কালো মেয়েটি পর্ব:০৬

কালো মেয়েটি
পর্ব:০৬

লেখা: রাকিব মাহমুদ

অন্ধকারে দাড়িয়ে আছি এখনও। গভীর রাত সবাই ঘুমুচ্ছে তারারাও জেগে নেই। জেগে নেই জোছনা। তখনও ভাবনায় হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। জানিনা কি করবো আমি কে আমার জন্য পারফেক্ট এখনও জানিনা। প্রশ্ন গুলো আমার পিছু ছাড়ছে না। আমিও ভাবনায় ব্যাস্ত। অন্ধকার আকাশে তাকিয়ে আছি বড্ড বেশি মিস করছি রাতের আকাশের তারার মেলা। মিস করছি আমি ঐ জোছনার আলো। মিস করছি আমি খুব অনামিকার সাথে কাটানো মূহর্তগুলো। ভাবতে ভাবতে কখন যে দু’টা বেজে গিয়েছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই। ব্যালকনিতে আর রইলাম না। চলে গেলাম রুমে। ঘুমানোর চেষ্টা করছি তবে ঘুম আসছে না। যদিও অনামিকার জন্য আমার মায়া হয় তবে রিয়াকে ঠকানোটা কি উচিৎ হবে? অনামিকার অবহেলার জন্যই তো রিয়ার সাথে আমার সম্পর্কে জড়াতে হলো।।

রিয়াকে আমার ভালো লাগে না। ভালো লাগে রিয়ার রূপ। আর অনামিকার রূপ না থাকলেও অনামিকার মনটা খুব ভালো। অনামিকার চেহারার দিকে তাকালে অনেক মায়া লাগে। আমি অনামিকার চোখে দেখতে ভালোবাসা, অনামিকার চোখে দেখতে পাই বিশ্বাস। দেখতে পাই আমি অনামিকার চোখে বেঁচে থাকার কারন। তবে একটা কালো মেয়ের সাথে কি সারাজীবন থাকা সম্ভব। বর্তমানে সবাই সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করে সেখানে আমার হবে কিনা কালো। ভাবতেই কষ্ট লাগে। তবে আমি অনামিকাকে ভুলতে পারিনা। অনামিকা তিনটা মাস আমায় কাঁদিয়েছে। আমি কি ভুলে যাবো সেসব? না কখনোই না।।

নিরঘুম রাতে আমি এসব ভেবে চলেছি। শেষবার যখন ঘড়ি দেখেছিলাম তখন রাত্রি চারটা বাজে। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি খেয়াল নেই। ঘুম থেকে উঠেই দেখি বেলা দু’টা বাজে।।

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বিকেল বেলা ঘুরতে বের হলাম। সারাতিন রিয়া একটিবারও ফোন করেনি। সত্যি বলতে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। ভালোবাসার বিনিময়ে শুধু অবেহালাই আমার প্রাপ্য। আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। রিয়াকে ফোন করলাম। রিয়ার ফোন ওয়েটিং। বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি চেষ্টা করলাম কোন লাভ হলো না।।

সন্ধা বেলা মন ভরা দুঃখ নিয়ে বাসায় ফিরলাম আমি। আজ পড়তে বসলাম না। মনটাই যেখানে ভালোনা সেখানে কিসের পড়াশুনা। বাসার সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত আমি রুমে এসে সুয়ে পড়লাম। রাত দশটার দিকে আম্মু রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন।।

রাতের খাবার খেয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলাম। চারদিকে অন্ধকার আমার এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে মোবাইল।
সিগারেট টানসি আর রিয়াকে ফোন করছি। রিয়ার ফোন এখনও ওয়েটিং। রাত বারটা অবধি ফোন করলাম শুধু ওয়েটিং। আমি একটার পর একটা সিগারেট জালায়িয়ে টানসি।।

এভাবে কেটে গেল একটি সপ্তাহ। রিয়ার দেখা নেই। ফোনেও পাওয়া যায়না রিয়াকে। এদিকে সেদিনের পর অনামিকা আমাকে আর একটি বারও ফোন করেনি।।

আবারও খুব একা হয়ে গেলাম। হাতের সিগারেট ছাড়া কাউকে পাশে পাইনা। সিগারেট জানে শুধু আমার মন খারাপের কারন। এদিকে পড়াশুনার বারটা। পড়তে বসি না ভার্সিটিতেও যাইনা। বাবা সারাদিন অফিসে থাকে আমার সম্পর্কে কিছু জানেনা শুধু রাতে খাবার টেবিলে দেখা হয় বাবার সাথে। আর মা মিথ্যে বলে আসাজে বাঁচিয়ে নেন যে আমি পড়াশুনা করছি। আম্মু সব জানে আমার ব্যাপারে। আম্মুর উত্তম সিদ্ধান্তটি হলো বিয়ে কর তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে একাকীত্ব কমবে। তবে আমি কি করবো কিছু মাথায় আসে না।।

প্রায় এক সপ্তাহ পর বন্ধু মামুন আমাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গেল আমার মন ভালো করার জন্য। তবে সেখানে যেয়ে আমার মন কতটা খারাপ হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পার্কে যেয়ে দেখি রিয়া অন্য একটি ছেলের হাতে হাত রেখে হাটছে। আমি দূর থেকে দেখছি। কিছখন পর রিয়াকে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটি। কি নিরলজ্জরে বাবা পার্কের মধ্যেই তাদের কিস বিনিময় শুরু। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। বন্ধু মামুন কে বললাম আমাদের বন্ধু-বান্ধব সবাইকে খবর দে। আমাদের পুলাইপান সব আসলো। রিয়া ও ছেলেটি তখনও জমিয়ে প্রেম করছে। আমি সামনে গেলাম। আমাকে দেখে রিয়া অবাক হয়ে বললো..
– তুমি (রিয়া)
– হুম তর প্রেম কাহিনী দেখতে আসলাম। (আমি)
– রিয়া ওনি কে? (ছেলেটি)
– আমার খালাতো ভাই। (রিয়া)
– কিরে মিথ্যে বলস কেন সত্যি টা বল আগে ছিলাম তর জামাই বর্তমানে আমি তর দুলাভাই! (আমি)
– কি বলছেন ভাই (ছেলেটি)
– রিয়ার সাথে আমার ছবি দেখিয়ে বললাম দেখ ভাই এই ছবি দেখে কি মনে হয় তর ভাই-বোন এর সম্পর্ক! (আমি)

ছেলেটি চুপ করে আছে কিছু বলছে না। নীলাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ।।
-ভাই শুন তর সাথে আমার কোন ঝামেলা নাই তুই সরে যা মেয়েটিকে শিক্ষা দিতে দে। তুই যে ওর হাতে মোবাইল দেখছিস এটাও আমার টাকায় কেনা। যে কাপড় পরে আছে সেগুলোও আমার কিনে দেওয়া। শুন ভাই যে মেয়ে আমার থেকে সব কিছু নিয়ে তর হাতে হাত রেখে ঘুরতে পারে সে মেয়ে যে তকে কখনো ছেড়ে যাবে না তর সাথে এরকম করবে না তার গ্যারান্টি কি? (আমি)
– ভাই একদম ঠিক বলেছেন। (ছেলেটি)
– তাহলে সরে যা তর সাখে আমার ঝামেলা নেই। আমার বন্ধু-বান্ধবদের দেখিয়ে বললাম দেখছিস কতজন? তরে একটা করে কিল গুশি দিলেও তুই শেষ। তাছাড়া তর সাখে কোন ঝামেলা নাই এখান থেকে চলে যা। আমাকে আরেকটা প্রশ্ন করবি তো ঘারের রগে খাবি।। (আমি)

ছেলেটি কিছু না বলে চলে গেল। আমি বুঝতে পারছি ছেলেটির কষ্ট। তবে কিছু করার নাই এরকম প্রেমিকা নামক বেশ্যার কারনে নষ্ট হয়ে যায় হাজারো ছেলের জীবন।।

– এবার কোথায় পালাবি? (আমি)
– ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, একটা সুজোগ দাও আমি মন থেকে তোমাকেই ভালোবাসবো। (রিয়া)
– হাহাহা..ভালোবাসা? তর মুখে এই পবিত্র নামটি মানায় না।।
-চুপ করে আছে রিয়া।
– শুন একটা মানুষের মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান কথা। তুই হয়তো মিথ্যে অভিনয় করেছিস। আমার কথা ছেড়ে দিলাম ঐ ছেলেটি হয়তো মন থেকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু বিনিময়ে সে পেল প্রতারনা। তর হয়তো কারো ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন টাকা পয়সা। কিন্তু ঐ ছেলেটি হয়তো টাকা পয়সার বিনিময়ে হলেও ভালোবাসা পেতে চেয়েছিল। আফসোস টাকা পয়সার বিনিময়ে সব পাওয়া গেলেও হয়তো ভালোবাসাটা পাওয়া যায় না। আজ ছেলেটি কি করবে জানিস সিগারেট ধরবে হয়তো অন্য কোন নেশা করবো। অনেকে এরকম কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্যহত্যাও করে। আর তর মতো মেয়েরা কি করে নতুন কাউকে খোঁজতে ব্যাস্ত। তবে সব মেয়ে একরকম নয়। একরকম নয় সব ছেলেও।
আচ্ছা একটা বার ভেবে দেখতো আজ তুই যদি ছেলে থাকতি আর ছেলেটি যদি মেয়ে হতো আর এরকম ঘটনা ঘটলে তর কেমন লাগতো? মনে কর তর হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে প্রিয়জনকে কিছু গিফট করলি নয়তোবা ফেনে কথা বললি আর বিনিময়ে উপহার হিসিবে পেলি প্রতারনা। কেমন লাগবে তর? মনে কর কাউকে ভালোবাসলি মন থেকে সে তকে নিয়ে বিছানায় গেল। তারপর তার ইচ্ছা পূরন করার পর তকে ছেড়ে দিল কেমন লাগবে তর? ঠিক সেরকম ভাবে তর জন্য ছেলেটিরও সেরকম লাগছে।। তদের মতো মানুষদের জন্য সে হোক ছেলে অথবা মেয়ে ভালোবাসার উপর মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তদের মেয়ের জন্য কিছু ছেলে নেশা খোর হয়। তদের মতো মেয়েদের জন্য ক্লাসের সেরা ছাত্রটিও একসময় বখাটে হয়ে যায়। শুন ভালোবাসা সে’টা নয় যার জন্য কারো জীবন নষ্ট হয়। ভালোবাসা সে’টা যার জন্য কারো নষ্ট, আগোছালো জীবন গোছালো হয় তাকেই ভালোবাসা বলা হয়।।

কথা গুলো বলে চলে আসলাম রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আর পিছন ফিরে তাকালাম না।
বাসায় ফিরতেই আম্মু আমার মুখ দেখেই বুঝে গেলেন কিছু একটা হয়েছে। আমাকে জিঙ্গেস করলেন আমি কোন জবাব দিলাম না। বারান্দায় চলে গেলাম। খুব খালি খালি লাগছে। তাকিয়ে আছি অনামিকাদের বারান্দার দিকে কিন্তু অনামিকার দেখা নেই। আমি তবুও অনামিকাকে দেখার আশায় তাকিয়ে আছি।।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here