা যায় জবাবে মামুন বললো তুই ওর শরীর চেয়ে দেখ। যদি শরির দেয়? তাহলে একটু মজা নিবি। রোজ বিছানায় পেতে চাইলেই ও বাধ্য হবে তকে ছেড়ে যেতে। আমি চিন্তিত হলাম। বাসায় ফিরেও চিন্তা করছি বিষয়টি নিয়ে।। রাতের বেলা অনামিকা মেসেজ করলো।।
– কেমন আছো? (অনামিকা)
– হুম ভালো তুমি? (আমি)
– ভালো…কি করো?
– সুয়ে আছি..আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
– হুম বলো।
– তোমাকে আমি বিছানায় পেতে চাই না মানে আমার খুব ইচ্ছে করে।।
– কি বলছো তাহসিন? তুমি ঠিক আছো। তাছাড়া রোজ ত্র কাছে পাও অনেক কিছুই করো আমি তো কখনো না করিনি শুধু ঐ একটা কাজ বিয়ের পর করবে একটু অপেক্ষা করো।।
– আমাকে বিশ্বাস করো?
– হুম করি তবে এসব করতে হবে না প্লিজ তাহসিন।
– আমার লাগবে দিবে কি না বলো।
– না প্লিজ আমাকে মাফ করো।।
– আচ্ছা ঠিক আছে মাফ করলাম। আজকের পর আর কোনদিন চাইবো না। তকে মুক্তি দিয়ে দিলাম সারাজীবনের জন্য আর কখনো আমায় মেসেজ/কল দেওয়ার চেষ্টাও করবে না। আজ এই মূহর্তে এখনই সব শেষ।।

মেসেজটা দিয়েই ব্লক করে দিলাম অনামিকাকে। আমারও অনেকটা কষ্ট লাগছে। মন থেকে চাইনি এসব। তবে একটা কালো মেয়ের সাথে যদি সারাজীবন না থাকতে পারি সেজন্য বাধ্য হলাম সম্পর্কটা নষ্ট করতে। ঘুমানোর চেষ্টা করছি ঘুম আসছে না আমার। রাত দু’টা বাজে তবুও ঘুম আসছে না। অনামিকার সাথে কাটানো মূহর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে পড়ছে অনামিকার সাথে ঘটে যাওয়া সকল স্মৃতি। ঘুমাতে পারছিনা আমি চলে গেলাম ব্যালকনিতে। আজ জোছনাও নেই। অন্ধকারে ব্যালকনিতে বসে সিগারেট টানসি তবুও ভুলতে পারছিনা স্মৃতিগুলো।।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here