কুয়াশার মতো, পর্ব:৬

#গল্পঃকুয়াশার_মতো।
#পর্বঃ- ০৬

” শাকিলা মেডাম আপনি রাগ করবেন না, আমি মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু প্রশ্ন করে অবাক করার চেষ্টা করি। আমি ভাবছি অন্য কিছু। ”

” এভাবে সম্পুর্ন দোষারোপ করে কথা বলা ঠিক না সাজু ভাই, সবসময় ফাজলামো করা ঠিক না। ”

” হুম জানি, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিরিয়াস মুহূর্তে ফাজলামো করার ক্ষমতা সবার থাকে না। ”

” বলেন আপনার ভাবনা কি? ”

” সাজ্জাদ সাহেবের সেবার করার জন্য এই মুহূর্তে আপনাকে খুব বেশি দরকার। সে আপনাকে যায় কাছে পেত তাহলে মানসিকভাবে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে যেত। ”

” কিন্তু আমি কি করবো বলেন? সেদিন রাগের মাথায় মাকে কিছু কথা বলেছি, মা সেই কথার জন্য আমার নামেও মামলা করবে ভাবিনি! ”

” পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছু ভাবি না কিন্তু সেটা প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে করে। আবার অনেক কিছু কল্পনাও করিনা, কিন্তু সেটাই জীবনে হাজির হয়ে যায়। ”

” আমি চেষ্টা করবো আপনাকে জামিনে মুক্তি করা যায় কিনা, যেহেতু আপনি খুনের সময় নোয়াখালী ছিলেন। তাছাড়া সন্দেহের তালিকায় সবার উপরে সাজ্জাদ। ”

” ও কথা বলবেন না, আমি জানি সাজ্জাদ আমার বাবাকে খুন করেনি। সাজ্জাদ খুন করতে পারে না সাজু ভাই, কারণ বাবা যদিও চাকরির মধ্যে কিছু দুর্নীতি করতেন। কিন্তু সাজ্জাদ কখনো বাবাকে অসম্মান করে গালি দিয়ে কথা বলে নাই। সামনে বা পিছনে কখনো বলে নাই, বরং সবসময় বলতো আল্লাহ তাকে জ্ঞান দিক। ”

” দেখুন রহস্যের সমাধান নিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি, সাজ্জাদ সাহেব সুস্থ হলে তার বক্তব্য থেকে অনেককিছু পাওয়া যেত। সেদিন রাতে সে কখন বাসায় গেছে, কীভাবে গেছে, কীভাবে আহত হয়ে গেছে? ”

” সাজ্জাদ কি কথা বলতে পারে? ”

” না, তবে বিপদমুক্ত। ”

” এ পর্যন্ত কোন আলামত পাওয়া গেছে যেগুলো দিয়ে সামনে বাড়াবেন! ”

” হ্যাঁ পেয়েছি, ৬০% বের হয়ে গেছে, আজকে কিছু নাম্বারের কল লিস্ট আসবে। তারপর সেখান থেকে আরও ২০% পাওয়া যাবে, তারপর বাকিটা আমি বের করে নেবো। ”

” কাকে কাকে সন্দেহ হয়? ”

” সজীব সাহেব, ফেরদৌস, উকিল সাহেব, বাড়ির মালিক, ইত্যাদি! ”

” ফেরদৌস তো আমার সঙ্গে ছিল, আর সজীব ভাই আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি। ”

” এটা আমার সন্দেহের তালিকা, পরীক্ষার সময় অনেক ক্ষেত্রে সাজেশনে ৮০% এর প্রশ্নটাও কমন পরে যায়। ”

” কিন্তু সজীব ভাই সকাল বেলা আমাকে যখন বললেন আপনারা তাকে সন্দেহ করছেন তখন আমার লজ্জা লেগেছে। ”

” হাহাহা, লজ্জা কেন? আমরা কিছু তথ্যের জন্য তাকে সন্দেহ করতেই পারি। এতে করে আপনার বা তার লজ্জিত হবার কারণ কি? ”

” আপনি সজীব ভাইকে সন্দেহের তালিকা থেকে বের করে রাখুন, তিনি আমার বাবাকে খুন করে নাই আমি জানি। ”

” আপনার স্বামীর বন্ধুর প্রতি আপনার বিশ্বাস মুগ্ধ করেছে আমাকে, তবুও আমি আমার সন্দেহের তালিকা আমার কাছে রাখি। ”

” আমার মা-বোন কেমন আছে? তারা কেউ যখন খোঁজ নেয় না তখন খুব খারাপ লাগে। ”

” আশা করি খুব দ্রুত আপনার জীবন থেকে সব বিপদ কেটে যাবে, ধৈর্য ধরুন। ”

★★

রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা।
ডিনার করে বাসার ছাদে হাঁটছে সাজু, মাথার মধ্যে কয়েকটা মানুষের মুখ ভাসছে। সবকিছু কেমন যেন কুয়াশার মতো মনে হচ্ছে, দুর থেকে অন্ধকার কিন্তু সামনে এগিয়ে গেলে কিছুটা হলেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কুয়াশার মধ্যে যেমন অনেক দুরের পথ দেখা যায় না, এই রহস্যের অবস্থা ঠিক তাই। এখনই বোঝা যাচ্ছে না অনেক সামনে কি আছে, চোখের সামনে যা ঘটছে তাই দেখে পথ চলতে হচ্ছে সামনে।

সাজুর ধারণা, খুব শীঘ্রই কুয়াশা কাটতে শুরু করবে। হুট করে সূর্যের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে যাবে সবকিছু, ধরা পড়বে আসল খুনি।

সজীবের প্রতি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সন্দেহ হচ্ছে, তার সঙ্গে সাজ্জাদের খুব বেশি ভালো সম্পর্ক ছিল ঠিকই। কিন্তু সজীব মাঝে মাঝে খুব অন্যায় জনিত কাজ করতো, যেগুলো সাজ্জাদ মেনে নিতো কিন্তু খুশি হতো না।

মোবাইল বেজে উঠল, স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার দেখে তাকিয়ে রইল সাজু। একদম শেষ মুহূর্তে রিসিভ করে শান্ত গলায় বলল,

” আসসালামু আলাইকুম। ”

অপরদিক থেকে মেয়েলি কণ্ঠে বললো, ” ওয়া আলাইকুম আসসালাম, সাজু ভাই আমি সুমনা। শাকিলা আমার বড় আপু, আপনার সঙ্গে আজ আমাদের কথা হয়েছে। ”

” ওহ্ আচ্ছা তুমি? বলো তাহলে, আচ্ছা তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়? ”

” কি যে বলেন সাজু ভাই, আপনি অনলাইন জগৎ এর মধ্যে মোটামুটি পরিচিত। সাজু ভাই হিসেবে আপনাকে অনেকেই চেনে, আপনি ব্যক্তিগত ভাবে গোয়েন্দা হলেও আপনার লেখালেখি আপনাকে বেশি পরিচিত করেছে। ”

” হাহাহা, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি নাম্বারটা অন্য উপায়ে সংগ্রহ করেছো। ”

” আমি এইমাত্র আপুর সঙ্গে দেখা করে বাসায় এসেছি, আপুর কাছে আপনার নাম্বার নেই। কিন্তু আপু আপনার লেখালেখির সম্পর্কে বললেন, তাই বাসায় এসে ফেসবুকে সার্চ করলাম। ”

” তারপর? ”

” তারপর তো দেখলাম আপনার অনেক পরিচিতি ও সুনাম, তারপর পেইজ থেকে নাম্বার নিলাম। তবে আমি চাইলেই ফেরদৌস নামের ছেলেটার কাছ থেকে নিতে পারতাম। কারণ আপু বলেছিল আপনাকে নাকি ফেরদৌস নিয়ে এসেছে, তাই তার কাছে অবশ্যই নাম্বার আছে। ”

” হুম বুঝলাম, তাহলে নিলে না কেন? ”

” সাজু ভাই, সত্যি বলতে ফেরদৌস ছেলেটার প্রতি আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে। লোকটার খুব অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, আপুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার পর থেকে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড ফেলে রেখে আপুর পিছনে পড়ে আছে। ”

” হ্যাঁ বিষয়টা আমাকেও ভাবাচ্ছে। ”

” সে আপুর সঙ্গে যা যা করতো সবকিছুই আমার কাছে কল দিয়ে বলতো। বাবার খুনের পরও সে বারবার কল করতো, কেমন অদ্ভুত লাগে। আবার নিজেই বেশি ভালো হবার জন্য আপনাকে ডেকে নিয়ে এসেছে। যদি সে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে যেন কোনভাবেই তাকে সন্দেহ করা না হয়। ”

” হুম তোমার ধারণা ঠিক। আমি ভাবছিলাম তার গ্রামের বাড়িতে যাবো, সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে কিছু কথা জানা দরকার। ফেরদৌসের বোনের মৃত্যুর সঙ্গে কোনভাবে সাজ্জাদ কিংবা তোমার বাবার কোন হাত আছে কিনা কে জানে। ”

” দুলাভাই হবে না সাজু ভাই, কিন্তু বাবার হতেও পারে কারণ তার সঙ্গে শহরের খারাপ কিছু মানুষ যোগাযোগ করতো। ফেরদৌসের কথা অনুযায়ী তার বোনের স্বামী ছিল নেশা করতো, এখন সেই কারণে কোনো যোগাযোগ নিশ্চয়ই হতে পারে। ”

” মেলা মেলা ধন্যবাদ সুমনা। ”

” মায়ের সামনে সাজ্জাদ ভাইকে ছাড়া আর কাউকে বাবার খুনি বলতে পারি না। মায়ের সম্পুর্ন ধারণা যে বাবাকে খুন করেছে সাজ্জাদ ভাই, কিন্তু আমার ধারণা আসল খুনি দিব্যি ভালো আছে। ”

” তুমি চিন্তা করো না, আমি যেভাবেই হোক এই রহস্যের সমাধান করবো। তোমার মাকে শান্তনা দেবার দায়িত্ব তোমার, মাঝে মাঝে হাসপাতালে গিয়ে গোপনে সাজ্জাদকে দেখে এসো৷ থানায় গিয়ে বোনে সঙ্গে দেখা করবে, এই মুহূর্তে সম্পুর্ন পরিবারের সবাইকে আলাদা করে শান্তি দিতে পারবে তুমি। ”

” সাজু ভাই। ”

” ঠিকই বলছি সুমনা, এমন সুযোগ সবার আসে না কিন্তু, সাজ্জাদ হাসপাতালে, শাকিলা থানায়, তোমার মা অসুস্থ হয়ে বাসায়। প্রতিটি মানুষের দরকার সান্তনা এবং সঙ্গী, তোমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ”

” দোয়া করবেন, আে আমার বাবা যতই খারাপ থাকুক কিন্তু আমি চাই তার খুনি শাস্তি পাক। ”

” অবশ্যই পাবে। ”

” একটা প্রশ্ন করবো সাজু ভাই? ”

” হ্যাঁ করো। ”

” রুহি কে? ”

” কেন? আর তুমি তার কথা কীভাবে জানো? ”

” আপনার কাছে কল করার আগে আমার একটা বান্ধবী কল করেছিল। সে জিজ্ঞেস করেছিল যে আমার বাবার খুনের মামলা কে দেখছেন। যখন বললাম সাজু ভাই, সে প্রচুর অবাক হয়ে গেল। ”

” কেন? ”

” আপনার পরিচিত পাঠিকা, সে আপনার সঙ্গে দেখা করতো কিন্তু এখন দেশের বাইরে। ”

” ওহ্ আচ্ছা। ”

” আপনার কাছে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে বলে দিয়েছে। ”

” কি কথা? ”

” সে বললো, সাজু ভাইকে জিজ্ঞেস করে বলবে তার বন্ধু সজীবের কি খবর? আর রুহি কেমন আছে? ”

” আচ্ছা আরেকদিন বলবো তোমাকে। ”

” আসল কথা বলা হয়নি এখনো। ”

” কি কথা? ”

” বাবার উকিল বন্ধু আমাদের বাসায় এসেছিল, তিনি হঠাৎ মাকে অনেক বোঝাতে লাগলো। মা যেন আপুর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেয়, মা প্রথমে রাজি ছিল না। কিন্তু শেষ সময়ে মা রাজি হয়েছে, কালকে সকালে থানায় গিয়ে আপুর মামলা তুলে নেবে মা। ”

” তাহলে খুবই ভালো হবে, সাজ্জাদের পাশে এই মুহূর্তে শাকিলার খুব দরকার। ”

” আজ তাহলে রাখি সাজু ভাই, আপনি একটু ফেরদৌসের বিষয় ভালো করে খোঁজ করুন। ”

” হ্যাঁ করবো। ”

★★

পরদিন বেলা এগারোটা।
রেস্টুরেন্টে বসে বসে রুটি দিয়ে গ্রিল খাচ্ছে সাজু ভাই ও রামিশা। রামিশা আজ শাড়ি পরেছে, হুট করে এমন পরিবর্তন কেন সেটা সাজু বুঝতে পারছে না। তাই নিয়ে কথা হচ্ছিল, এমন সময় ওসি সাহেবের কল এসেছে।

” হ্যালো স্যার। ”

” সাজু সাহেব আপনি কোথায়? ”

” আমি রেস্টুরেন্টে, কিন্তু কেন? ”

” তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে পারবেন? কেউ একজন সাজ্জাদকে কিছু একটা খাইয়ে দিয়েছে, শরীর দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ”

” বলেন কি? ভিতরে কে প্রবেশ করেছে? ”

” ডাক্তার নার্স ছাড়া, আজকে সাজ্জাদের স্ত্রী শাকিলা এসেছে ঘন্টা খানিক আগে। ”

” শাকিলা বের হয়েছে? ”

” হ্যাঁ সকাল বেলা তার মা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে, কিন্তু সে হাসপাতালে আসতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ”

” তারমানে কি শাকিলার মধ্যে গন্ডগোল নাকি? সে কি চায় না সাজ্জাদ বাঁচুক, সাজ্জাদ বাঁচলে সেই রাতের গোপন কিছু বের হবে নাকি? ”

” আপনি একটু হাসপাতালে আসুন। ”

.
.
চলবে…

আশা করি সবাই রেসপন্স করবেন।
বিঃদ্রঃ- গতকাল গল্প পোস্ট করতে পারিনি, কারণ আমি একজন কর্মজীবী মানুষ। সারাদিন কাজ করে তারপর দুই ঘন্টা + সময় বের করে আমাকে লিখতে হয়। গতকাল পরিশ্রম বেশি ছিল আর চোখে ব্যথা খুব তাই লিখতে পারিনি। আজ ছিল শুক্রবার, এদিকে আবার লকডাউন, তবুও আমার ডিউটি বন্ধ নেই। সন্ধ্যার পরে প্রচুর মাথা ব্যথা তবুও কষ্ট করে লিখলাম। কারণ আপনারা অপেক্ষা করে আছেন, তাই কষ্ট হলেও চেষ্টা করেছি।

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
নিজের মতামত জানিয়ে উৎসাহিত করবেন।

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here