#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২৯
সকাল সাড়ে সাতটায় ফখরুল সাহেব চলে গেলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ছুটি যা নিয়েছেন তা কালই শেষ হয়েছে৷ তিনি আজ তাই দ্রুতই অফিসের জন্য রওনা দিয়েছেন। মৈত্রীদের এলাকা থেকে যেতে মাত্র ত্রিশ মিনিট এর মত লাগতো কিন্তু এখান থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগে। তাই নাশতা না করেই বেরিয়ে পড়েছেন তিনি৷ যাওয়ার আগে ইরশাদকে বলে গেছেন, “রেস্ট নেওয়ার আগে ওকে বলিস ইরিনের সাথে কথা বলে নেয় যেন। কাল সারারাত ছটফট করেছে, খাবারও খায়নি।”
শ্বশুর বেরিয়ে যেতেই মৈত্রী গিয়েছিল শ্বাশুড়ির কাছে। কিছু সময় পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়েছে। তার খুব একটা কথা বলার অভ্যাস নেই তবুও চেষ্টা করলো নোরা, ময়ূখের হয়ে দু একটা কথা বলতে কিন্তু তার এ বিষয়ে চ-র-ম অপারগতার কারণে কথা আগায়নি৷ তাকে সে মুহূর্তে ইরশাদ এসে বাঁচিয়ে দিলো কথা বলার হ্যাপা থেকে। মৈত্রী রান্নাবান্না কখনোই তেমন একটা শেখেনি। বলা যায় জীবনের এই দিকটা তার মাঝে তেমনভাবে উদয় হয়নি বলেই অজ্ঞতা এ বিষয়ে তবুও সকালে তো নাশতা চাই সকলেরই। ইরশাদ মায়ের পাশে বসতেই ময়ূখও ঢুকলো ঘরে।
“আম্মা!”
ইরিন ডাক শুনেও তাকালেন না ময়ূখের দিকে। সে বার তিনেক ডেকেও যখন কোন সাড়া পেলো না তখন ইরশাদ ইশারা করলো মায়ের কাছে এসে পাশে বসতে। ময়ূখ তা না করে হঠাৎই আম্মার পা জড়িয়ে ধরলো। পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদতে জানে না! ময়ূখ কেঁদে ফেলল বাচ্চাদের মত করে।
“আমাকে মা-ফ করে দাও আম্মা আমি ভুল করছি। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষ-মা করে দাও প্লিজ। তোমাকে ক-ষ্ট দিতে চাইনি।”
বাচ্চাদের মত করেই ময়ূখ কাঁ-দ-ছে নিজের দো-ষ স্বীকার করছে। ইরিন নড়েচড়ে পা ছাড়াতে চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজের চোখেও অশ্রু টলমল কিন্তু তা ঝরতে দিচ্ছেন না। ইরশাদকে আদেশ দেওয়ার মত করে বললেন, “ইরশাদ ওকে পা ছাড়তে বল আমার। এসব কান্নাকাটি দেখতে চাইনি আমি।”
ময়ূখ ছাড়লো না সে একই কথা বারবার বলছে। ইরিন এবার আরও রেগে নিজেই পা ছাড়িয়ে উঠে বসলেন৷ নোরাও এসে ঢুকলো সে সময়। ইরিন এক পলক সবাইকে দেখে নিয়ে ইরশাদকে বললেন, মৈত্রীকে ডাক।
মৈত্রী ঘরে ঢুকতেই ইরিন বললেন, “তোমার সব গয়নাগুলো নিয়ে এসো তো যেগুলো এ বাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছে এনগেজমেন্ট এর আংটিটাও।”
সবাই বিষ্ময়ে হ-ত-বাক হয়ে গেছে। মৈত্রী অবশ্য অত কিছু ভাবেনি শুধু চুপচাপ গয়নাগুলো নিয়ে এলো। ইরিন সেগুলো একে একে সব সাজিয়ে বিছানায় একপাশে রাখলো। তারপর উঠে গিয়ে নিজের আলমারি খুলে মোটা একটা কালো রঙের ব্যাগ বের করলো। ব্যাগ খুলে পুরনো দু’টো কাপড় সরাতেই চোখে পড়লো গয়নার বাক্স। সেগুলো একের পর এক নামিয়ে বিছানার অন্যপাশে রাখলো একইভাবে। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে প্রায় বেশিরভাগ একইরকম গয়না। এরপরের কথাগুলো বলার আগে ইরিন নোরা আর মৈত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর ময়ূখকে কিছু গয়না দেখিয়ে বলল, “এই যে একই রকম দুইটা করে যা দেখছিস সেগুলা আমার বিয়ের গয়নাগাটি যা আমি শ্বশুর বাড়ি বাবার বাড়ি মিলিয়ে পেয়েছিলাম। সে যুগেই আমি প্রায় পঁচিশ ভরি গয়না পেয়েছি তা একদম কড়ায়গণ্ডায় দুই ভাগ করে একই ডিজাইনে নতুন করে গড়িয়ে রেখেছি। আমার কোন মেয়ে নেই তাই শখ করতাম দুই ছেলে বিয়ে করিয়ে দুই বউকে মেয়ে বানাব। তাদের জন্য এইসব গয়না আর ওই যে মৈত্রীর যেগুলো বাড়তি সেগুলো নতুন গড়িয়েছি বিয়ে উপলক্ষে আর ভেবেছিলাম বাবুকে বিয়ে করানোর সময়ও কিছু গড়াবো। আমার, আমাদের যা কিছু আছে সব কিছুতে আমরা দুই সন্তানকে নিয়েই স্বপ্ন সাজিয়ে রাখছি। ইরশাদ যেখানে নিজে মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারে সেখানে তোকে কি বাঁধা দিতাম? ইরশাদ জীবনে ধোঁকা পেয়ে পা-গ-লের মত হয়ে যাচ্ছিলো তখন যদি তার পাশে থেকে শুধু মাত্র তার জন্য নিজের বাড়িঘর, ব্যবসা সব ফেলে দূরে যেতে পারি তবে তুই কারো জন্য ভে-ঙে পড়লে তোর পাশে থেকে তোর জন্য কিছু করবো না ভাবলি কি করে! নাকি লোকের কথাই ঠিক আমি শুধু তোর বাবার বোন ফুপুই রইলাম কখনো মা হয়ে উঠতে পারিনি?”
“কি বলছো আম্মা! তুমিই আমার মা আমার জীবনে তুমি, বাবা আর ভাই-ই সব। আমাকে ক্ষমা করে দাও আম্মা এই বিয়ে কেমনে কি করে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি৷ এত বড় ভুল কি করে করলাম আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি।” ময়ূখ তার আম্মার পা জড়িয়ে বসে আছে মেঝেতে৷ ইরিন কি পরি-মাণ ক-ষ্ট পেয়েছে তা সবাই উপল-ব্ধি করতে পারছে কিন্তু ময়ূখের কথাগুলো শুনে ইরশাদ চিন্তিত হলো৷ ইরিন তার নিজের ভেতরকার সকল ক-ষ্ট এক নিমেষেই উগড়ে দিয়েছে কিন্তু রা-গ পড়েনি এখনো৷ ইরশাদ বুঝতে পারলো মায়ের রা-গ পড়তে সময় লাগবে তাই আপাতত ময়ূখকে টেনে নিয়ে গেল ঘরের বাইরে৷ সারাদিন আর ইরিন সামনে এলো না কারো। মৈত্রী রান্না করতে জানে না কিন্তু না খেয়ে থাকাও মুশকিল। তাই ইরশাদই রান্নার ব্যবস্থা করলো। মৈত্রীকে দিয়ে তরকারি কা-টি-য়ে নিজে রান্না করলো। পাশে দাঁড়িয়ে মৈত্রী সব মন দিয়ে দেখলো। দুপুরে নিজেই শ্বাশুড়িকে জোর করে খাওয়াচ্ছিলো তখন ইরিন জানতে চাইলো সবাই খেয়েছে কিনা৷ মৈত্রী বুঝলো তিনি সবাই বলতে ময়ূখের খোঁজ নিচ্ছেন৷ মৈত্রীর ভালো লাগছে এই নতুন সংসার, নতুন আপন মানুষগুলোকে। পরিবারের সংঙ্গা তার কাছে আগে যেমনটা নিস্পৃহ ছিল একন তেমনটা লাগছে না৷ সংসার জীবনটা সমুদ্রের মত কখনো শুভ্র ফেনিল সুন্দরে ভরা, কখনো উত্তাল ঢেউয়ের মত বি-প-দজ-নক। প্রতিকূল, অনুকূল দুই অবস্থাই সে মাত্র চারদিনে টের পেয়ে গেছে৷ রাতে খাবার গরম করতে করতে মৈত্রী ভাবলো শ্বশুরমশাইও ময়ূখ ভাইয়ার ওপর রেগে আছেন। উনার সাথেও কি মান-অভিমান মিটিয়ে নেওয়া উচিত না! সে ইরশাদকে গিয়ে এ কথা বলতেই সেও সম্মত হলো। ইরশাদ নিজের ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেল ময়ূখ বাবা -মায়ের ঘরেই ঢুকছে। তার আর কিছু করার দরকার নেই ভেবে ঘরে ফিরে গেল।
“চলে এলেন যে!”
“তোমার দেবর বুদ্ধিমান নিজে থেকেই চলে গেছে বাবার কাছে এন্ড আই নো, যা আমরা ভাবছি সে নিজেই করে নেবে। আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি তোমার ফোন তুলেছিলাম আমি আঙ্কেল কল দিয়েছে। কথা বলে নাও।”
“আচ্ছা” বলেই মৈত্রী তার বাবাকে কল দিয়ে কথা বলল।
“বাবা তুমিও কি মাফ করবে না আমায়?”
“কিসের মাফ! কি করেছে তুমি?”
“আম্মার মত তুমিও আমার ওপর রে-গে থাকবা? ভুল তো সন্তানেরাই করে তাই না!”
“আমি কারো ওপরই রে-গে নেই। ইরশাদ বিয়ে করতে চেয়েছে করিয়ে দিয়েছি। তুমি নিজেই করবে ভেবেছো, করে নিয়েছো এতে আমার রা-গ করার থাকবে কেন আমি বা আমরা কে তোমার!”
“বাবা! এ কথা অন্তত বোলো না তুমি৷ বাবা হও তুমি আমার আমি ভু-ল, দো-ষ যা করবো তা তুমিই তো দেখবে।আমি যা করেছি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। আমি আর কখনো এমন ভু-ল করবো না।”
“বারবার ক্ষ-মা-র কথা বলছো কেন? আমি বাবা তো নাম কো ওয়াস্তে দিন শেষে আমি সেই ফুপাই থাকবো। তোমার জীবনের আপনজনের লিস্টে বউ, বাচ্চা, বাবা -মায়ের অনেক পরে আসবে আমার নাম৷ আমি রেগেও নেই আর না তোমাকে দোষী বলছি।”
“আম্মাও কথা বলছে না আমার সাথে তুমিও পর করে দিচ্ছো। তুমি আমার ফুপা নও তুমিই আমার বাবা আবরার খন্দকারেরও উর্ধ্বে তোমার জায়গা। আমাকে মাফ করে দাও না বাবা প্লিজ। ” এলোমেলো কথাবার্তায় ময়ূখ জড়িয়ে ধরলো ফখরুল সাহেবকে। তিনি আর মনের ওপর জোর খাটাতে পারলেন না। বুকের ওপর হামলে পড়া ছেলেটাকে দু হাতে জড়িয়ে নিলেন। ইরিন রান্নাঘর থেকে এক কাপ চা নিয়ে এসেছিলেন ইরশাদের বাবার জন্য কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখতেই সরে গেলেন তিনি। মনে মনে এমনটাই তো চাইছিলেন৷ যে মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে ময়ূখকে লালন পালন করলেন আজ তার মনে দেওয়া কষ্ট ময়ূখকেই লাঘব করতে হবে।
রাতের খাবারে ঘরের দৃশ্য চমৎকার ভাবে বদলে গেল। ইরিন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে সব বেড়ে দিচ্ছে মৈত্রী আর নোরা সব টেবিলে সার্ভ করছে। বাবা ছেলেরা তিনজনে একত্রে বসতেই ইরিনরাও সব গুছিয়ে বসলো টেবিলে৷ ইরিন এখনো সরাসরি কথা বলছে না ময়ূখের সাথে তবে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে তা দেখে ফখরুল সাহেব ময়ূখকে ইশারা করলো, “চিন্তা নেই দু এক দিন চুপ থাক নিজেই কথা বলবে।”
খাওয়ার ফাঁকেই ইরশাদ সবাইকে জানিয়ে দিল তার সিলেটের চাকরির কথা। ইরিন অবশ্য আগে থেকেই অনুমতি দিয়েছিলেন ছেলেরা চাকরি যেখানে ইচ্ছে করুক৷ তারা কখনো এসবে হস্তক্ষেপ করবেন না তবে অবস্থা যদি এমন হয় বাবা মা সাথে যেতে পারছেন না তখন অবশ্যই বিয়ে করে তবেই দূরে যাবে। একা ছেলেদের কোথাও থাকতে দেবেন না। ইরশাদ এখন বিবাহিত তাই তিনি আ-প-ত্তি করেননি। কিন্তু চি-ন্তার বিষয় মৈত্রী হুট করে এই নতুন লাইফে এসে আরেক লাইফে ঢোকা সে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা! তারওপর ইরশাদ জানালো মাসের প্রথম দিনেই জয়েন করতে বলা হয়েছে। মানে হাতে আর দিন দশেক আছে মাত্র। ইরশাদ মায়ের চিন্তা বুঝতে পেরে জানালো সে আপাতত মৈত্রীকে নিচ্ছে না সাথে। সেখানে তাকে অফিসের কাছেই বাসা দেওয়া হবে সে গিয়ে আগে দেখে আসুক সেখানকার ব্যবস্থা কেমন তারপর বুঝে শুনে গুছিয়ে পরেই নেবে মৈত্রীকে। এরই মাঝে মুজিব আর রোকসানার পক্ষ থেকে ফোনকল পাওয়া গেল৷ তারা ইরিনের কাছে জানালেন মৈত্রীকে নিতে চান তারা নাইওরি বলে নিয়ম আছে তাদের। ইরিন হাসিমুখে বলে দিলেন আপনারা যেদিন চাইবেন। কথা হলো আগামী পরশু এসে নিয়ে যাবে তারা। ইরিন এসবের মাঝে মনে রাখলেন তার বড় ভাইয়া বার বার তাকে ফোন করলেও ছোট ভাইয়া কাজের বাহানায় সেই যে আর কোন খোঁজ নেয়নি। নোরা বিয়ে করে ফেলল, মেয়েটা অন্যায় করলো কি ঠিক সে বিষয়ে কি তাকে কিংবা বড় ভাইকে কিছুই বলার নেই! ময়ূখের প্রতি রাগ উবে গিয়ে যেন ছোট ভাইয়ার ওপরই পড়লো তার। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নোরাকে ডেকে বললেন, “ভাইয়া কল দিলে বলবে ফুপি আগামী সপ্তাহে বিয়ের রিসেপশন রাখবেন।”
“শুধু এটাই বলব!”
“হু, বাকিটা তিনিই বুঝবেন।”
নোরা বুঝলো ফুপি কোন কারণে তার বাবার ওপর রে-গে আছে। হতে পারে তার কারণেই। সে কাল অন্যঘরে ঘুমিয়েছে কিন্তু আজ তাকে ময়ূখের সাথে ময়ূখের ঘরেই থাকতে হবে৷ এ নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত সে। নিয়ম, শৃঙ্খলা নিয়ে তার কখনো কোনো ভাবনা ছিলো না কিন্তু আজ সে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে ঠিক করলো। যত যাই হোক ময়ূখের বেড়ে ওঠা তার মাঝে নিয়মনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে নিশ্চয়ই একটা ব্যাপার থাকবে। সে ঘরে ঢুকে আগেই ব্যাগ থেকে সেলোয়ার-কামিজ নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো৷ কিছু সময়ের মাঝেই পরনের শার্ট-জিন্স সব বদলে সেলোয়ার-কামিজ পরে বেরিয়ে এলো৷ ময়ূখ বিছানা ঠিক করে দুটো কম্বল রাখছে বিছানায়। এক ফাঁকে জানালার পর্দা টেনে, বারান্দার দরজা ভালো করে লক করে বিছানায় এলো। আজ শীত বেশি লাগছে তার ওপর নোরা এ ঘরে থাকবে তাই একটা কম্বল তাকেই দিতে হবে। ময়ূখ নিজের মত সব গুছিয়ে খাটের এক পাশে শুয়ে পড়লো৷ নোরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিলো। হাতে, পায়ে ক্রিম মেখে চুলগুলো আঁচড়ে বিছানায় উঠলো। ঘরের বাতি জ্বালানোই ছিল সে ময়ূখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ৷ বোঁজা চোখেও ময়ূখ টের পেল নোরার দৃষ্টি তাই চোখ খুলে জিজ্ঞেস করলো, “তাকিয়ে আছো কেন?”
“দেখছিলাম।”
“নোরা, শোনো একটা কথা আগেই ক্লিয়ার করা দরকার। আমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো, কেন করলাম এ বিষয়টা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। তুমি তো সব জানো বিশ্বাস করো সেদিন কি হলো তোমার সাথে কথা বলতে বলতেই কি হয়ে গেল আমি বুঝিনি৷ আমার এখনো মনে পড়ে না সেদিন কথার মাঝেই এমন কি হলো যার জন্য আমি তোমার বলার সাথে সাথেই বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলাম! আমি তোমাকে অস্বীকার করছি না শুধু একটু সময় চাই। কেমন যেন এক গোলকধাঁধায় আটকে আছি আমি নইলে এমন কেন করলাম! সেদিনের সেই সময়টুকু একদমই অ-স্প-ষ্ট আমার মস্তিষ্কে। শুধু তোমার চোখ দুটি ছাড়া কিছুই মনে পড়ে না আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই সময়টুকুই কেউ মুছে দিয়েছে আমার ব্রেন থেকে৷”
ময়ূখ এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে যাচ্ছিলো কথাগুলো তখনও মৈত্রী সেদিনের মত তাকিয়ে আছে তার দিকে৷ ময়ূখ নিজের চোখ নামিয়ে নিলো৷ অন্যপাশ ফিরে বলল, এভাবে তাকাবে না আমার দিকে নোরা। প্লিজ।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ইরশাদকে দেখছিলো। খাটে বসে ল্যাপটপে মনযোগ ইরশাদের আর সেটাই আয়নায় স্পষ্ট৷ সামনে বসে সরাসরি তাকাতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে বলেই মৈত্রী তাকে লুকিয়ে -চুরিয়ে দেখার সুযোগ মিস করে না৷ এখনও তাই সেভাবেই দেখছিল। ইরশাদ কেমন করে যেন টের পেয়ে গেল তা,
“এখনো এমন চুরি করে দেখার কোন মানে হয়?”
হঠাৎ এমন কথায় হকচকিয়ে গেল মৈত্রী। দ্রুত হাতে চুল বেঁধে ঘরের বাতি নেভাতে গেল। তা দেখে ইরশাদ এবার শব্দ করে হেঁসে ফেলল।
“তোমার কাজ শেষ হয়েছে বলে কি আমারও শেষ? এখনই বাতি বন্ধ করছো কেন!”
“স্যরি, বুঝতে পারিনি।”
“না বোঝার জন্য একটা শা-স্তি দিলে কেমন হয়?”
“শা-স্তি! ”
“হু, মিষ্টি একটা উহুম দুইটা শা-স্তি দিব। আগে বিছানায় আসো।”
“জ্বী!”
“উফ এসো তো।”
কপাল কুঁচকে ইরশাদ কথাটা বলেই ল্যাপটপ অফ করে মৈত্রীকে দিলো রেখে আসার জন্য৷ মৈত্রী সেটা রিডিং টেবিলে রেখে বিছানায় এলো। ইরশাদ যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষণ। সে মৈত্রীকে টেনে বাহুবন্ধনে নিলো। কপালে চুমো খেয়ে বলল, “কাজী দিয়ে কলমা পড়ে বিয়ে হয়েছে এখনো এমন চো-রের মত দেখার কি আছে? বিয়ের আগে এমন করে জানালা থেকে উঁকি মেরে দেখতে ইট’স ওকে তখন জামাই ছিলাম না কিন্তু এখনো! আর দ্বিতীয় কথা বিয়ে করেছি বউকে দেখবো তার জন্য হলেও বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হবে তো! আমি আবার আঁধারে কাজ সারা টাইপ পুরুষমানুষ নই।”
স্ত্রীর সাথে মজা করার ক্ষেত্রে ইরশাদ যেন লাজলজ্জা সব গিলে ফেলেছে৷ সে মৈত্রীর সাথে আরও অনেক রকম হাসিঠাট্টা করে টেনে নিলো নিজের মাঝে নিয়ে নিলো। মৈত্রীও শরীরের টানে সাড়া দিলো। ভালোবাসায় শুধু মন নয় দেহও ডুবে যায় অতলে। ইরশাদ, মৈত্রীর জীবনের একটা সময় বি-ষা-দ আর একাকীত্বের যে অসীম সাগরে হারিয়ে গিয়েছিল তা প্রকৃতির অপার ষ-ড়-যন্ত্রে সুন্দর এক পরিণতি দিল। জীবন থেমে থাকে না কারো জন্যই থেমে নেই ইরশাদ, মৈত্রী কিংবা সায়রার।
চলবে
(ভুলত্রুটি কিছুই চেক করিনি তাই ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন। কমেন্টে কিপটামি বাদ দেন সবাই 🥶🥲)