কাশফুলের মেলা ২ পর্ব -০১

#কাশফুলের_মেলা_২
#পর্ব_১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
বিয়ে করে শশুড় বাড়িতে আসার ছয়ঘন্টা পর কপালে খাবার জুটলো সামান্থার।সেটাও মুখে দিতে পারলো না তার আগেই কেউ ওর হাত থেকে খাবারটা ছিনিয়ে নিলো।সামান্থা মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে ওর সদ্য বিয়ে করা বর ওর খাবারটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সামান্থার রাগে মন চাইছে ওর চুল টেনে ছিড়ে ফেলুক।কিন্তু না পারবেনা।মাত্র আজ বিয়ে হয়েছে।আদনান খাবারটা লুকিয়ে ওর মাকে গিয়ে বলল সামান্থার খাওয়া শেষ।আদনানের মা সামান্থাকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে এলেন।সামান্থা ঘোমটা টেনে বসে ইচ্ছেমতো আদনানকে মনে মনে বকে যাচ্ছে।

“শুন তুই ভুলে যা আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে।আর এটাও ভুলে যা আজ আমাদের বাসর রাত।মানিনা এই বিয়ে আমি।জোড় করে কোনোদিন সম্পর্ক স্থাপন করা যায়না,সামান্থা। আর এভাবে নতুন বউয়ের মতো মাথায় ঘোমটা টেনেই বা বসে আছিস কেনো? শুন আমার কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্ট করিস না।এখন আমার খাট থেকে নাম,আমার মাথা ব্যথা করছে।কী থেকে কী হয়ে গেলো?স্বপ্নেও ভাবিনি আজ আমার বিয়ে হয়ে যাবে, তাও তোর সাথে।

আদনান রুমে এসে ব্লাঙ্কেটের ভাজ খুলতে খুলতে কথাগুলো বলছিলো।সামান্থাকে দিব্যি খাটে বসে থাকতে দেখে ওর ভ্রু কুঁচকে গেলো।চোখে মুখে ফুটে উঠলো রাগি ভাব।আদনান একটানে সামান্থার ঘোমটা সরিয়ে ফেলে।

” কথা কানে যায়না তোর,,এসব করে কী প্রমাণ করতে চাইছিস?একদম এমন ন্যাকামো করবিনা বলে রাখলাম।সহ্য হয়না তোকে আমার।তোকে যে এই ঘরে জায়গা দিয়েছি সেটাই অনেক।এবার যদি এই ঘরে থাকতে চাস তাহলে চুপচাপ আমার কথা শুন নয়তো বেড়িয়ে যা।

সামান্থা ওর কান থেকে ইয়ারফোন খুলতে খুলতে বলল,,,,

“আব কিছু বলছিলে।আসলে আমি গান শুনতে ব্যস্থ ছিলাম, দেখনা তুমি রুমে এসেছো আর আমি টেরও পেলাম না,নয়তো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতাম।
আসো আসো এখন সালাম করি।

” তোর সালাম আমার হজম হবেনা,,, নাম আমার খাট থেকে।মানিনা এই বিয়ে আমি।কিসের বিয়ে এটা?

“বিয়ে বিয়েই, সেটা তুমি মানো আর নাই মানো।সমাজ তো মানে। শুনো আদনান আমরা না সুন্দর করে আমাদের ঘর সাজাব,চারিদিকে থাকবে তোমার আর আমার ছবি,সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবে কী বলো?

” হ্যাঁ তাকিয়ে থাকবে।চল তোর ছবির ব্যানার বানিয়ে সেটা রাস্তায় টানিয়ে দিয়ে আসি, দেখবি সবাই তাকিয়ে থাকবে।ইউ নো হুয়াট,,,হাসের পকপক আমার পছন্দ নয়,আর মানুষের বকবক তো একদমি নয়।সো প্লিজ স্টপ ইউর বকবক আর নাম আমার খাট থেকে,ঘুমাব আমি।

“সে ঘুমাবে বাট এখনো অনেক রীতি বাকি আছে,ওগুলো পালন করতে হবে তো।তোমার জন্য রুমে পান আর দুধ রেখে গেছে।

সামান্থা খাট থেকে নেমে পান আর দুধ নিয়ে আসতে যাবে তার আগেই আদনান ওর হাত ধরে ফেলে।

” আগেই বলেছি আমার সামনে ন্যাকামো করিস না। বিয়েতে তুই খুশি হতে পারিস কিন্তু আমি না।আর তোকে দেখেনা অবাক লাগছে আমার।যে মেয়েটা গতপরশুও আমাকে দেখতে পারতনা,আমাকে দেখলেই তার গা জ্বলতো সেই মেয়েটা কী না আজ আমার সাথে এত স্বাভাবিক,বাহ্।আর স্বাভাবিক হওয়ারই কথা।তোর সম্মান তো রক্ষা করেছি আমি,নয়তো আজ তোর মা, বাবা আর তুই কপাল টুকে কান্না করতি।

সামান্থার কথাটা শুনে কষ্ট লাগলো পাশাপাশি রাগও লাগছে।মুখ চুলকাচ্ছে মন চাচ্ছে কিছু বলে দিক।কিন্তু না সেটা ও পারবেনা।মা পইপই করে বারন করে দিয়েছে যেন আদনানকে কিছু না বলে আর যদি বলে তাহলে সে আর ওই বাড়িতে গিয়ে উঠতে পারবেনা।সামান্থা একরাশ রাগে দুঃখে দুধ আর পান দরজার ওপারে রেখে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আদনান সামান্থার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

“এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী?এমন ভাবে তাকাচ্ছো যেন আমি চুরি করেছি।

” তুই এগুলো বাইরে রেখে এলি কেন?

“তুমি তো খাবেনা।বাসায় দেখলাম কিছু বিড়াল আছে ওগুলো নাহয় খেবে নিবে।

সামান্থা বড় বড় পায়ে এসে শোয়ে পরে।আদনান এখনো হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে।বিড়াল নাহয় দুধ খাবে,কিন্তু পান কীভাবে খাবে?।

” ধুর এই মেয়ের পাল্লায় পরে মাথা যাচ্ছে।একদিনেই এই অবস্থা না জানি আমার ভবিষ্যৎ কেমন?

আদনান একটা বালিশ নিয়ে সেটা সামান্থার উপরে ছুড়ে মারে।
💜
সকাল সাতটা বাজে সামান্থা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎই অনুভব করে ওর উপরে বৃষ্টির পানি পরছে।সামান্থা হেসে দেয়।ওর বৃষ্টি অনেক পছন্দের।আবারো ঝরঝর করে পানি পরে কিন্তু এটা বৃষ্টির পানি না।সামান্থা ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখে আদনান হাতে পানির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে এটা তারই কাজ।

“এই সমস্যা কী তোমার?আমাকে পানির ছিটে দিচ্ছো কেন?দেখতে পাচ্ছোনা ঘুমুচ্ছিলাম?আমাকে না জ্বালালে হয়না তোমার?

” না হয়না।তোকে ঘুমানোর জন্য এই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়নি।ভুলে গেছিস এটা তোর বাড়ি না তোর শশুড় বাড়ি।বাসায় মেহমান আছেন উনারা গসিপ করছেন।যা ফ্রেশ হয়ে নিচে যা বাট গোসল করবি না একদম বলে রাখলাম।

সামান্থা ভেঙচি কেটে বাথরুমে চলে যায়।আদনান ততক্ষনে ড্রয়িংরুমে চলে গেছো।প্রতিবেশীরা আদনানকে সামান্থার কথা জিজ্ঞেস করছেন আবার দাদীর বয়সী মহিলারা ওকে টিটকারিও মারছেন।আদনানের বিরক্ত লাগছে।এই মুহুর্তে যেন এখান থেকে উঠে গেলেই সে বাঁচে।
আদনানের চোখ যায় সিড়ি বেয়ে আসা সামান্থার দিকে।ওকে না করেছিলো তবুও ও গোসল করেছে।শুধু তাই নয় ফোটানি করে আবার চুলে টাওয়াল প্যাচিয়ে আসছে।সামান্থা এসে সবাইকে সালাম দিয়ে সোফার একপাশে বসে পরে।একজন মহিলা ওকে কিছুক্ষন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বললেন,,,,

“মেয়ে তুমি সুন্দর হলেও একটু খাটো, আর চোখ দেখো কী ছোট ছোট,।আর যাইহোক আদনানের সাথে তোমায় যায়না।

উনার কথা শুনে বাকিরাও সাহস পেয়ে গেছে।তাই একজন একজন করে সামান্থার দোষ খুঁজায় ব্যস্থ হয়ে পরলো।

” শুধু তাই নয় চুল দেখো এমনিতেই শর্ট তারমধ্যে দেখো কী কাট দেওয়া।সামনে কতগুলো চুল পেছনে কতগুলো চুল।

“আর দেখোনা শাড়ি না পরে ড্রেস পরেছে।আজকাল কার মেয়েরা যা মনে করে নিজেকে বলে আর লাভ নেই।

আদনানের মা প্রতিবেশীদের কথা শুনে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই সামান্থা দাঁড়িয়ে গেলো।

” প্রথমত আমি শর্ট না যথেষ্ট টল। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি আমি।আর চোখ আমার ছোট না আপনার ছোট।আপনার চোখ তো দেখাই যায়না।আর এই যে আন্টি আপনাকে বলি আমার চুল আমার ইচ্ছা।আর লাস্ট কোথায় লেখা আছে যে বিয়ের পর শাড়িই পরতে হবে ড্রেস পরা যাবেনা।কোথায় থেকে পান এমন কথা। যাইহোক চা পান তো খেলেন,আমি তো সালাম করলাম যাওয়ার আগে সবাই সবার সালামী বুঝে দিয়ে যাবেন।সালামী কাজে লাগবে আপনাদের এডভাইস না।

সামান্থা দাঁত কেলিয়ে চলে আসে।আদনানের মা মুখ টিপে হাসছেন।আদনান সে তো এখনও হা করেই বসে আছে ও জানত সামান্থা অসভ্য কিন্তু এতো অসভ্য তা জানা ছিলোনা।প্রতিবেশীরা বসে উনাদের টাকা গুনছেন।কত টাকা সামান্থাকে দেওয়া যায়।

“শুনো আমি ভেবেছিলাম মেয়েটাকে একশো টাকা দিয়ে চলে যাবো।কিন্তু এই মেয়েটা অনেক অসভ্য যদি একশো টাকা করে দিয়ে যাই তাহলে আরেকদিন আসলে আমাদের খুটা দিবে।থাক সবাই পাঁচশো টাকা করে দিয়ে যাও।

প্রতিবেশীরা সামান্থাকে তিনজনে মোট পনেরশো টাকা দিয়ে চলে গেলেন।সামান্থা আপাতত কিচেনে কাজ করছে।এই বাড়িতে সে বিয়ের আগেও অনেকবার এসেছে।তাই কোনো সমস্যা নেই সে নির্ধিদায় কাজ করছে।আদনান অফিসের কাজে বাইরে যেতে চাইছিলো কিন্তু ওর মা যেতে দেননি সদ্য বিয়ে হয়েছে বাইরে গেলে নজর লেগে যাবে। আদনান তার মার কুসংস্কার নিয়ে অনেক বিরক্ত।

দ্বিতীয় দিনটা চলে গেলো।সামান্থা আজকে তার বাবার বাড়িতে যাচ্ছে।গাড়িতে বসা মাত্রই সামান্থার পেট ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।সে বাদাম খাবে আইসক্রিম খাবে ফুচকা খাবে এসব বলে বলে আদনানের মাথা খেয়ে ফেলছে।আদনান শেষমেশ সহ্য করতে না পেরে ধমকি দিয়ে উঠলো।

” শাট আপ!!!আরেকটা কথা যদি বলিস আই সোয়ার তোকে আমি গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।ইউ নো না এটা করতে আমি দুবার ভাববো না।

আদনানের ফোন বাজছে,,পকেট থেকে ফোন বেড় করে একটা নাম্বার দেখে আদনানের চোখে পানি টলমল করে উঠে।ও কলটা কেটে ফোন পকেটে রেখে রাগি দৃষ্টি নিয়ে সামান্থার দিকে তাকায়।

“তোর জন্য আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে সামান্থা সব।তোকে আমি ক্ষমা করবনা।

আদনান ড্রাইভিং করতে লাগে।সামান্থা মুখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।ও বুঝতে পারছে আদনানের মনের অবস্থা কিন্তু ওর যে কেনো উপায় ছিলোনা।

#চলবে,,,,

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here