কি করে বোঝাই ভালবাসি পর্ব -১৩+১৪+১৫+১৬

#কি_করে_বোঝাই_ভালবাসি (১৩,১৪,১৫,১৬)

১৩.

চাচা চাচীও ঢাকায় গেলেন হঠাৎ। তাহলে কি শান্তর কিছু হয়েছে? সেদিন হঠাৎ করে বেশ কয়েকবার ফোন করলো। নাহ তার শান্তর জন্য ভাবনা হচ্ছে না। সেদিনের পর কৌশিকও আর যোগাযোগ করেনি। তবে কি শান্ত কিছু বলেছে? ম্যাসেজ করবে কি করবে না এই দোলাচলে কিছুটা সময় চলে গেল। তারপর
-‘সুস্থ্য আছেন তো?’
কৌশিকের তো আনন্দে আত্মহার হবার জোগাড়। নিজে নিজেই হেসে ওঠে। মনেই ছিল না যে ফুপি সামনে বসে সোয়েটার বুনছেন।
– কি রে হাসছিস কেন?
জ্বিবে কামড় কাটে কৌশিক।
-কিছু না ফুপি।
-শান্তর বাবা মা তো ঢাকায় তাই না?
– নাহ, গতকাল সকালেই তো চলে গেলেন।
-আমার জরুরী কথা ছিল তাদের সাথে। এখন বলাটাও অবশ্য ঠিক হবে না।
-তোমার আবার কি কথা?
-তোর বিয়ের কথা।
কৌশিক পুরা খাবি খেতে থাকে।
-কি বলছো তুমি? কাকে আবার বিয়ে করবো?
-কেন ? তিথিকে। পছন্দ নয় বুঝি? তাহলে রনির জন্য প্রস্তাব পাঠাই কি বলিস?
– কে বলেছে এসব তোমাকে? রনি। দাঁড়াও আজ ওর কি আমার একদিন।
-বলেছে বেশ করেছে। উনি দেবদাস হয়ে ঘুরবেন আর সবাই বসে বসে দেখবে, তাই না।
-তাই বলে বিয়ের কথা? মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে কি না জানি না ফুপি।
-কি বলিস? তোর মত রাজপুত্রকে পছন্দ না করার কি আছে।
– নিজের ছেলে সব মায়ের কাছেই রাজপুত্র হয়।
-সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমি আর ভাইজান না হয় দিনাজপুর যাবো।
-তোমরা যেতে চাইলে অবশ্যই যাবে। তবে আমাকে কিছুদিন সময় দাও। একবার তাড়াহুড়া করে যে ভুল করেছি তা দ্বিতীয় বার করতে চাই না।
-আচ্ছা তবে আমাদের জানাস। আর এমন উদাসিন হয়ে থাকা বন্ধ কর।
কৌশিক বারান্দায় চলে আসে।
-‘আমি ভাল আছি। আপনি?

১৪.

ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসে তিন বন্ধু। শান্ত একেবারে দিনাজপুর চলে যাবে বলে ঠিক করেছে। চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে। যাবার আগে তাই দেখা করতে আসা।
রনি বলে,
-তোর এই সিদ্ধান্তটা কিন্তু আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি।
কৌশিক বলে,
-অন্য কোথাও তো চেষ্টা করতে পারতি। তা না হলে আমাদের কোম্পনীতেই তো করতে পারতি। আমি না হয় বাবাকে বলতাম।
কৌশিক শান্তকে কিছুতেই দিনাজপুর যেতে দিতে চায় না। যদি শান্ত আবার তিথির সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু জোর করে তো আটকে রাখা যাবে না।
-কি? আঙ্কেল। কোন মুখে তার সামনে দাঁড়াবো। আমি চলেই যাই। দেখি কোন ব্যবসা শুরু করা যায় কিনা। আর তা না হলে বাবার ফার্মেই কাজ করবো।
-তুই পারবি এসব করতে? পাগলামি বেশী হয়ে যাচ্ছে।
-তোরা বেড়াতে আসিস মাঝে মাঝে।
কৌশিক আর কিছু বলে না। রনিও চুপ করে যায়। রাতের খাবারটা সবাই মিলে বাইরেই খায়। তার পর নিজ নিজ গন্ত্যব্যে।

ফ্লাট বাড়িটা কেমন মরুভূমির মত। তা লাগার পেছনে অবশ্য কারন আছে। শান্ত সব বিক্রী করে দিয়েছে। শুধু একটা ম্যাট্রেস আছে। তাও সকালে এসে নিয়ে যাবে। তারও তো যাওয়া কালকে।

মিথিলার কথা আজকাল আর মনে পড়ে না। অফিসের বস কে খুশি করে আরও উন্নতি করবে এই ভেবেছিল। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। বিধাতা বুঝি তার পরিকল্পনায় খুব হেসেছিলেন। কারণ তিনি তো ভাগ্যে অন্য কিছু লিখে রেখেছেন।

দিনাজপুরের মাটিতে পা দিয়ে আর অন্য রকম কিছু অনুভূত হল না। বরং লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেল। মনে হচ্ছে সবাই সব কিছু জেনে গেছে। বাড়িতে ঢোকার পর শুধু বাবা কে বেরিয়ে আসতে দেখলো। মা এলো না। কাজের ছেলেটা এসে ব্যাগ নিয়ে গেল।

নিজের ঘরে এসে গোসল সেরে ছাদে চলে এলো। চিলেকোঠাটা ফাঁকা। ছাদের গাছগুলোও কেন যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িটিও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একটা মানুষ না থাকলে কি চারপাশটা এত বদলে যায়। কই আগে তো লক্ষ্য করেনি।
ঠিক করলো চিলেকোঠাতেই থাকবে। চাবি নিশ্চই মায়ের কাছে, সে নীচে নেমে আসে।
-মা আসবো?
-কিছু লাগবে?
-এমন করছ কেন মা ? আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায় না।
-কেন এসেছো বল?
-চিলেকোঠার চাবি টা দাও মা।
-কেন ওই ঘরে তোমার কি কাজ?
-ওখানেই থাকতে চাই মা।
-কেন?
-এমনি মা।
আফরোজা বেগম কথা বাড়ান না। চাবির গোছা থেকে চাবিটা খুলে দেন। শান্ত চাবি আর কাজের ছেলেটাকে নিয়ে উপরে আসে। ঘর পরিষ্কার করাই ছিল। তবুও ছেলেটা ঝেড়ে মুছে বিছানায় নতুন চাদর পেতে দিয়ে যায়। নাহ এই ঘরে তিথির কোনো চিহ্ন নেই তবে সব কিছুতেই যেন ওর স্পর্শ লেগে আছে।

১৫.

কৌশিকের সাথে কথা না হলেও ম্যাসেজ আদান প্রদান হয় আজকাল। তবে তারা সেই আগের জায়গাতেই দাড়িয়ে। কৌশিক হয়তো আসলেই ভালবাসে তাকে কিন্তু তিথি ঠিক করবে বুঝতে পারে না। বেশ ভাল মনের মানুষ সেটা বোঝা যায়। তবে একটু খামখেয়ালি। দুজন মানুষ বন্ধু হলেও কতটা আলাদা। এই কথাটা প্রায় ভাবে তিথি।

পরীক্ষার কারণে অনেকদিন বাড়ী যাওয়া হয়নি। আজ চাচীর সাথে দেখা করে বাড়ি যাবে বলেই এ বাড়িতে আগে এল । সিঁড়িতে শান্তকে দেখে খুব অবাক হল । এই সময় তো শান্তর বাড়ি আসার কথা না। সে একপাশে সরে যায় যাতে শান্ত নেমে যেতে পারে। কিন্তু শান্ত দাড়িয়ে পড়ে।
-তুই এই সময়?
-চাচীর সাথে দেখা করতে এসেছি।
-তোর সাথে আমার কথা আছে।
-আমার আপনার সাথে কথা নেই কোনো।
তিথি পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। চাচীকে দেখে তো সে অবাক। এই দুই সপ্তাহে কি অবস্হা হয়েছে চাচীর।
-কি ব্যাপার চাচী। ছেলে এসেছে সেই খুশিতে খাওয়া দাওয়া নিজের যত্ন নেয়া বন্ধ করেছো নাকি?
-তুই আয় বোস আমার কাছে। শান্ত এসেছে কদিন হল। তবে আমার সাথে কথা হয়না তেমন।
-কই আমাকে তো বলনি। বাবাও তো কিছু বলে নাই। তো এই সময় এখানে কেন?
-দু:খের কথা কি বলবো তোকে। কাউকে কিছু বলি নাই। ওর তো মিথিলার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-কি বলছো? কেন?
-অনেক কথারে। তুই এসবের মাঝে আর থাকিস না। কি খাবি বল? ঘরের মেয়ে হয়েও কত দুরে চলে গেলি।
-আজ আর খাব না। বাবার সাথে বাড়ি চলে যাব। বাবা নিচেই আছে।
-তোকে আর কি আটকাবো, যা তবে। শান্ত মনে হয় এখন এখানেই থাকবে। তার জন্য তুই আবার আসা বন্ধ করে দিস না।

তিথি নিচে এসে দেখে বাবা অটো ঠিক করে দাঁড়িয়ে আছে। অটো চলতে শুরু করা মাত্রই তিথি তার বাবার দিকে তাকায়।
-এত কিছু হয়ে গেল আর তোমরা কেউ কিছু বললে না আমাকে।
-কি করে বলবো তোর চাচী নিষেধ করে দিয়েছিল। যদি তোর পরীক্ষা খারাপ হয়। আর জানতে তো পারবি আমরা তো আর পর কেউ না।

১৬.

-‘আপনার বন্ধু দেখি এখানে।’
ম্যাসেজ ডেলিভার হবার সাথে সাথেই ফোন আসে কৌশিকের। কৌশিক তে সহজে ফোন করে না।
-হ্যালো।
-তোমার সাথে দেখা হয়েছে শান্তর।
-হ্যাঁ, চাচীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
-আর ওই বাসায় যাবার দরকার নেই।
-কেন বলেন তো?
-ওই যে শান্ত আছে বলে।
-বাবা, জেলাস নাকি?
-নাহ্ তা হবে কেন। তবু যাবে না।
-চাচীর সাথে দেখা করবো না?
-অবশ্যই করবে। তবে কদিন পরে। আমি তোমাকে একটু পরেই ফোন করবো।

কৌশিক ফোন রেখেই দৌড়ে তার ফুপির ঘরে চলে আসে।
-তোমার সাথে কথা আছে ফুপি।
-আগে বসতো এখানে। এমন করছিস কেন।
-তুমি না শান্তর মায়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলে। আজকেই কথা বল প্লিজ।
-কেন এত ব্যাস্ত হচ্ছিস।
-কারণ আছে ফুপি।
-এখন তো রাত হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি ভাইজানের সাথে কথা বলি। কাল সকালেই ফোন করবো।

আর দেরি করে যাবে না। কিছুতেই না।

এমন হুট করে ফোন করে আজব কথা বার্তা বলার মানে কি? আবার পরে ফোন করবো বলেও তো আর ফোন করলো না। সে কি ফোন করবে? নাহ একটু অপেক্ষা করেই দেখা যাক। ফোন রিং হতেই ধরে তিথি।
-কি ব্যাপার হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলেন?
-কে চলে গেল কোথায়?
গলা শুনে তিথি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। অপরিচিত নাম্বার।
-কে বলছেন?
-কেন গলার স্বরও ভুলে গেলি নাকি?
-আপনি? কেন ফোন করেছেন?
-তুমি থেকে আপনি হয়ে গেছি। আচ্ছা ব্যাপার না। তোর সাথে কথা আছে তিথি।
-আপনাকে তো বলেছি আপনার সাথে আমার কথা নেই।
-আমাকে মাফ করে দেয়া যায় না?
-মাফ করা যায় না। আপনি আর দয়া করে ফোন করবেন না।

ফোন কেটে দিয়ে এই নাম্বারটাও ব্লক করে দেয়ে সে। চাচীর কাছে শুনেছে সে সব। অপরাধ করলে তো শাস্তি পেতেই হয়। শান্তর ক্ষেত্রে শাস্তি একটু আগেই পেয়ে গেছে। নাহ্ সে কখনও শান্তকে অভিশাপ দেয়নি। বরং সে উল্টোটাই চেয়েছে।

কিন্তু কৌশিক কোথায়। ফোন করলো না তো। সে নিজেই ফোন করে।
-হ্যালো
-ফোন করবেন বলে তো আর করলেন না।
-একটু কথা বলছিলাম ফুপির সাথে।
-ওহ তাহলে পরে কথা বলব। আমি ভাবলাম কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা?
-সমস্যা? তা তো একটু হয়েছে।
-কি সমস্যা?
-সেটাও জেনে যাবেন খুব তাড়াতাড়ি।
-আচ্ছা আজ তাহলে রাখি।
-ঠিক আছে।
-বাই

ম্যাসেজ টা এলো একটু রাতের দিকে…
‘আমাকে বিয়ে করবেন তিথি?’

চলবে….

এমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here